#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৬
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
সন্ধ্যা আটটা।বসার ঘরে বসে কথা বলছে ছোটরা।সাথে নাস্তা করছে।তাদের আড্ডার মাঝে
মিহির বলে উঠে
-চলো আমরা কানামাছি খেলি?
মিহিরের কথা শুনে সকলেই রাজি হয়।বসে না থেকে কিছু করলেও ভালো লাগবে আর কালকে তো এমনিও বেলীরা চলে যাবে।সময় টা একটু মজা করে নেয়া যাক।সকলে রাজি থাকলেও রাজি হয় না সুবাস। সে খেলবে না সাফ সাফ বলে দিয়েছে।সাথে বেলীকে বলেছিল খেলতে মানা কিন্তু বেলী তো আর কারো কথা এত তাড়াতাড়ি মানবে না।একে একে সকলের বারি শেষ হয়ে এখন বেলীর বারি এসেছে।এখন বেলীর চোখ বাঁধা হবে।বেলী চোখ বাঁধা অবস্থায় গোয়াল ঘরের সামনে চলে এলো।গোয়োল ঘরের কাজ চলছে।তাই পাশে ইট গুলো সাজানো ছিল যদিও তা অল্প কয়েকটা।সাথে সেই জায়গায় ছিল কাদা।বেলী কাদায় পিছলে গিয়ে পায়ে বারি খায় ইটের সাথে।সাথে সাথে চিল্লিয়ে উঠে বেলী।প্রচুর ব্যথা পেয়েছে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।সকলেই উপস্থিত হয় বেলীর চিৎকার শুনে।
-তোমাকে আমি খেলতে বারণ করেছিলাম।
ধমকের সুরে বলে সুবাস।
বেলী আরো জোরে কান্না করে দেয়।নিজের উঠার মত শক্তি টুকু নেই।সুবাস বেলীকে কোলে তুলে নেয়।
-একদম ঠিক হয়েছে ব্যথা পেয়েছো।বার বার না করলাম যে খেলতে যেও না।
রাগী গলায় বলল সুবাস।
-আমি কি জানতাম নাকি যে পরে যাবো।
কান্না মিশ্রিত গলায় বললো বেলী
-ঠাটিয়ে একটা লাগাবো না যে মুখে মুখে তর্ক করা বের হয়ে যাবে।
-আপনি আমার সাথে এমন করেন কেনো।আমাকে আপনার কোল থেকে নামান।কোলে নিতে কষ্ট হচ্ছে বললেই পারেন এত ধমকানোর কি দরকার?
-ব্যথায় কাদছো তবুও ঝাঁজ কি।
আজ দু দিন হলো বেলী ও সুবাস ঢাকায় ফিরে এসেছে। তাদের সাথে ফিরে এসেছে সামিয়া।অনেক বার সবাইকে বুঝিয়ে এখানে এসেছে সামিয়া। কেউ তো আসতেই দিবে না।পড়ার দোহাই দিয়ে চলে এসেছে।সুবাস গিয়েছে অফিসে।সামিয়া দুপুরের রান্না টু টাক হেল্প হরছে কোহিনূরকে। কোহিনুর অনেক দিন হলো এই বাসায় কাজ করছে।বেশ ভালো মনের মানুষ।কিছু ক্ষন কোহিনূরের সাথে কথা বলে বেলীর কাছে গেলো সামিয়া।হাতে গ্লাস ভর্তি ফলের যুস।সুবাসের করা নির্দেশ এগুলো খেতে হবে।কোমর আঘাত একটু কম লাগলেও পায়ের পাতায় আঘাত লাগায় ডান পায়ের পাতার দিকে ছোট আঙ্গুলের হার ভেঙে দিয়েছে ।ডাক্তার বলেছে পুরো পুরি বেদ রেস্ট থাকতে।
-আমি এই গুলো খাবো না।আমার প্রতিদিন ভালো লাগে না এগুলো খেতে।
-খেতে হবে সুবাস ভাইয়ার আদেশ।
-এই লোকের এই আদিখ্যেতা আমার ভালো লাগে না। আজাইরা।
-এটা আদিখ্যেতা না এটা ভালবাসা। তুই সহজে পেয়েছিস বলে তোর কাছে আদিখ্যেতা মনে হচ্ছে।তুই ভালোবাসা পাচ্ছিস,কদর করা শিখে যা নাহলে পরে পস্তাতে হবে।তোর মতো সবার ভাগ্যে যদি ভালোবাসা লিখা থাকতো কতই না ভালো হতো।
বেলী চুপ হয়ে গেলো।সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার চোখে জল।ইস্ তার কাছে যদি এমন কিছু থাকতো যা দিয়ে মেয়েটার যন্ত্রণা কমানো যেতো তাহলে মেয়েটার এত যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না।মেয়েটা কেমন নির্জীব হয়ে আছে।বিয়ের কথা হওয়ার পর তো মনে হয় হাসতে ভুলে গেছে।আগের মত চঞ্চলতা নেই সামিয়ার মাঝে।যদি মেয়েটার কষ্ট এক ইঞ্চিও কমানো যেতো তাহলে বেলী তা করতো কিন্তু আফসোস বেলীর হাতে কিছু নেই।যদি সম্ভব হতো তাহলে সামিয়ার কাছে ইয়াসিরকে এনে দিতো।কিন্তু তাও সম্ভব নয়।তবে বেলীর বিশ্বাস যদি সামিয়ার ভালোবাসা সত্যি হয় এবং স্রষ্টা যদি ইয়াসিরের সাথে সামিয়ার ভালো চান,দুজনের দ্বারা দুজনকে পরিপূর্ণ করতে চান তবে তাদের মিল ঘটবেই।
