পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ৩৬❤ .

0
392

#পারবনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৩৬❤
.
__________________
.
রাত ১টা বেজে ৫মিনিট। নানা রকম আচার-আচরণ, নিয়ম-নীতি, নাচ-গান, হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়েই শেষ হলো রিয়া আপুর হলুদ! একটু আগে খাওয়া শেষ করে যে যার মতো রুমে এলাম। রুমে ঢুকে সূর্যকে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। আমি কিছু না বলে সোজা আম্মুর রুমে চলে গেলাম।
.
—- আম্মু! আসব?
.
—- আরে আয় আয়! মায়ের ঘরে আসতে হলে পারমিশন নেওয়া লাগে? আগে তো নিতি না৷ বিয়ের পর কি পর হয়ে গেলি?
.
—- পরই তো করে দিয়েছো৷ কতোদিন হয়েছে তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাই না বলো তো! ঘুম না আসলেও তোমার কোলে মাথা রাখতে পারিনা! তুমিও আর বলো না, আলো মা! আয় দেখি কোলে মাথা রেখে একটু শো তোর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই!
.
এইটুকু বলতেই ফুপিয়ে উঠলাম আমি! সাথে সাথেই আম্মু চমকে উঠলেন। বাবাকে ডেকে বললেন…..
.
—- শুনছো! মেয়ে কাঁদছে। উঠো না!
.
আম্মুর কথা শুনে বাবা এক প্রকার লাফিয়ে উঠে বসলেন। বাবা প্রেসারের রোগী হওয়ায় আরও ঘন্টাখানেক আগেই তাকে খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে ঘুমোতে পাঠানো হয়েছে!
.
—- কি হয়েছে? আমার ছোট প্রিন্সেসটা কাঁদছে কেন? (আমার মাথায় হাত রেখে)
.
—- আমি তোমাদেরকে খুব ভালোবাসি বাবা! (কাঁদতে কাঁদতে)
.
—- তা তো জানি আমি! আর আমরাও আমাদের প্রিন্সেসটাকে ভীষণ ভালোবাসি! তার চোখের পানি যে আমাদের সহ্য হয় না!
.
সত্যিই তো! আমি কাঁদছি কেন? আসলেই তো উত্তরটা নেই আমার কাছে৷ কিসের জন্য কাঁদছি জানি না! তবে এইটুক জানি ভীষণ কান্না পাচ্ছে আমার! আমার ভাবনার মাঝেই আম্মু বললেন…..
.
—- কি হয়েছে বল মা!
.
আমি আম্মুর কথার কোনো জবাব দিলাম না! বাবাকে বললাম……
.
—- বাবা! একটা গল্প শোনাবে প্লিজ? অনেকদিন তোমার কাছে গল্প শুনিনা।
.
বাবা মুচকি হেসে আমার মাথায় চুমু খেলেন! তারপর ছোট বেলার মতো রাজকন্যা আর রাজপুত্রের গল্প শোনাতে লাগলেন। অনেকদিন পরে বাবার কাছে আবার গল্প শুনছি। আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। ভাবতেই ভীষণ ভালো লাগছে আমার।
.
গল্প শুনতে শুনতে অনেকক্ষণ কেটে গেল। এতোক্ষণে হয়তো আমাকে না পেয়ে উনি চিন্তা করছেন। এদিকে আম্মু আর বাবারও ঘুমের প্রয়োজন! সারাদিনে অনেক কাজ করেছেন। তাই আর কথা না বাড়িয়ে তাদেরকে বলে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
.
রুমে এসে কোথাও উনাকে পেলাম না! আমি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। কাপড়টা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই পেছন থেকে কেউ একজন আমাকে জড়িয়ে ধরল। যেহেতু ছোঁয়াটা আমার চেনা তাই এবার আর চমকালাম না। বা কোনো রকম অস্বস্তি লাগল না!
.
উনাকে নিজের থেকে ছাড়াতে গিয়ে বিকেলে বলা আকাশ ভাইয়ার কথাগুলো মনে পড়তেই থেমে গেলাম আমি। আজ আর উনাকে কোনো বাঁধা নয় যা করছেন করুক! এতোদিন আমিই উনাকে বাঁধা দিতাম কিন্তু আজ আর নয়! কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ করে শ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
.
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লেন! আমি চোখ মেলে উনার দিকে তাকাতেই বললেন…..
.
