বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :১২ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
421

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১২
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

লজ্জায় কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে বেলীর।মনে হচ্ছে কোনো চোর চুরি করে ধরা খেয়ে গেলো।লজ্জায় অসস্তিতে পুরো ফেস অন্য রকম হয়ে গেলো।দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে দিবে।

-আহা থামতো সামিয়া। মেয়েকে আর লজ্জা দিস না।
বলেই অট্ট হাসিতে ফেটে পরলো সামিয়া আর রিদিতা।

-থাকো তোমরা আমি যাই।(বেলী)
-আরে বাবা কোথায় যাচ্ছিস? আচ্ছা সরি আর তোকে লজ্জা দিবো না।
-আমরাই তো লজ্জা দিবো। আর লজ্জা দিলেই বা কি লজ্জা ভাঙার জন্য অন্য একজন তো আছে।তাই না বেলী আফু(সামিয়া)
সামিয়ার কথা শুনে রিদিতা হেসে দিল।

-আমি কিন্তু এখন সত্যি সত্যি চলে যাব।
-আচ্ছা আচ্ছা আর লজ্জা দিবো না।
-প্রতিবার বলছো লজ্জা দিবে না তাও লজ্জা দিয়েই যাচ্ছো।এটা ঠিক না।
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর লজ্জা দিবো না।

রাত বাজে দশটা।খাবারের পর্ব শেষে যে যার রুমে চলে গেলো। রূমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে সুবাস।বেলী তো খুশিতে আত্ম হারা।খুশি হবে না কেন? অবশেষে ফুপুর বাড়ি তার ও যাওয়া হচ্ছে।রাতে ডিনার করার সময় সুবাস বলে উঠলো

-আমি আর বেলী ও আপনাদের সাথে যাবো।তবে আমরা দু দিন থেকেই চলে আসবো।অনেক কষ্ট করার পর অফিসে থেকে ছুটি নিয়েছি।বেশি দিন অফ দেয়া ঠিক হবে না।

এই কথা শুনার পর বেলীর মন তো খুশিতে লাফাচ্ছে।ইস্ কি যে মজা হবে না।কত দিন পর ফ্যামিলি গেট টুগেদার হচ্ছে।নিজের জামা গুলো
গুছিয়ে সুবাসের সামনে গিয়ে বলে উঠলো বেলী
-থ্যাংক ইউ।
-কিসের জন্য ?
-এইযে আপনি যাওয়ার জন্য পারমিশন দিয়েছেন।
-হুম
আর কথা বাড়ালো না বেলী।এই লোকের আবার কি হলো।এমনি সময় তো কথা বলে আজ এমন চুপ চাপ হয়ে আছে কেনো? আজ লোকটাকে একটু বেশি গম্ভীর মনে হচ্ছে।শরীর ভালো না নাকি মন ভালো না?বেশি কথা বা ভেবে বেডে শুয়ে পড়লো বেলী।কিছু ক্ষন পর সুবাস শুয়ে পড়লো।বেলী বুজতে পাড়লো সুবাস শুধু এ পাশ ও পাশ করছে কিন্তু ঘুমাচ্ছে না।তাই লাইট অন করে ধীর কণ্ঠে সুবাস কে জিজ্ঞাস করলো
-কি হয়েছে আপনার?
সুবাস বেলীর দিকে তাকালো।সুবাসের চোখের দিকে তাকিয়ে বেলী আতকে উঠলো।চোখ গুলো ভীষণ লাল হয়ে আছে।সুবাসের মাথার কাছে বসে বললো
-কি হয়েছে? শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে?আম্মু কে ডাকবো?
-কেউ কে ডাকা লাগবে না।মাথা প্রচুর ব্যথা করছে।মাথায় কি একটু হাত বুলিয়ে দিতে পারবে?

বেলীর কোমর জড়িয়ে কোলে মাথা রেখে বললো সুবাস।বেলীর শরীর শির শির অনুভুতি হতে লাগলো। সুবাসের দাড়ি গুলো বেলীর পেটে বিধছে। এই আকুল চাওয়া কি ফিরিয়ে দেয়া যায়? নাহ ফিরিয়ে দেয়া যায় না।তাই বেলীও সুবাসের চাওয়া গ্রহণ করলো।অতি নরম ভাবে কাপা হাতে সুবাসের চুল গুলো টেনে দিলো বেলী।কিছুক্ষণ পর ঘন নিঃশ্বাসের আওয়াজে বুঝে গেলো সুবাস গভীর নিদ্রায় ডুব দিয়েছে।আজ বেলী গভীর ভাবে সুবাস কে লক্ষ করলো।লোকটাকে দেখে কে বলবে যে সারাদিন শুধু দমকা ধমকি করে,কি সুন্দর শান্ত দেখাচ্ছে।একদম বাচ্চাদের মত করে ঘুমিয়ে আছে।বেলীকে এমন ভাবে ধরে আছে যেন ছেড়ে দিলেই পালাবে।।সুবাসের ঘুম আর নষ্ট করতে চাইলো না বেলী।হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বুজতে পাড়লো বাসায় বেশ তোর ঝোর চলছে।আজ রাতে তারা সিলেটের জন্য রওনা দিবে।তাই তো যে যার মতো করে হাতের কাজ গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে।

