বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :১৭ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
301

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৭
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

সময় চলমান।করো জন্য থেমে থাকে না।এই তো দেখতে দেখতে বেলীর পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়ে গেলো।সাজিয়া তার সাথে ভর্তি হয়েছে।সামিয়া ভর্তি হয় নি।ভর্তি হয়ে কি করবে?বিয়ের পর তো শশুড় বাড়িতে থাকতে হবে তাই বড়রা ঠিক করেছে সিলেটের কোনো সুনামধন্য ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিবে সামিয়াকে।

সন্ধ্যা সাতটা।আজ বেলী সুবাসকে তাড়াতাড়ি অফিসে থেকে আস্তে বলেছে।আজ বেলী বায়না ধরেছে পুরো শহর ঘুরবে তার সাথে।বেলী কালো পাড়ের কলা পাতা রঙের শাড়ি পরে আছে।হাতে কালো রঙের কাচের চুড়ি।কপালে টিপ।চুল গুলো বরাবরের মতো খোঁপা করা।সুবাসের আসার খবর নেই।অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রবেশ করলো সুবাস।
-সরি লেট হয়ে গেলো।
-সমস্যা নেই।রেডি হয়ে নিন।
-খানিক টা মন খারাপ করে বললো বেলী।

সুবাস বেলীর দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ।মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে রেগে আছে।রেগে থাকবেই বা না কেনো বলেছিল পাঁচটার মধ্যে আসতে কিন্তু সুবাস আসলো সাতটায়।সুবাসের বা কি করার আজ অফিসে প্রচুর চাপ ছিল। নতুন ডিল ফাইনাল করতে হবে তো তাই।বেলীর গাল দুটো লাল হয়ে আছে।চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ও দেখা যাচ্ছে।দেখতে পুরো মনে হচ্ছে ফুলে বেলুন হয়ে আছে। টোকা দিলেই ফেটে যাবে। তবে এই রেগে থাকা মেয়েটার রেগে লাল হয়ে থাকা ফেস টা দেখতে ভালোই লাগছে।মেয়েটাকে দেখলেই কেনো এত ভালোলাগে?হয়তো তার বউ বলে।ফ্রেশ হয়ে দুজনে বেরিয়ে গেলো অজানা উদ্দেশ্যে।বেলীর মুড এখন ভালো।সুবাসের যে কত বার সরি বলা লেগেছে তা হিসেবের বাইরে।তবুও প্রিয়সীর মুখে হাসি ফুটাতে সুবাস সব করতে পড়বে।আজ আর গাড়ি নিলো না।বেলী বায়না ধরেছে রিকশা দিয়ে ঘুরবে। সুবাসও আর আপত্তি করলো না।পরিবেশ টা ভালো লাগছে বেলীর।মৃদু বাতাস বইছে।রিকশা নিজ গতিতে চলছে।অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় বেলী।তবে কেনো এমন অনুভুতি হচ্ছে?তবে কি সুবাস পাশে থাকায় বেলীর অন্যরকম লাগছে?নতুন কিছু অনুভব হচ্ছে?ভাবনার মাঝে বেলী লক্ষ্য করলো সুবাস তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বেলী অসস্তি হতে লাগলো।

-আপনি কিছু বলবেন?
খানিকটা নিচু গলায় বলল বেলী।
সুবাসের কাজে বেঘাত ঘটলো।বেলীর কোমর জড়িয়ে আরো একটু কাছে নিয়ে এলো।বেলীর হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল গুজে দিলো।বেলীর দু গালে লজ্জার আভা দেখা দিলো।এপাশ ওপাশ তাকিয়ে সুবাসের বহু জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে সময় টা উপভোগ করতে লাগলো।সুবাস হাসলো বেলীর কান্ডে।

-আজ বুঝি আমার বউয়ের লজ্জা লাগছে না।
ঠাট্টার সুরে বললো সুবাস।

-আপনিও আমার সাথে এমন করেন।
বলেই সুবাসের হাত ছেড়ে দিতে নিলে সুবাস আরো শক্ত করে বেলীর হাত ধরলো।

-“একবার যখন এই হাত ধরেছি তবে শুনে রাখো কন্যা মৃত্যুর আগে আর ছাড়ছি না।তুমি ছাড়তে চাইলেও পারবে না।পাশে পাবে আমাকে এই জন্মে এবং জন্ম জন্মান্তরের জন্য।”
…………..

বেলীর চুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো সুবাস।বেলী হাসলো সুবাসের কথায়।আজকাল সুবাসের কথা গুলো বেশ ভালো লাগে শুনতে ।হৃদয় শান্তি লাগে।অনুভুতি গুলো প্রজাপতির মত ডানা মেলে। তবে কি সে সুবাসকে ভালোবাসতে শুরু করেছে?নিজের প্রশ্নে নিজেই আটকে গেলো বেলী।নাহ এতো কিছু ভাবলে চলবে না।তার ভাবনার মাঝে রিকশা থামিয়ে দিলো সুবাস। চট জলদি ফুলের দোকান থেকে বেলী ফুলের মালা আর এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে এলো।বেলী ফুলের মালা বেলীর হাতে পরিয়ে হাতে চুমু খেলো।গোলাপের গুচ্ছ বেলীর হাতে দিলো।এই গুচ্ছ থেকে একটা গোলাপ নিয়ে বেলীর কানে গুজে দিলো।

