অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀 #ইশা_আহমেদ #পর্ব_৬

0
370

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬

চারপাশ নিস্তব্ধ।গ্রামে এতো রাতে কেউ জেগে থাকে না।১২টা বাজে হয়তো।আমি আর উনি ছাদের উপর এখনো বসে আছি।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে উনাকে বললাম,,

“আপনি কি গান গাইতে পারেন?”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,”পারি মোটামুটি”

আমি এবার উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,”একটা গান শোনাবেন”

উনি বললেন,,,”আচ্ছা শোনাব,কিন্তু বেশি না অল্প”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।আমি আবার আকাশের দিকে তাকালাম।উনি এবার গান গাইতে শুরু করলেন।

অবাক চাঁদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী
আড়াল হতে দেখেছি তোমার
নিষ্পাপ মুখখানি,

ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়,
ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়,,,,,,

উনি এতোক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে গান গাচ্ছিলেন।উনার গানের গলা অসম্ভব সুন্দর।গানের মাঝে আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তখন দেখি উনি আমার দিকে কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে গান গাচ্ছিলেন।আমাকে উনার দিকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে বললেন,,

“এমন হা করে কি দেখছ!আমি জানি আমি সুন্দর তাই এইভাবে না তাকালেও চলবে”

উনার কথায় আমার ঘোর কাটে।আমি ভেংচি দিয়ে বলি,,”আইছে রে আমার বিশ্ব সুন্দরী”

উনি হো হো করে হেসে দিলেন।আমি মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তকালাম।উনি মুচকি হেসে আমায় এক হাতে জড়িয়ে ধরলেন।হকচকিয়ে গিয়ে উনার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমি ব্যার্থ।উনি আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে দেখে বলেন,,

“তুমি কি আদেও আমার সাথে পারবে!শুধু শুধু নিজের এনার্জি খরচ করো না”

আমি এবার শান্ত হয়ে গেলাম।অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।কিছুক্ষণ বাদে উনি আমায় নিজের দিকে ফিরালেন।উনি আমার মাথার সাথে মাথ ঠেকিয়ে বললেন,,

“সরি বউ!আমার উপর রাগ করো না।তুমি কথা না বললে আমার ভালো লাগে না”

আমি তাও কোনো কথা বললাম না।অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি এবার আমায় ছেড়ে দিলেন।হঠাৎ করে ছেড়ে দেওয়াতে হকচকিয়ে গেছিলাম।উনি এবার হাটু ভাজ করে বসে কান ধরে বললেন,,,

“সরি বললাম তো বউ।অনেকগুলো সরি তোমাকে আর রাগাবো না”

উনার কান্ড দেখে মুচকি হাসলাম।উনাকে বললাম,,”হয়েছে এবার আসুন আর ঢং করতে হবে না”

উনি আবার এসে আমার পাশে বসে পড়লেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,”আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর গান করেন”

উনি হঠাৎ করে উনার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,,,”চলো অনেক রাত হয়েছে,ঘুমাতে হবে”

“হু চলুন”

ছাদ থেকে নামার জন্য দাঁড়িয়ে পড়লাম কয়েক পা যেতেই ইটে বেঁধে পড়ে যেতে নিলাম।চোখমুখ খিচে বন্ধ করে রইলাম। কিছুক্ষন হয়ে গেল,আমি পড়লাম না কেনো।পিটপিট করে চোখ খুলে দেখি আয়াজ আমায় ধরে রয়েছেন।আমি তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাঁড়াতে গেলাম কিন্তু ঠিকমতো দাঁড়াতে পারলাম না।ইটে পা বাঁধার ফলে পায়ে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছি।উনি আমায় ধরে নিচে বসিয়ে দিলেন।আর বললেন,,,

“তোমার কি কোনো অঘটন না ঘটালে ভালো লাগে না।দেখি জামা উঁচু করো কই ব্যাথা পেয়েছো দেখাও”

আমি কথা না বলে জামাটা উঁচু করলাম।ভালোই ব্যাথা পেয়েছি।উনি আমার পা ধরতে গেলেন আমি তাড়াতাড়ি পা সরিয়ে নিয়ে বললাম,,,

“কি করছেন আপনি!জানেন স্বামীদের বউয়ের পা ধরতে নেই।”

