#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৭
আয়াজ একটার পর একটা লেহেঙ্গা দেখে যাচ্ছেন।কিন্তু উনার একটাও পছন্দ হচ্ছে না।
আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম,,,”আপনি বিয়ের লেহেঙ্গাটা পরে কিনেন এখন অন্যগুলো কিনুন।”
আয়াজ আমায় একটা হলুদ লেহেঙ্গা হাতে দিয়ে বললেন,,, “যাও তো এটা পড়ে এসো”
লেহেঙ্গা পড়ে আসলাম।অসম্ভব সুন্দর এই লেহেঙ্গাটা। আয়াজ আমাকে দেখে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন।কিছুক্ষণ পর আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারও লেহেঙ্গা দেখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।
মেহেন্দির জন্য আমি আয়াজকে বললাম একটা পৃত্ত কালারের লেহেঙ্গা নিতে।উনি তাই নিলেন।এরপর সাদা কালারের একটা লেহেঙ্গা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।বললেন পড়ে আসতে।
লেহেঙ্গাটা পরে বের হতেই দেখলাম।সবাই চলে এসেছে।আসলে এতো সময় আমি আর আয়াজই আমার ড্রেসগুলো কিনছিলাম।ওরা অন্য জায়গায় ড্রেস কিনতে গেছিলো।
আরশি আমাকে দেখে বলল,,,”ভাবি তোমাকে কিন্তু সেই লাগছে এই সাদা লেহেঙ্গাটাই”
সবাই মিলে ঠিক করলো এটা বৌ-ভাতের দিন আমি পড়বো।আয়াজও আমার সাথে মিলিয়ে সাদা কালারের শুট নিলো।এরপর গহনা থেকে যতকিছু আছে সবকিছু কিনলেন আয়াজ আমার জন্য। এখন শুধু বিয়ের লেহেঙ্গা আর আয়াজের শেরওয়ানি বাকি আছে।
হুট করে আমার একটা কালো লেহেঙ্গার উপর চোখ আটকে গেলো।অসম্ভব সুন্দর লেহেঙ্গাটা কালোর উপর সাদার কম্বিনেশন।আমি তাকিয়ে আছি লেহেঙ্গাটার দিকে।আয়াজও লেহেঙ্গাটার কাছে গেলেন।আমাকে ধরিয়ে দিয়ে পড়তে বললেন।
আমিও পড়ে আসলাম।আয়াজ আমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার দেখে বললেন,,,”এটাই পারফেক্ট!ইশা তুমি এটা বিয়েতে পড়বা।”
আয়াজের কথা শুনে আরশি বলল,,,”ভাইয়া কালো কি কেউ বিয়েতে পড়ে।আর দাদু মামনি যদি কিছু বলে?”
আয়াজ বললেন,,,”কিছু হবে না।তোদের সবকিছু কেনাকাটা শেষ!”
সবাই হ্যাঁ বলল।আমি ও চেঞ্জ করে এসেছি।আমার অনেক শখ ছিল বিয়েতে কালো কালারের লেহেঙ্গা পড়ার। যাক আমার ইচ্ছাটা তো পূরন হলো।আয়াজ বিল পে করে আমার কাছে আসলেন।রিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল।আমি ভেংচি কেটে আয়াজের হাত ধরে হাঁটতে লাগলাম।
আমাদের মার্কেট করতে করতে ৯টা বেজে গেছে।তাই আয়াজ সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আসলেন।সবাইকে তাদের পছন্দ মতো ওর্ডার দিতে বললেন।সবাই খাবার খেয়ে গাড়িতে বসে পড়ল।
আমাদের বাসায় আসতে আসতে ১০ টা বেজে গেল।আমরা সবাই প্রচুর ক্লান্ত।মামনি আমাদের সবাইকে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বললেন।ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম।মামনি শপিংব্যাগ গুলো আয়াজের কাছে দিয়ে বললেন,,,”নে যার যারটা দিয়ে দে।”
আয়াজ সবাইকে তাদের জামাকাপড় দিয়ে দিলেন।সবাই তাদের জামা দেখছে।মামনিও বললেন আমার ড্রেসগুলো দেখাতে।আয়াজ সব বের করে করে দেখাতে লাগলো।আয়াজের ছোট ফুফি আর রিনি কেমন করে আয়াজকে দেখছেন।
মামনি বিয়ের জন্য কালো লেহেঙ্গা দেখে কিছুই বললেন না।কিন্তু আয়াজের ছোট ফুফি মুখ বাকিয়ে বললেন,,,,”কালো লেহেঙ্গা কেউ বিয়েতে পরে নাকি”
আয়াজ কিছু বলতে যাবেন তার আগেই মামনি বললেন,,,”ওদের যা ইচ্ছা হয়েছে ওরা তাই কিনেছে এতে তোমার সমস্যা কোথায় যেখানে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না”
ছোট ফুফি বাবা মানে শশুড় বাবাকে বললেন,,,”দেখো দেখো ভাইয়া ভাবি আমার সাথে কেমন ব্যাবহার করছে।মা দেখেছো!”
