পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤ #পর্বঃ ৪❤

0
348

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤
#পর্বঃ ৪❤
.
.
🍁
.
★★ চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি।। কিছুক্ষণের ভিতর সফলও হলাম।। সূর্য সোফায় বসে ল্যাপ্টপে কিছু একটা করছেন।। গায়ে নীল ট্রি-শার্ট,, পরনে ব্ল্যাক জিন্স।। নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে আছেন।। হয়তো কিছু একটা বোঝার ট্রাই করছেন।। দেখতে খু্বই সুন্দর লাগছে।। একেবারে স্টোবেরি আইসক্রিম 😍।।

হাতটা নাড়তে নিলেই জানান দেয়,,, সে এখন ভীষণ অসুস্থ তাই নড়তে পারবেনা।। অনেক কষ্টে অন্য হাতে উঠে বসেতেই চোখ পড়ে নিজের দিকে।। সাথে সাথেই যেন চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।। একি আমার কাপড়?? আমি তো এই ড্রেসে ছিলাম না।। তাহলে?? উনি চেঞ্জ করিয়েছে??? ছিঃ,,, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে আমার।।

আমি: এইযে শুনতে পাচ্ছেন?? আমার কাপড় চেঞ্জ করছে কে??

সূর্য : কেন?? কে আবার আমি।।( ল্যাপ্টপে চোখ রেখে)

আমি: ওয়াটটটটট??? ( চিৎকার দিয়ে )

সূর্য : ওয়াটের কি আছে ?? (ভ্রু কুঁচকে)

আমি: আপনার সাহস কি করে হয় আমার পোশাক চেঞ্জ করার ??( রেগে)

সূর্য : মানেহ?? কি বলতে চাস তুই?? আমি বাধ্য ছিলাম আর কিছুই না।।

আমি : বাধ্য 😱?? ওএমজি?? মিস্টার সূর্য আহমেদেরও তাহলে বাধ্য বাধকতা আছে?? লাইক সিরিয়াসলি??

সূর্য : কি বলতে চাস তুই??

আমি : জাস্ট এইটুকুই যে,, কেন আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ করেছেন??

সূর্য : ওহ এখন আমার দোষ?? তুই কেন বারান্দায় গিয়েছিলি?? কে বলেছিল যেতে?? আমি?? আর সেন্সলেসই বা কেন হয়েছিলি?? সেটাও আমি বলেছিলাম?? (দাঁতে দাঁত চেপে) কতো জ্বর ছিল তোর তা তোর কোনো ধারণা ছিল??

আমি: তাই বলে আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ করবেন?? ( করুন স্বরে) এখন আমার কি হবে?? ( ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো গলায়)

সূর্য : কি হবে মানে?? (ভ্রু কুঁচকে)

আমি: এমন ভাব করছেন যেন কিছুই বুঝেন না?? এ্যা,,,এ্যা…

সূর্য : স্টপ ড্যামেড।। (ধমক দিয়ে) এমন করছিস যেন কোনো পরপুরুষ তোর ড্রেস চেঞ্জ করেছে?? এতোই যখন লজ্জা তখন ডেকেছি আর শুনিস নি কেন? (রেগে)

আমি: কি ইচ্ছে করে অজ্ঞান হয়ে ছিলাম নাকি?? ( কাঁদো কাঁদো গলায়) আপনি শ্রেয়া আপুকে ডাকতে পারেননি?? (রেগে)

সূর্য : বাসর রাতে নতুন বউর ভেজা কাপড় খুলতে তারই ভাবিকে ডাকতাম তাই না?? দেখতেও তো খুবই সুন্দর লাহতো না?? বাহ,,, কতো সুন্দর বুদ্ধি তোর,,,প্রশংসা করগে হয় ।। ডাফার!!( ধমক দিয়ে) জ্বর কমেছে দেখি??

জ্বর চেক করে হাতের দিকে ইঙ্গিত করে বলে…..