“উফ তুমি কি সেই আদিকালে পড়ে আছো নাকি হ্যা!এখন এগুলো কেউ মানে না”

উনি আমার পা টেনে নিয়ে দেখতে লাগলেন।তারপর আমায় কোলে তুলে নিলেন।হুট করে কোলে নেওয়াতে ভয় পেয়ে গেছিলাম। উনার কলার চেপে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।উনি মুচকি হেসে আমায় নিয়ে রুমে চলে এলেন।বেডের উপর বসিয়ে দিলেন।আশেপাশে কি যেনো খুঁজছেন।উনাকে এইভাবে খুঁজতে দেখে বললাম,,,

“কি খুঁজছেন আমাকে বলুন”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,”মুভ আছে বা কোনো ব্যাথার ক্রিম।”

আমি বললাম,,”ছোট ড্রয়ারে দেখেন মুভ আছে”

উনি বের করে আমার পাশে বসে পা টেনে উনার কোলের উপর নিলো।মলম দিয়ে ম্যাসাজ করতে লাগল।কিছু সময় পট উনি আমাকে শুইয়ে দিয়ে বলেন,,,

“এখন ভালো মেয়ের মতো চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আমি ও আর কথা বাড়ালাম না,কারণ আমার অনেক ঘুম পেয়েছে।
|
|
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আমি উনাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছি।আল্লাহ আমি কি করেছি এটা তাড়াতাড়ি সরে আসলাম যাতে উনি টের না পান।আমি দ্রুত রুম থেকে বের হলাম ফ্রেশ হায়ে আম্মুর কাছে চলে আসলাম।আম্মু রান্না করছিল।আমাকে দেখে বলে,,,

“আয়াজ এখনো উঠেনি”

“না আম্মু উনি এখনো ঘুমাচ্ছে।আম্মু আমার কাগজপত্র গুলো গুছিয়ে রেখেছো আমরা তো আজকেই চলে যাবো”

“হুম রেখেছি”

“আচ্ছা আম্মু তুমি রান্না করো আমি আহিনের কাছে গেলাম”

আমি আহিনের কাছে চলে আসলাম ও শান্তিমতো ঘুমাচ্ছে।আমি ওকে ডেকে তুললাম।ও উঠে বসে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,,

“আপা তুমি এতো সকালে আমাকে ডাকলে কেনো?”

আমি আহিনের মুখ চেপে ধরে বলি,,,”হুস আস্তে কথা বল,আমি আর তুই এখন আমড়া চুরি করতে যাবো বুঝলি”

আহিন উম উম করতে লাগলো।আমি বুঝতে পেরে ওর মুখ ছেড়ে দেই।ও বলে,,,”আপা নিজেদের গাছ থেকে কেউ চুরি করে”

আমি ওকে নিয়ে বাড়ির পেছনে চলে আসলাম।আহিনকে নিচে রেখে আমি গাছে উঠলাম।ওকে গাছের উপর থেকে বললাম,,,”আহিন আমি নিচে ফেলাচ্ছি তুই সব তুল”

আমি ইচ্ছা মতো আমড়া ফেলাতে লাগলাম।হঠাৎ করে আয়াজের গলা শুনলাম উনি গম্ভীর কন্ঠে আহিনকে বলছেন,,,”তোমার আপু কোথায়?”

আহিন গাছের দিকে ইশারা করে আমড়া নিয়ে দৌড়ে পালালো।আমি অসহায় ভাবে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ধূর এমন হবে আগে জানলে আসতাম নাকি।আমি এখন কি করবো তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে টুস করে পড়ে গেলাম।চোখ খুলে দেখি আয়াজ আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।আল্লাহ,আমি তো এবার শেষ।এই গোমড়ামুখো কাছ থেকে এখন আমাকে কে বাঁচাবে।উনি আমায় আস্তে করে নামিয়ে দিলেন।আমি দৌড়ে পালাতে যাব তার আগেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন।কি করবো আমি এখন।উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,,,

“তোমার না পায়ে ব্যাথা তাহলে কেনো গাছে উঠতে গেছো হ্যাঁ।আমি যদি না থাকতাম তাহলে এখন কি হতো তোমার কালকে তো পা টার বাঁশ দিছো আর আজকে কোমড়টার বাঁশ দিতে যাচ্ছিলে”

আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমার কান্না পেলো খুব উহু আর কথা বলবো না উনার সাথে।আমার চোখে পানি দেখে উনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।উনাকে কেমন অস্থির দেখাচ্ছে।উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,,

“তোমাকে না আমার সামনে কাঁদতে মানা করছিলাম।আর তুমি ছিচ কাঁদুনীদের মতো কাঁদো কেনো?”