শশুড় বাবা বললেন,,,”তোর ভাবি তো ঠিকই বলেছে আয়না আমি তো ওর কথায় কোনো খারাপ কিছুই দেখছি না”
দিদুন ও বললেন,,,”আমিও পাচ্ছি না”
ছোট ফুফি নিজের মনে বকর বকর করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলেন।সবাই আবার সবার ড্রেস দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।
আয়াজ আমাকে বললেন,,,
“ফারিন আর রাদকে কালকেই চলে আসতে বলেছি”
আমি ফারিনের আসার কথা শুনে প্রচুর খুশি হয়ছি।আমার অনেক শখ ছিল আমার বেস্টফ্রেন্ড আমার বিয়েতে নাচবে।আমিও আর ফারিন অনেক প্লান করেছিলাম।যাই হোক সব পূরন না হলেও কিছুটা তো হবে।আমরা সবাই প্রচুর ক্লান্ত তাই মামনি আমাদের ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলেন।আয়াজ আমার দিকে করুন চোখে তাকালেন।আরশি আর আমি চলে গেলাম আরশির রুমে।
সারাদিন আজকে প্রচুর ধকল গিয়েছে।তাই রুমে এসে শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে আরশির ডাকে ঘুম ভাঙলো।আজকে আমার কোনো কাজ নেই কি মজা আজকে বড়রা সবাই তাদের শপিং করতে যাবে।যদিও আয়াজ সবাইকে দিয়েছো কিন্তু শশুর বাবা আবার নিয়ে যাবেন।ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম।আজকে হয়তো আম্মু আব্বু আসবে।ভাবতেই কি মজা লাগছে।
|
|
আজকে আমাদের মেহেন্দি অনুষ্ঠান।আয়াজদের বাগানে ছোট করে আমাদের মেহেন্দির অনুষ্ঠান করা হবে।এখন আমাকে সাজানো হচ্ছে।আমার সাজতে একটুও ভালোলাগে না।তাও কি আর করার বিয়ে আমার সাজতেই হবে।না সাজলে হয় নাকি!
ফারিন রেডি হয়ে বসে আছে।পার্লারের মেয়েরা আমাকে সাজিয়ে চলে গেল।ফারিন আমার কাছে এসে বলল,,,,”তোরে আজকে আয়াজ ভাইয়া দেখলে অঙ্গানই হয়ে যাবে।”
আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম,,,”তুই আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করলি”
ফারিন কপাল চাপড়ে বলল,,”আরে বলদ তোকে প্রচুর সুন্দর লাগছে।এবার চল অনেক দেরি হয়ে গিছে।”
ফারিন আমার ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।লেহেঙ্গাটা প্রচুর ভার।নিচে নামতেই আমাকে দেখে মামনি বললো,,,
“মাশাআল্লাহ আমার মেয়েটার জেনো আমার ছেলে ছাড়া কারো নজর না লাগুক”
আমি লজ্জা পেলাম।সবাই হেসে দিয়েছে।মামনি বললেন,,,”ফারিন মা যাও দেরি হচ্ছে সবাই অপেক্ষা করছে ইশার”
ফারিন আমাকে নিয়ে বাগানে আসলো।প্রথমেই আয়াজের দিকে চোখ পড়ল আমার।আমার লেহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে পান্জাবি পড়েছেন।অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ঊনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আরশি এসে আমাকে ওনার পাশে বসিয়ে দিলো।
উনি আমার কানে ফিসফিস করে বলল,,,
“তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে জান মনে হচ্ছে টুপ করে খেয়ে ফেলি”
আমি লজ্জায় লাল নীল হলাম।উনি আমায় লজ্জা পেতে দেখে বললেন,,,”লজ্জা পেলে তোমাকে আরো সুন্দর লাগে জান।”
অসভ্য লোক কোথাকার আমাকে সবসময় শুধু লজ্জা দেয়।মেহেনী আর্টিস্ট আামকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।ওরা একেকজন নাচ করছে।আমি ওদের নাচ দেখছি আর হাসছি।
ফারিন আর রাদ ভাইয়া Falak Tak গানে নাচছে। অনেক সুন্দর হয়েছে।আমারও মেহেদি দেওয়া শেষ আয়াজের একহাতে আয়াজ+ইশা লিখে দিয়েছে।
হঠাৎ আয়াজ আমার পাশ থেকে উঠে গেলেন।আমি ভাবলাম ফোনে কথা বলতে গিয়েছেন মনে হয়।তারপর লাইট অফ হয়ে গেল।লাইট জ্বলে উঠল আয়াজের দিকে লাইট ফোকাস করা।উনি kesariya Tera গানে নাচতে নাচতে আমার কাছে আসলেন আমাকে টেনে নাচতে লাগলো।উনি আমায় আমায় দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে ডান্স স্টেপগুলো করাচ্ছেন।কেউ দেখলে বলতে পারবে না যে আমি নাচ জানি না।
নাচের মাঝে আমাজ আমার পেট স্পর্শ করেছেন।শিউরে উঠেছিলাম।পরে সামলে নিয়েছি।আমাদের নাচ শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিল।
আরশি আমাদের কাছে এসে বলল,,,”ভাবি দারুন হয়েছে তোমাদের নাচ”
আমি মুচকি হেসে বললাম,,,”আমি তো নাচ জানি না তোমার ভাইয়াই সব করেছে”
