পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤ #পর্বঃ ৭❤

0
885

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤
#পর্বঃ ৭❤
.
.
🍁
.
গাড়ি চলছে আপন গতিতে।। হঠাৎ কেন যেন গান গাইতে ইচ্ছে করছে খুব।। কুব বেশি!! তাই ইচ্ছেটাকে আর মাটি চাপা দিলাম না।। ইচ্ছেদেরও তো ডানা মেলে বাঁচতে ইচ্ছে করে।। চোখ জোডা বন্ধ করে নিলাম।। ধীরে ধীরে গাইতে শুরু করলাম…..
.
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে
রাতের স্রোতে ভেসে,,,,
শুধু তোমায় ভালোবাসে

আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে
তোমার কাছে এসে,,,
শুধু তোমায় ভালোবাসে

তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে
আমার ছাঁদে এসে,,,
ভোরের শিশির ঠোঁট ছুঁয়ে যায়
তোমায় ভালোবাসে…..

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে
রাতের স্রোতে ভেসে,,,
শুধু তোমায় ভালোবাসে……

আমার ক্লান্ত মন ঘর খুঁজেছে যখন
আমি চাইতাম,, পেতে চাইতাম
শুধু তোমার টেলিফোন….

ঘর ভরা দুপুর, আমার একলা থাকার সুর,,
রোদ গাইত, আমি ভাবতাম
তুমি কোথায় কতো দূর?

আমার বেসুর গিটার সুর বেঁধেছে,
তোমার কাছে এসে,,
শুধু তোমায় ভালোবাসে….

আমার একলা আকাশ চাঁদ চিনেছে
তোমার হাসি হেঁসে,,,
শুধু তোমায় ভালোবাসে….

অলস মেঘলা মন
আমার আবছা ঘরের কোণ,,
চেয়ে রইতো,, ছুঁতে চাইতো
তুমি আসবে আর কখন

শ্রান্ত ঘুঘুর ডাক,,
ধুলো মাখা বইয়ের তাক,,
যেন বলছে, বলে চলছে
থাক অপেক্ষাতেই থাক।।

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে
রাতের স্রোতে ভেসে,,,
শুধু তোমায় ভালোবাসে….

আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে
তোমার কাছে এসে,,,
শুধু তোমায় ভালোবাসে…..

গানটা শেষ হতেই একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো।। সাথে সাথেই ভাইয়ার তালির শব্দে চোখ মেলে তাকালাম।। খুব সাবধানে চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল মুছে নিলাম।।
.
ভাইয়া : বাহ,,, কত্তো দিন পরে আমার বুড়িটা গান গাইলো।। কতো সুন্দর ভালো লাগছে আমার।। থ্যাংক ইউ বুড়ি।। থ্যাংক ইউ সো মাচ।।
.
আমি কিছু বললাম না।। শুধু হালকা হাসলাম।। কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না এমুহূর্তে।। চোখ বন্ধ থাকায় খেয়াল করিনি গাড়ি চলছে না।। ভাইয়া গাড়ি থামিয়ে মনোযোগ দিয়ে আমার গান শুনছিলেন।। আবার গাড়ি চলছে আপন গতিতে।। পৃথিবীর সব কিছুই নিজেদের গতি অনুসারে চলে।। কারো জন্য থেমে থাকেনা।। ঠিক তেমনি আমি থাকা বা না থাকাতে ওদের বিয়েও থেমে থাকবেনা।। চোখটা আবার বন্ধ করে নিলাম।। চোখ দুটি খুব জ্বলছে।। খুব বেশি!! হয়তো কাঁদতে চাইছে।। বাট আলীশা আহমেদ খুবই স্ট্রং কাঁদলে মানায় না ওকে।।

🍁

কতো দুষ্টুমি,, কতো ঝগড়া,, কতো মারামারি করেছি উনার সাথে।। আর কখনো তা করবনা।। আস্তে আস্তে সরে যাবো উনার লাইফ থেকে অনেক অনেক দূরে।।