“আমি ছিচকাঁদুনী হ্যাঁ আপনি কি তাহলে গোমড়ামুখে বুড়ো কোথাকার”

আমি ওখান থেকে হনহন করে চলে আসলাম।হুহ আমাকে ছিচকাঁদুনী বলা,আর কথাই বলবো না।আমি ওখান থেকে সোজা আম্মুর কাছে চলে আসলাম উনিও আমার পিছন পিছনই এসেছেন।আম্মু খেতে ডাকছেন।আমি সোজা গিয়ে বসে পড়লাম।উনি এসে আমার পাশে বসে পড়লেন আমি তাকালাম না উনার দিকে।উনি পা দিয়ে আমাকে খোঁচাতে লাগলেন।আমি চুপচাপ সয্য করছি।আহিন আসলো তার মাঝে।আমি ওর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।ও ভয়ে ভয়ে আমার উল্টো পাশে বসলো।আমি ওরে খাইয়া ফেলাবো লুক দিলাম।চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালাম,তোকে একবার একা পাই।

খেয়ে উঠে পড়লাম।আম্মুকে বললাম,,”আম্মু ফারিন কি বাড়ি আছে”

“না রে মা তুই চলে যাওয়ার পর পরই ওকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।মেয়েটা অনেক বলেছিল যে ও বিয়ে করবে না কিন্তুু কেউ শুনলো না ওর কথা”

আম্মু আরো বলল,,,”ওর ও নাকি শহরে বিয়ে হয়েছে।আর ওর মতোঅনেক মেয়েকেই তুই যাওয়ার পর বিয়ে দিয়ে দিছে।ওরা ভেবেছে তোর মতো যদি ওরাও করে”

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আম্মুকে বললাম,,”তুমিও কি আমাকে অবিশ্বাস করো আম্মু”

আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল”নারে পাগলি আমি জানি তুই কেমন”

আমি চলে আসলাম উঠনে।মনটা খারাপ হয়ে গেল।আয়াজের মতো কি ওর বর ও এমন।নাকি অন্যসব ছেলেদের মতো।ইশ কতো শখ ছিলো,ওর বিয়েতে নাচব গাইব।তা আর হলো কই।আমি উঠানে বসে আছি।আয়াজকে যথা সম্ভব ইগনোর করলাম।উনি আমাকে কেনো বলবে।আমি রাগ করেছি অনেক।হুহ!

উনি আমায় খুঁজতে খুঁজতে উঠনে এসে আমাকে টান মেরে দাঁড় করিয়ে দিলেন।উনি আমার কাঁধ ঝাকিয়ে বললেন,,,”তুমি আমাকে ইগনোর কেনো করছো”

আমি উনাকে বললাম,,”আমি আপনাকে ইগনোর করছি না”

উনি আমায় বললেন,,,”আ’ম সরি! তুমি আমাকে রাগিয়ে কেনো দাও বলোতো।রাগলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।”

আমি বললাম,,”আপনি আমাকে ওইগুলো বললেন কেনো”

“আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না তোমাকে।রাগ কমেছে এখন”

আমি মন খারাপ করে বললাম,,”হুম,জানেন আমার সব থেকে কাছের বান্ধবীর ও বিয়ে হয়ে গেছে”

উনি আমায় বললেন,,,”মন খারাপ করো না।ও যেখানেই আছে সেখানেই হয়তো ভালো আছে।”

আমি আনমনে বললাম,,,”হয়তো”

উনি আমায় টেনে ভিতরে নিয়ে গেলেন।আমি উনাকে বললাম,,,”আপনি আমাকে ভেতরে নিয়ে আসলেন কেনো?”

“বাইরে অনেক রোদ দেখেছ।”

চলবে…..?

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here