#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১০
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে সামিয়া।ভার্সিটির জন্য কোচিং করতে এসেছে।বেলিও আজ আসে নি।বাড়ি ফেরার পথে বেশ জোরে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।ভিজে পুরো একাকার অবস্থা।আজ ছাতা নিয়েও বের হওয়া হয় নি।একটু আগেও রোদের আলোয় সব কিছু চিক চিক করছিল পরক্ষনেই আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা সৃষ্টি হয়।চারপাশে দমকা হওয়ার সৃষ্টি হয়। আকাশ থেকে ধরণীর বুকে নেমে আসে বর্ষণ।মুহূর্তের মধ্যেই মুসুল ধরে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়। আর বৃষ্টি পড়লে তো একটা বড় সমস্যা রিকশা পাওয়া যায় না।তাই তো এতক্ষণ রিকশার জন্য দাড়িয়ে থেকেই কোনো লাভ হলো না। তার উপর আবার সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে কি আর করার ভেজা শরীর নিয়ে রাস্তার পথ ধরে হাঁটতে লাগলো সামিয়া।মুহূর্তের মধ্যে কোনো এক ঝাঁঝালো কন্ঠ কানে এলো
-বৃষ্টিতে ভিজে এভাবে কোথায় যাচ্ছেন মিস সামিয়া।
সামিয়া এক পোলোর ইয়াসিরের দিকে তাকালো।
-কি হলো কথা বলেছেন না কেনো ?
সামিয়াকে চুপ থাকতে দেখে বললো ইয়াসির।
-না মানে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম।
-গাড়িতে বসুন ড্রপ করে দিচ্ছি।
-না সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো।
এই কাক ভেজা শরীর নিয়ে আপনি নিশ্চই চাইবেন না আপনার দিকে কেউ লালসার নজরে কু দৃষ্টি দিক?
কথাটা কানে আসতেই নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যায় সামিয়া।। ড্রেস পুরো শরীরে লেপ্টে আছে ভীষণ বাজে দেখাচ্ছে।নিজের ওড়নাটা দিয়ে আরো একটু নিজেকে ঢাকার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে ইয়াসিরের পাশের সিটে বসে পড়লো সামিয়া।ইয়াসির ড্রাইভিং করতে লাগলো।বেশ অনেক ক্ষণ সামিয়া কে পরখ করে নিজের পরনে শার্ট এর উপর জ্যাকেট সামিয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে বললো
-এটা গায়ে জড়িয়ে নিন ঠান্ডা লাগবে না।
-যা সমস্যা নেই।আমি ঠিক আছি।
-আপনাকে পড়তে বলেছি পরে নিন।
-আমার প্রয়োজন নেই বললাম তো
গাড়ি ব্রেক করলো ইয়াসির।সামিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজ দায়িত্বে জ্যাকেট জড়িয়ে দিলো।হঠাৎ ইয়াসিরের এত কাছে আশায় মুহূর্তে জন্য মনে হলো দম আটকে এলো সামিয়ার।বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম শব্দ শুরু হলো।নিজ জায়গায় বসতে বসতে ইয়াসির বললো
-ঠান্ডায় কাপছেন অথচ জ্যাকেট নিতে বারণ করছেন।আপনাদের মেয়েদের এই এক প্রবলেম সব জায়গায় নিজেদের মন মর্জি চালান।
-থ্যাংক ইউ ইয়াসির ভাই।আপনাকে
-শুনুন বেশি কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই।আপনার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলেও আমি সেম কাজ করতাম।তাই মনের মধ্যে অন্য কোনো চিন্তা আনবেন না ।
ইয়াসির ভাই একবার আমার ভালোবাসা কবুল করে দেখুন না? নিজের সবটা আপনার জন্য উজাড় করে দিবো।নিজের বক্ষ পিঞ্জিরায় এই লুকাইত ভালোবাসা একবার মেনে নিন না?নিজের মনে কি আমাকে একটু জায়গা দেয়া যায় না ?
কথা গুলো নিজের মনে মনে বললো সামিয়া।দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।কেনো নিয়তি এত কঠিন?কেনো ভালোবাসায় এত যন্ত্রণা?ভালোবাসা তো শুদ্ধ জিনিস তাও কেনো এতো হৃদ মাঝারে এত রক্ত ক্ষরণ হয়?ইয়াসির ভাই কি কখনও তার ভালোবাসা বুঝবে না?
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে বাসার কাছে চলে এলো টেরও পেলো না
-কি ব্যাপার গাড়িতে বসে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি?
-নাহ।চলে যাচ্ছি আমি
বলেই গায়ে জড়ানো জ্যাকেট খুলতে লাগলো সামিয়া
-এই জাকেটের প্রয়োজন নেই আমার।আপনি পরে থাকেন
সামিয়া আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।ইয়াসির এক পলক সামিয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো ।
অফিসে থেকে এসেছে বেশ খানিক ক্ষণ হয়েছে সুবাস।রূমে এসে বেলীকে পেলো না।ফ্রেশ হয়ে বেশ কিছু ক্ষন পর বেলীর কোনো খোঁজ না পেয়ে বেলীকে ডাকলো
-কি হয়েছে? চেচাচ্ছেন কেনো ?