সূর্য : জ্বর তো এখনো কমেই নি।। আর হাত কেটেছিস কেন?? ( রেগে)

আমি : ইচ্ছা হলো তাই।।( ভাবলেশহীন ভাবে)

সূর্য : দিব এক চড়।। বেয়াদব মেয়ে এগুলো কার থেকে শিখেছিস?? আমি ছোট মাকে সব বলছি।।

আমি : কি বলবেন আম্মুকে??

সূর্য : তোর তা জানতে হবেনা।। চল ফ্রেশ হবি।।

আমি: কিহহহ?? ( চেঁচিয়ে) আপনিও আমার সাথে ওয়াশরুমে যাবেন?? পাগল নাকি??

সূর্য : প্রয়োজন হলে অবশ্যই যাবো।। যদি মাথা ঘুরে পরে যাস?? তখন তো আমার দোষ হবে।।

আমি: না না,,, আমি পারব।। আপনাকে যেতে হবেনা।।

এইটুকু বলে বিছানা থেকে উঠতে নিলেই মাথাটা ঘুরে ওঠে।। কাল দুপুর থেকে না খাওয়া।। তারওপর খুব জ্বর শুধু মাথা কেন আমার মতে সারা শরীর ঘুরানোর কখা।। কিন্তু আপাতত মাথাটাই ঘুরছে শরীর না।। পড়ে যেতে নিলেই উনি সামলে নেন।।

সূর্য : এই তোর পারা তাই না?? খাট থেকে নামত৷ গিয়েই পড়ছিস।। না জানি ওয়াশরুমে গিয়ে কতোবার পড়বি।।

আমি: আমি পারব বললাম তো।। আপনি এখানেই থাকেন।।

সূর্য : আচ্ছা আমি দরজার বাহিরে দাঁড়াই তুই দরজা লক করবি না।।

আমি: এ্যা… এটা কেমন কথা?? ( অবাক হয়ে)

পোলা কয় কি আমি নাকি দরজা লক করব না?? 😱 পাগল নাকি?? নিশ্চিত মাথার তার ছিঁড়ে গেছে।। নয়তো কালকে রাতে এমন বিহেব করে এহন আসছে প্রেম দেহাইতে।। মনে হয় আমার বুড়িটার শোকে মাথার তার ছিঁড়ে গেছে।।

সূর্য : আমি যেভাবে বলেছি ঐভাবেই হবে।।

উহহ,,, যেমন কস মনে হয় আমি তোর বউ।। যা না তোর বউরে গিয়া ক।। আমার উপর এমনে প্যারা দেস ক্যা?? হুহ,,, আমি তোর বউ না।। কে শুনব কার কথা হুহ।। ওয়াশরুমে ঢুকে দিলাম দরজা লক করে।। এবার দেখাও আলগা পিরীত 😡,,,, হুহ।।

সকাল ১০ টা বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বসে আছি।। আমার ঠিক সামনে বসে আসে একটা খাটাশ।। মানে আমার হবু বর।। আরে না না এখন তো হবু না পার্মানেন্ট হয়ে গেছে 😁।। বর তো নয় আস্ত খাটাশ,,, দজ্জাল,,, খচ্চর,,, ডেভিল একটা।। ইচ্ছে তো করছে এক ধাক্কায় খাট থেকে ফেলে দিই,,, হুহ😡।। পুরো আধ ঘন্টা যাবৎ খাওয়ার জন্য প্যারা দিচ্ছে।। আল্লাহ না জানি কপালে আরো কী কী রাখছে?? অসহ্য!!

সূর্য : হা কর আলো।। ( দাঁতে দাঁত চেপে)

আমি: আমি খাব না।। মাত্র ১০ টা বাজে।। আর তাছাড়া আমার বমি পাচ্ছে।। সো আমি খাব না।।

সূর্য : স্টপ ডাফার!! তোর কি ননস্টপ বকবকানি না করলে ভালো লাগে না?? আমি বলেছি তুই খাবি তার মানে তুই খাবি।। ( চোখ রাঙিয়ে)

আমি: প্লিজ,,, আমি খাব না।। আমার কেমন যেন বমি বমি পাচ্ছে ( করুণ চোখে তাকিয়ে)