রাত দশটা বেলীকে খাইয়ে দিচ্ছে সুবাস।অসুস্থ হওয়ার পর বেলীকে বেড থেকে উঠতেই দেয় না সুবাস।খাবার পর্যন্ত খাইয়ে দেয়।বেলী বারণ করার পরও করে।বেলীর অভ্যাস ঘুমোনোর আগে চিরুনি করা।এই কাজ এখন অতি যত্নে সন্তপূর্ণে সুবাস করে দেয়।মনে হয় বেলী বাচ্চা।এই তো কাল শুধু বলেছিল মাথায় তেল দিবে।নিজে নিজে তেল দিতে নিলে সুবাস বাধা দেয়।যত্ন সহকারে বেলীর মাথায় তেল দিয়ে দিয়ে দেয়।।এমন কি বেলীর কাপড় পর্যন্ত সুবাস ধুয়ে দিয়েছে। সুন্দর যত্ন করছে।যে নারী পুরুষের যত্ন পায় সে নারী নাকি ভাগ্যবতী। তাহলে কি বেলী ভাগ্যবতী?নিজের মনেই নিজে প্রশ্ন করে বেলী।
কেটে গেছে অনেক গুলো দিন বেলী এখন পুরো পুরি সুস্থ।শুধু মন আজ ভীষণ খারাপ।বিকেল দিকে টিভি দেখার জন্য অন করতে স্ক্রিনে ভেসে উঠে চেনা মুখ।এই মুখ খানা আর কারো নয় ফাহিমের। হেডলাইনে লিখা নারীদের সাথে প্রেম আলাপ করে নারী পাঁচার করে। নারী ধর্ষণ করে।এমন কি চুরি ডাকাতি পর্যন্ত করে। এখন পর্যন্ত এই কেস গুলো তার উপর চার্জ করা হয়েছে।বেলী পুরো স্তব্ধ।হাত পা কাপছে।চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।দুনিয়া সব ঘোলা লাগছে এই কাকে ভালোবেসেছিল সে?
সুবাস অফিসে থেকে ফিরে দেখেছে বেলী শুয়ে আছে।তাই বেলীকে ডাক দেয় নাই। বেলীর নাকি মাথা ব্যথা করছে।তাই ডিনার শেষ করে খাবার নিয়ে এসে বেলীকে ডাক দিলো সুবাস
-বেলী উঠো খেয়ে নাও।
বেলীর কোনো আওয়াজ এলো না।
সুবাস এবার বেলীর উপর থেকে চাদর সরিয়ে নিলো।বেলীর হাত টেনে বেডে বসিয়ে দিলো।কিন্তু বেলীর দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।বেলীর দু চোখ লাল হয়ে আছে।
-কি হয়েছে বেলী কাদছো কেনো ?
….
-বলো আমায় কি হয়েছে?
এবার আর বেলী নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।নিজ থেকে প্রথম বেলী সুবাস কে জড়িয়ে ধরলো। বেলী সুবাসকে ধরে কান্না করতে লাগলো।প্রথমে সুবাস থমকে গেলো।কয়েক সেকেন্ড পর নিজেকে সামলিয়ে বেলীকে জড়িয়ে ধরলো।বেলীকে প্রশ্ন করলো
-কি হয়েছে টা কি বেলী? না বললে বুজবো কি করে?
বেলী এবারও কিছু বলবো না।শুধু সুবাসের বুকে মাথা রেখে কয়েক মিনিট অতিবাহিত করলো।মাথা তুলে সুবাসের দিকে তাকিয়ে পুরো ঘটনা বললো। সুবাস বেলী কে বললো
-দেখো বেলী ভালোবাসা ভুল কিছু নয়।কিন্তু ভুল মানুষকে ভালোবাসা পাপের সমতুল্য।তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছ তার জন্য। সে তোমার যোগ্য ছিল না।কেনো নিজের চোখের জল অন্যের জন্য ফেলছো?
-আমার কষ্ট হচ্ছে
-ভালবাসলে কষ্ট হবেই কিন্তু কষ্টকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।নিজের মতো করে চলতে হবে। বাঁচা শিখতে হবে।অতীতকে ভুলতে হবে।নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হবে।
-আপনি কি আগে থেকেই ওর সম্পর্কে জানতেন?
-এতো কিছু জানতাম না বাট ছেলে যে ভালো না তা জানতাম।
-থ্যাংক ইউ।আপনি না থাকলে হয়তো আমার সাথেও বাজে কিছু হয়ে যেতো।
-চুপ কিছু হতো না।আমি আছি না।আমি কিছু হতে দিতাম না।
বলেই বেলীকে ছেড়ে দিয়ে ভাত মাখিয়ে তার সামনে ধরলো।বেলীর খাওয়া শেষ করে বেডে শুয়ে পড়লো।
-আমি আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই।দেবেন কি আমায় আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর সুযোগ?
সুবাসের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এ যেনো মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টি।বেলী সুবাসের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো।নিজ প্রেয়সীকে দু হাতে আগলে নিলো সুবাস। বক্ষ পিঞ্জিরায় আজ অন্য রকম প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে সুবাসের।হয়তো প্রেয়সীর অনাকাঙ্ক্ষিত আগমনের জন্য।যাক প্রিয়সী নিজ ইচ্ছায় তার বুকে মাথা রেখেছে তা আর কম কিসে?বেলীকে শক্তি করে জড়িয়ে ধরেবেলীর চুলে চু’মু খেয়ে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেলো
(আসসালামুওয়ালাইকুম।কেমন আছেন সবাই? ধন্যবাদ সবাইকে এতো সাপোর্ট করার জন্য।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।)
চলবে…….?