—- তোর পারমিশন ছাড়া আমাদের মাঝে শারিরীক কোনো সম্পর্কই হবে না। চিন্তা করিস না! আর আমি তোকে জোড়ও করব না। তুই সময় নে। যতো খুশি সময় নে। যদি কখনো না চাস না হবে। কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাস না আলো। আর কখনো কিছু লুকাস না প্লিজ! আমি তো শুধু তোর স্বামী না! তোর খুব ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। তোর সুখ দুঃখের সঙ্গী! তোর সব কথা শুনতে চাই! আবদার পূরণ করতে চাই! এইটুকুই দিস শুধু তাহলেই হবে। কোনো শারিরীক সম্পর্কের প্রয়োজন নে…..
.
উনার কথাটা শেষ না করতে দিয়ে আমি উনার সামনে ফ্লোরে বসে পড়লাম। উনার কোলের উপর মাথা রেখে বললাম…..
.
—- আমার বাবু চাই!
.
উনি আমার কথা শুনে এক প্রকার চমকে উঠলেন বলে মনে হলো!
.
—- মানেহ্?
.
—- আপনি ঠিকই শুনেছেন! আমার বাবু চাই!
.
—- তোর মাথা ঠিক আছে? কি বলছিস এসব? তোর বয়স এখন অনেক কম।এতো ছোট বয়সে বেবি কন্সিভ করাটা অনেক রিস্ক তোর জন্য! আর তাছাড়া তোর এডমিশনেরও বেশি বাকী নেই!
.
—- আমি আর পড়ব না!
.
—- মানেহ্? কি বলছিস এসব? কেন পড়বি না তুই?
.
—- এমনি! বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর পড়াশোনা করে কি হবে?
.
—- শাটাপ আলো! অনেক বলেছিস। আমি যা বলব তাই হবে। তুই পড়াশোনা করবি। তোর স্বপ্নও পূরণ করবি। তোকে অনেক ভালো ডক্টর হতে হবে।
.
—- কিন্তু আমার বাবু চাই!
.
—- হ্যাঁ হবে তো! আমাদের খুব সুন্দর ফুটফুটে একটা প্রিন্সেস হবে। তবে তার আগে তোকে ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পেতে হবে। তার জন্য যা করার প্রয়োজন আমি করব।আমার পুরো সাপোর্ট আছে তোর সাথে।
.
আমি টলমলে চেখে উনার দিকে তাকালাম। উনি আমাকে একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন! নানা রকম গল্প,খুনশুটি মিলিয়ে রাতটা বারান্দায কাটিয়ে ফজরের পর দু’জনে ঘুমোতে গেলাম!
.
🍁
.
দরজায় কড়া আঘাতে ঘুমেরা যেন লেজ গুটিয়ে পালালো! বেড সাইড থেকে ফোনটা খুঁজে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই যেন চোখ আমার কপালে উঠে গেল। বেলা ১১টা! মাই আল্লাহ্! বাড়িতে এতো ঘুমালে মানা যায়। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে এসে এতো ঘুম? অসম্ভব! তার উপর আগের যুগের নানী,দাদীরা তো আছেই! কতো কথা জুড়ে দেয় কে জানে! কি ভাববে বরকে নিয়ে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছি! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বালিশের পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে গলায় জড়িয়ে উঠতে নিলে উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন! একে তো এতো লেট তার উপর উনি আরও লেট করে দিচ্ছেন! উফহ্ কি লজ্জায় না পড়তে হবে আজ কে জানে?
.
—- শুনছেন! ছাড়ুন না। দেখুন ১১টা বাজে। কে যেন ডাকতে এসেছে। এতোক্ষণে সবাই উঠে গেছে নিশ্চয়ই! আমাদের বাড়িতে হলে এতোটা অস্বস্তিতে পড়তে হতো না! রিয়া আপুদের বাসা তার উপর আপুর নানী আর তার এক বোনও আছে। জানেনই তো! উনাদের যুগে মেয়েরা এতো বেলা পর্যন্ত স্বামী নিয়ে ঘুমায় না! কি ভাববে বলুন তো! প্লিজ ছাড়ুন!
.
আমার কথা শুনে উনি নড়েচড়ে উঠলেন! ঘুমু ঘুমু গলায় বললেন…..
.
—- ভাবুক! তাতে আমার কি? আমি তো অন্য কোনো মেয়েদের নিয়ে ঘুমোচ্ছি না? আমার বউকে নিয়ে ঘুমাচ্ছি! সো আমি এখন ঘুমাবো। মানে ঘুমাবো! যে যা ভাবার ভাবতে পারে। আই ডোন্ট কেয়ার!
.
