#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৩
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
দুপুর গড়িয়ে বিকেল বেলা। আকাশ পরিষ্কার।মৃদু বাতাস বইছে।ছোটরা সকলে মিলে হাঁটতে বের হয়েছে।বড়দের যাওয়ার কথা থাকলেও শেষে যাওয়া হলো না। আর যায় নি সামিয়া এবং ইয়াসির। ইয়াসির সচরাচর কোথাও যায় না। সামিয়া মাথা ব্যথার অজুহাত দিয়ে যায় নি।ইয়াসিরের সাথে কথা বলার জন্য স্পেস খুঁজছিল পেয়েও গেলো বটে।ইয়াসির আগে থেকেই ছাদে দাড়িয়ে ছিল।সামিয়া ছাদে লাগানো ফুলের গাছে পানি দেয়ার বাহানায় ছাদে এসেছে।যদি কোনো ভাবে ইয়াসির কে তার ভালোবাসা বুঝানো যায়।চেষ্টা করতে সমস্যা কোথায়? সে তো আর প্রেম করতে চাইছে না।একবার শুধু মানুষ টা হুম বলুক।ডিরেক্ট দিয়ে করে নিবে। ছাদের এক কোনায় ইয়াসির দাড়িয়ে ছিল।ইয়াসিরের কাছে গিয়ে বললো সামিয়া
-ইয়াসির ভাই ভালোবাসায় এত যন্ত্রণা কেনো?
-ভুল মানুষকে ভালবাসলে যন্ত্রণা পেতেই হবে? এই বয়স টাই আবেগের।এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
-এতো সহজে কি ভালোবাসা ভুলে থাকা যায়?
-মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।আপনি চেষ্টা করে দেখুন।আপনি পারবেন।
-আমাকে আগলে নিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো আপনার?আমি শুধু আপনার পাশে থাকতে চাই ইয়াসির ভাই।
-আপনি আমার পাশে থাকলে শুধু ক্ষতি নয় ভয়ংকর কিছু হয়ে যাবে। চাইলেই সবাইকে পাশে পাওয়া যায় না। নিয়তি মেনে নিতে হয়।
-আপনি আমার ভালোবাসা কবুল করলে আমাদের নিয়তি অন্যরকম হবে।একটা বার আমার ভালোবাসাকে নিজের করে দেখুন না?কেনো আপনার প্রতি এত টান অনুভব হয় বলুন না?
-শুনুন মেয়ে চাইলেও কিছু কিছু কাজ করা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। চুম্বক এবং লোহা এক সাথে থাকলে চুম্বক লোহাকে নিজের দিকে আকর্ষণ কাজ করবেই। নিজের প্রতি টানবেই ।তাই লোহার উচিৎ চুম্বকের থেকে দূরে থাকা। তেমনি আপনার ও উচিৎ আমার থেকে দূরে থাকা।
-আপনি বড্ডো নিষ্ঠুর ব্যক্তি ইয়াসির ভাই।
-নিষ্ঠুরতা আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশ্রিত।
বেশ অনেক ক্ষন হাটার পর তারা হাঁটতে হাঁটতে নদীর ঘাটে চলে এলো ।সকলে মিলে নৌকায় উঠবে বলে ঠিক করে।বেশ বড় একটা নৌকা ভাড়া করে নদী ঘুরলো তারা।নৌকা থেকে নেমেই চোখে পড়লো হওয়াই মিঠাই।অনেক পছন্দ এটা বেলীর।তাইতো চোখে পড়ার সাথে সাথেই খাওয়ায় জন্য বায়না ধরলো বেলী।সকলে মিলে হওয়াই মিঠাই সহ ফুচকা,আরো কিছু খাবার খেয়ে বাসায় ফিরলো।
-সামিয়া তুই এভাবে একা বসে আছিস কেনো?(সাজিয়া)
– বেশি মাথা ব্যাথা করছে?(বেলী)
সামিয়া চোখ তুলে তাকালো তাদের দিকে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে বুঝাই যাচ্ছে যে অনেক ক্ষন যাবৎ কান্না করার ফলে এমন হয়েছে।
– কান্না করেছিস কেনো তুই?
