#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤
#পর্বঃ ৫❤
—- তোর সাহস কি করে হয় আমাকে জড়িয়ে ধরার?? কে বলেছে তোকে আমার জন্য টেনশন করতে?? আমার এতো বড় ক্ষতি করেও শান্তি হয়নি তোর?? আর কি করলে শান্তি পাবি?? তোকে বিয়ে করেছি বলে অন্যসব বাধ্য স্বামীর মতো তোর সব কথা শুনব বা সব আবদার পূরণ করব এমনটা একদমই নয়।। যদি তুই তা ভেবে থাকিস তাহলে ভুল ভাবছিস।। তুই আমার লাইফটাকে শেষ করে দিলি।। আমি তোকে কখনো ক্ষমা করব না আলো।। কখনোই না।। মাইন্ড ইট।। ( আঙুল দেখিয়ে)
কথাগুলো বলে উনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।। কোথায় যাবেন জানিনা।। কিচ্ছু জানিনা।। ইভেন জানতে ইচ্ছেও করছেনা।। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।। ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিই।। একেবারে শেষ করে দিই।। ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি।। ছিঃ,,, আমি নাকি উনার লাইফটা নষ্ট করে দিছি।। ভাবতেই নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে।। কেন রাজি হয়েছিলাম বিয়েটাতে।। এই ১৭ বছর লাইফে কেউ একটা ফুলের টোকা দিয়ে দেখেনি আমার গায়ে।। আর আজ?? হুহ,,, এই না হয় ভাগ্য।। আমি যেই সূর্যকে ভালোবাসি এই সেই সূর্য কিছুতেই হতে পারেন না।। কিছুতেই না।। যেখানে মা- বাবাই পর সেখানে ওনাকে কি বলব?? নাহ,,, আর পারছিনা।। আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা।। এমুহূর্তে আমার সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে ইচ্ছে করছে।। ইচ্ছে করছে কেঁদে কেঁদে সমুদ্র বানিয়ে সেই সমুদ্রে সবাইকে ভাসিয়ে দিই।।
রাতে আর উনি রুমে আসবেন না তা আমি খুব ভালো করে জানি।। আমারও যে ঘুম আসছে না।। খুব মাথা ধরেছে।৷ হয়তো বেশি কান্না করার জন্য এই অবস্থা।। উঠে গিয়ে বেলকুনিতে বসলাম।। চোখ দুটো ঐদূর পানে আকাশে।। কি সুন্দর তারার মেলা বসেছে আজ।। কতো সুন্দর লাগছে দেখতে।। চারদিকটাও কতোটা আলোময়।। হয়তো পূর্ণিমা লেগেছে।। চোখ দুটো বন্ধ করে প্রান খুলে নিশ্বাস নিচ্ছি আর ভাবসি সেই দিনগুলোর কথা।। কতো সুন্দর ছিল দিনগুলো,,, কথো ভালো ছিল…..
ফ্লাশব্যাক…..
🍁
পরদিন সকালে ভাইয়া আমাকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।। রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই উনার সামনে পরলাম।।
—- কোথায় যাচ্ছিস আলো??
—- সিলেট।।
—- কেন কি দরকার সিলেট?? তাও একা??( কিছুটা শক্ত গলায়)
—- আমি একা নই ভাইয়া আছে আমার সাথে।। আর আমরা বেড়াতে যাবো।।
—-কোথাও যাওয়া হবে না।।
—- মানেহ?? ওয়াট ডু ইউ মিন??
—- কেন বাংলা বুঝিস না?? তাহলে ইংলিশে বলছি,,, ইউ নো আর নট গোয়িং এনি হোয়ার।। গট ইট?? ( রেগে)
—- কেন?? আপনার সব কথা শুনতে হবে নাকি?? ( রেগে)
—- আমাদের বিয়ের পর যখন হানিমুনে যাবো তখন তোকে নিয়ে যাবো।। যতদিন ইচ্ছা ঘুরবি।। যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারবি।। আর আমাদের বিয়ের মাত্র ৭ দিন বাকী।। সো এখন তোকে কোথাও যেতে দেওয়া হবে না।।
কথাটা বলে উনি যেতে নিলে….