বলে আবার আগের মতো আমাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লেন! মেজাজটাি গেল খারাপ হয়ে। আজব পাবলিক তো! তার কিছু না! সত্যিই তো তার কি? সব তো আমার। উনার তো লজ্জা নামক কোনো অনুভূতি আছে বলে মনে হয়না!
.
আমার ভাবনার মাঝেই দরজায় আবার কড়া নড়ল! আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই উনি ধমকে বলল…..
.
—- কে? সমস্যা কি?
.
ওপর পাশ থেকে কাঁপা গলায় বলল…..
.
—- ভা…. ভাইয়া আমি নাজনিন! আসলে….
.
—- কি আসলে? কি চাই এখন?
.
—- না মানে?
.
এবার উনি আমাকে ছেড়ো উঠে গিয়ে দরজা খুলেই দিলেন এক রাম ধমক!
.
—- কি সমস্যা তোমার? একে তো ঘুমের বারোটা বাজালে তার উপর মানে মানে করছো! সমস্যাটা কি?
.
নাজনিন আপু এবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে থমথমে গলায় বলল…..
.
—- আলীশাকে আকাশ ভাইয়া ডাকছে। তাই ডাকতে এলাম!
.
নাজনিন আপুর মুখে আকাশ নামটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। ভয়ে ভয়ে সূর্যের দিকে তাকালাম। উনি হয়তো রেগে যাবেন! কিন্তু না উনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই উত্তর দিলেন…..
.
—- আকাশকে গিয়ে বলবে, আলো এখন ওর স্বামীর সাথে আছে। আপাতত ওরা ওদের পার্সনাল কাজে ব্যস্ত! সো আলো এখন আসতে পারবেনা। বুঝেছে?
.
সূর্যর উত্তরটা শুনে নাজনিন আপুর মুখটা চুপসে গেল! শুকনো মুখে বলল….
.
—- কিন্তু…
.
ওকে কিছু না বলতে দিয়ে সূর্য আবার ধমকে উঠলো!
.
—- কোনো কিন্তু নয়! যা বলেছি ঠিক তাই বলবে বুঝেছো? এখন যাও আমরা ব্যস্ত!
.
এইটুকু বলেই নাজনিন আপুর সামনে আমার কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নেন। উনি যখন আমাকে নিজের কাছে টেনে নেন তখন নাজনিন আপুর মুখটা জাস্ট দেখার মতো ছিল!
.
উনি দরজাট বন্ধ করে আমাকে ছেড়ে হাসতে হাসতে বিছানায় ধুপ করে শুয়ে পড়ে। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ মজা পেয়েছে। উনার হাসির মাঝেই বললাম…..
.
—- আপনি এটা কি করলেন?
.
আমার কথা শুনে উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন!
.
—- কেন কি করলাম আমি?
.
—- আপনি নাজনিন আপুর সামনে আমাকে ওভাবে জড়িয়ে ধরলেন! তারপর কিসব পার্সনাল কাজে ব্যস্ত বললেন! উনি কি ভাববে?
.
—- যা ভাবার ভাবুক! আমার কি?
.
—- সত্যিই আপনার কিছু না! আপনি দেখেছেন যখন আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন আপুর মুখটা শুকনো হয়ে গেছিল! আই থিংক উনি আপনাকে পছন্দ করেন!
.
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখটা সড়িয়ে নিলেন! স্বাভাবিক স্বরে বললেন…….
.
—- আমি জানি!
.
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম….
.
—- আপনি জানেন? তার পরেও এমন করলেন? আপনি এতোটা নিষ্ঠুর?
.
উনি আমার কথা শুনে হালকা হাসলেন! আমার বা হাতটা টেনে উনার পাশে বসিয়ে কোলে মাথা রেখে শুয়েভ কোমড় জড়িয়ে ধরলেন! তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্বাভাবিক স্বরে বললেন…….
.
—- হুম, পাড়লাম! তার কারণও আছে! প্রথমত, আমাকে কে ভালোবাসে বা পছন্দ করে তা আমার কাছে কোনো ম্যাটার করে না। আমি যাকে কাকে ভালোবাসি সেটাই আমার কাছে ম্যাটার করে। দ্বিতীয়ত, আমি বিবাহিত। আর আমি আমার স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসি। আর আমি আমার স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারীর দিকে তাকাতে পর্যন্ত চাই না!
.
—- তাই বলে এমন করবেন? স্বাভাবিক ভাবে বললে কি সে মানতো না?
.
—- তোর কি মনে হয় আমি বলিনি?
