মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_৩

0
538

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩

অতীত কখনো সুখের আবার কখনো তা প্রচন্ড কষ্টের।
আমি শুধু সম্রাটের ভালবাসায় অভ্যস্ত। তার অবহেলা আমি সইতে পারি না।আজ চার মাস হচ্ছে সে ঢাকা গিয়েছে। ওইখানে তার বাবার বিজনেস দেখাশোনা করে।

আমাকে ওইদিন এর পর থেকে এক বারো কল করে নি।আমিও করি নি। শুধু ভালবাসলেই হয় না। পরিস্থিতি আর পুর্নতা সব কিছুই ভাবতে হয়।আমি ভালো তো বেসেছি। কিন্তু আমাদের সম্পর্কের আদেও কোন ভবিষ্যত আছে? ভাবতেই একটা দির্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

কিছুদিন পরেই ভার্সিটির এডমিশন টেষ্ট। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছি।বাবা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে।আর তার স্বপ্ন পূরন করা এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য।

ফোনের শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।স্ক্রিনে দুই বাদর লেখা দেখেই মুখে হাসি ফুটল। তারাতাড়ি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কথার তুমুল বর্ষন শুরু হয়ে গেলো।

-দোস্ত,কি খবর তোমার। তোমারে তো পাওয়াই যায় না মামা।কল ও করো না। কি অইছে।ছ্যাঁকা টেকা খাইছ নাকি বান্ধু।

– তুই জিবনে ও ভালো হবি না!কল করলে মানুষ প্রথমে ভালো মন্দ জানতে চায়।তুই আজাইরা কথা বলতে শুরু করলি।(হতাশ হয়ে)

– ওহ।বাগানে আয়।ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করি।এক্কেবারে সামনাসামনি। ফেস টু ফেস।

– আসছি।

এতক্ষণ যার সাথে কথা হচ্ছিল সে আমার বেস্টু।আমাদের ফ্রেন্ডসার্কেলের সবাই খুব ছোট বেলার বন্ধু।আমি,প্রিয়া,তানিয়া,ওহিদ,তৌহিদ আমরা সবাই ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে। কল করেছিলো ওহিদ।ওহিদ আর তৌহিদ জমজ।তৌহিদ বড়।আর ওহিদ তার সাত মিনিটের ছোট। তৌহিদ যেমন শান্ত ওহিদ তার থেকে হাজার গুণ বেশি দুস্ট।দুইজন মাসঅাল্লাহ্ প্রচন্ড হ্যান্ডসাম। চেহারা ও সেম।আমরা মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলি কোনটা ওহিদ আর কোনটা তৌহিদ।

মাথায় ওরনা দিয়ে বেরুতেই মায়ের চিল্লানি শুরু। এই মা জাতিকে জীবনে ও পড়ে সন্তুষ্ট করা সম্ভব না। তার বক্তব্য আমি সারা দিন ঘুমিয়ে কাটাই।এই জীবনে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না।যারা পড়াশোনা করে তাদের এটিটিউটই নাকি অন্যরকম।তাদের চেহারায় জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব আছে।আর আমার চেহারায় নাকি পড়াচোর ভাব।হাহ।মাঝে মাঝে বনবাসে চলে যেতে ইচ্ছে করে। একটা রহিমের অভাবে যাই না।

বাগানে ঢুকতেই মাথায় একটা পরল।উফফফ।মাথা ফাটায় দিল। মাথা ডলতে ডলতে চারপাশে তাকিয়ে মারার লোকের অনুসন্ধান করতে লাগলাম। কিন্তু ফলাফল শুন্য।

– উপরে তাকা গাধি।

উপরে তাকাতেই আম গাছে ঝুলে থাকা মানুষ রুপি বাদর চোখে পড়লো। গাছের মোটা মগডালে আরামসে মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে শুয়ে আছে। একটা বালিশ হলে কয়েক দফা ঘুমিয়ে ও নিবে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আমার বন্ধু জাতি দেখলে আমার শুধু হতাশাই হয়।একটা মানুষ কতটা বেহুদা হলে এমন ফালতু কাজ করতে পারে। ভাবতেই আমি আরেক দফা ডিপ্রেশনে চলে গেলাম।

– নিচে আয় দোস্ত।এই ভাবে ঝুলে থেকে তুই নিজেকে বাদর প্রমাণ করতে চাইছিস?এইটা আমারা সবাই জানি। কষ্ট করে প্রমাণ করতে হবে না।

– তুইতো নিম্নমানের ফকিন্নি। তর কথা আমি ইগনোর করলাম।ডাইরেক্ট ফু দিয়ে উরায় দিলাম।ছিহ,তর মতো মেন্টাল আমার বন্ধু এইটা ভাবতেই তো আমার কলিজায় ফাটল ধরে। ইসসস।

বুকে হাত দিয়ে আহত ভাবে কথাটা বলতেই ফুসে উঠলাম আমি।

– এইটা আমর বলার কথা ছিল আহাম্মক। তর সাথে এইসব ফালতু কথা বলার টাইম নাই।আমি গেলাম।

ঘুরে হাটা ধরতেই হুরমুর করে গাছ থেকে নেমে এলো ওহিদ।দৌড়ে সামনে এসে দাড়ালো।

-সর সামনে থেকে।(রেগে)

– আরে রাগোছ ক্যা।আমি মজা করছিলাম। হে হে হে।

– ছাগোলের মতো দাত দেখানো বন্ধ কর।কি জন্য ডাকছিস সেটা বল।(বিরক্ত হয়ে)

আমার কথা শুনে ওর মুখটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। কাচুমাচু করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।

– দোস্ত। একটা কথা শুনছিস?

