পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ২৬ ❤

0
420

#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ২৬ ❤
.
.
________________
.
রাত ৯ টা বেজে ২০ মিনিট। একটু আগে ডক্টর আঙ্কেল এসে চেক আপ করে মেডিসিন দিয়ে গেছেন। জ্বর ১০২° সেলসিয়াস ! হঠাৎ এতোটা জ্বর আসায় আমিও বেশ অবাক! বলা নেই কওয়া নেই এভাবে জ্বর আসার মানে কি? সকালেও তো ভালোই ছিলাম। জ্বরে তো আমার হুঁশ নেই বললেই চলে। ভালো করে উঠে বসতে পর্যন্ত পারছি না। সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। সূর্য একটা বাটিতে ঠান্ডা পানি আর একটা কাপড় নিয়ে আমার পাশে এসে বসলেন। একের পর এক জল পট্টি দিয়েই চলেছেন। কিন্তু জ্বর কমছেই না। এই পর্যন্ত ২-৩ বার বমি করে সূর্যের গা ভাসিয়েছি। কিন্তু উনি কোনো রিয়েক্টই করেনি। যে ছেলে কিনা কারোর গ্লাসে পানি খায় না। তার সব জিনিস আলাদা আজ সেই ছেলে কিনা এতোটা চুপ? আশ্চর্য!
.
আচ্ছা! উনার রিয়েকশন বাটন কাজ করা বন্ধ করে দেয়নি তো? নাকি উনি বোবা হয়ে গেলেন? ধুর! কিচ্ছু ভালো লাগে না। এই ছেলের কোনো কিছুই আমি বুঝিনা। কখন কি চায় কি করে কে জানে? এখন যদি একটু সুস্থ থাকতাম? ইশ! তাহলে এই সুযোগটাই কাজে লাগাতাম। বিরক্তিকর!
.
🍁
.
ভোর ৪ টা বেজে ৩৫ মিনিট! একটু আগেই আজানের ধ্বনিতে আমার ঘুম ভেঙেছে। ডান দিয়ে ফিরে উনাকে না পেয়েই চমকে উঠলাম। এতো রাতে উনি গেলেন কই? এর উপর এই অন্ধকার ঘরে আমায় একা রেখে? এখনও দাঁড়াতে পাড়ছি না। খুব ক্লান্ত! দাঁড়ালেই পড়ে যাব এমন মনে হচ্ছে! বিছানায় শুয়েই উনাকে ডাকতে লাগলাম…..
.
—- শুনছেন? আপনি কই? আপনি জানেন না আমি অন্ধকারে ভয় পাই? আমাকে একা রেখে এতো রাতে কই গেলেন?
.
কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না। আমিও চুপ রইলাম না। আবার ডাকতে লাগলাম…..
.
—- এইযে! শুনছেন? আমি ডাকছি তো!
.
এবারও ফলাফল শূণ্য! এবার উনাকে রাগাতেই একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠলাম…..
.
—- সূর্য ভাইয়া! এই সূর্য ভাইয়া! আপনি কই? সূর্য ভাইয়াআআআআআ…. আশ্চর্য! এতো ডাকার পরেও সাড়াশব্দ নেই! নিশ্চিত কোনো পেত্নীর সাথে রোমাঞ্চে বিজি? আজকে আপনার একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে!
.
দাঁড়া খাটাশ! তোর রোমাঞ্চ আমি ছুটামু! তোর পেত্নীর চুল যদি আজকে না ছিঁড়ছি আমিও আলো না! বিরবির করতে করতে বেড সাইড থেকে ফোনটা খুঁজে নিয়ে ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে এগোলাম। শরীর কাঁপছে মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে গেলাম! দরজার কাছাকাছি যেতেই মাথা ঘুড়ে পড়তে নিয়েও দরজা ধরে নিজেকে সামলে নিলাম। ঐসময়ই সূর্য দৌড়ে এলেন। আমাকে এভাবে কাঁপতে দেখে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। রুমের লাইটটা দিতেই আমি কিছুটা অবাক হলাম। উনার চোখ গুলো লাল টুকটুকে হয়ে আছে। সাথে নাকের ডগাও! সাধারণত আমরা কাঁদলে যেমনটা হয়! ফর্সা চেহারায় রক্তলাল চোখ আর টুকটুকে লাল নাকটা ভেসে উঠেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে উনি কাঁদলেন কেন? আমি আর বনিতা না করে সোজাসুজি করলাম….
.
—- আপনি কেঁদেছেন কেন?
.
কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না। উনি উত্তর দিলেন না। বরং আমাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন….
.
—- এভাবে চেঁচাচ্ছিলি কেন? আর বিছানা থেকেই বা উঠেছিস কেন? এখন যদি পড়ে গিয়ে কিছু হতো?
.
—- আপনি আমার উত্তর দিন! আর আপনি কই ছিলেন?
.
—- আমি নামজ পড়ছিলাম পাশের রুমে।
