পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ৩৫❤ . .

0
380

#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৩৫❤
.
.
____________________
.
বিকেল ৪টা বেজে ৩০ মিনিট। একটু আগেই আমার তৈরি হওয়া শেষ হলো। আমার সাদা বিলাই স্বামী আমাকে শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন। সবাই বেশ প্রশংসাও করেছেন। মামানি তো বলেছেন- “এতোদিনে আমাকে বউ বউ লাগছে! যেন স্বামী সোহাগি হই! আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের যেন নাতি নাতনীর মুখ দেখাই!” সবগুলো কথা শুনে যত না লজ্জা পেয়েছি। শেষের কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে এমন দোয়া কেউ করে? তার উপর সেখানে বাবা, মামা শ্বশুড়, নিজের শ্বশুড়ের সামনে মামি শ্বাশুড়ির এমন দোয়া নিশ্চয়ই আনন্দের নয়! মামানিটার মুখেও কিচ্ছু আটকায় না! মামানি যখন কথাটা বলেছিলেন, তখন আড় চোখে একবার সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। খাটাশটার কোনো ভাবান্তরই ছিল না। আশ্চর্য! একি আদৌও কোনো মানুষ নাকি এলিয়েন? এতোগুলো মানুষের সামনে এসব কথা বলল তবুও লজ্জা পেল না? আরে বাবা লজ্জা না পেতি ওখান থেকে সড়ে তো আসতে পারতি।খালি খালি তো অসভ্য বলি না! আসলেই একনাম্বার অসভ্য, খাটাশ! হুহ!
.
এ’বাড়ি থেকে ৪টা গাড়ি বের হচ্ছে। একটাতে ভাবী আর ভাইয়া আর ছোট ছোট বাচ্চারা। একটাতে আমি আর সূর্য। আর বাকী ২টো তে রিয়া আপুর বড় বড় কাজিনরা, ১জন খালামনি, আর ১মামি, ১ মামা। রিয়া আপুর খালাতো বোন শাফিয়া কি গায়ে পড়া মেয়েরে বাবা! যেখানেই সূর্য যাচ্ছে সেখানেই তাকে দেখা যাচ্ছে। পারছে না যে সূর্যকে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখুক। অসহ্য! আমাদের গাড়িতে উঠার জন্যও তো বায়না ধরেছিল। কিন্তু সূর্য এলাউ করেনি! বলেছে তন্নিকে ওর বাসা থেকে পিক করবে। সো এখানে আর কাউকে নেওয়া যাবে না। এভাবে না করায় বেঁচারি আশাহত হয়ে ফিরে গেছেন।মুখটা জাস্ট দেখার মতো ছিল। কিন্তু আমার কি? আমার তো এতে ভীষণ মজা লেগেছে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গান গাওয়ার অদম্য ইচ্ছেরা মনে এসে হানা দিল! কিন্তু আপাতত তা সম্ভব নয়! তাই তা মাটি চাপা দিতে বাঁধ্য হলাম!
.
গাড়ির সিটে গা এলিয়ে ক্লান্ত চোখ জোড়া বুঝে নিতেই উনার কন্ঠ কানে এলো! উনি গানের সুর ধরলেন…….
.
তুমি ভাবনায় ডুবে থাকা,
দূর আকাশের নীলিমায়!
তুমি হৃদয়ে লুকোনো প্রেম,
মিশে থাকা গভীর মুগ্ধতায়!

তুমি এলে, মন ছুঁলে,
অন্যরকম হয়ে যাই!
ইচ্ছেগুলো জড়োসড়ো,
ভালোবাসি বলে তাই!

আমার আমি বলতে,
তোমায় জানি।
ঐ আকাশ জানে,
তুমি আমার কতোখানি!

আমার আমি বলতে,
তোমায় জানি!
ঐ আকাশ জানে,
তুমি আমার কতোখানি!

চিলে কোঠায় ইচ্ছেগুলো,
নেই তো কোনো দাঁড়ি কমা!
বুক পকেটে তোমার জন্য,
রেখেছি ভালোবাসা জমা!

শিশির রোদের লুকোচুরি,
তোমার হাসি ফোটা বকুল!
ছোঁয়া পেলে স্বপ্ন হাজার,
আনমনে হয়ে যাই ব্যাকুল!

তুমি এলে,মন ছুলে,
অন্যরকম হয়ে যাই!
ইচ্ছেগুলো জড়োসজো,
ভালোবাসি বলে তাই!

