বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :২২ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
439

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২২
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

নতুন এক দিনের সূচনা।সূর্য মামার রোদের আলোয় ঘুম ভেঙে গেলো বেলীর।চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলো সুবাস বুকে। ঠোঁটে হাসি নিয়ে সুবাসের চুলে হাত বুলিয়ে দিল।কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে।বলতে হবে এই কয়েক দিন প্রচুর চাপ গিয়েছে সুবাস উপর। বড় ভাই বলে কথা।বেলী গড়িয়ে দেখলো আটটা বেজে দশ মিনিট।বেলী সুবাসের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠতে নিলে হাতে টান পড়ে।
-“এভাবে চোরের মত চু’মু কেনো খাচ্ছো?”
– “আপনি কখন উঠলেন?”
-,”যখন তুমি আমাকে লুকিয়ে চুমু খাচ্ছিলে।”
-“ছাড়ুন উঠতে হবে।”
-“নাহ এবার চু’মু খাযও।চুমু না খেলে উঠতে দিবো না।”
বেলী সুবসের কোথায় কান না দিয়ে।সুবাসের হাত ছাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।সুবাস হাসলো।এই মেয়ের এমন ভয় পাওয়া মুখ দেখতে ভালোই লাগে।বেলী ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এলো।

-“যা বেলী নাস্তা করে নে।আমি নাস্তা দিচ্ছি।”(রিতা বেগম)
-“হুম “(বেলী)
– “চাচী আমাকেও নাস্তা দিও।”
সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললো সুবাস

সুবাস আর বেলী নাস্তা করতে বসে।আমরিন আগে থেকেই টেবিলে বসে নাস্তা করছিলো।হঠাৎ কাশী উঠে যায় আমরিন।সুবাস তাড়াতাড়ি করে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
-“তুমি ঠিক আছো, আমরিন?”
-“জ্বী ভাইয়া।আপনি পানি এগিয়ে না দিল কি যে হতো।”
নেকা সুরে বলল আমরিন।
– “হুম”
বেলী সুবাসের দিকে এক পলক তাকিয়ে ফির আমরিনের দিকে তাকালো।বেলীর রাগে লাল হয়ে গেলো। বেলী কোনো কথা না বলে সামিয়ার রুমে চলে গেলো।সুবাস নাস্তা শেষ করে উপরে চলে গেলো।

-“তুমি এতো রেগে আছো কেনো বেলী ভবি?”সাজিয়া
-“তুই কিভাবে জানলি বেলী রেগে আছে?”(রিদিতা)
-“আরে বেলী ভাবীকে দেখলাম নাস্তা পুরোটা শেষ না করেই চলে এলো তাই আর কি”(সাজিয়া)
-“তুই কি বেলী ভাবি বেলী ভবি লাগিয়ে দিয়েছিস।”(বেলী)
-“আরে সুবাস ভাই বললো না তার বউ কে যেনো বেলী ভবি বলা হয় তাই এর কি।”(সাজিয়া)
-“ওহ।কি হয়েছে বেলী নাস্তা না করে চলে এলি
কেনো?” রিদিতা
-“এমনি আপু ভালো লাগছিলো না”(বেলী )
-“এমনি নাকি জেলাসি?হুম ” সাজিয়া
বেলীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল সাজিয়া
-“কি বলছিস তুই? জিলোসি! তোর কথা কিছু বুঝছি না।”রিদিতা
-“আরে সুবাস ভাই ,বেলী ভাবি আর আমরিন আপু নাস্তা করতে বসে ছিল।আমরিন আপুর খাবার গলায় আটকে গেলে সুবাস ভাই পানি এগিয়ে দেয়।আর আমাদের বেলী ভাবির মুখ রাগে লাল হয়ে যায়।তাই তো নাস্তা না করে উপরে চলে এলো।”
-“তুই বেশি বুঝছিস সাজিয়া।”(বেলী)
-“আমি কোথায় বেশি বুজলাম বেলী ভবি।”(সাজিয়া)
জেলাসি তো আর শুধু শুধু হয় না যখন আমরা কেউ কে ভালোবাসি তখন জেলাসি হয়।”(রিদিতা)
-“ও হো! বেলী ভাবি তাহলে সুবাস ভাইকে ভালোবাসে।”
বেলীকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো সাজিয়া
-“তুই চুপ কর।তুই এক লাইন বেশি বুঝছিস।”(বেলী)
তাহলে কি তুই বলতে চাচ্ছিস তুই সুবাসকে ভালোবাসিস না?” রিদিতা
…….
-“দেখেছিস আপু চুপ থাকা কিন্তু সম্মতির লক্ষণ।”(সাজিয়া)