-আমি চেচাচ্ছি?কোথায় স্বামী আসছে একটু আদর সোহাগ করবে তা না করে দুর দুর করছো।
-কি জন্য ডেকেছেন বলেন। কাজ আছে আমার।
-আমি বাসায় থাকলে কোনো কাজ করতে হবে না তোমার।আমি বাসায় থাকলে তোমার শুধু একটাই কাজ আর সেটা হলো আমার সাথে থাকা।
-কেন আপনি কি বাচ্চা নাকি যে আপনের পিছে ঘুর ঘুর করবো?
-উহু আমি বাচ্চা না তবে কয়েক দিন পর বাচ্চার বাবা হব।
-আপনি তো গম্ভীর মানুষ ছিলেন তাহলে এত ঠোঁট খাটা সভাবের কি ভাবে হলেন ?
– বউ পাশে থাকলে স্বামীদের ঠোঁট কাটা স্বভাবের হতে হয়।এখন যদি আমি ঠোঁট কাটা স্বভাবের না হয়ে তোমার মত লজ্জা পাই তাহলে তুমি আমি দুজনার সুখের সাগরে ভাসবো কি করে? আর সুখের সাগরে না ভাসলে বাচ্চা আসবে কিভাবে?পরে সবাই আমার পুরুষত্বে প্রশ্ন তুলবে।
বলেই হাসতে লাগলো সাবাস
বেলী মুখ দিয়ে চ উচ্চারণ করলো।কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে বসার ঘরের দিকে হাটা ধরলো।সুবাস ও তার পিছু নিলো
বসার ঘরে বসে আছে সামিয়া,মিহির,আমজাদ হোসেন,বিলকিস বেগম এর মনিরা বেগম।রিতা বেগম আর রাজিয়া বেগম রাতের খবর তৈরি করছেন।
-সুবাস আমরা সবাই যাবো।তুমি আর বেলী ও চলো তোমার ফুপু অনেক বড় করে যেতে বলেছে।
বললেন আমজাদ
-বাবা দেখো বেলীর কোচিং করতে হবে।ভালো ভাবে পড়তে হবে।ভালো ভাবে না পড়লে ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হবে কি করে? তা ছাড়া আমারও অফিসে কাজ আছে।তোমরা যেয়ে ঘুরে আসি।নেক্সট টাইম আমি বেলীকে নিয়ে যাব নি।
-ভাইয়া তোমার চলো।এখন সবাই এক সাথে গেলে ভালো লাগবে।(সামিয়া)
– হুক ভাইয়া চলো এক সাথে মজা হবে(মিহির)
-তোরা যা আমরা নেক্সট টাইম যাবো নি
কেউ আর কথা বাড়ালো না। এতক্ষণ সময় পুরো নীরব ভূমিকা পালন করেছে বেলী।অন্য সময় হলে তো মুখ দিয়ে খই ফোটে তবে আজ উল্টো চিত্র।অন্য সবাই বিষয় টা খেয়াল না করলেও সুবাস ভালো ভাবেই খেয়াল করেছে।হালকা পাতলা কথা বলে ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো।বেলী ও টুক টাক কাজ শেষ করে রূমে চলে এলো।রূমে এসে কোথাও সুবাসকে পেলো না।নিজের মতো ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল।বেশ কিছু ক্ষন পর সুবাস বেলীর হাত টান মেরে বসিয়ে দিলো।এক ঝটকায় বেলীকে কোলে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো।বেলীকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গেট লক করে দিলো
-কি শুরু করেছেন রাতের বেলা?ঘুমোবো আমি।ছাড়েন আমাকে।
-চুপ চাপ বসে থাকো।
বেলী তাও ছুটো ছুটি করতে লাগলো।
-তুমি এখন চুপ চাপ না বসলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
সুবাসের ধমকে বেলী চুপ হয়ে গেলো।
বেশ কিছুক্ষণ ড্রাইভিং করার পর একটা বড় শপে চলে এলো দুজনে।বেলীকে অনেক রকমের চকলেট চিপস কিনে দিল সুবাস।তবুও বেলীর মুখে হাসির কোনো রেখা নেই।মুখটা এখনো মলিন হয়ে আছে ।বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে বসতেই বেলীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল সুবাস
-কি হয়েছে বেলী?তোমার কি মন খারাপ।
(আসসালামুওয়ালাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন।ধন্যবাদ সবাইকে এতো বেশি সার্পোট করার জন্য।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগল অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন। আপনাদের একটা কমেন্ট আমার লিখার আগ্রহ আর বাড়িয়ে দেয়।তাই বেশি বেশি কমেন্ট করবেন)
চলবে……?