– “হাতে চুরি
কানে ফুল
তুমি আমার বেলী ফুল”
বেলী মুচকি হাসলো সুবাসের কথায়।এই হাসিতে আছে লাজ,লজ্জা,ভালোলাগ,অন্যরকম এক মিশ্র অনুভুতি।

বিকাল বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে সামিয়া।সেই দিনের পর আর ইয়াসিরের সাথে দেখা হয় নি।লোকটা নিজে থেকেই তার থেকে দূরে দূরে আছে।সামিয়া অনেক ম্যাসেজ, কল করেছে কিন্তু লোকটা কোনো কিছুর রিপ্লে দেয় নাই।হয়তো এটাই তার ভাগ্য।হয়তো সব কিছু তাকে মেনে নিতে হবে।আকাশের পানে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবছে সামিয়া।

-এভাবে আর কত দিন মন খারাপ করে থাকবি ?(বেলী)

-এখন আর মন খারাপ হয় না।সব কিছু মেনে নিয়েছি।(সামিয়া)

-তাহলে কেনো এতো বিষন্নতা?(বেলী)

-বিষন্নতা আমার মাঝে মিশে গেছে।ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার বিষন্নতা।(সামিয়া)

-জীবন কখনো করো জন্য থেমে থাকে না।ইয়াসির ভাইয়া তোকে ভালোবাসে না। আর একতরফা ভালোবাসা বেশি দিন স্থায়ী হয় না।নিহাল ভাইয়া ভালো।নিয়তিকে মেনে নেয় বোন। তোর জন্য হয়তো নিহাল ভাইয়া উত্তম তাই সৃষ্টি কর্তা তোকে তার নামে লিখে রেখেছেন।

-হুম
বেলী আর কথা বাড়ালো না।কিছু সময় সামিয়াকে একা থাকতে দেয়া উচিৎ।একা থাকলে যদি বুকের যন্ত্রণা কমে তবে খারাপ কি।

বিয়ের আর মাত্র দশ দিন বাকি।বেশ তোর ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে।আজ সকলে মিলে ঠিক করেছে শপিং করতে যাবে।মিতা ফুপু নিজ পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে এসেছেন।বিয়ে ঢাকাতেই হবে।বেলী,সুবাস,সামিয়া,নিহাল,নিশি,মিহির সাজিয়া,রিদিতা,সায়েম সকলে এক সাথে শপিং করতে বের হলো।শুধু আসে নি ইয়াসির।কি যেনো ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে।তাই আর কেউ তাকে জোর করলো না। শপিং মলে এসে আগেই বর কনের জন্য ম্যাচিং করে শাড়ি আর পাঞ্জাবি কিনে নিলো। অবশ্য অনেক খুঁজো খুঁজির পর পছন্দ হলো ড্রেস।আর বাকিদের জন্য সেম লাল পাড়ের বাসন্তী শাড়ি আর ছেলেদের জন্য বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি কিনে নিলো হলুদের জন্য।মেয়েরা মিলে আরো কিছু শপিং করে করে নিলো।বিয়ের শপিং করে নিলো একেবারে।সকলে একটা ক্যাফেতে বসে পড়লো।বিয়ের শপিং বলে কথা। এতো হাটা হাটি করার পর সকলের মুখে ক্লান্তির ছাপ।
-যাক তাহলে নিহাল ও আমাদের দলে চলে আসবে কিছু দিন পর(সায়েম)
-তখন বুঝবে বিয়ে করার কি মজা(সুবাস)
হাসতে হাসতে বললো সুবাস।
-কেনো আপনারা কি বিয়ে করে অশান্তিতে আছেন?এমন ভাবে বলছেন না জানি কত টর্চার করা হয় আপনাদের। হুহ(বেলী)
খানিকটা রাগী গলায় বললো বেলী।
– নাহ পুরান হয়ে গেলে কি আর ভালো লাগে নাকি?তখন ভালোবাসার কথা বললেও বিষ লাগে বিষ।তখন তো নতুন কেউকে পাশে পেতে মন চায় (রিদিতা)
– এর জন্য তো শুধু চার বিয়ে করার হাদীস বাদে আর কোনো হদিস জানে না (বেলী)
– হুম আমিও ভাবলাম আরেকটা বিয়ে করবো।সামিয়ার বিয়ে টা হয়ে গেলেই করে নিবো।(সুবাস)
সুবাসের কথা শুনে বেলীর মুখ বাংলা পাঁচের মতো হয়ে গেলো।বেলী আর কোনো কথা বললো না। অন্য সবাই নানা বিষয় কথা বললেও বেলীর মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হলো না।সুবাস ও ভাবলো হয়তো একটু বেশি বলে ফেলেছে।যাইহোক, খাবার চলে এলো।যে যার মতো খাবার খেয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দিলো।

(আসসালামুওয়ালাইকুম।আশ করি সবাই ভালো আছেন।ধন্যবাদ সবাইকে এতো সাপোর্ট করার জন্য।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগল অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।)
চলবে…….?

হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here