আমার আমি বলতে,
তোমায় জানি!
ঐ আকাশ জানে,
তুমি আমার কতোখানি!

আমার আমি বলতে,
তোমায় জানি!
ঐ আকাশ জানে,
তুমি আমার কতোখানি!

আমি এক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কতো সুন্দর করে গান গায় উনি। মাশাল্লাহ্ খুব সুন্দর উনার ভয়েজটা! শুনলে শুনতেই ইচ্ছে করে। অনেকদিন পর উনার কন্ঠে গান শুনলাম। আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছি না উনি গান গাইলেন? তাও নিজের ইচ্ছেতে? যেই মানুষটাকে শত বলার পরেও গানের জন্য রাজি করানো যায় না আজ সে নিজে থেকে গান গাইলেন। ভাবতেই অবাক লাগছে। লাস্ট কবে উনার গান শুনেছি এমুহূর্তে ঠিক মনে করতে পারছি। যাই হোক! উনি গান গেয়েছে এটাই অনেক। উনার গান শুনে সব ক্লান্তিরা যেন দৌড়ে পালালো।
.
আমি এক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিযে আছি। কি সুন্দর উনি! কি সুন্দর করে গান গাইতে পারে৷ কিন্তু ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই৷ আমি খুব লাকি আমার বরটা এতো সুন্দর। কিন্তু কোথাও গেলে গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েরা উনার পেছনে পড়েই থাকে।এসব তো একদম সহ্য হয়না। উনি তো আমার বর। আমার জিনিস! তাহলে অন্য মেয়েরা কেন তাকাবে? পেছন পেছন ঘুরবে? একদম এস করবেনা। যা করার শুধু আমি করব! কথাগুলো ভেবে উনার স্নিগ্ধ মুখটা ছুঁয়ে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছে চাপল। বারবার মনে হতে লাগল। “একটাবার একটু ছুঁয়ে দিই!” কিন্তু তা তো সম্ভব নয়! কেন যেন মন চাইলেও ব্রেন চাইল না। তাই মনের এই অদম্য ইচ্ছেটাকে দম্য করতে আবার আগের মতো ঠিক হয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম!
.
পুরোটা রাস্তা জুড়ে কেউ কারো সাথে কথা বলিনি। আমি বারবার কথা বলতে গিয়েও কেন যেন ফিরে এসেছি।কেন যেন মনে হচ্ছিল– “নাহ্! একটাও কথা বলব না।” অথচ কোনো কারণ নেই এমনটা মনে হওয়ার। না ঝগড়া না কোনো কথা কাটাকাটি! শুধু শুধু কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না করা। কাউকে ইগনোর করা, কারণ ছাড়া কারো উপর অভিমান করা এগুলো ছোট থেকেই আমার একটা বাজে অভ্যাস। আজ এর মাঝে কোনটা হলো নিজেই জানিনা। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না নাকি অভিমান করলাম নাকি ইগনোর? নিজেরই অজানা!
.