—- ওয়েট,,ওয়েট।। আমি আপনাদের হানিমুনে কেন যাবো?? হুয়াই?? আর তাছাড়া আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।। আমার স্বাধীনতা আছে।।
—- ছোট বোন আর সালি হিসেবে তোকে এসব ব্যপারে বলতেই পারি।। আর আমি চাই আমার বিযের প্রতিটা ফাংশন তুই হৈ-হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখিস।।
— এনাফ সূর্য ভাইয়া আমি আপনার কথা শুনতে পারবনা।। সো আমি সিলেট যাচ্ছি আর আজ এই মুহূর্তেই।। ( উঁচু স্বরে) আর কারো হানিমুনে কোনো প্রকার ডিস্টার্ব করার ইচ্ছা আমার নাই।। না আছে থার্ড পার্সোন হয়ে থাকা।। ভালো থাকবেন।। বিয়ের অগ্রিম শুভেচ্ছা।। আসছি।। ( জোরপূর্বক হেসে)
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে বেড়িয়ে এলাম।। একটা সেকেন্ডও দাঁড়ালাম না ওখানে।। কারণ দাঁড়িয়ে থাকলে উনি আরো কিছু বলতেন।। আর আমিও চোখের পানি আটকাতে পারতাম না।। দূর্বল হয়ে পড়তাম।। খুব কান্না আসছে।। কষ্ট হচ্ছে খুব।। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তেই মরে যাবে।।
♦
গাড়িতে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি।। কেন এমনটা হলো আমার সাথে?? হুয়াই?? কি দোষ করেছিলাম আমি?? ছোট থেকে যা চেয়েছি সব পেয়েছি।। না পাওয়ার বেদনা যে এতটা কষ্টের তা কখনো বুঝিনি।। বুঝব কি করে কেউ তো আমাকে বুঝতে দেয়নি।। তাহলে আজ?? তাদেরই বা দোষ দিয়ে কি হবে?? কেউ তো জানেনা।। জানলে অবশ্যই আমার ইচ্ছে পূরণ করতে।। কিন্তু আমি চাইনা।। সব যে পেতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।। তাই না?? মাঝে মাঝে না পাওয়ার বেদনাটাও সহ্য করতে হয়।। ভালোবাসলে যে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।। বরং,, ভালোবাসা পাওয়ার চেয়ে ভালোবাসার মানুষকে সুখী দেখাটা মুল।। সেখানেই রয়েছে প্রকৃত পাওয়া।। ভাইয়ার ডাকে ভাবনার ছেঁদ হলো….
—- আলো প্লিজ চুপ কর বোন।। তুই কাঁদলে যে খুব কষ্ট হয আমার।। তোর খুশির জন্য তোকে সিলেট নিয়ে যাচ্ছি আর তুই?? ( অসহায় ফেসে) প্লিজ স্টপ ক্রায়িং বুড়ি।। প্লিজ….
ভাইয়ার কথা শুনে কান্না থামার বদলে আরো বেড়ে গেল।। একেরপর এক হেঁচকি তুলে যাচ্ছি।। ভাইয়া এক হাতে আমায় জড়িয়ে নিলেন।।
—- কান্না থামা নয়তো মাথা ব্যাথা করবে আমার বুড়িটা।। আচ্ছা আইসক্রিম খাবি?? দই ফুসকা খাবি বুড়ি??
আমি মাথা নাড়িয়ে “না” সূচক জবাব দিলাম।।
ভাইয়া একেরপর এক বকবক করেই যাচ্ছে।৷ কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না৷। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।।
🍁
চোখ মেলে বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি।। কিছুক্ষণের ভিতর সফলও হলাম।। গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম এতোক্ষণ।। ভাইয়া?? ভাইয়া কোথায়?? গাড়ি থেকে বেড়িয়ে দেখি গাড়িটা একটা পাহাড়ি রাস্তায় রোড় সাইডে পার্ক করা।। কিন্তু ভাইয়াকে কোথাও দেখলাম না।। মনে অদ্ভুত এক অজানা ভয় কাজ করছে।। ভাইয়ার কিছু হলো না তো?? কথাটা ভাবতেই ভয়ে গা শিউরে উঠল।। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল ২ ফোঁটা নোনাজল।।
হঠাৎ চোখ গেল আমার থেকে বেশকিছুটা দূরে একটা চায়ের দোকানের দিকে।। তেমন স্পষ্ট নয়।। তবে মনে হচ্ছে ভাইয়ার মতো কাউকে দেখলাম।। কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলাম।। আরে হ্যাঁ,,, এটাতো ভাইয়াই।। সাথে সাথে আমার চোখমুখে ভেসে উঠল খুশির ঝলক।। ভাইয়া আসতেই ঝপটে পড়ে জড়িয়ে ধরলাম।।
—- কই গেছো তুমি?? জানো আমি ভয় পাইছি?? এরকম পাহাড়ি একটা এলাকায় যদি কেউ আমাকে গুম করে দিত,,, তুমি তো বলতেও পারতা না।। আমার এই বুড়া ফকির ভাইটা যদি আমারে রাইখা হারায় যাইতো আমারে কে দেখতো?? কে বুড়ি বলতো আমারে?? ( কাঁদতে কাঁদতে)
—- আরে বুড়ি কাঁদছিস কেন?? আমি কেন হারাবো?? আমি কখনো হারাবো না।। হারাইলে বুড়িকে বলে হারাবো।। ঠিক আছে আমার পিচ্চি বুড়িটা।।( আমার নাক টেনে দিয়ে) এবার কান্না থামা।।
—- তুমি আমাকে পিচ্চি বলো আবার বুড়ি বলো কেন?? আমি শুধু পিচ্চি বুড়ি না।। এই দেখতো আমার চুল পেকেছে??( হাত দিয়ে চুল দেখিয়ে) পাকেনি।। তাও আমাকে কথায় কথায় বুড়ি বলো?? আমি অভিশাপ দিলাম তোমার বউ বুড়ি ৪২০ হবে।। ( খিলখিল করে হেসে উঠে)
—- তবে রে,,, দাড়া তুই।। ছোট বোন হয়ে বড় ভাইকে বুড়ি বউ পাওয়ার অভিশাপ দিস?? দাড়া তুই বুড়ি একটা…. ( আমার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে )
চলবে
{ রি-চেইক করা হয়নি ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। যদি পার্টগুলো ছোট/বড় হয় তাহলে কমেন্টে জানাবেন।। আমি শুধরে নিব।।ভালো থাকবেন।। ধন্যবাদ❤❤।। }