মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_২

0
564

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২

মানুষের জীবন বদলে যেতে এক মুহূর্তও লাগে না।চেনা পৃথিবী হুট করেই অচেনা হয়ে যায়। চেনা মানুষ গুলো হঠাৎ করেই অচেনা হয়ে যায়। জানালার কাছে বসে সন্ধ্যার কথা গুলো ভাবতেই চোখ থেকে আবার পানি ঝরতে লাগলো। সম্রাটের বুকে অন্য কাওকে সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না।কেন সে অন্য কাওকে বুকে জায়গা দিয়েছে।ওখানে আমার থাকার কথা।যদি আমাকে ভালবাসে তাহলে এইসব কি?
আর কিছু ভাবতে চাই না আমি।অসহ্য মাথা যন্ত্রণা করছে।পায়ের ব্যাথার মেডিসিন দিয়েছে ভাইয়া।আমাকে এই অবস্থায় দেখে কেন জানি ভাইয়া কোন রকম প্রশ্ন করলো না।যদিও আমাদের ব্যাপারটা ভাসা ভাসা সবাই জানে।কিন্তু সামনা সামনি কেউ কখনো কিছু বলেনি।

এখন রাত ২টা।সম্রাট ভাইয়া সন্ধ্যা থেকে অনেক বার কল করেছে।আমি রিসিভ করি নি।নিজেকে কিছুটা সময় দেয়া প্রয়োজন। যাই কিছু হয়ে জাক না কেন,আমি কষ্ট পেয়েছি।অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি।নিজেকে সামলাতে আমার সময় প্রয়োজন। এই সময় আমি কারোর সাথে কথা বলতে চাই না।

এইসব ভাবতে ভাবতেই চোখে গেলো বাড়ির রাস্তার দিকে। সম্রাট ভাইয়ার মতো কাওকে দেখা যাচ্ছে!

আমি তারাতাড়ি জানালা বন্ধ করে দিলাম।রুমের লাইট নিভিয়ে চুপ করে শুয়ে রইলাম।সে হয়তো দেখেছে আমাকে।তাতে কি!আমি কারো সাথে কথা বলতে বাধ্য নই।

কিছুক্ষণের মধ্যেই জানালায় টোকা দেয়ার শব্দ শুনা গেলো।
তবু্ও আমি উঠবো না।যতক্ষণ খুশি টোকা দিতে থাকুক। খুলবো না।এখন এখানে কি কাজ।ওই মেয়ের গলায় গিয়ে ঝুলে থাক।আমার জানালা ভাংতে আসছে কেন?যত্তসব।

কাথাটা ভালো করে জরিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিতেই হুর মুর করে কেউ ঘরে ঢুকলো।
বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকাতেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এই লোক এত রাতে আমার রমে কি করে।বাড়ির দরজার ছিটকিনি কি সব ভেঙে গেছে নাকি।যে কেউ ঘরে ঢুকে পরছে।আজব।মা কোথায়!

কথাগুলো আর মুখ থেকে বের করতে পারলাম না। তার আগেই সম্রাট ভাইয়া এসে গাল চেপে ধরলো।

– তোকে সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে যেতে বলেছিলাম না?গেলি না কেন?একটা মানুষ অপেক্ষা করছে তার কোন মুল্য নেই তাই না?(চিৎকার করে)

রাগে তার হাত পা কাপছে।সাথে পুরো আমিটাই কাপছি। গাল গুলো মনে হচ্ছে ভেঙে গেছে। হাত নাকি পাথর! মুহুর্তেই সন্ধ্যার কথা গুলো মনে পরে গেল। তার থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতেই আরো জোরে চেপে ধরলো। ফলাফল দাতের সাথে লেগে গাল কেটে রক্ত বেরিয়ে গেল।ঠোঁটের কাছে রক্তরা এসে ভির জমাতেই ছেড়ে দিল আমাকে।

আমি কিছু না বলে শান্ত দৃষ্টিতে শুধু তাকালাম তার দিকে।কিছু না বলে ঠোঁটের কোনার রক্ত বন্ধ করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।কেন জানি কান্না আসছে না।তবে বুকের ভেতর খুব ভাড়ি অনুভব হচ্ছে।

আমার এই শান্ত ভাব দেখে একটু অবাক হলো সম্রাট ভাইয়া। তার চোখে এখন আর কোন হিংস্রতা নেই।তবে আমার জন্য ভালবাসা বা দয়া কোন টাই নেই।

– কি হলো! জবাব দিচ্ছিস না কেন?

– গিয়েছিলাম আমি।

ঠোঁটে ওরনা চেপে কথাটা বলতেই অবাক হয়ে তাকালো সে।অনেকটা বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে তাকে।

– তাহলে আমার সাথে দেখা করলি না কেন?(অবাক হয়ে)

– আপনি ব্যস্ত ছিলেন।

– কই,নাতো।

– মোহোনার সাথে ব্যস্ত ছিলেন।

তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা টা বলতেই সে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম।

-আমার সাথে চোখ মেলাতে ভয় করছে?

-….

– বাসায় যান।অনেক রাত হয়েছে। ব্যর্থতা মেনে নিতে পারবো, বদনাম না।আপনার হয়তো কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমার সব কিছুই চলে যাবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

– তুই ভুল বুঝছিস আমাকে।আমি কিন্তু..