প্রায় ১ থেকে দেড় ঘন্টা পর একটা বড় গেটের সামনে এসে গাড়িটা থামল। এতোক্ষণ দু’জনে চুপ থাকলেও এবার আর তা হলো না!
.
—- গাড়ি থেকে সাবধানে নাম। আমার শাড়ি পেঁচিয়ে পড়ে যাস না।
.
উনার কথা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আসলে আমি বোঝার চেষ্টা করছি উনি কি আমাকে সাবধান করলেন নাকি আবার পঁচালে কোনটা?
আমার ভাবনার মাঝেই উনি আবার বললেন…..
.
—- কি হলো? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
.
—- আপনি আমাকে সাবধান করলেন নাকি ইনসাল্ট?
.
—- মানেহ্?
.
—- একদম না বোঝার ভান করবেন না। আপনার কি ঝগড়া না করলে হয় না?
.
—- অদ্ভুত! আমি তোর সাথে ঝগড়া কখন করলাম?
.
—- তো একটু আগে যেই কথাটা বললেন সেটা তো ঝগড়া লাগানোর জন্যই বললেন নাকি?
.
আমার কথা শুনে উনি স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই ভেতরে হাঁটা দিলেন। আজব পাবলিক তো! বউকে রেখে একাই চলে যায়? এটা কোন ধরনের ব্যবহার? মানুষ কি ভাববে? আমার আসাই ভুল হয়েছে। তোর সাথে আর জীবনেও কোনোখানে যামু না খাটাশ পোলা। যা তুই একলা যা। আমিও যাইতে পারি হুহ!
.
মনে মনে বিরবির করে ভেতরের উদ্দেশ্যে হাঁটতেই হঠাৎ কেউ একজন আমার বা হাতটা ধরে একটানে আমাকে গাছের আড়ালে নিয়ে দাঁড় করালো। আঁচমকা এভাবে টান দেওয়ায় আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। হকচকিয়ে গেলেও শুরুতে আমার কোনো রিয়েকশন ছিল না। কিন্তু সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে মনে হয় আমার রিয়েকশন বাটন ডেম হয়ে গেছে। উনি হঠাৎ এমন ব্যবহার কেন করলেন? আজব! কেউ দেখলে কি ভাববে?
.
আমার ভাবনার মাঝেই সামনে থাকা ব্যক্তি বলে উঠলেন……
.
—- ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস আলীশা! রিয়ালি আ’ম সো ক্রাশড অন ইউ! আই লাভ ইউ!
.
লোকটার বলা প্রথম কথাটা আমার জন্য স্বাভাবিক হলেও পরের কথাগুলো শুনে আমি বাকারুদ্ধ হয়ে গেছি। আমার মুখের ভাষা যেন হারিয়ে গেছে। আমি ঠিক কি রিয়াক্ট করব বুঝে উঠতে পারছিনা। একটা মানুষ এতোটা লাগাম ছাড়া কি করে হতে পারে? কতোদিনের পরিচয় তার সাথে আমার? আমাকে ঠিকমতো চেনে পর্যন্ত না। অথচ ভালোবাসে? লাইক সিরিয়াসলি?
.
আমার ভাবনার মাঝে সে আবার বলল…..
.
—- প্লিজ আলীশা একসেপ্ট মি!
.
এবার উনার কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। প্রথমত, উনি জানে আমি বিবাহিত। একটা বিবাহিত মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উনি অনেক বড় একটা অন্যায় করেছেন। দ্বিতীয়ত, উনি জানেন আমি সম্পর্কে উনার ভাবী হই। তার উপর বলছে একসেপ্ট করতে? আশ্চর্য! মানুষ এতোটা চিপ মেন্টালিটির কি করে হতে পারে? হাও? এবার আর আমার পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব হলো না! রাগটাকে কন্ট্রোল করে! শান্ত স্বরে জবাব দিলাম!
.
—- আকাশ ভাইয়া! আমি বিবাহিত!
.
—- হুম আমি তা জানি তো! তোমার বর সূর্য ভাই তাও জানি।
.
—- আপনি জানেন আমি আপনার সম্পর্কে ভাবী হই রাইট?
.
—- ইয়াহ্! বাট বয়সে তো ছোট।
.
—- সো ওয়াট? এখানে এখন সম্পর্কটা আসবে বয়স না। আর তাছাড়া আমার স্বামী আছে জেনেও আপনি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছেন আপনার বিবেকে বাঁধল না একটাবার?
.
—- আমি ভুল কিছুই করিনি আলীশা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তাছাড়া সূর্য ভাই তোমার দিকে ফিরেও তাকায় না। আজ অব্দি একবারও স্ত্রীর অধিকার দিয়েছে? দেয়নি তো! দিবে কি করে। সে তোমাকে ভালোই বাসেনা। সে শুধু প্রয়োজনে তোমাকে ব্যবহার করছে। তাই বলছি তাকে ছেড়ে আমার কাছে চলে এসো। জীবনে অনেক সুখী…….
.
