#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭
আমি আর উনি এখন বসে আছি আমার রুমে।উনি আমায় কোনো মতেই রুম থেকে বের হতে দেবেন না।কখন কি ঘটিয়ে ফেলি তাই।আমি মুখ ফুলিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি আমি দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন,,,
“এভাবে মুখ না ফুলিয়ে বসে থেকে এই ফোন নাও ফোন দেখো”
উনি আমার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিলেন।আমি নিলাম না।নিব না উনার কিছু হুহ।উনি এবার আর আমাকে কিছু বললেন না ফোনটা পকেটে রেখে নিজের ফোন দেখতে থাকলেন।এবার আমার কন্না পেল।কেনো জানি না কিন্তু আমি আর উনার সাথে কথা বলব না।উনি আমায় এবার কোনোভাবেই কথা বলাতে পারবেন না।আমি কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে বাইরে চলে আসলাম,উনি এবার আমায় আর আটকায়নি।আমি আবার চুরি করে বাড়ির পিছনে আসলাম।আর চুপটি করে ঘাসের উপর বসে পড়লাম।
আমি ওখানে অনেকক্ষণ বসে আবার বাড়িতে চলে আসলাম।উনি সোফায় বসে আহিনের সাথে গল্প করছেন।আমি একবার তাকিয়ে আম্মুর কাছে চলে আসলাম গল্প করতে।উনার সাথে সত্যিই আর কথা নেই।আমি আম্মুর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলাম।
দুপুরে খাওয়ার সময়ও আমি একবারো উনার দিকে তাকায়নি আমি আমার মতো খেয়ে ছাঁদে চলে আসলাম।ছাঁদে আমার কিছু গাছ আছে।আমি সেগুলোর খুব যত্ন নিতাম।দীর্ঘশ্বাস ফেললাম,কারণ এগুলোর আর যত্ন নেবে না কেউ।কিন্ত এগুলো দেখে মনে হচ্ছে একদিন পানি দেওয়া হয়নি কিন্তু আমি তো আজ ১১ দিন বাড়িতে নেই।
গাছগুলোতে সুন্দর ভাবে পানি দিলাম।তারপর গাছগুলো সুন্দর করে রাখলাম।এবার ছাঁদের উপর বসে পড়লাম।এখানে এসেও বোরিং কাটছে।ধূর এখন তো কিছুই ভালো লাগছে না।আমাদের ছাদে একটা ছোট খাটের মতো আছে,এখানে আগে দাদা-দাদি এসে বিকালে বসে থাকতেন।আমি ওখানে বসে পড়লাম,ঘুম আসছে অনেক কিন্তু রুমে তো উনি আছেন।আমার আবার একটা বদ অভ্যাস আছে।আমি বেশি খারাপ লাগলে ঘুমিয়ে থাকি।কি করবো ভাবতে ভাবতে কখন ওখানেই ঘুমিয়ে গেছি জানি না।
যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিচে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।আগে যখনই আমি কোথাও ঘুমিয়ে যেতাম ঘুম ভাঙলে আমি নিজের রুমে থাকতাম।আর আজকে আয়াজ আমায় নিয়ে গেলেন না মন খারাপ হয়ে গেল।সন্ধ্যা হতে চলল।এবার আয়াজও চেঁচিয়ে উঠলেন।আমি ভয় পেয়ে দৌড়ে নিচে গেলাম।নিচে গিয়ে দেখতে পেলাম উনি আব্বুর সাথে কথা কাটাকাটি করছেন।আমি ভয়ে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না এর ভিতরেই আব্বু আমাকে দেখে বলে উঠলেন,,,
“এই বিয়াদপ মেয়ে তুমি আমার বাড়িতে কেনো এসেছো?আমার মানসম্মান খেয়ে তোমার হয়নি”
আব্বুর কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।আমার একবাহু ধরে আব্বুকে বললেন,,,
“আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও এমন কথা বলতে পারলেন।আমি আপনায় কথা দিচ্ছি ইশা এই বাড়িতে ততক্ষণ পর্যন্ত পা রাখবে না যতক্ষণ আমি প্রমান করছি আমরা দু’জন দোষী নই,আমাদের কেউ ফাঁসাতে চাচ্ছে”
উনি আব্বুকে কথা বলতে না দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন।আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন কিছুক্ষণ পর ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসলেন।ব্যাগগুলো পিছনে রেখে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলেন।আমি ফুফিয়ে কেঁদে চলেছি।উনি আমার মাথাটা উনার বুকে চেপে ধরে বলেন,,
“বউ কেঁদো না।আমি সব ঠিক করে করে দেবো আর যে তোমাকে ওখানে নিয়ে গেছিল তাকেও খুঁজে বের করবো”
উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি এখনো উনার বুকে মাথা দিয়ে কেঁদে চলেছি।উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।কিছুক্ষণ পর উনার বুক থেকে মাথা সরিয়ে নিয়ে আসলাম।বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আমার চুলগুলো খোলা।বাতাসে উড়ছে।উনার মুখের উপর চুলগুলো পড়ছে।আমি চুলগুলো বেঁধে ফেললাম।উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন।
উনি আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললেন,,”তোমার চোখগুলো যানো কেমন লাগছে।ওয়েট দেখাচ্ছি”
উনি গাড়ি থামিয়ে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুললেন।আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম।উনি ছবিগুলো বের করে আমাকে দেখিয়ে বললেন,,
“দেখেছো!চোখগুলো কেমন লাল হয়ে ফুলে গেছে।কান্না করলে তোমাকে পেত্নী পেত্নী লাগে”
আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,,”আর আপনাকে রাগলে হনুমান লাগে।চোখ গুলো কেমন অসম্ভব লাল হয়ে যায়,মনে খেয়ে ফেলবেন হুহ”
উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আমার ফোন টিপতে লাগলাম।এমন ভাব করলাম উনি কে আমি চিনিই না।হি হি আমাকে পেত্নী বলা না।উনি তো একটা হনুমান কোথাকার।উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।যেতে আরো ৪ ঘন্টা লাগবে।আমার এখন ঘুম আসছে না নাহলে ঘুমিয়ে পড়তাম।বিকেলে ঘুমানো উচিত হয়নি।ধূর কিছুই ভালো লাগে না।৯টার সময় উনি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালেন।নিজে নেমে আমাকে নামালেন।আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টেের ভিতরে ঢুকলেন।
একটা টেবিলে এসে বসে পড়লেন।ওয়েটারকে ডেকে খাবার ওর্ডার করলেন।আমি উনাকে বললাম,,,
“শুনুন আমাকে একটা ছবি তুলে দিবেন।আমার অনেক শখ আমি আমার ছবি বড় করে দেয়ালে টানিয়ে রাখব”
উনি আমার কয়েকটা ছবি তুলে দিলেন।আমি উনার কাছ থেকে ফোন নিয়ে ছবি গুলো দেখতে লাগলাম।দেখার মাঝেই উনি বললেন,,
“এগুলো দেখে লাভ নেই কারন এগুলো বেশি ভালো হয়নি।আমি তোমায় কিছুদিন পর ফটোসুট করতে নিয়ে যাবো।তাই এগুলো এমনি রেখে দাও”
আমি লাফিয়ে উঠলাম।আমার লাফানো দেখে বললেন,,”তুমি কি পাগল হইছো আশেপাশে কতো লোকজন চুপচাপ বসো”
আমি চুপচাপ বসে খুশি মনে বললাম,,,”আপনি সত্যি বলছেন”
উনি বললেন,,”হুম”
আমাদের কথা বলার মাঝে খাবার চলে এসেছে।খাবার খেয়ে আমি বসে আছি উনি বিল দিতে গেছেন।হুট করে একটা ছেলে এসে আমার সামনের চেয়ারে বসে পড়ল।আমি ফোন দেখছিলাম।ছেলেটা আসায় চমকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকি ছেলেটা আমাকে তাকাতে দেখে হেসে বলল,,,
“হাই!আমরা কি পরিচিত হতে পারি”
আমি কোনো কথা না বলে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।উনাকে দেখতে পেলাম না। কি করবো আমি এখন।আমাকে কিছু না বলতে দেখে উনি আবার আমাকে বললেন,,
“হেই কিউট গার্ল তুমি কথা কেনো বলছ না।
উনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,,”আমি নিয়াজ,তুমি?”
হুট করে কোথা থেকে আয়াজ এসে ছেলেটার হাত ধরে বলল,,”হাই ব্রো আমি আনভীর আয়াজ খান।আর ও আমার ওয়াইফ ইশা আয়াত।”
ছেলেটা মনে হয় লজ্জা পেল তাই মানে মানে করে চলে গেল।উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন গাড়ির কাছে।
চলবে…..?
(দুঃখিত আমি কালকে গল্প দিতে পারিনি তাই।আসলে আমার পরীক্ষা চলছে।১৪ তারিখ পর্যন্ত হয়তো একটু অনিয়মিত হবে তার জন্য আমি সত্যিই অনেক দুঃখিত।আশা করি সবাই বুঝবেন।
ছোট হওয়ার জন্যও দুঃখিত।
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)