সূর্য : বমি পেলেও খেতে হবে।। খেয়ে বমি করবি।।

আমি: আমি খাবনা বলছি তো 😡।।

সূর্য : আমি বলছি খাবি।। মানে খাবি।।

★★ অবশেষে এই খাটাশের কাছে হার মানতেই হলো।। হে আল্লাহ কই আছো তুমি?? দড়ি ফালাও আমারে তুইলা নাও।। এই জ্বালা আর পরাণে সহেণা🥺।। এতদিন তো কাজিন হিসেবেই ভালো ছিল।। কে যে বলছিল আমার বাপরে এর মতো একটা খাটাশ,, খচ্চর,, ডেভিলের লগে আমার মতো একটা বাচ্চা মাইয়ারে বিয়া দিতে😭।। জীবনটা আমার ত্যাজপাতা বানাই দিল।। একদিনেই আমার এই অবস্থা না জানি বাকী জীবনটাতে কি অবস্থা 😭!!

আজ ৭ দিন হলো আমার জ্বর।। এখন অনেকটা সুস্থ।। হাতের কাটা দাগটাও বেশ শুকিয়ে গেছে।। এই সাতদিনে একটিবারের জন্যও রুমের বাইরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।। এমনকি সূর্যও এই কয়দিনে রুমের বাইরে জাননি।। রুমে বসেই অফিসের কাজ করেছেন।। মাঝে মাঝে শ্রেয়া আপু,, আম্মু,, বড় আম্মু সবাই এসে গল্প করতেন।। এই ক’দিনে একটিবারের জন্যও আমার সাথে কোনো প্রকার রুড বিহেভ করেন নি উনি,,, বরং আমার সব ইচ্ছে পূরণ করেছেন।। এই ক’দিনে উনাকে আরো বেশি ভালোবাসে ফেলেছি।। ভেবেছিলাম হয়তো উনি সব মেনে নিয়েছেন।। হয়তো জীবনে নতুন করে থাকা শুরু করবেন আমার সাথে।। ভালোবাসেন উনি আমাকে।। বাট ঐযে প্রকৃতি!! সবসময় যে এক নিষ্ঠুর খেলায় মেতে থাকতে পছন্দ করে।। পছন্দ করে মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে তা কেড়ে নিতে।।

★★ ঘড়ির টোনে ঘোর কাটলো আমার।। একি ১২:১৫ বাজে?? এতো রাত হয়ে গেল এখনো কেন ফিরছেন না উনি?? ফোনটা হাতে নিয়ে উনার নাম্বারে ডায়াল করলাম।। কিন্তু উনি ফোনটা তুললেন না।। আরও একবার ডায়াল করতেই কোনো এক মেয়েলি কন্ঠ ফোনটা সুইচ অফ বলে জানান দিচ্ছে।। এরকমটা হবে ভাবিনি।। মনের ভিতর এক অজানা ভয় কাজ করতে শুরু করল।। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।। ভীষণ কান্না পাচ্ছে।। ভীষণ!! ওযু করে নামাযে দাঁড়িয়ে যাই।। মোনাজাতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম।। এমন সময় বিছানায় থাকা ফোনটা বেজে ওঠে।। দৌড়ে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই…..

—- দরজা খোল।।

এইটুকু বলেই ফোনটা কেটে দিলেন উনি।। দরজা খুলে উনাকে দেখে আর নিজের কান্না থামাতে পারলাম না।। বাট উনি সেই দিকে কোনো পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে এলেন।। আমি দরজা লাগিয়ে রুমে ঢুকে দেখি উনি জানালা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন।। আমি পেছন থেকে উনাকে জড়িয়ে ধরি।।

—- কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ?? জানেন কতোটা টেনশন হচ্ছিল আমার?? কতটা ভয়….

আর কিছু বলতে পারলাম না।। তার আগেই আমাকে উনার থেকে ছাড়িয়ে উনার সামনে এনে সজোড়ে আমার বাম গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন।। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।। শুধু অবাক নয়নে গালে হাত দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি।। এই কি সেই সূর্য,,, যে আমাকে সবসময় আম্মুর মারের থেকে বাঁচাতো?? এই কি সেই সূর্য,,, যে আমার কান্না দেখতে পারত না?? খুব কষ্ট হচ্ছে।। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here