আকাশ ভাইয়ার পরের কথাগুলো আমার একদমই সহ্য হচ্ছিল না। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিল। নিজের রাগটাকে আর না আটকাতে পেরে উনি কথাটা শেষ করার আগেই নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উনার গালে কষিয়ে একটা চড় দিলাম! সাথে সাথে উনি চমকে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন!
.
—- লজ্জা করে না আপনার? বড় ভাবীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শেখেন নি?
.
—- আলীশা তুমি কাজটা একদম ঠিক করো নি!
.
—- আমি কি ঠিক করেছি আর কিনা সেটা আপনার মতো নিচু মানসিকতার লোকের থেকে শিখতে হবেনা। আজকের পর যেন আপনাকে আমার আশেপাশে কোথাও না দেখি। তাহলে কিন্ত ভালো হবেনা! মাইন্ড ইট!
.
কথাটা বলে একদৌড়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলাম। চোখের পানি যেন বাঁধ মানছেই না। আজ এই দিনটাও আমার সূর্যর জন্য দেখতে হচ্ছে। শুধু আর শুধুই উনার জন্য!
.
____________________
.
সন্ধ্যা ৭টা বেজে ৩০ মিনিট। একটু আগেই ফরহাদ ভাইয়ার হলুদের ফাংশন শেষ করে আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি! বাসায় পৌছে ঐদিকের গোছগাছ শেষ করে রিয়া আপুকে হলুদ ছোঁয়ানো হবে। বিকেলের ঐ ঘটনার পরে আমি আর কারো সাথেই কোনো কথা বলিনি। এমনকি সূর্যের সাথেও না। আমাকে চুপ দেখে ফরহাদ ভাইয়ার বোন ফারিন অনেকবার জিজ্ঞেসাও করেছে মন খারাপ কিনা৷ কিন্তু ওদেরকেও কিছু বলিনি। সূর্য কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? কিন্তু কোনো উত্তরই দিই নি৷ কারণ কথা বলার মতো মানসিকতাই ছিল না। রাগ না অভিমান কিসের জন্য কথা বলছিলাম না নিজেই জানিনা!
.
কারো স্পর্শে ভাবনার ছেঁদ হলো!
.
—- কি ভাবছিস?
.
—- কিছু না তো!
.
—- তাহলে সেই কখন থেকে বলছি এসে গেছি নাম। শুনছিলিই না!
.
—- ওহ্ এতো তাড়াতাড়ি এসে গেছি?
.
—- তাড়াতাড়ি কোথায়? ৭:৩০ মিনিটে রওনা হয়েছি। এখন ৯টা বেজে ২০ মিনিট।
.
আমি ছোট করে ওহ্ বলে ওখান থেকে চলে এলাম। কারণ ওখানে থাকলেই উনি আবারও একই কথা জিজ্ঞেস করতেন।
.
উপরে এসে সোজা রিয়া আপুর রুমে চলে গেলাম। সেখান থেকে তাকে নিয়ে সবাই ছাঁদে গেলাম। ছাঁদটা অনেক বড়। ছাঁদেই খুব সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে।
.
রিয়া আপুকে স্টেজে নিয়ে বসানোর পরে মামানি আমাকে মিষ্টি আর পায়েসটা আনার জন্য নিচে পাঠান। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সূর্য আমাকে কয়েকবার ডাক দেন। কিন্তু আমি উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা। ফিরেও তাকাই নি! মিষ্টি আর পায়েসটা হাতে নিয়ে সূর্যকে পাশ কাটিয়ে সোজা ছাঁদে চলে যাই। মামানিকে অগুলো দিয়ে রিয়া আপুর পাশে বসতে নিলে একটা পিচ্চি দৌড়ে এসে আমাকে বলে…..
.
—- আপু! আপু! তোমার বর তোমাকে ডাকছে।
.
পিচ্চির কথা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বলে…..
.
—- আপু! এটা তোমার বরটা তোমাকে দিয়েছে। কি ভালো তোমার বরটা। কত্তো ভালোবাসে তোমাকে! বলেছে তোমার মন খারাপ এটা দিলে ভালো লাগবে! ( হাতে একটা গোলাপ দিয়ে)
.
পিচ্চির কথা শুনে তো আমি পুরাই “হা”! এইটুক পিচ্চি বলে কি? এ আবার ভালোবাসাও বোঝে? মাই আল্লাহ্! তবে পিচ্চির কথায় বেশ মজা পেলাম। তাই হাটু গেড়ে ওর সামনে বসে হাতটা ধরে বললাম……
.
—- ভালোবাসা কি আপু? তুমি বোঝো?
.
—- হুম বুঝি তো! মাম্মি যখন রাগ করে তখন বাবাই মাম্মিকে একটা লাল টুকটুকে গোলাপ হাতে দিয়ে কপালে কিসি দেয়৷ এটাই তো ভালোবাসা! এই যা। আমি তো ভুলেই গেছি!
.
ওর কথা শুনে যেন এবার আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এইটুক মেয়ে এতো কিছু জানে?