ভাইয়ার ডাকে চোখ মেলে তাকালাম….
.
—– ঘুমিয়ে গেছিল নাকি বুড়িটা??
.
—– না ভাইয়া এমনি চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম।। ওহ এসে গেছি!!
.
—- হুম চল।।
.
চা-বাগানে ঢুকতেই যেন ভেতরটা আমার সতেজতায় ভরে ওঠে।। কতো সুন্দর এই জায়গাটি!! মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট।। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতিটি জিনিস লক্ষ করছি।। স্টাফ রুমের সামনে বারান্দায় একটি লোক টেবিল পেতে বসে আছে।। হবে হয়তো এখানকার ম্যানেজার।। সেদিন এখানে একটি ২৫/২৭ বছর বয়সী ছেলে ছিল।। লোকটি কিছু একটা করছিলেন।। আমি সোজা তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মাথা তুলে তাকালেন।। মিষ্টি করে হেসে বললেন…..
.
—– কিছু বলবে মামুনি??
.
লোকটির কথায় আমি ভরসা পেলাম।। সংকোচবোধটা দূরে ঠেলে শুরুতেই সালাম দিলাম।।
.
—– আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।।
.
—– ওয়ালাইকুম সালাম মামুনি।। কেমন আছো?? ( হালকা হেসে)
.
—- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।। আপনি কেমন আছেন??
.
—– এইতো মামুনি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।। তা তুমি বুঝি এখানে বেড়াতে এসেছো??
.
—– জ্বি আঙ্কেল।।
.
—– তা একা এসেছো মামুনি??
.
—– না আঙ্কেল আমার ভাইয়া নিয়ে এসেছে।। ঐযে ঐ তো ভাইয়া।। ( ভাইয়াকে ইশারা করে)
.
সাজিদ এতোক্ষণ দূর থেকে আলোকে আর লোকটিকে পর্যবেক্ষণ করছিল।। এখন বোনের পাশে এসে দাঁড়ায়।।
.
—– আসসালামু আলাইকুম।।
.
—– ওয়ালাইকুম সালাম বাবা।। কেমন আছো??
.
—– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।। আপনি কেমন আছেন?? ( মুচকি হেসে)
.
—– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা।। তোমরা দাঁড়িয়ে কেন?? বসো না!!
.
ভাইয়া আর আমি চেয়ার টেনে বসলাম।।
.
—- তা তোমাদের নাম কি বাবা?? কবে এসেছো?? আর কতোদিন থাকবে এখানে??
.
—- আমি এহসানুল আহমেদ সবাই সাজিদ বলেই ডাকে।। আর ও হচ্ছে আমার কলিজার টুকরো বোন আলীশা আহমেদ আলো।। আমরা এসেছি আজকে ২ দিন।। আর থাকব কতোদিন তা সঠিক বলতে পারছিনা।। বোনের কলেজ ছুটি চলছে।। তাই বেড়াতে নিয়ে আসা।।
.
—- বাহ্,,, খুব সুন্দর নাম!! আমি হচ্ছি এখানকার ম্যানেজার আকরাম মির্জা।। তোমার বোনটা খুবই মিষ্টি দেখতে বাবা সাথে মিশুকও।। ( স্মিত হেসে) ওহ আচ্ছা।।
.
আমি লোকটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছি।। কতো সুন্দর করে কথা বলেন উনি!! ঠোঁটের বেলকনিতে হাসি ঝুলিয়ে রাখাটা মনে হয় উনার প্যাশন।। বয়স হবে ৪০/৪২ বছর।। এখনো এতো সুন্দর এতো হ্যান্ডসাম!! দেখে মনে হয় যৌবনে হাজারো রমণীর মনে প্রেমের দোলা দিয়েছে।। ছিল হাজারও রমণীর স্বপ্ন পুরুষ!! লোকটির ডাকে ভাবনার ছেঁদ হলো আমার….
.
—– তা মামুনি কোন ইয়ারে পড়ছ তুমি??
.
—- ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।।
.
—- মাশাল্লাহ বেশ ভালো!!
.
—- আঙ্কেল আমার না একটা কথা জানার খুবই কৌতুহল!!
.
—- কি জানতে চাও ঝটপট বলে ফেলো দেখি।।( হেসে)
.
