মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_৪

0
150

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪

আমি তব্দা খেয়ে দারিয়ে আছি। কি সব নষ্ট কথাবার্তা। বিয়ের খুশিতে পাগল হয়ে গেল নাকি। আহারে,বেচারা।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তার দিকে তাকাতেই আমাকে শাসানোর ভঙ্গিতে বললেন,
– একদম এভাবে তাকাবি না।তোকে বলেছি না আজেবাজে চিন্তা করবি না।সারাক্ষণ মাথায় ফাউল কথা ঘোরে!আমি জাস্ট অবাক!

আহত ভাবে কথাটা বলতেই আমি বললাম,

– আপনিতো কেন অবাক হবেন? অবাক তো হব আমি।আমাকে ওইদিন এতো বড় বড় কথা বলে ঢাকা চলে গেলেন। আর এখন মোহনার সাথে বিয়ে ঠিক হতেই নাচতে নাচতে চলে এসেছেন এনগেজমেন্ট করতে। আমি সব বুঝি।আপনি একটা নষ্ট পুরুষ। আপনি আপনি,,,

রাগে আমার গা কাপছে। বলার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে কাদো কাদো হয়ে ওহিদের দিকে তাকালাম। ও হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না তাই একটু নরে চরে সোজা হয়ে দাড়ালো। ভাবুক হয়ে বললো,

– প্রতারক?

আমি সম্মতি সুচক মাথা নারতেই সম্রাট ভাইয়া চিল্লিয়ে উঠলো,

– হোয়াট?এই মাথা খারাপ হয়ে গেছে?কখন থেকে কি সব আবোল তাবোল বলছিস?জ্বর টর হয় নি তো?

চিন্তিত ভঙিতে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে চেক করতে লাগলো।

আমি তার হাতটা সরিয়ে দিয়ে তার দিকে চোখ গরম করে তাকালাম।

– একদম আমার কাছে আসার চেস্টা করবেন না।আপনার নষ্ট হাত নিয়ে দূরে যান।ইসস,আমার আবার গোসল করতে হবে। ছিহ।

আমারা সম্রাট ভাইয়াদের সান বাধানো পুকুর ঘাটে বসে কথা বলছিলাম এতক্ষন। অনুষ্ঠানের আয়োজন তাদের বাগানে করা হয়েছে। পুরো বাগান খুব সুন্দর ভাবে ডেকোরেট করা হয়েছে। পুকুর পাড়টা ও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।তাই আমরা এখানেই দাড়িয়ে কথা বলছিলাম।আর এটাই আমার জন্য কাল হলো। আমি গোসলের কথা বলতেই এক মিনিটের মাথায় নিজেকে পুকুরে আবিস্কার করলাম। আকস্মিক আক্রমণে বেকুব হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলাম।এই কান্ডটা কে করেছে তা বুঝতে আর বাকি রইলো না।ভাগ্য ভালো আসে পাসে কেউ নেই।না হলে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেত।

– দুই মিনিটের মধ্যে পিছনের দরজা দিয়ে আমার রুমে আয়।এক সেকেন্ড ও দেড়ি যেন না হয়।

রাগে গরগর করে কথাটা বলেই সামনের দিকে চলে গেলেন।

প্রিয়া, ওহিদ,তানিয়া অস্থির হয়ে আমার কাছে এসে আমাকে টেনে তুললো।

– দোস্ত,ঠিক আছিস তুই?

প্রিয়া প্রশ্ন করতেই আমার চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো। মানুষ টা কতটা খারাপ। আমাকে এভাবে অপমান না করলেও পারতেন। আমি কি নিজে নিজে গোসল করতে পারি না নাকি!ধাক্কা কেন দেয়া লাগবে।
আমাকে কাদতে দেখে ওহিদ আফসোস করে বললো,

– বুঝলাম না,ভাই কষ্ট করে তোরে ধাক্কা কেন দিতে গেল। তুই তো বাতাসের ধাক্কায়ই পরে যেতি।বেচারার শক্তি অপচয় হলো। বিয়ের পর কাজে লাগতো। তোর মতো আবাল জাতির জন্য সম্রাট ভাইদের মতো অসহায় হ্যান্ডসাম ছেলেরা নির্যাতিত হয়।রিং পরাইতে কতো শক্তির প্রয়োজন জানিস?আহা।এখন যদি দূর্বলতার জন্য রিং পরাইতে না পারে এর দায় কে নিবে?(উদগ্রীব হয়ে)

– তুই পরাইছ।(দাতে দাত চেপে)

হাতাশ হয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম।বাড়িতে যাব না সম্রাট ভাইয়ের কাছে যাব চিন্তা করতে করতেই হাতে টান অনুভব করলাম।সামনে তাকাতেই সম্রাট ভাইয়ার লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে একটু ভয় হতে লাগলো। সত্যি বলতে আমি এই লোকটা কে প্রচুর ভয় পাই।

রুমে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দিলেন। শান্ত ভাবে আমার দিকে এগিয়ে এসে তাওয়াল দিয়ে আমার চুল মুছতে শুরু করলেন। আমি শুধু অবাক হয়ে তার কান্ড দেখছি।নিজে পানিতে ফেলে এখন নিজেই যত্ন দেখাচ্ছে।গিরগিটি কোথাকার।