কথার মাঝখানেই থামিয়ে দিলাম তাকে।

– ভুল তো আমি দু বছর ধরেই বুঝে আসছি ভাইয়া।এ আর নতুন কি!
তা না হলে কোথায় আপনি আর কোথায় আমি।আপনাকে নিজের ভাবাটাওত আমার জন্য বিলাসিতা। মোহোনা আপনার জন্য পারফেক্ট। আমার মতো ভুল মানুষকে নিজের ভাবার ভুল করবেন না প্লিজ। অনেক রাত হয়েছে। আপনার বাসায় গিয়ে ঘুমানো উচিত।

– তুই আমাকে কখনোই বুঝতে পারবি না।সব সময় চোখের দেখা সত্যি নাও হতে পারে। অন্তত পক্ষে আমার কাছে জানতে চাইতে পারতিস। কিন্তু নিজের ভাবনা গুলো আমার উপরে চাপিয়ে দিলি।তুই তো দুই বছর যাবত আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিস।আর আমি ছয় বছর ধরে তর পিছনে পরে আছি।তর কি মনে হয়,তুই যখন শীতের সকালে স্কুলে যাবার জন্য বের হতি আমি এমনি এমনিই তর সাথে দেড় কিলোমিটার পথ ব্রাশ করতে করতে হেটে যেতাম।
না! কারণ আমরা ভয় হতো। এই ঘন কুয়াশায় কেউ যাতে তর সাথে খারাপ কিছু করতে না পারে তাই শীতের সকালে নিজের আরামের ঘুম ছেরে তকে পাহারা দিয়েছি। যখন দেখলাম আমার ইউনিভার্সিটি এক্সামের জন্য থাকতে পারবো না তখন তর স্কুল চেঞ্জ করে উপজেলা স্কুলে ভর্তি করার জন্য তর বাবা মা কে রাত দিন বুঝিয়েছি।তর ক্লাসের এক ছেলে তোকে পছন্দ করতো, সেই বিষয়টি কাজে লাগিয়ে অবশেষে তোর স্কুল চেঞ্জ করেছি।তার জন্য আমার এক বছর গেপ দিতে হয়েছে। বাবার কাছে ছোট হতে হয়েছে। তবু্ও আমি তোকে ছেড়ে যাই নি।আর আজ একটা ইন্সিডেন্ট দেখে আমাকে কতো সহজে ভুল বুঝে ফেললি।
আমার তোকে পাওয়ায় আকাঙ্ক্ষা যদি তুই বুঝতে পারতি তাহলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হতো না(প্রচন্ড আফসোস নিয়ে)।যাই হোক,আমি কাল ঢাকায় যাচ্ছি। যতটা পারিস উড়ে নে।তোর পাখনা কাটার ব্যবস্থা আমি করেই আসবো।

কথা গুলো বলে এক সেকেন্ড ও দেড়ি করলেন না।যেমন ঝরের গতিতে এসেছিলো তেমনই ঝরের গতিতে বেরিয়ে গেলো।

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি।এগুলো কি বলে গেলো। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন ভাইয়া ঢাকা থেকে একবার ঈদ করতে বাড়িতে এসেছিলো। প্রায় চার বছর পরে বাড়িতে এসেছিলো সে।লাস্ট বার যখন তাকে দেখেছিলাম তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি।যখনই বাড়ির সামনে রাস্তায় দেখা হতো তখনই এক রাম ধমক দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিত।আমি যে তাকে মনে মনে কতো গালি দিয়েছি তার হিসেব নাই।আমার লিস্টে সবচেয়ে জঘন্য মানুষের উপাধি টা সে বিনা পরিশ্রমে অর্জন করে নিয়েছিল। আমি সারাক্ষণ দোয়া করতে থাকতাম,সে যাতে ঢাকা থেকে বাড়িতে না আসে। কিন্তু ঈদ করতে বাড়িতে এসে আমার জীবনটা প্যারাময় করে দিয়েছিল। সারাক্ষণ আঠার মতো চিপকে থাকতো।তার জন্য কোথাও গিয়েও শান্তি পেতাম না।
আমার এখনো মনে আছে, আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে আমাকে খুব পছন্দ করতো। যদিও আমি এসবের মধ্যে নেই। তবে এটা নিয়ে সবাই খুব আলোচনা করতো। মাঝে মাঝে ছুটির পর আমাকে ফলো ও করতো। তাই মাকে একদিন সব বলে দিয়েছিলাম। বাবা দেশে না থাকায় মা এই বিষয়ে খুব টেনশনে পড়ে যায়। তার পর পরেই আমার স্কুল চেঞ্জ করে ফেলে।গার্লস স্কুলে এই সব ঝামেলা ছিল না। কিন্তু যত দিন ওই স্কুলে ছিলাম প্রতিদিন সকালে ভাইয়া আমার সাথে সকালে হাটতে হাটতে স্কুলে যেত।যদিও আমি খুব বিরক্ত হতাম। কারণ তার জন্য আমার কোন ফ্রেন্ড আমার সাথে যেতো না।সারা রাস্তা বোবা প্রাণীদের মতো হেটে যেতাম। মনে হলে এখনো কষ্ট লাগে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here