—– চা সংগ্রহকারী অধিকাংশ সময়েই মহিলা হয়।। এই জিনিসটা আমি লক্ষ করে আসছি ছোট থেকে।। কিন্তু কেন তার কোনো উত্তর আমি জানিনা।। ( মন খারাপ করে)
.
আকরাম সাহেব চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।। আমার মাথায় হাত দিয়ে হাসি মুখে বলেন….
.
—– ধুর বোকা মেয়ে এজন্য কেউ মন খারাপ করে নাকি?? জানো না এখন জেনে যাবে।।
.
আকরাম সাহেব বারান্দা থেকে বেড়িয়ে একটু সামনে এগিয়ে যান।। বুকের সাথে দুই হাত বেঁধে হালকা হাসেন।। তারপর বলতে শুরু করেন….
.
—– চায়ের পাতা সংগ্রহ করা দেখতে যতটা সহজ মনে হয়!! তা কিন্তু আসলে ততটা সহজ নয় মামুনি।। চা গাছের সব পাতায় রং হয় না।। চা গাছের দুটি পাতা ও একটি কুড়ি আছে যা হচ্ছে চায়ের প্রধান উৎস।। পাতা দুটি থেকে লিকার আসে এবং কুড়ি থেকে আসে ফ্লেভার।। আর এসব কাজে সাধারণত পুরুষের তুলনায় মেয়েরা বেশি এক্সপার্ট হয়।। তাই পাতা সংগ্রহকারী হিসেবে মেয়েদেরকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।। বুঝেছ মামুনি?? ( আমার নাক টেনে দিয়ে)
.
আমি “হ্যাঁ-সূচক” মাথা নাড়ালাম।। তারপর কি ভেবে যেন বললাম…
.
—– আমিও চা তুলব!!
.
—- না বুড়ি তুই পারবিনা।। নিজেও ব্যাথা পাবি হাত পা কাঁটবি আর পাতাগুলিও নষ্ট হবে।।
.
—- না না আমি পারব ভাইযা।। প্লিজ!!( মিনতির স্বরে)
.
—– সাজিদ কে বলেছে আমার মামুনিটা পারবেনা??? অবশ্যই পারবে।।
.
—– থ্যাংক ইউ আঙ্কেল তুমি অনো ভালো।। ( খুশি হয়ে)
.
ভাইয়া আর কিছু বলল না।। আকরাম সাহেব বাগানের কাছে এসে একটা মেয়েকে ডাকল।। মেয়েটির নাম শিউলি।। বয়স হবে হয়তো ২০/২২ বছর।। মেয়েটির গায়ে চাকমাদের পোশাক।। কিন্তু চেহারার সাথে চাকমাদের কোনো মিল নেই বললেই চলে।। কতো সুন্দর টানা টানা চোখ।। চিকন ঠোঁট।। শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ।। চেহারায় কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব ফুটে উঠেছে।।
.
—- জ্বি স্যার বলুন।।
.
—- ওকে তোমার সাথে নিয়ে যাও।। আমার ভাগ্নী।। আর হ্যাঁ,,, ওকে চা তোলা শিখিয়ে দিও আর ওকে তুলতেও দিও।। আর খেয়াল রাখবে যেন কোনোভাবে ব্যাথা না পায়।।
.
—– জ্বি স্যার।। আসেন আপু আমার সাথে আসেন।।
.
—– ভাইয়া আমি চা সংগ্রহ করি আর ইনজয় করি আর তুমি এখানে বসে বুইড়া হও 😂
.
ভাইয়া কিছু বলার আগেই ওখান থেকে বেড়িয়ে এলাম।।
.
শিউলি নামের মেয়েটা চা তুলছে আর আমাকে এটা ওটা বলছে।। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।। কি সুন্দর করে কথা বলে ও।। কথা শুনে সবাই বলবে মেয়েটা উচ্চশিক্ষত।। মেয়েটির ডাকে ধ্যান ভাঙে আমার।।
.
—– আপু আপনি কি ভাবছে??
.
মেয়েটির কথায় আমি বেশ বিরক্ত হই।। সেই কখন থেকে আপু আপু করে আমাকে বুড়ি বানিয়ে দিচ্ছে।। আমি এখনো শিশু একটা মেয়ে 🥺… আর আমাকে বুড়ি বানায় দিল?? আল্লাহ দড়ি ফালাও আমারে তুইলা নাও!! বিরক্তটাকে কয়েক ধাপ বাড়িয়ে বলি….

চলবে

{ সরি গাইস 😥।। সরি ফর লেট।। বলেছিলাম সকালে দিব।। বাট অতিরিক্ত মাথা ব্যাথার জন্য দিতে পারিনি,😥।। সরি এগেই।। সবাই ভালো থাকবেন ❤।।ধন্যবাদ ❤।।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here