মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_৬

0
164

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৬

সম্রাট ভাইয়ার বিয়ের কথা এক কান দু কান হতেই মানুষের কথার তোপে পরলাম।
সবাই খোচা দিয়ে নানান কথা বলতে শুরু করলো। তাদের ধারণা সে আমাকে কিছু দিন ব্যবহার করে এখন ছুড়ে ফেলেছেন। আমি তার বিনোদনের বস্তু ছিলাম। কোথায় তারা আর কোথায় আমরা।
বামন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন দেখলে এমনই হয়।ঠিক সময় আমাকে আমার জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে।

তাদের কথায় আমার খুব একটা খারাপ লাগছে তেমনও না।মনে হচ্ছে তাদের সব কথা সত্যি।পাড়ার কিছু কিছু বখাটে তো আমাকে ইউসড প্রোডাক্ট বলেও ডাকা শুরু করেছে।

বন্ধুরা ও কেমন চুপসে গেছে।তানির মা তো আমার সাথে তানিকে কথা বলতেই নিষেধ করে দিয়েছে। তবে তানি এই নিষেধ মোটেও কানে নেয় নি।নিয়মিত আমার কাছে এসে বসে থাকে। তবে আড্ডার শুরটা কোথাও যেন কেটে গেছে।

যার জন্য আমার এই অবস্থা সে কিন্তু ভিষণ ব্যস্ত।হবু বউয়ের জন্য ইন্ডিয়া থেকে শপিং করে এনেছে। রাজনীতি কাজকর্ম থেকে সময় বের করে হবু বউকেও সময় দিচ্ছে। তাদের দুজনের কাপল পিক ফেসবুকে অহরহ ভাইরাল হচ্ছে। নেতা বলে কথা।

এতক্ষণে হয়তো আমার কেদে কেটে ভাসানোর কথা ছিল।কিন্তু আমি খুব সাবলীল ভাবেই আছি।মানুষের কথার আঘাতে ভিতর রক্তাক্ত হলেও বাইরে আমি খুব স্বাভাবিক। আমার মা সব সময় বলে,
মেয়ে মানুষের দুর্বলতা সব সময় নিজের ভিতরেই রাখতে হয়। কারন,আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মেয়ে মানুষকে খুব কোমল একটা মন,আর অপরিসীম ধৈর্য দিয়ে তৈরি করেছেন। আর মানুষের স্বভাব হচ্ছে দুর্বলতায় আঘাত করা।মায়ের এই কথাটা আমি সব সময় মেনে চলি।

আমার মতো আমার পরিবার ও এই ব্যপারে নির্বিকার।ভাইয়া কিছুটা মনক্ষুন্ন হলেও বাহিরে তা একদম প্রকাশ করছে না।

– আদু।

মায়ের ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম।

– হ্যা মা বলো।

– তুই আজ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিস।তোর বড় খালা মনির ওখানে থেকেই পড়াশোনা করবি।

মায়ের কথায় অনেকটা চমকে উঠলাম। মা আমাকে এখানে রাখতে চাইছে না!

– পালিয়ে যেতে বলছো?

– না।মানসিক শান্তি দিতে চাইছি।যেটা এখানে কোন ভাবেই সম্ভব না। অন্য কারো মাথা ব্যথা নাই থাকতে পারে কিন্তু আমার সন্তানের ভালো থাকা আমার কাছে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট।সব কিছু গুছিয়ে নাও।

গম্ভীর কণ্ঠে কথা গুলো বলেই মা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমার মন প্রচুর খারাপ হয়ে গেলো। সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে! তাও কার জন্য! হাহ।আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনা কারি।নিশ্চয়ই আমার জন্য উত্তম কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছেন।

সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরুতেই চার বাদরের সাথে দেখা।মলিন মুখে এদিকেই আসছে।

– দোস্ত,তুই কিছু চিন্তা করিস না।আমরাও নারায়ণগঞ্জ চলে আসবো।বাবা মায়ের সাথে কথা হয়েছে। তারা রাজি।ওখানে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাব।টেনশন নট।

প্রিয়ার কথায় তানির দিকে তাকালাম। ও চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো। ববন্ধুদের ভালবাসা দেখে চোখ থেকে পানি চলে আসলো।দুজনকে দু পাশ দিয়ে জরিয়ে ধরলাম।পাশ থেকে ওহিদ দুক্ষি চেহারা নিয়ে বললো,

– আজ মেয়ে নই বলে।আমাদের কেউ জরায় ধরে না।আয় ভাই আমারা আমারাই জরায় ধরি।

তৌহিদ ভ্রু কুচকে তাকাতেই ওহিদ নিজের চেহারা স্বাভাবিক করে ফেললো।

– এমনে চাস ক্যা।আমি তো ভাইচারা ওয়ালা হাগ এর কথা কইছি।তুই দোস্তানা ওয়ালা ভাবোছ ক্যান।

আমরা সবাই ওদের কান্ড দেখে ফিক করে হেসে দিলাম।

– দাত বাইর করা বন্ধ কর পেত্নীর দল।তোদের জঘন্য দাত দেখে আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে।

ওহিদের কথা শুনে প্রিয়া গম্ভীর গলায় বললো,

– গো ফর সুইসাইড। আমরা কি তরে ধরে রাখছি।আমাদের হাসি ভালো না লাগলে তর বেচে থাকার কোন অধিকার নাই। যা তারাতাড়ি গিয়া মর।

– ইসসস।কলিজা ছাড়া পেত্নী রে তুই।দয়ামায়া নাই।মানবতা আজ কোথায় গিয়ে দাড়াইছে।একটা তাগরা যুবক মরে যেতে চায় আর কেউ তারে আটকানোর চেষ্টাও করে না।

– নাটক শেষ? (প্রিয়া)

– হুম।

– গুড।

তৌহিদ আমার পাশে এসে আমার সামনে দাড়ালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভির গলায় বললো,

– বের হবি কখন?