রাত বাজে দুইটা।নিজের ফোন টাইম দেখে ফোন পকেটে রেখে দিলো সুবাস।সুবাসের জার্নি করার অভ্যাস থাকলেও বেলী একদম বেশি ক্ষন জার্নি করতে করে না।তাইতো কয়েকবার বমি করে অবস্থা খারাপ করে এখন সুবাসের কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। সুবাস বলেছিল নিজেদের গাড়ি দিয়ে যাবে কিন্তু রিদিতা আর সামিয়া বলছে যে বাস দিয়ে যাবে।তাইতো বড়দের সবাইকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে নিজেরা বাস দিয়ে যাচ্ছে। সবার চোখে ঘুম থাকলেই ঘুম নেই সুবাসের চোখে। সে তো এক কিশোরী কন্যাকে দেখতে ব্যাস্ত।দু চোখের মধ্যে বিচরণ করছে কিশোরী কন্যার মুখ খানা।বেলীর হাতকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেল সুবাস।বেলীর মুখে চাঁদের আলো আছড়ে পড়ছে।কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে।মায়া লাগছে খুব করে। অদূরে লাগছে।মনে হচ্ছে কোনো ঘুমন্ত ফুলকে দেখছে সুবাস।অবশ্য এই ঘুমন্ত ফুল হলো তার ফুল।তার নিজস্ব বেলী ফুল।

“মিশে যাবো তোমার র’ন্ধ্রে র’ন্ধ্রে
থাকবো আজীবন পাশে
দিলাম আমি এই আশ্বাস!
আমি শুধু হতে চাই
তোমার একান্ত ব্যক্তিগত
সুবাস !
শুধু মাত্র এই
বেলী ফুলের সুবাস!”

বলেই বেলীর চুলে চুমু খেল সুবাস।সে নিজেও ঘুমের দেশে পারি জমালো।

বেশ কিছুক্ষণ আগে ফুপুর বাসায় এসেছে তাঁরা।বড়রা তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। সুবাসদের একটু লেট হয়েছে আসতে।সকলে কথার মাঝে বসার ঘরে প্রবেশ করলো ইয়াসির আর সাজিয়া।তাদের দেখে সুবাস সহ সকলে একটু চমকে গেলো।

(তোফায়েল চৌধুরী আর মিতু চৌধূরী দুই ভাই বোন।বাবা মা দুজনই মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর হলো। তোফায়েল চৌধুরীর ওআইফ মিতা(সুবাসের ফুপু)।নিশি আর নিহাল তাদের ছেলে মেয়ে। নিহাল বড় আর নিশি ছোট।নিহাল সুবাসের থেকে দুই বছরের ছোট। নিশি আর মিহির সমবয়সী।দুজনেই এসএসসি এক্সাম দিবে।মিতু চৌধুরীর দুই ছেলে মেয়ে।ইয়াসির আফতাব আর সাজিয়া।সাজিয়ার জন্মের কয়েক মাস পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় মিতু চৌধুরীর স্বামী)

মূলত আজ তাদের সকলকেই নিজ বাসায় আসতে বলেছেন তোফায়েল চৌধুরী।তাও এক বিশেষ কারণে।

-যাও সব কথা পরে হবে যে যার রুমে চলে যাও।
বললেন মিতা বেগম।
সকলে নিজ নিজ বরাদ্দ কৃত রূমে চলে গেলো।সারা রাত জার্নি করে কি আর শরীর চলে নাকি।তাই খাবার খেয়ে রেস্ট করার জন্য সকলে চলে গেলো।

বেলা বাজে দশটা।সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে।বড়রা মিলে রান্নার কাজ দেখছে।শুধু উপস্থিত নেই সামিয়া আর ইয়াসির।

তারপর বলো সুবাস বিবাহিত জীবন কেমন যাচ্ছে ?(সায়েম)
-ঠিক আপনার যেমন যাচ্ছে আমার ও তেমন টাই যাচ্ছে।(সুবাস)
-আমাকে তো আমার বউ খুব আদর যত্ন করে।তোমাকে কি করে ?
-আদর যত্ন করার ফলই হলো চাঁদ। বুঝ না কেনো সুবাস ভাইয়া।(নিহাল)
-তুমি ছোটদের সামনে কি বলছো তার কি কোনো খেয়াল আছে ?(রিদিতা)
– আমি আবার কি বললাম (সায়েম)
আমার আর বউয়ের আদর যত্ন পাওয়া হবে না এই জন্মে।বউ যে লজ্জাবতী।
বলেই বেলীর দিকে তাকালো সুবাস।
-আপনারা আমার বান্ধবীকে লজ্জা দিয়েন না দেখুন লজ্জায় পুরো লাল টমেটো হয়ে গেছে আমার লাল টুকটুকে বান্ধবী।
বলেই হাসতে লাগলো সাজিয়া।সাজিয়ার কোথায় সকলে বেলীর দিকে তাকালো।বেলী এক দৌড় দিলো বসার ঘর থেকে রান্না ঘরের দিকে।ইস্ আর বেশি ক্ষন থাকলে মনে হয় জান বেরিয়ে যেতো বেলীর।এমন করে কেও লজ্জা দেয় নাকি?
বেলীর যাওয়ার পর শোনা গেলো বেশ জোড়ে হাসির আওয়াজ।

(আসসালামুওয়ালাইকুম।কেমন আছে। সবাই?সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এতো সাপোর্ট করার জন্য।আজ কিন্তু বেশ।বড় পর্ব দিয়েছি। ভালো লাগলে প্লিজ একটা কমেন্ট করে যাবেন।আপনাদের কমেন্ট আমার লিখার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তাই ছোট্ট করে হলেও আপনাদের মতামত দিয়ে যাবেন)
চলবে……?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here