বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :১৪ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম

0
411

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৪
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

সামিয়া ইয়াসিরের রুমে প্রবেশ করে চোখ বুলালো পুরো রূমে। কোথাও ইয়াসির নেই।বারান্দা থেকে সি*গ্রেটের গন্ধ আসছে।সামিয়া বারান্দায় যেয়ে দেখলো ইয়াসির আকাশের দিকে তাকিয়ে সি*গ্রেট খাচ্ছে। সামিয়া দেরি না করে এক ঝটকায় পিছন থেকে ইয়াসিরকে জড়িয়ে ধরলো।ইয়াসিরের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে দু চোখের অশ্রু বিসর্জন দিলো। ঘটনা বুজতে পেরে ইয়াসির সামিয়াকে এক ঝটকায় নিজের থেকে সরিয়ে নিলো।
-এতো রাতে আমার রুমে কেনো এসেছেন?

-আপনার কি আমার জন্য একটুও মায়া হয় না? আমি আপনার কাছে দু হাত জোড় করে বলছি আমার ভালোবাসা মেনে নিন।আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না।

-ভালো ঘরের মেয়েরা রাতের বেলায় অন্য কোনো পুরুষের ঘরে যায় না।আপনি কেনো এসেছেন?চলে যান বলছি ।
ঝাজালো কণ্ঠে বলে উঠলো ইয়াসির।

-আমি যাবো না।আপনি প্লিজ এমন করবেন না।আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।আমি ম*রে যাবো।আমাকে নিজের করে নিন না।
বলেই সামিয়া আবারও ইয়াসিরকে জড়িয়ে ধরলো।বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে ইয়াসির।

-আপনি এতো রাতে আমার ঘরে এসেছেন এই কথা কেউ জানতে পারলে কে\লে\ঙ্কারি হয়ে যাবে।আপনার চরিত্রে দাগ লাগবে।
নিজেকে সামিয়ার থেকে ছাড়িয়ে সামিয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল ইয়াসির।

-দা’গ লাগুগ আমার সর্বাঙ্গ জুড়ে ,ছেয়ে যাক শহর জুড়ে আমার নামে দু’শ চরিত্রে কা’লী ,তবুও আমার আপনাকে চাই ।আপনাকে পেতে সকল ক/ল/ঙ্কের দাগ মাথা পেতে নেব আমি।সব কিছুর উর্ধ্বে আমার আপনাকে চাই।

-আপনি কেনো বুঝেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আপনি কেনো আমার পিছে পরে আছেন?আপনি প্লিজ বিয়েটা করে নিন। আমি আপনাকে গ্রহণ করতে পারবো না।লাস্ট বার বলছি আমার থেকে দূরে থাকবেন। ফার্দার আমার পিছন পরে থাকলে কিন্তু অনেক খারাপ হয়ে যাবে। আর শুনে রাখুন আমার জীবনে অন্য কেউ আছে।ইস্ দেট ক্লিয়ার।
বেশ জোড়ে চেঁচিয়ে বললো ইয়াসির।সামিয়া কেপে উঠলো।প্রিয় মানুষের মুখে অন্য জনের কথা শুনা কি খুব সহজ?নাহ মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সামিয়ার যে ইয়াসিরের জীবনে অন্য কেউ আছে। অস্রুসিক্ত নয়নে ইয়াসিরের দিকে তাকালো।নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

সকাল আটটা।সকলে বেশ খুশি।সকলে মিলে ঘুরতে যাচ্ছে সাদা পাথর। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর ভিজিটিং স্পট গুলোর মধ্যে একটি।বেলী তো আসার আগে অনেক খুশি ছিলো। কতো মজা করবে ভেবেছিল কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।তার সব চেয়ে কাছের মানুষের মন ভালো নেই সেখানে তাঁর মন কিভাবে ভালো হয়?সকাল বেলা সে আর সাজিয়া গিয়েছিল ইয়াসিরের কাছে।ইয়াসির সাফ সাফ তাদের কথা শুনতে বারণ করে দিয়েছে। সকাল সকাল ঢাকায় ব্যাক করেছে ইয়াসির।বলেছে কি এক ইম্পর্টেন্ট কাজ চলে এসেছে।কি আর করার।সামিয়াকে বুঝিয়ে রেডি হয়ে নিয়েছে।এখন মন ম*রা হয় থাকলে হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।তাইতো সুন্দর করে রেডি হয়ে নিলো।সকলে এক সঙ্গে বেরিয়ে গেলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

