মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১

0
249

তুমি কি আমাকে ছেরে যেতে চাইছো?
ভ্রু কোচকে প্রশ্নটা করতেই সম্রাট কিছুটা হচকচিয়ে গেলো। হতভম্ভ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ঠাটিয়ে এক রাম ধমক দিলো।

-ফাইজলামি করার আর জায়গা পাছ না।বেয়াদব মেয়ে একটা।তরে বিলছি না, উলটা পালটা কিছু দেখবি না।সারা দিন আজাইরা চিন্তা। আর একদিন এই সব বাজে কথা বলতে শুনলে থাপ্পড় দিয়ে কান ফাটিয়ে দিবো বেদ্দপ।

রাগে গজগজ করে কথা গুলো বলতেই আমি একটু জোর করে হাসার চেষ্টা করলাম।কিন্তু হাসি আর এলো কই।অযথা চেষ্টা বাদ দিয়ে বললাম,

-আরে রাগ করো কেন?আমি এমনেই বললাম। একটু স্যাড ফিল করতে চাইছিলাম আর কি।হি হি হি।
অবষেসে জোর জবরদস্তি করে একটু হেসেই ফেললাম।

বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উঠে চলেই গেলো বেচারা।
দম ফাটানো হাসির শব্দে তাদের দিকে তাকালাম। এদের জন্য এতক্ষণ এই সব আজগুবি কথা বলতে হলো। আমি আদওয়া জান্নাত। সবে কলেজের গন্ডি পেরিয়েছি। এতক্ষণ কথা বলছিলাম আমার ভালবাসার মানুষ সম্রাট মাথাবের সাথে।আমাদের সম্পর্ক হাটিহাটি পা পা করে ২ বছর পেরিয়ে গেছে। যদিও আমরা কেউ কাওকে ভালবাসি বলি নি।তবে ভালবাসা আমাদের মধ্যে প্রচুর। হাহ।

– আদু,ভাইয়া কিন্তু অনেক রেগে গেছে।

– আমিও তাই ভাবছি।কিন্তু কি করবো বল!একবার পড়ানো শুরু করলে ৩ ঘন্টায় ও ছারবে না।

– তা ঠিক। মামা যে কেন আমাদের সাথে এমন করে বুঝি না।সব সময় মেজাজ দেখাতে থাকে।এমন আচরণ যে শিশুদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে সেটা মামা একদম ভুলে যায়।

প্রিয়ার কথায় তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম আমি আর তানিয়া।সম্পর্কে সম্রাটের ভাগ্নি হয় প্রিয়া।

– এখানে শিশু কে?
ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো তানি।

– কেন আমি।
ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিতেই চোয়াল ঝুলে গেলো আমাদের।

– তুই শিশু?
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করতেই খুব গম্ভীর ভাবে জবাব দিলো প্রিয়া।

– অবশ্যই শিশু। আমকে দেখলে কি তোর বুড়ী মনে হয়। আজব।আমার এখনো আঠারো বছর পুরন হয় নাই।আর আঠারো বছরের নিচে সবাই শিশু।

– তোর এখনো আঠারো বছর হয় নি?
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইতেই প্রিয়া কটমট করে তাকালো আমার দিকে।

– আরে এমনে তাকাস কেন? আমি তো শুধু জানতে চাইলাম।(অসহায় ভাবে)

– তোর লজ্জা করে না।আমার বয়স কতো এইটা তুই জানোছ না।এইডা কইতে তোর কিডনি কাপলো না।বেদ্দপ মাইয়া।মানবতা আজ কোথায় গিয়ে দাড়াইছে।আমার ছোট্ট কালের বান্দুপি হইয়া তুই আমার বয়স জানছ না।তর বেচে থাকার কোন অধিকার নাই।তুই এখন মইরা যা ফকিন্নি। আর মরা শেষ হইলে অবশ্যই ফেরত আসবি।তর লগে আমার বোঝাপরা আছে। এহন সর সামনের থেকা।আমি বাসায় যামু।যত্তসব আজাইরা পিপলস।

এতো গুলো কথা এক নিশ্বাসে বলে হনহন করে চলে গেলো প্রিয়া।
আর আমরা দুইজন বেকুব হয়ে বসে রইলাম।

আমি কাদো কাদো হয়ে তানির দিকে তাকিয়ে বললাম,

– দেখলি?আমাকে কতো গুলো কথা শুনিয়ে গেলো। আমি কিভাবে ওর বয়স মনে রাখবো বল?আমি কি রাফিজা বেগম নাকি?