.
—- ও আমাকে প্রথম যেদিন বলেছে আমাকে ওর খুব পছন্দ! সেদিনই বলেছি। বাট ও মানে নি! ও দিনের পর দিন ওর বেহায়াপনা দেখিয়েই গিয়েছে। তোর মনে আছে সেদিন যখন বাড়ি সাজানোর সময় ছাঁদ থেকে নামার সময় ওর সাথে ধাক্কা লেগেছিলাম? ওটা অসাবধানতার জন্য নয়! ওটা ও ইচ্ছে করেই দিয়েছিল।
.
উনার কথা শুনে আমার গা যেন রাগে ফেটে যাচ্ছে। অসভ্য মেয়ে কোথাকার! লাজ- লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই। অন্যের বরকে ধাক্কা দেয়। এতোদিন তাকাতো এখন আবার ধাক্কা। সামনে পেলে এখনই ওর সবকটা চুল গুনে গুনে ছিঁড়তাম আমি! হুহ!
.
উনি আবার বললেন…..
.
—- সেদিনও বলেছি! কিন্তু লাভ হয়নি। তাই এবার ওর মতো করেই ওকে জবাবটা দিব!
.
উনার কথার উত্তরে আমি আর কিচ্ছু বললাম না! কি বলব? বলার মতো কিছু খুঁজেই পেলাম না! সত্যিই খুব ভাগ্যগুনে এমন স্বামী পাওয়া যায়। আল্লাহ্’র কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আমি এমন একজন স্বামী পেয়েছি বলে!
.
__________________
.
রাত ৮টা বেজে ২০ মিনিট। একটু আগেই রিয়া আপুর বিয়ের পর্ব শেষ হলো। বিয়ের পর্ব শেষ করে গুরুজনরা সবাই নিচে চলে গেছেন। ছাঁদে রয়ে গেলাম আমরা বাচ্চারা। ছাঁদের দক্ষিণ দিকে পাটি বিছিয়ে সবাই গোল হয়ে বসে পড়লাম। উদ্দেশ্য খেলব! কিন্তু ঝামেলা বাজল আরেক যায়গায় বেশিরভাগই বলছে ট্রুথ অর ডেয়ার খেলবে৷ আমিও রাজি! কিন্তু বাঁধ সাধলো সূর্য! উনি খেলবে না মানে না! উনার কথা হলো “এসব খেলা মানসম্মানের পাস্তা বানিয়ে নাস্তা করিয়ে দেয!” সো এসব খেলবে না। কিন্তু আমি খেলবই! এই নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ নামক এক দফা যুদ্ধও হয়ে গেল। কিন্তু তাতে বেশি লাভ আর হলো না! বরাবরের মতো আমিই হেরে গেলাম! সবাই সূর্যকে শর্ত দিল যদি উনি গান শোনায় তবে কেউ “ট্রুথ অর ডেয়ার” গেম খেলবে না। আর না শোনালে খেলতে হবে! সূর্যও রাজি হয়ে গেল! আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো রাজি হবেন না।কিন্তু উনি রাজি হয়ে গেলেন। এমনিতেই নাজনিনের বাচ্চা! ডাইনী, শাঁকচুন্নি উনার পিছে পড়ে আছেন।গান শুনে যদি আরও পাগল হয়ে যায়? এই নাকি উনার জব্দ করা। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার! এইদিকে উনি রিয়াদ ভাইয়াকে ডাক দিয়ে ঘর থেকে গিটারটা আনতে বললেন। রিয়াদ ভাইয়া গিটারটা এনে উনাকে দিতেই আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ওখান থেকে উঠে স্টেজে রিয়া আপুর কাছে চলে গেলাম।
.
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে গিটারের সুর ধরেন! সাথে সাথে রাগটা আমার কোথায় যেন উড়ে গেল বলে মনে হলো! কারণ উনার বাজানো এই গিটারের সুর যে আমায় কতো শত বছরের চেনা সুর! এই সুরের জন্ম যে শুধু আর শুধুই আমার জন্য! তাহলে আমি কেন রেগে যাচ্ছি? আমি জানি উনি গানটা সবার কথায় গাইলেও আসল উদ্দেশ্যটা আমি তবুও কেন রাগ করছি? আর রইল, নাজনিন আপুর কথা? সেটা তো কিছুই না! কারণ সূর্য নিজে আমার সামনে বলেছে উনার নাজনিন কেন আমি ছাড়া কোনো মেয়েই পছন্দ নয়! কারো দিকেই তাকাতে পর্যন্ত চায় না! তাহলে তো আমার রাগার প্রশ্ন আরও আগে আসছে না! কথাগুলো ভেবে মুচকি হেঁসে গালে হাত দিয়ে এক মনে উনার স্নিগ্ধ মুখটাতে চেয়ে আছি!
.
আর উনি? গান ধরলেন হয়তো আমার এই হাসিটারই অপেক্ষা করছিলেন!
.
তুই বর্ষা বিকেলের ঢেউ,
তুই আমার কাছের কেউ!
তুই চাঁদরে ওড়ানো রাত,
তোকে দেখতে পেয়েছি হঠাৎ!