– এইতো, আর কিছুক্ষণের মধ্যে।

– হুম। এই সব কিছু মাথায় রাখিস না।আল্লাহ কে ভরষা করিস তো?

– হুম।

– আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন। কয়েক দিনের মধ্যে আমরা ওখানে চলে আসবো।সেই কয়েক দিন খালা মনির কাছে থাকবি।তারপর আমাদের সাথে আমাদের বাসায় সিফট হয়ে যাবি।আমি মা কে আমাদের সাথে নিয়ে যাব।মনে থাকবে?

– হুম।

এই ছেলেটা এতো গম্ভীর কেন কে জানে।ছোট টাকে দেখো,মনে হয় এখনো বাচ্চা থেকে গেছে।আর এ কেমন বড়দের মতো কথা বলছে।

কিছুক্ষণ গল্প করে ওরা চলে গেলো। আসরের আজানের পর আমরা বেরুতে নিতেই সম্রাট ভাইয়ার আগমন। আমার হাতে ট্রলি ব্যাগ দেখতেই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।

– কোথাও যাচ্ছিস আদু?

আমি কিছু বলার আগেই মা বললো,

– ওর বড় খালার বাসায় যাচ্ছে। আমরাও যাচ্ছি সাথে। কিছু বলবে তুমি।হঠাৎ আমাদের বাড়িতে কি মনে করে?

মায়ের শক্ত কথায় ওনি মাথা নিচু করে ফেললো। মিনমিনে স্বরে বললো,

– আমি আদওয়ার সাথে কথা বলতে চাই। জাস্ট পাচ মিনিটের জন্য। প্লিজ।

– ঠিক আছে। আমরা এখানেই দাড়াচ্ছি।আশা করবো সব তামাশা এখানেই শেষ হবে।

সম্রাট ভাইয়া আমার হাত ধরতে আসলেই আমি তাকে হাত উচু করে থামিয়ে দিলাম।

– আমি ছোট বাচ্চা নই ভাইয়া।আমাকে হাত ধরে নিয়ে যেতে হবে না। আমি নিজেই যাচ্ছি আপনার সাথে। চলুন।

বলেই আমি হাটা ধরলাম বারান্দার দিকে।
বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই ভাইয়া আমার দিকে অস্থির চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– কবে ফিরবি?

তার অহেতুক প্রশ্নে কপাল কুচকে গেল।

– তা দিয়ে আপনার কি দরকার বলুন তো?

– আমার কি দরকার জানিস না? আমার কাছে একবার বলেছিস,তুই নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিস।(রেগে)

– কে ভাই আপনি? আমি কোথায় যাব,কোথায় যাব না সেটা আপনাকে কেন বলতে হবে? আপনি আমার ফ্যামিলি মেম্বার? নাকি আমার গার্ডিয়ান? কোনটাই না তো? তাহলে?

– বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না? (দাতে দাত চেপে)

– আমারও একই প্রশ্ন। একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না?

– আমাকে একটু সময় দে জান।আমি সব ঠিক করে দেবো। আমাকে ভুল বুঝিস না।(কাতর কন্ঠে)

আমি তার সামনা সামনি দাড়ালাম। তার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম,

– আপনাকে বোঝার আমার কোন দায় নেই।আমি কি এখানো পর্যন্ত আপনাকে কোন প্রশ্ন করেছি? আপনাকে বিয়ে করতে বাধা দিয়েছি?নাকি আমার চরিত্রে আপনার জন্য আঙুল উঠায় আমি আপনার কাছে জবাবদিহিতা চেয়েছি?
আমি চুপ আছি। আমাকে চুপ থাকতে দিন। নারীর ঘৃনা খুব ভয়ংকর। অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো। ওখানে হাত দিতে যাবেন না।তাহলে পুরো আপনি টাকেই জ্বালিয়ে দিবে।আপনাকে ভালবাসার অপরাধে যতটা অপমান আমার প্রাপ্য ছিল তার সবটাই আমি পেয়ে গেছি।তাই আজ থেকে আমার জীবনে থেকে সম্রাট নাম টা চিরকালের মতো মুছে দিলাম। ভালো থাকবেন।উইস ইউ ভেরি হ্যাপি ম্যারেড লাইফ।আল্লাহ হাফেজ।

সম্রাট ভাইয়া নির্বিকার ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার চোখ থেকে এক ফোটা পানি বেরিয়ে গেছে তা স্পষ্ট আমি দেখেছি। তবুও কিছু না বলে আমি চলে এলাম। তার একফোঁটা চোখের পানি আমার এতো গুলো নির্ঘুম রাতের হাহাকার মুছে দিবে না।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here