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেলো।আমি আরশি আর ফারিন রুমে চলে এসেছি।আরশি আর ফারিন ফ্রেশ হয়ে এসেছে।এখন আমার চুল খুলতে সাহায্য করছে।মেকআপ উঠানো হয়ে গিয়েছে।চুলগুলো ছাড়াতে পাড়লেই হয়।অনেক কষ্টে চুলগুলো ছাড়িয়েছি।প্রচুর ঘুম আসছে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আমার চোখে ঘুম পরিরা সব নেমে এলো।
|
|
আব্বু আম্মুরা আসতে পারিনি আব্বুর কাজের জন্য।আব্বু ছুটি পাচ্ছিল না।অনেক কষ্টে পেয়েছে। আজকে আসবে আম্মুরা।সকাল সকাল গোসল করে কলা পাতা রঙের শাড়ি পরলাম।আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছি।পেটে কারো স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলাম।পিছনে ফেরার আগেই আমার ঠোঁট দুটো দখল করে নিল।আমি আয়াজের কলার ধরে দাঁড়িয়ে আছি।উনি আমায় উঁচু করে ধরলেন।
কিছুসময় পর ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,”জান তোমাকে না অসম্ভব সুন্দর লাগছে ভেজা চুলে।”
“আপনি এই রুমে কি করে আসলেন।মামনি দেখলে কি না কি ভাববে”
“তোমার মামনি কিছুই ভাববে না”
আমাদের কথার মাঝেই দরজায় টোকা পড়ল।ফারিন ডাকছে।আমি আয়াজের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,,,
“এখন কি হবে ও যদি আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে তাহলে তো আমাকে লেক পুল করতে করতে মেরে ফেলবে”
উনি দরজা খুলে সোজা বের হয়ে গেলেন।ফারিন আমার কাছে এসে বলল,,”কিরে তোরা এতোসময় কি করছিলি”
“কিছুই না”
“ও তোকে যা বলতে আসলাম আন্টি আঙ্কেল এসেছে,নিচে চল”
“সত্যি আগে বলবি না”
আমি একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে বের হলাম।সিরি দিয়ে তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে শাড়িতে পা বেধে পরে যাচ্ছিলাম।আয়াজ ধরে ফেলেছেন পরার আগে।আমি নিচে তাকিয়ে দেখলাম সবাই আম্মু আব্বুকে নিয়ে ব্যাস্ত ভাগ্যিস কেউ দেখেনি।আমি দ্রুত ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে নিচে আম্মুর কাছে চলে আসলাম।আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।
আহিন তো ছুটে এসে বলল,,”আপা তুমি ভালো আছো”
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,”হ্যাঁ আমি তো অনেক ভালো আছি তুই কেমন আছিস”
“আমি ভালো ছিলাম এখন তোমাকে দেখে আরো ভালোহয়ে গেছি”
|
|
আমাকে পার্লার থেকে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে।আরো কিছুক্ষণ পর মামনি ছাদে যেতে বলেছে।মাগরিবের আযান দিছে মাত্র।নামাজ শেষে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
হলুদের অনুষ্ঠান আয়াজদের ছাদে হবে।মামনি এসে আমাকে নিয়ে গেলেন ছাদে।আয়াজ এখনো আসেননি।আমাকে বসিয়ে দিলেন।সবাই হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু আমার চোখতো একজনকে খুঁজছে।কিছু সময় পর আয়াজও আসলেন।ওনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
উনি আমার পাশে বসে পড়েন।সবার আড়ালে আমার কোমড়ে হাত দেন।আমি উনার স্পর্শতে শিউরে উঠলাম।সবার হলুদ লাগানো শেষ।নাচ গান শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো।আমি আরশির রুমে চলে আসলাম।একাই এসেছি,সবাই খেতে বসেছে।আমি মেকআপ তুলে চুলে মাত্রই হাত দিয়েছি তখনই দরজা আটকানোর শব্দ পেলাম।আয়াজ এসেছেন।
আমি বললাম,,,
“দরজা আটকালেন কেনো?”
আয়াজ উত্তর না দিয়ে চমার কাছে চলে আসলেন।কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন।মুখে হলুদ মাখিয়ে দিলেন,তারপর নিজের মুখের সাথে আমার মুখ ঘষে দিলেন।কোমড়েও হলুদ লাগিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিলেন।তারপর আমায় ছেড়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।মুচকি হেসে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে খেতে আসলাম।বড়দের খাওয়া শেষ হয়েছে। ওরা সবাই খেতে বসেছে আমিও বসে পড়লাম।
চলবে,,,,,,,?
(দুঃখিত অসুস্থ থাকার জন্য দিতে পারিনি।
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)