বেলী এবার মুখ কুচকে চলে গেলো।এখানে এসেছিলো একটু কথা বলতে।উল্টো কি হলো তাকে সবাই লজ্জা দিচ্ছে।বেলী চলে যেতেই সাজিয়া ও রিদিতা শব্দ করে হেসে উঠলো।

দুপুরের খাবার শেষ করে ছোটরা চলে গিয়েছে পার্লারে।বেলী বাসায় সাজবে।সবাই জোর করেছিল কিন্তু বেলী যেতে নারাজ।তাই সব কাজ শেষ করে সাজতে বসেছে বেলী।আজ একটু বেশিই করে সাজবে।নিজের বিয়েতে তো সাজার কোনো কায়দা ছিল না।আজ সেজে নিজের মনের আশা পূরণ করবে।বেলী আলমারি থেকে শাড়ির প্যাকেট বের করলো।এবার তো বেলী শাড়ি দেখে হোক চকিতে গেলো।বেলী আর রিদিতা সেম শাড়ি নিয়েছিল পড়ার জন্য কিন্তু এ কি প্যাকেটে তো অন্য শাড়ি। সিদুর লাল রঙের মধ্যে কাতান শাড়ি।একদম মনে হচ্ছে বউদের শাড়ি।মনে হচ্ছে বিয়ে বেলীর।কিন্তু এই শাড়ি এলো কোথা থেকে।শরীর প্যাকেট খুলতেই হাতে এলো চিরকুট।

-“শাড়িটি শুধু মাত্র আমার প্রিয় কিশোরী কন্যার জন্য।যে কন্যার প্রেমে আমি আবদ্ধ হয়েছি।যে কন্যার মায়ায় আমি নিবিদ্ধ হয়েছি। যে কন্যার মায়া ভরা চোখে আমার মরণ।”

চিরকুটের লিখা পড়তে শুরু করলো বেলী।এতো টুকুই পরে লজ্জায় লাল হয়ে গেল ।আবার পড়া শুরু করলো।

-“এই শাড়ি পড়া এক লাল টুকটুকে বউকে দেখতে চাই আমি।আমার বউ।আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যে আমার বিয়েতে আমার বউ একদম লাল পরির মতো সাজবে।কিন্তু কি হলো সব কিছু এতো দ্রুত হলো যে কোনো কিছুই করা হলো না।তাই আজ আমি চাই আমার বউ একদম নতুন বউদের মতো সাজবে।যাকে দেখে আমার এই তৃষ্ণার্ত চোখ আর হৃদয় তাদের তৃষ্ণা মেটাবে।”

– “এই শাড়ি পড়া লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলকে দেখতে চাই আমি।যাকে দেখে আমার হৃদয়ের ধুকদুকানি বেড়ে যাবে,চোখ পলক ফেলতে ভুলে যাবে,যাকে দেখে অনায়াসে যুগের পর যুগ পর করে দেয়া যাবে ।”

