#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব:৩
#মেঘকন্যা
ফুলে সাজানো বাসর ঘরে বসানো হয়েছে বেলীকে।এই দিন নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল তার ,এখন তো সব স্বপ্ন শেষ।সময় যে কিভাবে সব কিছু পরিবর্তন করে দেয় বুঝা যায় না।করো কথায় ঘোর ভাঙলো বেলীর।
-কি গো বেলী,আজকে কিন্তু জামাইর কথা মতো চলতে হইবো। জামাই যা কইবো তা কিন্তু হুনোনলাগবো।
রূমে প্রবেশ করতে করতে বললেন বিলকিস বেগম।
বেলী চোখ কুচকে বললো
– তুমি এমন ভাবে কথা বলছো কেনো?
– এই বেলী রাইগা গেলি কেন?আমি কি কোনো খারাপ কথা কইসি নাকি।(বিলকিস বেগম)
-আরে রাগ করিস না ,বাসর ঘরে মন ফুরফুরা রাখতে হয়।
কথাটা বলে চোখ টিপুনি কাটলো সামিয়া।সামিয়া আর বেলী সম বয়সী।দুজনেই এক কলেজে পড়ে।সামিয়া সাথে বেলীর খুব ভালো সম্পর্ক।এক জনের অন্য জন কে ছাড়া চলে না।
-বাসর ঘরে যে মন ফুরফুরা রাখতে হয় তুই কি করে জানিস ?
ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললো সুবাস ।
সুবাসকে দেখে মুখ কুচকে গেলো সামিয়ার। যাই হোক বড়ভাই ,তার উপর তাকে খুব ভয় পায়,তাই তো আস্তে করে বললো
-আমি কিভাবে জানবো ? আমার কি বিয়ে হয়েছে নাকি ?
-নাহ তোর বিয়ে হয় নি তবে জলদি বিয়ে দিতে হবে।অকালে পেকে যাচ্ছিস।
-চলোতো দাদী আমরা চলে যায়। খামোখা কাবাব মে হাড্ডি কেনো হমু।হুহ।
বলেই সামিয়া আর বিলকিস বেগম চলে গেলেন ,তারা চলে যেতেই সুবাস দরজা বন্ধ করে দিল।
হালকা ভয় হলো বেলীর মনে।এই বজ্জাত বেটার সাথে তাকে থাকতে হবে।কি জানি কি আছে কপালে। পরক্ষণে মনে হলো না এই ভারি শাড়ি পরে আর থাকা যাচ্ছে না একটু ফ্রেশ হলে ভালো লাগবে। বাথরুমের দিকে পা বাড়াতেই সুবাস বলে উঠলো
-দাড়াও
-দাড়াতে পারবো না।আমার কাজ আছে। আর ভেবেছেন কি হুম আপনার কথায় আমি নাচবো,আপনি যা করতে বলবেন তা করবো ? কখনোই না।আপনার জন্য,শুধু আপনার জন্য আজ আমার এই অবস্থা,আপনার একটা কথাও আমি শুনতে বাধ্য নই।
-এক কথা বার বার বলার অভ্যাস কিন্তু আমার নেই।
কথাটা বলেই বেলীর দেকি এগোতে লাগলো সুবাস।টা দেখে কিছুটা ভরকে গেলো বেলী ।কি মতলব এই লোকের।তার কাছে কেনো আসছে ?কি চাচ্ছে টা কি এই লোক?ভাবনার মাঝে টের পেলো করো নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে বেলীর ঘাড়ে।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো সুবাস তার ভীষণ কাছে।বুকে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে ,মনে হচ্ছে একক্ষণে হার্ট ফেল হয়ে যাবে। হবেই বা না কেনো এই প্রথম কোনো পুরুষের ছোয়া পেলো এতো কাছ থেকে।তাকে আরও একটু ভরকে দিতে সুবাস একহাতে বেলীর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ,অন্য হাত কপালের কাছে চুল গুলো কানের পিছে গুঁজে দিলো । ঠোঁট বেলীর কানের কাছে নিয়ে এলো ।কানের কাছে পুরুষালি ঠোটের ছোঁয়া পেতেই বেলী কেপে উঠলো। বেলীর অবস্থা দেখে মুচকি হেসে সুবাস ফিসফিসিয়ে বলল
-এতো কা’পা’কা’পি করছো কেনো ? আমি কি তোমার সাথে কিছু করেছি? বেশি কাপাকাপি করলে কিন্তু চু’মু টু’মু খেয়ে ফেলবো তখন কি করবে,শুনি ? আর হুম কি যেনো বলছিলো ,আমি কে ,কেনো আমার কথা শুনবে,কেনো আমার কথা মতো চলবে, তাই তো! তো শুনে রাখো আমি তোমার হাজব্যান্ড,তোমার সব কিছু।আমার মাঝেই তোমার শেষ এবং শুরু।
