পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤ #পর্বঃ ৮❤ .

0
355

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি❤
#পর্বঃ ৮❤
.
.
.
—– আপু আমি তোমার ছোট।। তাই আমাকে নাম ধরে বললে খুশি হবো। ( বিরক্ত লুক নিয়ে)
.
—– জ্বিনা আপু সরি!! আমি পারবোনা।। ( স্মিত হেসে)
.
—– কেনো?? ( ভ্রু কুঁচকে)
.
—– আপনাদের মতো বড় লোকদের কি নাম ধরে ডাকা সাজে??
.
—– আপু এটা কোন ধরনের কথা?? ধনী,গরীব সবাই মানুষ।। একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি।। ধনী, গরীবের পার্থক্য করলে আমরা কখনো এক হতে পারবনা।। গরীব বলে কি আপনারা মানুষ নন?? ধনীরা ধন-সম্পদের বড়াই করে গরীবদের সাথে একের পর এক অন্যায় করে যাবে,, তাদের মানুষ বলে মনে করবেনা আর তোমরা?? তা মুখ বন্ধ করে সহ্য করবে?? না আপু এসব পার্থক্য ভুলে চলো সবাই একসাথে মিলেমিশে কাজ করি।। যারা বোঝেনা তাদের বোঝাই।। একটা কথা মনে রাখবে- “সবার উপরে মানুষ সত্য”। ধনী গরীব তো পরে আপু সবার আগের কথা হলো আমরা মানুষ। তাই নয় কি?? আমার যতটুকু মনে হয় তুমি পড়াশুনা করেছো। আর একজন শিক্ষিত মানুষের মুখে এসব কথা শোভা পায় না আপু।।
.
—- হ্যাঁ,, আপু।
.
—- আবার আপু??( ঠোঁট উল্টে বাচ্চাড়ের মতো করে)
.
—- তোমার নাম তো আম জানিনা।
.
—- আমি আলীশা আহমেদ আলো। সবাই আলো বলেই ডাকে। সবার জীবন নাকি আলোতে ভরিয়ে তুলার জন্য আমার জন্ম হয়েছে আমার বড় আব্বু আর ভাইয়া বলেন। ( হালকা হেসে) কিন্তু নিজের জীবনটাই তো অন্ধকারে ঢেকে গেছে। ( অন্যমনষ্ক হয়ে বিরবির করে)
.
—– কি বললে ঠিক শুনতে পারলাম না।।
.
—– না আপু কিছুই না।
.
.
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চা সংগ্রহ করতে মন দিলাম।
.
—- তোমার নামটা খুবই সুন্দর।। আর উনারা ঠিকই বলেছে।। এইতো আজকে আমাকেই দেখ কি সুন্দর করে ভুলটা দেখিয়ে দিলে।।
.
প্রতি উত্তরে আমি কিছুই বললাম না হালকা হাসলাম।। হয়তো ওদের ধারণাটা ঠিক নয়তো না!! তবে ধারণাটা যেমনই হোক সেটা নিয়ে এট লিস্ট ওরা হ্যাপি আছে থাকনা।৷ আমি কেন বাধা দিব?? হুয়াই?? সেই অধিকার বা শক্তি কোনোটিই আমার নেই।।