– কি কথা? (ভ্রু কুচকে)

– সম্রাট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হইছে। আগামি মাসের বারো তারিখ এনগেজমেন্ট মোহোনার সাথে।

মাথাটা হটাৎ করেই ঘুরতে শুরু করলো।তার ওইদিনের কথা গুলো শুনে মনে হয়েছিল সে আমাকে খুব ভালবাসে।যত কিছুই হয়ে যাক না কেন আমাকে কখনো ছেরে যাবে না।কিন্তু সে আমাকে পুরো ভুল প্রমাণ করে দিল।ঝাপসা চোখে ওহিদের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলাম। ওর চোখে আমার জন্য কষ্ট দেখে একটু জোরেই হেসে দিলাম।নিজেকে সামলে বললাম,

– এটা তো খুশির খবর। শুনে খুব খুশি হলাম।তুই এমন মুখ লটকায় রাখছিস কেন? তর প্রিয় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হইছে। খুশি হোস নাই?

ওহিদ আমার দিকে করুন চোখে তাকালো। ওর চোখে পানি টলমল করছে।আমার এই বন্ধুটা দুস্ট হলেও আমাদের প্রচন্ড ভালবাসে।

ওখানে আর দারালাম না।হালকা পায়ে হেঁটে বাড়িতে চলে আসলাম। কোন ভাবেই নিজেকে ভেঙে পরতে দেয়া যাবে না। তাহলে আমর পুরো পরিবার ভেঙে পরবে।তারা আমাকে অনেক ভালবাসে।

রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করেই কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। চোখের পানি তো আর বাধা মানে না।

আদওয়া যেতেই ওহিদ বিরবির করে বললো, ভালবাসায় এত কষ্ট বলেই হয়তো আল্লাহ তায়ালা ভালবাসাকে তার বান্দার জন্য হারাম করেছেন। শুকরিয়া আল্লাহর দরবারে, মন ভাংগার শব্দ হয় না। না হলে আজ তর হৃদয় ভাঙার শব্দে আমার কান তার শ্রবণ শক্তি হারাতো।

সেই দিনের পরে আজ বিশ দিন পার হয়েছে। আদওয়া সবার সামনে স্বাভাবিক আচরণ করছে।প্রিয়া অনেকটা ভেঙে পড়েছে বন্ধুর কষ্ট দেখে।

আজ সম্রাটের এনগেজমেন্ট। পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে। সম্রাটদের বাড়ির আলো আদওয়া দের বাড়িও আলোকিত করেছে।সম্রাট ভাইয়া নিজে এসে ইনভাইট করে গিয়েছে। হাহ।এই নাকি ভালবাসা।তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে রেডি হওয়ায় মন দিলাম। শত হোক আমার প্রিয় মানুষের এনগেজমেন্ট বলে কথা।

সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। আমি একটু দেড়ি করেই পৌছালাম। অলরেডি সবাই চলে এসেছে। মোহনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।খুশি যেন তার চোখে মুখে উপচে পরছে। দেখে আমার ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটলো।যাক,কেউ তো নিজের ভালবাসাকে পেল।গলায় দলা পাকানো কষ্ট গুলো কে গিলে ফেললাম।সবার জীবনে সব কিছু পেতে নেই। কিছু কিছু অপূর্ণতা মানুষকে শক্তি জোগায়। পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেতেই নিজেকে সামলে নিলাম।আমি জানি, আমার কলিজার বন্ধু গুলো ছাড়া আর কেউ না।

– তুই ঠিক আছিস?

প্রিয়ায় কথায় সামান্য মুচকি হাসলাম।

– হুম।চিন্তা করিস না।একা বেচে থাকতে শিখে যাব প্রিয়।

– তাই নাকি?
আচানক কারো কন্ঠ শুনতেই পেছনে ফিরে তাকালাম। সম্রাট ভাইয়া দারিয়ে আছে।আজ অনেক গুলো দিন পড়ে তাকে দেখলাম। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি মুচকি হেসে তাকে বললাম,

– কনগ্রেচুলেশন ভাইয়া।

উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়েই রইলেন।বিরক্ত হয়ে বললেন,
-তা আমাকে বলছিস কেন? যার বিয়ে তাকে গিয়ে বল।আজব।

আমি হাবলার মতো তাকিয়ে থেকে বললাম,

– তো তাকেই তো বলছি।আপনার বিয়ে আপনাকে না বলে কি পারা প্রতিবেশি দের বলবো। (অবাক হয়ে)

– আমার বিয়ে মানে?(প্রচন্ড অবাক হয়ে)

– আজকে তো আপনারই…

আমাকে কথা শেষ করতে দিলেন না তিনি।রেগে আগুন হয়ে বললেন,

– আমার বিয়ে তাই তো?চল তাহলে। কনে ছাড়া বিয়ে হবে কি করে?এখন বিয়ে করবো আর টুপ করে বাসর ঘরে ঢুকে যাব।দুই মাস পরে তুই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবি।আর একবছর পরে আমরা বাবা মা।চল।

আমি তব্দা খেয়ে দারিয়ে আছি। কি সব নষ্ট কথাবার্তা। বিয়ের খুশিতে পাগল হয়ে গেল নাকি। আহারে,বেচারা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here