বেলী যেনো অবাকের শেষ পর্যায় , এ কোন সুবাস কে দেখছে বেলী।কি বলছে কি এই লোক।ক্ষনেই বেলীর মনে হলো সে শুন্যে ভাসছে।বেলীকে পাজা কোলে তুলে নিলো সুবাস।আয়নার সামনে দাড় করালো।লম্বা কালো চুলের বাঁধানো খোঁপায় বেলী ফুলের মালা গুঁজে দিলো।সাথেই কপালের মাঝ বরাবর টিপ পরিয়ে দিলো।বেলীর দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলীর চোখ দুটো বন্ধ।ঠোঁট অনবরত কাপছে।বেলীর কানের কাছে ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল
-নাও পারফেক্ট।
বলেই বেলীর কপালে চুমু খেল।পুরো শরীরে বিদ্যুৎ গতিতে শিহরণ খেলে গেল বেলীর।বেলীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে গেল সুবাস।ফ্রেশ হয়ে দেখলো বেলী সেই ঠিক জায়গায় দাড়ানো এক পাও নড়ে নি।
-যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
সুবাসের কথায় মস্তিষ্ক সচল হলো বেলীর। তড়িঘড়ি করে বাথরুমে চলে গেল। ফ্রশ হয়ে এসে ভাবতে লাগলো কথায় ঘুমোবে।
– তাড়াতাড়ি বেডে এসো ঘুমোতে হবে।
বেলী কথা মতো বেডে শুয়ে পড়লো। তবে একদম কিনার হয়ে যেনো ধাক্কা দিলেই বেড থেকে পড়ে যাবে।সুবাস সেদিকে না তাকিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
নতুন একটি দিনের সূচনা হলো।আকাশে নীল আভা ছড়িয়ে আছে।ঘড়ির কাটায় পাঁচটা বেজে ত্রিশ মিনিট ,সুবাস ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নিলো।বেলীকে ধির কণ্ঠে ডেকে তুললো।বেলীর নামাজ শেষ হতেই বেলীকে বললো
-আমার জন্য কফি করে নিয়ে আসো।
-এই সাত সকালে কে কফি খায়?আমি কফি বানাতে পারবো না।নিজের টা নিজে বানিয়ে নিন।আমার ঘুম আসছে।কথাটা বলেই বিছানার দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে সুবাস বেলীর হাত ধরে পেঁচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তা দেখে শুকনো ঢোক গিললো বেলী
-কেনো পারবে না কফি বানাতে ?
-সরুন আমার অসস্তি লাগছে।
-যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি কফি তৈরির জন্য হুম বলছো ,ততক্ষন পর্যন্ত এভাবেই থাকবো।
বলেই বেলীর আরো কাছে এগিয়ে গেলো সুবাস।
তৎক্ষণাৎ বেলী বলে উঠলো
-ছাড়ুন আমি কফি নিয়ে আসছি
কিচেনে গিয়ে ইচ্ছা মত কথা শুনলো সুবাসকে
পেয়েছে টা কি হুম? এর এমন উদ্ভট কাজই বা কেনো করছে এই লোক?বেটা বজ্জাত সব সময় হুকুম চালায়।হুহ! বোকা ঝকা করে কফি তৈরি করলো বেলী
-নিন আপনার কফি
বলেই উল্টো দিকে পা বাড়ালো বেলী।
-তুমি কই যাচ্ছো?
-আশ্চর্য্য!কই আর ঘুমোতে।
-চুপ চাপ বই নিয়ে বসো।সামনে পরীক্ষা সেই কথা কি মনে নেই নাকি ? ফেইল করার কি ইচ্ছা আছে নাকি ?
-আপনি চুপ করুন আমার পড়ার সময় হলে আমি পড়তে বসবো।আপনার এত ভাবতে হবে না।আপনি নিজের কাজে মন দেন।আমার যখন সময় হবে তখন পরে নিবো।
এই প্রথম দেখলো বেলী যে বিয়ের পরের দিন নিজের বউকে পড়তে বসতে বলে তাও আবার নিজের স্বামী।বিয়ে নিয়ে কতো শখ ছিল।সব সখ পানি ঢেলে দিয়েছে এই ব্যাক্তি।
-আমার কথা মতো কেউ কাজ না করলে আমি কিন্তু কাজ আদায় করার অন্য মাধ্যম জানি।
বেলী একপলক সুবাসের দিকে তাকালো ।এই লোকের সাথে কথায় না পেরে পড়তে বসলো বেলী
(আসসালামুয়ালাইকুম।কেমন আছেন সবাই।২ পর্বতে সবাই অনেক সাপোর্ট করেছেন।ধন্যবাদ সবাইকে।এভাবেই পাশে থাকবেন।ভুল হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।
চলবে……?