একনাগাড়ে বলে উঠলো বেলী আর সাজিয়া।
-ইয়াসির ভাই কি আমার ভালবাসা কখনো কবুল করবে না? (সামিয়া)
-তুই মন খারাপ করিস না।সব ঠিক হবে (সাজিয়া)
-তোরা আর আমাকে আশা দিস না।আমি আর তদের মিথ্যা আশা নিতে পারবো না।(সামিয়া)
-তুই আগে কান্না করা বন্ধ কর।মুড ঠিক কর।আমি ইয়াসির ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখবো (সাজিয়া)
-তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তোকে এই অবস্থায় কেউ দেখলে হাজার টা প্রশ্ন ছুড়বে। (বেলী)
-হুম।
বসার ঘরে খাওয়ায় পর্ব শেষ করে সকলে বসে আছে।শুধু উপস্থিত নেই সামিয়া।মাথা ব্যথার কথা বলে আগেই রূমে চলে গিয়েছে।রাজিয়া বেগম বেলীকে বললেন সামিয়া যে ডাকতে।
-চাচী সামিয়ার তো মাথা ব্যাথা।
-কিছু হইবো না তুই সামিয়াকে ডেকে নিয়ায়।
বললেন বিলকিস বেগম।
বেলী সামিয়া কে ডাকতে চলে গেলো।চিন্তা করতে লাগলো কি এমন হয়েছে যে সামিয়া কে এখনই ডেকে পাঠালো।
সামিয়া যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন মিতা বেগম তার ছেলে নিহালের জন্য সামিয়ার হাত চেয়েছেন।সামিয়াকে ছোট বেলা থেকেই খুব ভালোবাসেন। বলতে গেলে তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন যে সামিয়াকে নিজের ছেলের জন্য চাইবেন।তাইতো বড়রা সকলে মিলে দুজনের বিয়ে ঠিক করে রাখেন। এই যে সামিয়ার এইচ এস সি এক্সামের পড়ে বিয়ে হবে। বোনের কাছে মেয়ে দিবেন বলে মোর্শেদ হোসেন ও আপত্তি করেন নি।তবে রাজিয়া বেগম প্রথমে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন যে আত্মীয় মধ্যে এই রকম সম্পর্ক তার কাছে ভালো লাগে না। তা ছাড়া তিনি মেয়েকে নিজের পায়ে দারকরানোর পর বিয়ে দিতে চান।তিনি মনে করেন আত্মীয়র মধ্যে সম্পর্ক না করলেই ভালো।তবে সকলের বুঝানোর পর তিনি এই বিয়েতে রাজি হোন।মোর্শেদ হোসেন স্ত্রীকে বোঝান।মেয়ে ফুপুর কাছে থাকবে এটা তো ভালো কথা।নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন তারা ।মেয়ে শান্তিতে থাকবে আর ভালো ছেলের কাছে কেই বা না চাইবে মেয়ে দিতে।অবশেষে রাজিয়া বেগম রাজি হন।সব কিছু ঠিক থাকলেও তারা বাচ্চাদের মতামত নিতে চাইলেন।তাইতো সামিয়াকে ডেকে পাঠালেন।
-সামিয়া তুমি কি এই বিয়েতে রাজি ?
সামিয়াকে জিজ্ঞাস করলেন রাজিয়া বেগম।
সামিয়া এক পলক ইয়াসিরের দিকে তাকালো।নাহ লোকটার কোনো ভাবান্তর নেই।সামিয়া চুপ থাকলো। একে তো নিজের ভালোবাসার মানুষ কে কাছে পেলো না তার উপর আবার বিয়ে।প্রতিটা মেয়ের জন্য খুব কষ্টের মুহূর্ত এটা।নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে যেতে হবে।আপন মানুষ গুলোকে ছেড়ে আসতে হবে।তাই তো সামিয়ার চুপ থাকাকে সকলে সম্মতি ভেবে নিলো।সামিয়া এক দৌড় রুমে চলে গেলো।সকল ভাবলো হয়তো লজ্জা পেয়েছে।অথচ কেউ তার বুকের ভেতর রক্ত ক্ষরণ দেখতে পেলো না।বুকের ভেতর চলতে থাকা ঘুর্ণি ঝড় কেউ টের পেলো না।মন ভাঙার আওয়াজ কেউ পেলো না।বুকের ভিতর যে তান্ডব চলচ্ছে তা কেউ লক্ষ্য করলো না।নিহাল কে জিজ্ঞেস করা হলে সেও কিছু না বলে জায়গা ছেড়ে চলে যায়। দুই পরিবার বেশ খুশি।অবশেষে ছেলে মেয়েদের হাত এক করে বিয়ে টা হবে।
রাত গভীর ঝি ঝি পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। নিস্তব্ধ রাত।মৃদু বাতাস বইছে।সকলে নিদ্রায় ডুব দিলেও ডুব দিতে পারে নাই এক কন্যা ।সামিয়া নিজেকে অনেক ক্ষন যাবৎ আটকে রেখেছে।বেলী আর সাজিয়া তাকে অনেক বুঝিয়েছে।বলেছে যে লাস্ট বারের মতো তারা ইয়াসিরের সাথে কথা বলবে।এইবার ইয়াসির না বললে তাকে নিহালের সাথে বিয়ে বসতে হবে।আচ্ছা ভালোবাসার মানুষকে ভুলে অন্য কেউ কে গ্রহণ করা কি খুব সহজ? যারা ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যায় তাদের কি বুক কাপে না? মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ে না? হাত পা অবশ হয়ে যায় না? বুকের মাঝে রক্ত ক্ষ’র’ণ হয় না?পা*গল পা*গল লাগে না?নিজেকে শূন্য লাগে না?প্রিয় মানুষের কথা ভেবে কি চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে না?একটা বার কি প্রিয় মানুষের কথা মনে পড়ে না?পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলোর মধ্যে একটি হলো ভালোবাসার মানুষকে ভুলে থাকা।এই কঠিন কাজ আর দশটা মানুষ করলেও সামিয়া করতে পারবে না আর করতেও চায় না।যে করেই হোক আজ এই লোকের সাথে একটা বিহিত করতেই হবে।
(আসসালামুওয়ালাইকুম।কেমন আছেন সবাই।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগল অবশ্যই একটা কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।)
চলবে…..?