.
—- কিন্তু আজান তো মাত্রই দিল!
.
—- হ্যাঁ! আমি তাহাজ্জুদ পড়ছিলাম।
.
—- কেন?
.
—- এমনি! ইচ্ছে করল তাই। তুই এসব বাদ দিয়ে বল কেন উঠেছিস?
.
—- ঘুম ভেঙে গিয়েছে।
.
উনি কিচ্ছু না বলে আমাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে খুব সাবধানে নামিয়ে ওযু করতে সাহায্য করলেন। তারপর দু’জন মিলে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম।
.
—- ভাইয়া! একটু ছাঁদে যাব।
.
—- মাথা ঠিক আছে তোর?
.
—- হ্যাঁ! কেন? ঠিক না থাকার কারণ কি?
.
—- তুই ঠিক করে দাঁড়াতে পাড়ছিস না। তুই ছাঁদে যাবি?
.
—- আমার সমস্যা নেই! আমি পারব।
.
অবশেষে উনি আর না করলেন না। আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ছাঁদের দিকে রওনা হলেন।
.
—- একি কি করছেন? আমি হেঁটে যেতে পারব! আমার প্রবলেম নেই!
.
—- একদম চুপ!
.
—- দেখুন! আমি ৪৫ কেজি! আমাকে নিয়ে এতোটা উপরে ওঠা আপনার পক্ষে পসিবল না। নামান বলছি!
.
—- থাপড়ানি না খেতে চাইলে একদম চুপ থাক!
.
আমি আর কি করব? মাসুম এক শিশু! কিছু বললে সত্যিই আবার না থাপ্পড় মেরে বসে!
.
_________________
.
পশ্চিম দিকে ছাঁদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি৷ উনি আমার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে! রাতের আধার কেটে ভোরের মিষ্টি আলো এখনও ফুটে ওঠেনি। রাস্তার সোডিয়ামের আলো জ্বলছে। মসজিদ থেকে মুসল্লিরা সবাই বাড়ি ফিরছেন। আমি ভাবছি আপুর কথা! কতোদিন হলো আপুর সাথে গল্প করিনা। আপুর কিছু নিয়ে বায়না করার সাথে সাথেই তা পেয়ে যাই না। আসলে কি এমনটা হওয়ার খুব দরকার ছিল? এমনটা না হলে কি পারত না? সব তো ঠিকই ছিল। সবাই ভালো ছিল। সবাই কত্তো খুশি! কতো মাতোয়ারা ছিল। আপুর বিয়ের কেনাকাটা সব নিয়ে কত্তো বিজি ছিল। কি কিনবে? আপু কি পড়বে কত্তো কিছু! কিন্ত? একটা কিন্তুই সব ওলট-পালট করে দিল। একটা দুটো লাইফ না। পুরো এতোগুলো মানুষের জীবনটা শেষ করে দিল। কেউ মেয়ে হারানোর কষ্টে শোকাহত। তো কেউ বোন! আবার কেউ হবু বউ! সব কিছুর জন্যই আমি দায়ী। শুধু আর শুধুই আমি। কেন সেদিন মরে গেলাম না? কেন? সেদিন মরে গেলে তো কিচ্ছু হতো না। সবাই হয়তো কিছুদিন কষ্ট পেতো। কিন্তু আবার সব ঠিক হয়ে যেত। এট লিস্ট সূর্য আর আপু সুখে থাকতে পারত। হায়রে নিয়তি! কেন করলে এমনটা? কেন? কেন? কেন?
.
হঠাৎ কারো কন্ঠ স্বরে দু’জনেই পিছু ফিরে তাকালাম। এতোক্ষণে রাতের আধার কেটে গিয়ে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে।
.
—- আলো! চল কিছু খেতে হবে।
.
আমি কিচ্ছু বললাম না। উনি আবার আমায় কোলে তুলে নিয়ে সিড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলেন।

#চলবে……

[#বিঃদ্রঃ আমি সত্যিই দুঃখিত আপনাদেরকে এতোটা অপেক্ষা করানোর জন্য। কিন্তু বিশ্বাস করুন! কিচ্ছু আমার হাতে নেই! যখনই বলি রেগুলার গল্প দিব। তখনই কোনো না কোনো প্রবলেমে পড়তেই হয়! আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগে আপনাদের এতো অপেক্ষা করাতে। প্লিজ! গিভ মি সাম টাইম! সবটা গুছিয়ে নিই। তবে একেবারে গল্প দিব না এমনটা নয়। শুধু রেগুলার গল্প দিবনা যতদিন সব ঠিক না হয়! আর আমি আগেও বলেছি কেউ স্টিকার কমেন্ট করবেন না প্লিজ! এটা বিরক্তিকর! আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমার লিখার আগ্রহটা অনেকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে। সরি এগেইন! সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ ❤।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here