আলো চা সংগ্রহ করছে আর থেকে থেকে শিউলির সাথে হেঁসে উঠছে।৷ অনেকগুলো দিন বাদে আবার আলোর সেই বাচ্চামোগুলো দেখতে পাচ্ছে সাজিদ।। বোনকে আবার হাসতে দেখে খুবই ভালো লাগছে তার।। এই মুহূর্তে আলোকে দেখলে কেউই বলবেনা ওর জীবনেও কষ্ট নামের কোনো বস্তু আছে।। আছে হারানোর জ্বালা।। আছে না পাওয়ার বেদনা!! এখন ওকে দেখলে যেকেউই বলবে ওই হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ!! মাঝে মাঝে সাজিদ অবাক হয়,, এইটুকু বয়সে কি করে পারে মেয়েটা এতো অভিনয় করতে?? হাউ?? আচ্ছা ওর জায়গায় অন্য কেউ কি পারতো আদৌও এতো ভালো থাকার নাটক করতে?? সত্যি কি পারত নাকি পারতো না?? সবাইকে খুমি রাখার গুন যেন আল্লাহ ওর মধ্যেই দিয়েছেন।। বাড়ির প্রতিটা মানুষের খেয়ার রাথে ও।। ও ছাড়া যেন বাড়িটা অন্ধকার!! এজন্যই তো ওর ভাই আর বড় আব্বু বলে সবার জীবনের আলো ও।। ও ছাড়া সব অন্ধকার!! কিন্তু যেই মানুষটি সবার জীবনের আলো তার জীবনের আলো হবে কে!!

সাজিদ দূর থেকে বোনের এই সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দি করে নেয়।।
.
🍁
.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।। আকরাম সাহেব উনার বাড়িতে নিয়ে যায়।। আলোকে উনার খুব ভালো লেগেছে।। উনার কোনো মেয়ে নেই।। দুজনেই ছেলে।। একজন অনার্সের স্টুডেন্ট ওপর জনের বয়স ৭/৮ বছর।। তাই এইটুকু সময়ের ভেতরেই আলোকে নিজের মেয়ে ভেবে নিয়েছে।। আলোকে বলছে আঙ্কেল না বলে চাচ্চু বলে ডাকতে।।