মনে মনে বললেও মুখে বলার সাহস এই জীবনে আমার হবে না বলেই আমি আশাবাদী। ভাবতেই ডিপ্রেশনে চলে যাই আমি।একদিন আমি ও বড় হবো।লম্বা লম্বা কথা শুনাবো। আজ থেকে আমার জীবনের একমাত্র এইম এটা।

– আচ্ছা তুই এমন কেন বলতো?আমার ভালবাসা কি তুই একটু ও বুঝতে পারিস না।প্রতিটি মুহুর্ত তোকে ভালবেসে যে আমি কাঙাল হচ্ছি সেটা দেখতে পাচ্ছিস না? আমার জীবনে তুই ছারা না আগে কেউ ছিল আর না ভবিষ্যতে কেউ আসবে।তোকে ছাড়া আমি নিজেই মরে যাব।সেখানে অন্য কাওকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি মরে যাব। আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা কর।আমার ভালবাসাকে নিজের মধ্যে অনুভব করার চেষ্টা কর। তুই ছাড়া আমি বিলিন হয়ে যাব জান।(অসহায় ভাবে)

এতক্ষন কথা গুলো আমার গালে আলতো ছুঁয়ে বললেও এখন আমাকে ছেরে ঘুরে দারালো।আমি স্তব্ধ হয়ে দারিয়ে আছি।

– শুধু ভালবাসলেই হয় না।ভালবাসার যত্ন করতে হয়,তাকে বুঝতে হয়,তার উপর বিশ্বাস রাখতে হয়।সব সময় মনে রাখবি,অযত্নে লোহায় ও মরিচা ধরে যায়।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আজ কৌশিকের এনগেজমেন্ট। মোহনা ওর ভালবাসার মানুষ। ওই দিন ওকে ভেবে ভুল করে অন্ধকারে আমাকে জরিয়ে ধরেছিল। ও আমার ছোট বোনের মতো। এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে বাসায় যা।তোকে আমার সাথেই থাকতে হবে।আমি ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই।গো…

শেষের কথাটা একটু বেশিই জোরে বললেন।আমি হাল্কা কেপে উঠতেই দরজা খুলে আমাকে বের করে আবার দরজা লাগিয়ে দিল। শব্দে আমি আবারও কেপে উঠলাম।
আমি যে ঠিক কোন লেভেলের আহাম্মক তা চিন্তা করতেই ওহিদকে চিবিয়ে খেতে ইচ্ছা হচ্ছে। আজ ওর জন্য আমাকে এতো গুলো দিন কষ্ট পেতে হলো। শালা মিরজাফরের বংশধর।

বাসায় গিয়ে আবার হালকা রেডি হয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম।দূর থেকে ওদের দিকে কটমট করে তাকাতেই সবাই ওহিদের দিকে ইশারা করে নিজেদের নির্দোষ প্রমান করতে মরিয়া হয়ে উঠলো। আমি কিছু বললাম না।অগ্নি চোখে তাকিয়ে বুঝিয়ে দিলাম তোদের পরে দেখে নিব ডায়নাসোরের দল।

এনগেজমেন্ট খুব ভালো ভাবেই শেষ হলো। খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা বাসায় চলে আসলাম। ভাইয়া আজকে ঢাকা গিয়েছে। তাই অনুষ্ঠানে থাকতে পারে নি।মা তো সারাক্ষণ আন্টি দের সাথে বিজি।আমি এতিমের মতো ঘুরলাম।ওই হারামি দের সাথে কোন কথা বলি নি।নিষ্ঠুর পোলাপান। যদিও অনেকবার সরি বলেছে।বাট হু কেয়ারস।হাহ।

সম্রাট ভাইয়াকে আর দেখি নি।রিং এক্সচেঞ্জের সময়ে ও ছিল না। অনেক বেশিই রেগে গেছেন হয়তো। কল করার কথা চিন্তা করতেই ফোন খুজতে লাগলাম। অবশেষে সোফার চিপা থেকে বেচারা উদ্ধার হলো। তার নাম্বারে কল দিতেই সাথে সাথে রিসিভ করলেন।

– চার মাস যাবত এই কলের অপেক্ষা করছি। একটু বেশিই দেড়ি হয়ে গেল না কল করতে? (ঘুম ঘুম কন্ঠে)

– আপনি ঘুমচ্ছেন?(অবাক হয়ে)

– তো কি করবো?

– আপনার ভাইয়ের এনগেজমেন্ট রেখে আপনি ঘুমাচ্ছেন?

– ওখানে আমার কি কাজ।আমার ছোট হয়ে ও বিয়ে করে ফেলছে আর আমি??হাহ।তোকে বলে আর কি হবে।তুই তো মজাতেই আছিস। এই দিকে আমি রোমান্স শূন্যতায় মারা যাচ্ছি। একজন তাগরা যুবক ছেলের হায় লাগবে তোর। আল্লাহ কে ভয় কর।আর আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা।না হলে আমি নিজের উপর থেকে কন্ট্রোল হারালে আমাকে নষ্ট ছেলে বললে কিন্তু আমি মেনে নিবো না।এই আমার উপর দয়া হয় না তোর? পাষাণ মেয়ে।

তার লাগামহীন কথা শুনে আমি কল কেটে দিলাম। এখন সব দোষ আমার!সেকি আমাকে কখনো বিয়ের কথা বলেছে? এখনো পর্যন্ত ভালবাসি ও বলেনি।অথচ সব দোষ আমার ঘারে দিয়ে দিল।অসহ্যকর।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here