তুই বর্ষা বিকেলের ঢেউ,
তুই আমার কাছের কেউ!
তুই চাদরে ওড়ানো রাত,
তোকে দেখতে পেয়েছি হঠাৎ!

দিয়েছে কি হাওয়া,
হয়েছি উড়ো খই!
রয়েছি আমাতে,
আমি কই?

দিয়েছে কি হাওয়া,
হয়েছি উড়ো খই!
রয়েছি আমাতে,
আমি কই?

এসে গেছে দিন,
কতো না রঙিন!
নামে তোর, এশহর,
দেব লিখে সব আমার!

তুই এলি তাই,
মন হলো ঠিক!
কাছে তোর, ঘুম ঘোর,
নেব চেয়ে যা চাওয়ার!

চেনা তোর ইশারায়,
ফেলেছে কি জ্বালায়!
এসেছে একি ঝড়,
অবেলায়!

দিয়েছে কি হাওয়া,
হয়েছি উড়ো খই!
রয়েছি আমাতে,
আমি কই?

এনে দেব চাঁদ,
ভাবনা অবাদ!
এলে তুই, আমি ছুঁই,
এক লাফে তারাদের!

এনে দেব ক্ষণ,
ঝাঁপিয়ে আপন!
যেন তোর, হবে ভোর,
মায়া পীঠে রাতে!

চেনা তোর ইশারায়,
ফেলেছে কি জ্বালায়!
এসেছে একি ঝড়,
অবেলায়!

দিয়েছে কি হাওয়া,
হয়েছি উড়ো খই!
রয়েছি আমাতে,
আমি কই!

তুই বর্ষা সকালের রেশ,
তুই আমার ঘুমের দেশ!
তুই চাদরে ওড়ানো রাত,
তোকে দেখতে পেয়েছি হঠাৎ!

দিয়েছে কি হাওয়া,
হয়েছি উড়ো খই!
রয়েছি আমাতে,
আমি কই?

দিয়েছে কি হাওয়া,
হয়েছি উড়ো খই!
রয়েছি আমাতে,
আমি কই?