সকলে সাদা পাথরে পৌঁছে গেলো। এতক্ষণ মাইক্রো দিয়ে আসলেও মেইন লোকেশন যেতে একটি ট্রলার ভাড়া করতে হবে।তাই ট্রলার ভাড়া করে নিলো। পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর তারা সাদা পাথরে চলে এলো।কি সুন্দর দৃশ্য।যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে।একদম সরাসরি ইন্ডিয়ান পাহাড় গুলো দেখা যাচ্ছে।সেই সাথে বড় বড় ঝর্না। কি সুন্দর করে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তাই না?মানুষ মুগ্ধ হতে বাধ্য।যে কারো চোখ এই অপরূপ দৃশ্য দেখে পুলোকিত হবার কথাই। তাও যদি প্রথমবার এমন দৃশ্য দেখা যায়।বেলীর মন ও ভালো হয়ে গেলো।সুবাসের হাত ধরে পানির উপর পাথরে বসে পড়লো।শুধু পাথর আর পাথর দেখা যাচ্ছে।বড়রা কেউ পানিতে নামবে না তাই ট্রলারে বসে রইলো। ছোটরা মিলে মানিতে নামলো।বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো। সেখানে একটা মার্কেট ও বসে।সেই মার্কেট থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনলো বেলী।সাথে রিদিতা ও কেনা কাটা করলো।সাজিয়া ও তার পছন্দ মতো কিছু জিনিস কিনে নিলো।শুধু কিছু কিনে নাই সামিয়া।মন ভালো না থাকলে কি কিছু ভালো লাগে নাকি ? তার কাছেও সব কিছু বিষাক্ত লাগছে।অবশেষে ঘুরো ঘুরি করার পর বাসায় ফিরলো তারা।

যে যার মতো রেস্ট করে বসার ঘরে বসে আছে।
আজকের দিন টা কিন্তু বেশ ভালোই কাটলো।খুব মজা করেছি আজ।(সাজিয়া)
-হুম সাজিয়া আপু সাথে মাইক্রোতে বমিও করেছো। এই দেখো তোমার একটা সুন্দর ছবি ও তুলেছি আমি।
বলেই নিশি সাজিয়াকে ছবিটা দেখলো।ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সাজিয়া বমি করছে।হাতের বমির পলি।চোখ মুখ কেমন বাজে দেখাচ্ছে।নাক দিয়ে পানি বের হচ্ছে সাথে বেলুনের মতো ফুলে আছে।কি এক বিচ্ছিরি অবস্থা।

-এই ছবি ডিলিট কর বে/য়া/দব।রিদিতা আপু ওকে ছবি ডিলিট করতে বলো(সাজিয়া)
-আমি এই ছবি তোমার হবু জামাইরে দেখাবো(নিশি)
-ডিলিট দে তাড়াতাড়ি পরে ওর হবু জামাই দেখলে মান সম্মান থাকবে না ওর (রিদিতা)
রিদিতার কথা শুনে হাসতে লাগলো সবাই।হাসির মাঝে এক অন্যরকম আওয়াজ হলো।আওয়াজ টা আর কিছুর না কে যেন পাদ দিয়েছে।পদের শব্দ এসেছে মিহিরের দিক থেকে। আবার এক দফা হাসির আওয়াজ শোনা গেলো।

-তুমি কি পা’দ দিয়েছো নাকি মিহির?(সায়েম)
-অতিরিক্ত হাসির ফলে পেটের গ্যাস গুলো হওয়ায় রূপান্তর হয়ে বেরিয়ে এসেছে।কি দুর গন্ধ। ছিহ (নিশি)
-এখানে ছি করার কি আছে তোমার বুঝি পাদ আসে না।থাক এই টপিক বাদ দাও।এখন বলো কাল কোথায় যাচ্ছি আমরা?(মিহির)
-এখন দেখেছো তোমরা কিভাবে কথা ঘুরাচ্ছে
মিহির (নিশি)
-কাল যে যেদিক মন চায় যেও আমি আর বেলী ঢাকা ব্যাক করবো (সুবাস)