.
—- কি?
.
—- ভাইয়া বলেছে ভাইয়ার হয়ে তোমার কপালে একটা কিসি দিতে। তাহলে নাকি তোমার রাগ ভেঙে যাবে।
.
এইটুকু বলেই আমার দুই গাল ধরে কপালে তার ছোট ঠোঁট জোড়া ছুয়ে দিল। আমিও মুচকি হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম।
.
—- এখন তো তোমার রাগ নেই তাই না?
.
—- উহু! কি নাম তোমার?
.
—- আমার নাম ঊর্মিলা জাহান হুর!
.
—- মাশাল্লাহ্! খুব সুন্দর নাম তো তোমার! নামের মতোই সুন্দর তুমি।
.
—- তোমার নামও খুব সুন্দর!
.
—- কিভাবে বুঝলে? তুমি আমার নাম জানো?
.
—- হুম! জানি তো! তোমার নাম আলীশা আহমেদ আলো! তোমার নাম যেমন আলো তুমিও আলোর মতো সুন্দর। কতো সুন্দর তুমি! তাই তো ভাইয়া তোমাকে এত্তোগুলো ভালোবাসে!
.
—- তাই নাকি?
.
—- হুম তো! আমি তোমার মতো সুন্দর হবো বড় হয়ে!
.
—- আচ্ছা! তাই হবে। এখন বলো কিছু খাবে?
.
—- না গো! এখন আমি হলুদ মাখানো দেখবো।
.
—- আচ্ছা চলো আমরা তাহলে স্টেজের কাছে যাই।
.
—- না! এখন দেখতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে না জিজ্ঞেস করেছো কিছু খাব কিনা? আমি আইসক্রিম খাব।
.
—- এখন আইসক্রিম কই পাব আপি?
.
—- তুমি এখন অন্য কিছু খাও। আমি আইসক্রিম পরে দিই?
.
—- নাহ্! এখনই!
.
—- আচ্ছা দাঁড়াও আমি দেখি কাউকে দিয়ে আনিযে দিই!
.
এইটুকু বলে আমি হুরকে দাঁড় করিয়ে রেখে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাই। দরজা বরাবর যেতেই হঠাৎ কারো হেঁচকা টানে দরজা পেছনে নিয়ে দাঁড় করায়। দরজার সাইডটা অন্ধকার হওয়ায় লোকটির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাইনি। আমি চেঁচাতে নিব অমনি আমার মুখটা চেপে ধরে। এতোক্ষণে আর আমার বুঝতে বাকী নেই মানুষটা কে? আমি কিছু না বলে নিজেকে ছাঁড়ানোর জন্য জোড়াজুড়ি করতেই উনি আমাকে দেয়ালে চেপে ধরেন। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলেন……
.
—- শুধু শুধু চেঁচামেচি করিস না। গানের শব্দে কেউ শুনবেনা। এখানে একটু শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আমার কথার জবাব দে!
.
আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম উনি ঠিক কেমন মুডে আছেন! কিন্তু পোড়া কপাল আমার! অন্ধকারে তা সম্ভব হলোনা।
.
—- কি বলবেন দ্রুত বলুন!
.
উনি আমার হাতটা ধরে ছাঁদের অন্যপাশটায় নিয়ে গেলেন। এখানে চাঁদের আলোতে উনার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কতোটা মলিন! সত্যিই খু্ব সুন্দর উনি! আমার ভাবনার মাঝেই উনি বলে উঠলেন…..
.
—- আমাকে ইগনোর করছিস কেন?
.
—- কিছু না এমনি! ভালো লাগছিল না।
.
এইটুকু বলে চলে আসতে নিলে উনি বা হাতটা চেপে ধরেন। শান্ত স্বরে বললেন…..
.
—- কি লুকচ্ছিস?
.
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি আবার বললেন…..
.
—- তোর মুখ দেখলে আমি সবটা বুঝতে পারি৷ মন খারাপ কেন? কে কি বলেছে তোকে?
.
—- কই কে কি বলেছে? কেউই কিছু বলেনি। ঐদিকে হলুদ ছোঁয়ানো হচ্ছে৷ আমিও হলুদ ছোঁয়াবো।
.
—- বলবি না?
.
—- কি বলব?
.
—- জাস্ট হ্যাঁ অথবা নাতে আন্সার দে!
.
আমি বুঝতে পারছি না কি করব! যদি আকাশ ভাইয়ার কথাগুলো বলি তাহলে আকাশ ভাইয়ার কপালে দুঃখ আছে। সূর্য উনাকে কি করবে আমি নিজেও জানি না। এদিকে সূর্যেকে মিথ্যা বলতে পারিনা। কি করব আমি? কোনদিকে যাব? উফহ্ আর ভাবতে পারছি না! কিছুতেই না!
.
আমার ভাবনার মাঝেই উনার হাতের ফোনটা বেজে উঠল! উনি রিসিভ করে কানে ধরে সিঁড়ির দিকে নেমে গেলেন। আর আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে ঐ জোৎস্না ছড়ানো চাঁদ দেখতে লাগলাম!

#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here