#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫
সকাল সকাল শেখ বাড়ির পরিবেশ বেশ রমা রমা। বাড়ির মেয়েকে দেখতে আসবে। মাহিম আর হুমায়ন শেখ তো বাজার করে এনেছেন ব্যাগ ভর্তি করে। রামিশা শাশুড়ী মার সাথে কাজে সাহায্য করছে।মায়া বেগম আর রামিশা মিলে রান্না বান্না করছে। তবে ওয়ামিয়া এখনো রুমের দরজা খোলেনি। দরজা আঁটকে বসে আছে।ওয়ামিয়ার অবস্থা বেহাল। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ভয় হচ্ছে। চিন্তায় মাথা ধরে আসছে। আদেও আসবে তো তার শেহজাদ ভাই।রামিশা ডেকে গিয়েছে তবে সে নির্বাক।স্তব্ধ, বিমূর্ত হয়ে বসে আছে।কখনোই সে অন্য পুরুষের সামনে যাবে না।চুলগুলো এলোমেলো,চোখ মুখের অবস্থাও বেশ খারাপ। রাতে হয়তো কান্না করেছে।
১১ টার দিকে হুমায়ন আহমেদ এর বন্ধু রাশেদ হাওলাদার এবং তার পরিবার শেখ বাড়িতে উপস্থিত হন।ছেলের নাম অভি হাওলাদার।ছেলে কানাডা থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে।দেখতে শুনতে ভালোই।মাহিম এবং হুমায়ন শেখ আপ্যায়ন করছে অতিথিদের।অভি নাকি ওয়ামিয়া পছন্দ করে। ছোটবেলায় দেখেছিলো। অভি হাসফাস করছে ওয়ামিয়াকে দেখার জন্য।সবাইকে বসার ঘরে বসানো হয়।অভি সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। মাহিমের ভীষণ পছন্দ হয়েছে অভিকে। রামিশার বিষয়টা ভালো লাগছে না। সে মোটেও চায় না ওয়ামিয়ার অমতে তার বিয়ে হোক। তবে এ বিষয়ে তার কিছু বলার অধিকার নেই। রামিশা ওয়ামিয়ার রুমের দিকে পা বাড়ায়।ওয়ামিয়ার রুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলে,
‘মেহনাজ প্লিজ দরজাটা খুলো। মেহমান চলে এসেছে’
ওপাশ থেকে উত্তর আসে না। রামিশা হতাশ হয়। তবে এতটুকু সে বেশ ভালো করে বুঝছে যে ওয়ামিয়া পাগলের মতো ভালোবাসে লোকটাকে।মাহিমের সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চাইছে সে।দু’জনই যথেষ্ট চেষ্টা করছে। আগের থেকে অবশ্য অনেকটা উন্নতি হয়েছে। দুজনের মাঝে ভালো বন্ধন তৈরি হয়েছে। বন্ধু মনে করে রামিশা মাহিমকে। দু’জন রাত জেগে গল্প করে। কখনো বারান্দায় বসে মাহিমের কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্র বিলাস করে। আর কি চাই তার। মাহিমের ডাকে ধ্যান ভাঙে তার।
‘তুমি আম্মুর কাছে যাও। আমি ডাকছি মেহেনাজকে’
রামিশা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।মাহিম জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘মেহেনাজ দরজা খোল’
ওপাশ থেকে এবারও কোনো উত্তর আসে না।মাহিম বেশ কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কায় তবে না কোনো উত্তর আসে না সারা শব্দ করে ওয়ামিয়া। মাহিম তার আব্বুর কাছে গিয়ে বিষয়টা বলে। হুমায়ন শেখ মাহিমকে সামাল দিতে বলে ওয়ামিয়ার রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।রুমের সামনে এসে খুব শান্ত গলায় হুমায়ন শেখ বলেন,
‘দরজা খুলো ওয়ামিয়া’
ওয়ামিয়া উঠে দরজা খুলে পুতুলের ন্যায় বিছানায় গিয়ে বসে।হুমায়ন শেখ চমকে উঠেন একমাত্র আদরের কন্যার অবস্থা দেখে।এমন অবস্থা করবে ওয়ামিয়া নিজের কখনো ভাবেননি তিনি। তবে এখন যে ওয়ামিয়ার সাথে নরম সুরে কথা বললে চলবে না।সে ওয়ামিয়ার পাশে বসে বলে,
‘দ্রুত একটা শাড়ি পরে নাও এবং হালকা সেজে নাও’
‘আমি ওয়ামিয়া মেহেনাজ কোনোদিন পরবো না।আমি যদি শাড়ি পড়ি সাজি তবুও সেগুলো শুধু শেহজাদ ভাইয়ের জন্য’