সুবাসের কথা শুনে সবার মুখ বাংলার পাঁচের মতো হয়ে গেলো।বেলীর মুখ কালো হয়ে গেলো। সবে মাত্র এলো এখনই আবার যাওয়ার কথা।

-কেউ কোথাও যাবে না।তোমরা আরো দুই দিন থেকবে তার পর যাবে।
মিতা বেগম বললে উঠলেন।
-আমার ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে ফুপু।মাত্র দুদিনের ছুটি নিয়ে এসেছে।
-কিছু হবে না আমি ইয়াসিরের সাথে কথা বলে নিয়েছে। সে সব কিছু হ্যান্ডেল করে নিবে বলেছে। আর কোনো কথা নয়।(মিতা বেগম)
-ফুপু দুই দিন থাকা হবে না। আর আমার কাজ তো আমাকেই হ্যান্ডেল করতে হবে তাই না?আবার বেলীর কোচিং মিস হচ্ছে।থাকলে হয়তো কাল থেকে পরশু চলে যাবো।

মিতা বেগম আর কথা বলেন না।এই ছেলে এক দিন থাকতে চেয়েছে এটাই বেশি।বেশি জুড়ো জুড়ি করা ঠিক হবে না। বেলী ও হাসলো খানিকটা । একদিন বেশি থাকতে পারবে।নাহলে তো কালকেই ঢাকা ব্যাক করতে হতো।

রাতে বেডে শুয়ে আছে বেলী।সুবাস ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে।বেলীর ফোনে টুক করে ম্যাসেজ আসলো।দেখলো সাজিয়া একটা ছবি পাঠিয়েছে।ছবির নিচে লিখা -দেখেছিস সুবাস ভাইয়া তোর দিকে কিভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
ছবিটা আজ তুলেছে সাজিয়া।বেলীর দিকে সুবাস তাকিয়ে ছিল আর তখনই ছবিটা তুলে নেয় সাজিয়া।

-বেশি কথা না বলে ঘুমা। (বেলী)
– কই একটু ধন্যবাদ দিবি যে এত সুন্দর ছবি তুলে দিলাম তা না করে,ঘুমাতে বলছিস(সাজিয়া)
-চুপ চাপ ঘুমা। আমিও ঘুমাই গুড নাইট।(বেলী)
-তুই এখন ঘুমাবি কেনো? তোর তো এখন জামাইর সাথে রোমান্স করার সময়।তার মধ্যে আজ ওয়েদার টাও কি রোমান্টিক। আহা(সাজিয়া)
-তোর মাথায় শুধু উল্টো পাল্টা কথা ঘুর ঘুর করে। অসভ্য একটা।(বেলী)
-উচিৎ কথা বললেই অসভ্য শুনতে হয়।শুন না আমাদের খালামণি ডাক কবে শুনাবি? প্রোসেসিং কি শুরু করেছিস নাকি?(সাজিয়া)
বেলী আর কথা বাড়ালো না।এদের সাথে কথা বলা মানে উল্টো পাল্টা কথা শুনতে হবে। ফোন অফ করে ঘুমিয়ে গেলো।
ঘুমের মধ্যে অনুভব করলো কেউ তাকে আষ্ট পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।করো গরম নিঃশ্বাস বেলীর কাঁধে পড়ছে।গ্রামে তো এমনি রাতে বেলা ঠান্ডা লাগে।তার উপর আজকে আবার বৃষ্টি পড়েছে। চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল।তাই তো ঘুমের ঘোরে বেলীকে জড়িয়ে ধরে আছে সুবাস।বেলী সুবাসের দিকে তাকায়,দ্রিম লাইটের আলোয় লোকটাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।কেমন বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টিয়ে ঘুমিয়ে আছে।বেশ স্নিগ্ধ লাগছে।বেলী সুবাসের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ অতিবাহিত করে পুনরায় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।
(আসসালামুওয়ালাইকুম।আশ করি সবাই ভালো আছেন।আজ কিন্তু বড় পর্ব দিয়েছি।ভালো লাগলে প্লীজ একটা কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।ভুল হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।অবশ্যই ছোট্ট করে হলেও আপনাদের মতামত দিয়ে যাবেন।)
চলবে……..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here