তানি আমার কথা শুনে খুবি গম্ভীর হয়ে গেল। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে সিরিয়াস হয়ে বললো,

– সব তোহ ঠিক আছে,কিন্তু আমার মনে হয় ও কলিজা কাপার কথা বলতে গিয়ে ভুল করে কিডনি কাপার কথা বলে ফেলেছে।আর মরে আবার তুই ফিরোত আসবি কি করে? (চিন্তিত হয়ে) আর এই রাফিজা বেগম টা আবার কে?

আমি হতাশ হয়ে চেয়ে রইলাম আমার বন্ধু জাতির দিকে। কি খেয়ে এদের সাথে বন্ধুত্ব করছিলাম আল্লাহ জানে।আল্লাহ বাচাইছে বাকি দুই জন নাই।

– বোয়াল মাছের মতো হা কইরা রইলি কেন?রাফিজা বেগম কে এইডা কইবি?(বিরক্ত হয়ে)

– প্রিয়ার মা।

কোন রকম উত্তর দিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।বেশিক্ষণ থাকলে আমার মাথা খারাপ হতে দেরি লাগবে না।

আমআমদের বাড়ি ঢাকার অদুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের টংগীবাড়ী উপজেলায়। সম্রাট ভাইয়া আমাদের এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে।ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছে। এখনো বাবার বিজনেসে জয়েন করে নি।তাই সময়টা আমাদের জীবন প্যারাময় করতে কাজে লাগায়।উফফ, অসহ্য একটা মানুষ।

বাড়িতে আসতেই বড় ভাইয়ার সাথে দেখা।ভাইয়া নিজেকে আয়নায় দেখতে ব্যাস্ত। আমাকে দেখতেই অতি উৎসাহ নিয়ে আমার দিকে তাকালো।

– এই আদু।এই দিকে আয় তো। আমার মনে হচ্ছে আমি দিন দিন আরো শুকিয়ে যাচ্ছি। গাল গুলো ও ভেঙে ভিতরে চলে গেছে।মা তো বললো আজ থেকে আমাকে ভাতের মার খাওয়াবে।এইটা কোন কথা হলো বল তোহ?নাহ,মা কিছুই বোঝে না।আমি এখন ভাতের মার কেন খাবো বল তো?ভিটামিন হলে একটা কথা ছিল। শুকায় গেলে ভাতের মার কে খায়?(আক্ষেপ নিয়ে)

– সত্যিই তুমি খুব শুকায় গেছো ভাইয়া।তুমি আর রিমির পিছনে ঘুরো না তো।অই মেয়ে বেশি ভাব দেখায়।আমার একটু ও পছন্দ না ওকে।

– কি? তোর সাথে ভাব নেয়?(অবাক হয়ে)

– হুম।

– তুই অরে টোটাল পাত্তা দিবি না। এত বড় সাহস।আমার বোনের সাথে ভাব নেয়।দাড়া,অরে এখনি ব্লক লিস্টে ফেলতেছি।

– আচ্ছা।তূমি চিন্তা করো না। তোমার জন্য পরি ধরে আনবো।এইসব রিমির বেল আছে নাকি!