‘আমার রাগ তুলো না মেহেনাজ। আমি যেমন আদর ও করি তেমন তোমাকে শাসন ও করতে পারবো’
‘আমি কখনোই তাদের সামনে যাব না’
‘আমার কসম লাগে ওয়ামিয়া তুমি রেডি হয়ে একটু পরে তাদের সামনে যাবে।’
হুমায়ন শেখ ওয়ামিয়াকে কথা বলতে না দিয়েই রুম ত্যাগ করেন।ওয়ামিয়া হতভম্ব হয়ে বসে আছে। কি বলে তার আব্বু। ওয়ামিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে রেডি হতে লাগলো। সে ভীষণ ভালোবাসে তার আব্বুকে তবে আজ যা করলো। তবুও যাবে সে। শেহজাদ আসবে। তাকে তো আসতেই হবে।
*********
‘ফুপি দোয়া করো। আজ আসছে এ বাড়ির বউ’
মেহবুবা খান শেহজাদের কপালে অধর ছুঁইয়ে বললেন,,”সাবধানে বাবা। হুমায়ন ভাই রেগে আছেন। যাই হোক তাকে অসম্মান করো না। সে তোমার মামু হয়’
‘না না ফুপি কি বলো তুমি। আমি কখনোই মামুকে অসম্মান করবো না। তবে মাহিম কিছু বললে ছেড়েও দিবো না’
‘ঠান্ডা মাথায় সব করিস আব্বু’
মেহবুবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পরলো ড.শেহজাদ ইমতিয়াজ খান।পরনে তার শুভ্ররাঙা পাঞ্জাবি।দেখতে রাজপুত্রর মতোই লাগছে।ইফাজ ও কালো শার্ট পরে সেজেগুজে এসেছে। একমাত্র ভাইয়ের শশুড় বাড়ি যাচ্ছে বলে কথা। একটু তো সাজগোছ করতেই হবে। শেহজাদ সচারাচর গাড়ি ব্যবহার করে না।অটো, ভ্যান, বাইক এসবেই চলাচল করে। তবে আজ গাড়ি নিয়েছে। বউ আনতে যাবে। ভাব সাব না দিলে হয়।গাড়ি নিয়ে সোজা চলে আসে হুমায়ন শেখের বাড়িতে। সাথে অর্নব ও আছে। শেহজাদ গম্ভীর মুখ করে প্রবেশ করে বাড়ির ভেতরে। বসার ঘরে
মাহিম অভ্র রাশেদ,হুমায়ন শেখ কথা বলছিলেন।শেহজাদকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। মাহিমের মুখশ্রীতে কেমন ব্যাথাতুর ভাব লক্ষ করা যায়।
আজ এতো বছর পর সে তার বেস্টফ্রেন্ড&ভাইকে দেখছে। তবে সেইসব বাদ দিয়ে মুখে গম্ভীর ভাব আনে। শেহজাদ একটা সোফায় বসে পরে।ইফাজ আর অর্নব অনেক ফলমূল মিষ্টি নিয়ে ভেতরে রাখে। রাখা শেষ হতেই ধপাস করে বসে পরে ফাঁকা সোফাটায়।ইফাজ আর অর্নব হাসছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে। বসার ঘরে উপস্থিত থাকা সবাই এখনো আগের ন্যায় হতভম্ব হয়ে বসে আছে। রাশেদ হাওলাদার যে শেহজাদকে চিনেন না তা না। সে খুব ভালো করেই চিনেন। হুমায়ন শেখ নিজেকে স্বাভাবিক করে কঠোর আওয়াজে সুধালেন,
‘তুমি!তুমি এখানে কি করছো’
‘আহা মামু আমি এখানে থাকবো না তো কে থাকবে!’
‘কি বলতে চাইছো স্পষ্ট ভাষায় বলো’
‘মামু আমি সব সময় স্পষ্ট কথা বলতেই পছন্দ করি।আমি ওয়ামিয়াকে ভালোবাসি এবং সে ও বাসে। তাই আজ আমি আমার বউ নিতে এসেছি’
‘মেহেনাজ ভালোবাসে না তোমাকে’
শেহজাদ ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো। এমন ভঙ্গিতে হাসলো যেন হুমায়ন শেখ কোনো জোক’স বলেছেন।ইফাজ আর অর্নব আগ্রন নিয়ে দেখছে সব। তাদের শেহজাদ ভাই নিজের প্রেয়সীকে পাওয়ার জন্য কি কি করতে পারে সেগুলোই দেখতে চাইছে।মাহিম রেগে বলে,
‘বেরিয়ে যা শেহজাদ আমাদের বাড়ি থেকে’
শেহজাদ পাত্তা দিলো না মাহিমের কথায়। সে হুমায়ন শেখের দিকে তাকিয়ে বললেন,’তাহলে ওয়ামিয়াকে ডাকুন।শুনি তার মুখ থেকে। সে নাকি ভালোবাসে না আমায়’
রামিশা কথা বার্তা শুনে বুঝতে পারলো এটাই শেহজাদ। শেহজাদকে দেখে মুখ থেকে অজান্তেই ‘মাশাআল্লাহ’ বেরিয়ে গেলো। লোকটা আসলেই সুন্দর। ছেলে মানুষের এতো সুন্দর হতে নেই। ওয়ামিয়ার সাথে শেহজাদকেই মানাবে। অভিকে নয়!রামিশা দ্রুত গতিতে ওয়ামিয়ার রুমে চলে আসে।রুমে ঢুকতেই থমকায় রামিশা। ওয়ামিয়া সম্পূর্ণ শরীর কালো বোরকায় আবৃত।চোখগুলো ও দেখা যাচ্ছে না।রামিশা বলে,