উনি গান শেষ করতেই সবার তালির শব্দে পুরো ছাঁদ যেন কেঁপে উঠলো! উনার পাশ থেকে নোমান ভাইয়া বলে উঠলেন……
.
—- অসাধারণ সূর্য ভাই! সত্যিই তোমার কন্ঠে যাদু আছে! তা গানটা নিশ্চয়ই আমাদের সকলের পিচ্চি বোনকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া!
.
নোমান ভাইয়ার কথা শুনে আমি অস্বস্তিতে পরে গেলাম। না জানি সূর্য কি উত্তর দিবেন! আর এখন নিশ্চিত আমার ডাকটা পড়বেই!
.
সূর্য নোমান ভাইয়ার কথার জবাবে মুচকি হাসলেন! আমি পানির বাহানায এখান থেকে উঠে যাব ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার ডাক পড়ল! কথায় আছে না? “যেখানে বাঘের ভয়,
সেখানেই রাত পোহায়!”
সেইম জিনিসটাই হলো! এতোক্ষণ এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। এখন না জানি আরও কি কি বলে আমায় লজ্জা দেবে! এরাও সবাই পারে বটে!
.
আমি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম।
.
—- কই যাও?
.
—- ককই যাই? কোথাও না!
.
—- ওহ্ আচ্ছা! তাহলে এখানে বসো।
.
—- না ভাইয়া আমি এখানেই ঠিক আছি। কি বলবেন বলুন! আমি পানি খেতে যাব!
.
—- ওহ্! তুমি না এইমাত্র বললে কোথাও যাও না! তাহলে এখন আবার পানি?
.
—- ওহ্, কোথাও যাইনা বলেছি? তাহলে ভুলে গিয়েছিলাম!
.
—- আলো তুমি কনফিউজড কেন করছো?
.
—- এ্যা! সত্যিই তো! আচ্ছা ভাইয়া আমি একটু পানি খেয়ে এসে কথা বলি?
.
—- আচ্ছা যাও তবে তাড়াতাড়ি আসবে!
.
নোমান ভাইয়ার কথা শেষ হতেই আমি একপ্রকার দৌড়ে ওখান থেকে চলে এলাম। আমি ওখান থেকে চলে আসতেই সবাই হাসিতে ফেটে পড়ল! আর আমি তো মনে হয় মহা বাঁচা বেঁচে গেছি৷ আজকের জন্য কেউ আমাকে আর পাচ্ছে না! টাটা!
.
এইটুক বলে হেলেদুলে ছাঁদের দরজার ওপর পাশে পা রাখতেই কেউ একজন হেঁচকা টানে আমাকে ছাঁদের দরজার পেছনে নিয়ে গেলেন! অন্ধকার থাকায় আমি সামনের মানুষটার মুখটা দেকতে পাইনি। যখনই চিৎকার করতে যাব ঠিক সেই মুহূর্তেই সামনের ব্যক্তি আমার মুখ চেপে ধরল! এতোক্ষণে আমারও আর বুঝতে বাকী নেই এটা আসলে কে হতে পারে! উনার একহাত আমার কোমড়ে অন্য হাত মুখ চেপে আছে। আমিও সুন্দর মতো দু’হাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম! সাথে সাথে উনি বললেন…….
.
—- কাহিনী কি আলোরাণী? বরের আদর খেতে ইচ্ছে করছে বুঝি?
.
সাথে সাথে উনার গলা ছেড়ে দিয়ে সড়ে যেতে নিলে উনি এবার দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরেন!
.
—- এখন কোথায় পালাচ্ছ শুনি? আদর যখন খেতে ইচ্ছে করছিল বললেই তো হতো ! আমি নিজে থেকে দিতাম! এভবে ছাঁদের দরজা পেছনে বরের গলা জড়িয়ে আদর নিচ্ছো লোকে দেখলে কি বলবে বলো দেখি!
.
আমি উনার কথায় চরম অবাক! খাটাশটা বলে কি? আমি নাকি আগে গলা জড়িয়ে ধরেছি? আমি নাকি আদরের জন্য গলা জরায় ধরছি! ব্যাটা খচ্চর! তুই জীবনেও সুধরাবী না!
.
কপট রাগ দেখিয়ে বললাম……
.
—- আপনি আসলেই একটা খাটাশ! এক নাম্বার লুচু! আপনি আমাকে আগে টেনে এনেছেন। আদর খাওয়ার শখ তো আপনার জেগেছে। তাইতো, চোরের মতো লুকিয়ে বউকে ছাঁদের দরজার পেছনে টেনে আনেন! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! কি লজ্জা কি লজ্জা!
.
আমার কথা শুনে উনি কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। অন্ধকারের কারণে উনার মুখের রিয়েকশনটা ঠিক দেখতে বা বু#ঝতে কোনোটাই পারলাম না! কিছুক্ষণ পর উনি হুট করেই আমায় কোলে তুলে নেন! ঘোর ধরা গলায় বলেন…….
.
—- হুম আদর তো চাই আমার! মনে আছে তো আলোরাণী? “চেয়ে নেব যা চাওয়ার!”
.
এইটুকু বলে আমায় কোলে নিয়েই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সোজা রুমে গিয়ে দরজা দিয়ে দিলেন!
.
.
#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here