চিরকুট টা পড়ে বেলীর মনে যেনো কেমন অনুভুতি হলো।তবে কি সুবাস তাকে ভালোবাসে।তাহলে যেনো এতো দিন মুখে কিছু বললো না?কথা গুলো মনে মনে ভেবে সাজা শুরু করলো।বেলীর সাজা একদম কমপ্লিট।তখন দরজা খুলে প্রবেশ করলো সুবাস।বেলীকে দেখে থমকে গেলো।একদম বউদের মত লাগছে। চেহারায় ভারি সাজ।শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে গলায় হাতে স্টনের ম্যাচিং সেট।হাতে চুড়ি।চুল গুলো মাঝে সিতি করে খোঁপা করেছে।খোঁপায় গুজে দেয়া একদম সতেজ গোলাপ।বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো সুবাস।
-“খুব সুন্দর লাগছে বেলী।একদম নতুন বউ।আমার বউ।”
বলেই বেলীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো সুবাস।বেলী লজ্জায় লাল হয়ে গেল কিন্তু কোনো কথা বললো না।বেলীকে ছেড়ে দিয়ে সুবাস নিজে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।বেলী আর চোখে সুবসকে দেখছে।ডার্ক রেড কালার শার্ট। ব্ল্যাক কালার প্যান্ট।হাতে ব্ল্যাক কালার ওয়াচ।চুল গুলো সেট করা।একদম পারফেক্ট।

-“তোমার স্বামী হই।এভাবে চুরি করে না তাকিয়ে সুন্দর করে দু চোখ ভরে আমাকে দেখে নাও।”

সুবাসের কোথায় বেলী চুপসে গেল।কিন্তু কোনো কথা বললো না।
-“অবশ্য আমার দিকে তাকালে তুমিও অন্য সব মেয়েদের মত প্রেমে পরে যাবে।”
-“অন্য সব মেয়েদের মতো মনে কি হুম? এর কোন কোন মেয়ে আপনার প্রেমে পড়েছিল?”
– “আমি কিভাবে জানবো যে কে কে আমার প্রেমে পড়েছিল। কলেজে লাইফ এ অবশ্য মেয়েরা আমার পিছে ঘুর ঘুর করতো।”
– “বেটা মানুষের জাত ভালো না।ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েদের কথা বউ এর সামনে বলে।”
।বলেই বেলী চলে যেতে নিলো।পিছন থেকে সুবাস বেলীর হাত টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

-“এই সুবাস শুধু এক নারীতেই আবদ্ধ হয়েছে,এক নারীর প্রেমে পড়েছে এবং এক নারীতে তার সব কিছু।অন্য দশ নারী সুবাসের পিছন ঘুর ঘুর করলেও সুবাস শুধু এই এক নারীর পিছে ঘুর ঘুর করবে।সুবাসের মনে শুধু এক নারীর বসবাস।”

এবার বেলী এর কিছু বললো না।
-“আমি জানি তুমি সকালের জন্য রেগে করছো।কিন্তু আমি শুধু তাকে হেলপ করার জন্য পানি এগিয়ে দিয়েছিলাম।এর বেশি কিছুই না। বায় দা ওয়ে তুমি কি জেলাস?”
– “আমি জেলাস হবো কেনো?”
– “সকালে তোমার ফেস দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো তুমি জেলাস কি না।আমরা যখন কেউ কে ভালোবাসি তখন কিন্তু জেলাস ফিল করি।তুমিও কি আমাকে ভালোবাসো?”

বেলীর গালে চুমু খেয়ে বললো সুবাস।এবার বেলী সুবাসের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে রম থেকে বের হয়ে গেলো।সুবাস হো হো করে হেসে উঠলো।

সম্পর্ক গুলো কি সুন্দর তাই না!সময়ের আড়ালে কি সুন্দর করে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়।সুখ শান্তি খেলে যায়। অপ্রিয় থেকে প্রিয় জন হয়ে যায়।তবে কি সব সময় মানুষ হেসে খেলে থাকতে পারে নাকি কোনো ঝড় এসে সব কিছু লন্ড ভন্ড করে দেয়?নাহ সুখের দিন বেশি ক্ষন থাকে ন।তবে কি তাদের জীবনেও কোনো ঝড় আসবে?ঠিক সেই কালবৈশাখী ঝড়ে তো?
(আসসালামুআলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো।সবাইকে অনেক বেশি ধন্যবাদ আপনাকে এতো সার্পোট করার জন্য।সবাই অনেক বেশি ভালোবাসা নিবেন।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।)
চলবে…..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here