‘মেহেনাজ তোমার শেহজাদ ভাই এসেছে’
ওয়ামিয়ার খুশিতে চোখের কোনে পানি জমা হয়।তাহলে এসেছে তার শেহজাদ ভাই তাকে নিতে। তার বিশ্বাস বিফলে যাইনি। সে সঠিক পুরুষকে ভালোবেসেছে। ওয়ামিয়া আলমারি থেকে একটা ব্যাগ বের করে সেখানে ডাইরিটা নিয়ে নেয়। সে জানে শেহজাদ আজ তাকে নিয়ে যাবে। এসেছে যখন তখন কখনোই ওয়ামিয়াকে ছাড়া যাবে নাহ! ওয়ামিয়া রামিশার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘তোমার সাথে হয়তো দেখা হবে না। জানি আজ সম্পর্ক ছিন্ন করবে আব্বুজান আর ভাইজান। তবে আমি তবুও শেহজাদ ভাইয়ের সাথেই যাবো। আমি যে তার অর্ধাঙ্গীনী হতে চাই। ভালোবাসি তাকে ভীষণ।’
‘তুমি সুখী হও মেহেনাজ। নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়াটা সবার ভাগ্যো থাকে না।তবে তাকে তুমি পাচ্ছো কখনো অবহেলা করো না’
‘প্রশ্নই উঠে না ভাবি ভালো থেকো। আব্বু ভাইজান আম্মু সবার খেয়াল রেখো। ফোন দিলে রিসিভ করো’
বেরিয়ে গেলো ওয়ামিয়া রুম থেকে। বসার ঘরে প্রবেশ করতেই সর্ব প্রথম তার চোখ গেলো শেহজাদের দিকে। তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে যথেষ্ট আনন্দ উল্লাসের চাপ। বোরকার আড়ালে হাসলো ওয়ামিয়া। হুমায়ন শেখ মেয়ের পোশাক দেখে অবাক হলেন। অভি হাওলাদার তাকিয়ে আছে ওয়ামিয়ার দিকে। শেহজাদের নজরে আসতেই শরীর জ্বলে উঠলো। কেনো তাকাবে তার প্রেয়সীর দিকে। এই প্রেয়সী যে একান্তই তার।
‘তো মামু কি বলছিলেন ওয়ামিয়া ভালোবাসে আমায়। তাই তো!তা ওয়ামিয়া ভালোবাসো আমায়’
‘হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি’
ওয়ামিয়ার সোজাসাপ্টা উত্তর। হুমায়ন শেখের রাগ উঠলো। অভি হাওলাদারের মুখটা ছোট হয়ে গেলো। মেয়েটাকে ভীষণ পছন্দ করে সে। আগুন সুন্দরী এক কথায়।ইশ তার আর এই মেয়েকে পাওয়া হলো না।হুমায়ন শেখ রেগে গেলেন বোধ হয়। তিনি শক্ত কন্ঠে সুধালেন,
‘তুমি যা করছো ভেবে করছো তো মেহেনাজ’
‘হ্যাঁ আব্বু’
‘মেহেনাজ তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস।আব্বুর মুখে মুখে তর্ক কেনো করছিস’
‘আমি তর্ক করছি না ভাইজান। আমি সত্যি বলছি। আমি সর্বদা সত্য বলি এবং বলতে ভালোবাসি।’
‘আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে না। কখনোই এ বাড়িতে আসবে না। আমরা আজ থেকে কেউ না তোমার’
কথাটা শোনা মাত্রই চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পরলো।তবে দেখার মতো কেউ নেই। শেহজাদ বুঝতে পারলো প্রেয়সীর কষ্ট হচ্ছে। সে উঠে প্রেয়সীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। হুমায়ন শেখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমি মুনতাসিব খান নই। আমি শেহজাদ ইমতিয়াজ খান। কিভাবে নিজের প্রেয়সীকে রক্ষা করতে হয় তা আমি জানি!চিন্তা করবেন না পাঁচ বছর আগের অতীত কখনো পুনরায় ঘটবে না। আমি ঘটতে দিবোও না।’
থেমে তপ্তশ্বাস ফেলে পুনরায় বলে,
‘ভালোবাসি তাকে। আজ তাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী বানাবো।প্রেয়সীকে রক্ষা করতে জানি আমি এবং যত্ন করতেও জানি’
#চলবে ইনশাআল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম। দুঃখিত দু’দিন গল্প না দেওয়ার জন্য। আসলে একটু অসুস্থ এবং মন খারাপ থাকায় দিতে পারিনি।