– হুম।ঠিক বলছোস।(খুশি হয়ে)

– আমি রুমে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাকে ফেসিয়াল করব দেবো। তখন আরো ঝকঝকে চেহারা হয়ে যাবে। এরকম কতো রিমি তোমার সামনে প্রজাপতির মতো ঘুরবে দেখবা।

– হুম।যা তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি অপেক্ষা করছি।

আমি মুচকি হেসে রুমে চলে আসলাম।আমার ভাইয়া মোটেও বোকা না।তবে কেন জানি আমার সামনে বোকা বোকা বিহেব করে।

ফ্রেশ হয়ে আসতেই আমার ফোন বেজে উঠল। সম্রাট কল দিয়েছে। দোয়া দুরুদ পড়ে কল রিসিভ করতেই বুঝলাম স্যার খুব রেগে আছেন।

– জান।

ব্যাস এই ডাকটা শুনলেই আমার সমস্ত মন মস্তিষ্ক ঠান্ডা হয়ে যায়।কোন রকম নিজেকে শান্ত করে উত্তর দিলাম,

– হুম বলুন।

– আজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে চলে আসবি।আন্টিকে আমি বলে রেখেছি।(শান্ত কন্ঠে)

– কিন্তু কেন? কিছুক্ষণ আগেই তো আসলাম।(অবাক হয়ে)

-আসতে বলছি আসবি।এতো প্রশ্ন কেন করিস?(রেগে)

– আপনি আমাকে মারবেন।(কাদো কাদো হয়ে)

– নাহ।আদর করবো।

– কিহ?(চিৎকার করে)

– আহহহ।আমার কান!চিল্লাতে বলিনি বেয়াদব। দিন দিন কি ছোট হচ্ছিস?তোকে বলেছি না,মানুষের কন্ঠের ও পর্দা করতে হয়।আস্তে আস্তে কথা বলবি।যাতে তর কথা বেগানা পুরুষ না শুনে। মনে থাকবে?

-হুম।

-সন্ধ্যায় চলে আসবি।

– আচ্ছা।

কল কেটে রুম থেকে বের হতেই মা সামনে এসে দাড়ালো। মনে তো হচ্ছে লম্বা একটা ভাষন শুনতে হবে।আমাদের বাবা প্রবাসী। আব্বু দেশে নেই বলে মা আমাদের সাথে একটু বেশিই কড়াকড়ি।

– কি ব্যাপার? সম্রাট সেই কখন কল করে জানালো তুই আজকে পড়িস নি।তাহলে এতক্ষণ কোথায় ছিলি?

– প্রিয়াদের সাথে।

-অহ।খেতে আয়।ভাই বোন দুইটা দিন দিন শুটকি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।যেন আমি না খাইয়ে রাখি।আজকে যদি একটা খাবারও নষ্ট হয় মাইর একটা ও নিচে পরবে না।

মারের কথা শুনে আমাদের মুখটা শুকিয়ে গেলো। খাওয়া নিয়ে একটু বায়না করলেই মা সত্যি সত্যিই মাইর লাগাবে।দুই ভাইবোন ভদ্র ভাবে খেতে বসে গেলাম।আজকে করলা দিলেও খেয়ে নিবো।

সন্ধ্যায় মায়ের কাছে বলে সম্রাট ভাইয়াদের বাসায় গেলাম।তাদের বাসা আমাদের বাসার সামনে। মাঝখানে শুধু একটা পুকুর। পুকুরের পাশ দিয়ে রাস্তা। তার পরেই তাদের বিশাল ফলের বাগান।তাদের বাড়িতে ফুল গাছ ও আছে।তবে সেটা শুধু তাদের বাসার,সামনের লম্বা বারান্দায়।

বাড়িতে ঢুকতেই লোডশেডিং হয়ে গেলো। ধুর।ভয় পেলে অন্তত একটু ন্যাকামি করা যেতো।

অন্ধকারে আস্তে আস্তে হেটে সম্রাটের রুমের সামনে গেলাম। তার ঘরে হালকা আলো দেখা যাচ্ছে। মোম জ্বালিয়েছে নিশ্চয়। আন্টি মনে হয় বাড়িতে নেই।যুবরাজ ভাইয়ার শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবনার মাঝেই দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই চোখের সামনে এমন কিছু দেখবো ভাবতে পাড়ি নি।গালে পানির অস্তিত্ব অনুভব করতেই ওখান থেকে দৌড়ে চলে আসলাম। অন্ধকারে সোফায় বারি খেয়ে পা কেটে গেছে হয়তো। পা ভেজা অনুভব হচ্ছে। ব্যাথার চোটে হাটতে পারছি না।

চলবে।

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here