বাড়িতে এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।। রাতে খাওয়ার পর পাটি বিছিয়ে উঠোনে বসে পড়ে।। উদ্দেশ্য সারারাত গল্প করে কাটানো।। যেই ভাবা সেই কাজ।। কয়েকঘন্টার মাঝেই সবার সাথে মিশে যায় আলো।। সারারাত গল্প করে ফজরের নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাতে যায় ওরা।।
.
.
.
জানালা ভেদ করে দুপুরের কড়া রোদ এসে চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় আমার।। ঘুমুঘুমু চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই চোখ যেন কপালে উঠে গেল।। একি ১২:২০ বাজে?? ওএমজি!! লাফিয়ে বিছানো থেকে উঠে যাই।। উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছি।। কতো সুন্দর করে সাজানো বাড়িটা!! রাত করে আসায় কিছুই দেখতে পাইনি।। আঙ্কেলদের বাড়িটা শহরের মতো ২তলা বাড়ি।। বাড়ির ছাঁদে একটি ঘর আছে।। তার সামনেই কবুতরের ঝাঁক দেখা যাচ্ছে।। হয়তো ঐ ঘরটা কবুতরের!! অনেক গাছও আছে বাড়ির ভিতরে।।
.
.
.
বিকেল ৩টা লাঞ্চ শেষ করে বেড়িয়েছি পুরো এলাকাটা দেখব বলে।। আমি আর সিয়াম ( আকরাম সাহেবের বড় ছেলে) পাশাপাশি হাঁটছি।। ছেলেটা শ্যামবর্ণ তবে দেখতে শুনতে ভালোই স্টাইলিশ।। চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে।। একটুপর পর এটা ওটা বলে আমাকে হাসাচ্ছে।। কিন্তু হঠাৎ করে আমার চোখ আটকে যায় ওর সেই গালে টোল পড়া আঁকা-বাঁকা দাঁতের হাসিতে আর কপালে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলোতে।। একটুপর পর ডান হাতের আঙুল দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।। ছেলেটা আর সূর্য ভাইয়ার মাঝে অনেক মির রয়েছে।। আশ্চর্য!! হাউ ইজ পসিবল?? দুটো মানুষের মাঝে এতো মিল কি করে সম্ভব!! হাউ?? যদিও চেহারা,,গায়ের রঙের কোনো মিল নেই।। কিন্তু হাঁটা চলা,, কথাবার্তা,, হাসি,, চুলের স্টাইল সব কি করে এতোটা পার্ফেক্ট হয়?? প্রকৃতির কি অপরূপ লীলাখেলা!! এক মায়ের গর্ভের সন্তান না হয়েও এতোটা মিল!! সত্যিই প্রকৃতির কোনো লীলাখেলাই আমরা বুঝিনা বা আগের থেকে জানতে পারিনা।। আজ আছি কাল থাকব কিনা জানিনা।। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো সাথে কানে এলো কারো তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর….
.
—– এইযে মহারানী কোন দুনিয়ায় হারালেন?? এতোক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছেন না কেন??
.
সিয়াম ভাইয়ের মুখে “মহারানী ” ওয়ারটা শুনে দুচোখ আমার জলে ভিজে এলো।। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা নোনাজল।। কতোগুলো দিন হয়ে গেছে সেই পরিচিত কন্ঠটা শুনতে পাইনা।। এই কাঙ্ক্ষিত ওয়ার্ডটা শুনতে পাই না!! না এখানে আর এক সেকেন্ডও থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে।। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।। আমার এভাবে চলে আসা দেখে হয়তো পেছনের মানুষটি অবাক হয়েছে।। হলে হোক না কে না করেছে?? তাতে আমারই বা কি?? অবাক হতে হতে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ুক!! হু কেয়ারস?? আমার এখন একটাই উদ্দেশ্য আজ এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাওয়া।।
.
—– ভাইয়া চলো হোটেলে ফিরে যাই।।
.
ভাইয়া কিছু বলার আগেই সিয়াম ভাইয়া বললেন…..
.
—– কেন?? কোনো সমস্যা??
.
—– না কোনো সমস্যা নেই।। আমাদের আরো অনেক জায়গা ঘুরে দেখা বাকী আছে।। আর বেশিদিন তো বাড়ির বাইরে থাকাও সম্ভব না।।
.
—- হুম সেটাই।।
.
—- আচ্ছা যাবেন তা নাহয় বুঝলাম।। কিন্তু কাল সকালে যাবেন।।
.
—- না ভাইয়া আজই চলে যাবো।। কালকে শ্রীমঙ্গল চা-বাগানের উদ্দেশ্যে বের হবো।। চলুন চাচ্চু আর কাকিমনির থেকে বিদায় নেব।।
.
🍁
.
বিকেল ৫টা বেজে ২০ মিনিট।। গাড়িতে বসে ছিটে হ্যালান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।। ভাবছি সেই মানুষটির কথা।। একসাথে কতো সময় কাটিয়েছি।। কতো ঝগড়া করেছি,,, উনি কতো বকেছেন আমায়,,, কতো কেয়ার করেছেন আমায়।। ২ দিন পর থেকে হয়তো তা আর হবেনা।। নিজের সংসার নিয়ে বউ নিয়ে বিজি থাকবেন।। আমার সাথে সময় কাটানোর সময় কই তার?? প্রকৃতির কি অপরূপ লীলাখেলা তাই না?? যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখতাম,,, সব স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল বাস্তবে আর রূপ পেলনা।। হায়,, নিয়তি!! এজন্যই মানুষ বলে স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়।। স্বপ্ন কখনো সত্যি হয়না।। বুকটা খুব ভারী ভারী লাগছে।। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।। তবুও যে সব কষ্ট মেনে নিতে রাজি আছি আমি।। কারণ ভীষণ ভালোবাসি তো মানুষটিকে।। তার খুশিতেই তো আমি খুশি।। ভালোবাসলেই যে ভালোবাসার মানুষকে পেতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই তাই না?? থাক না কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ।। কিছু কিছু ভালোবাসার হয়তো পূর্নতা পেতে নেই!! এটাই হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে!!

চলবে

{ সরি গাইস!! আমি খুবই দুঃখীত ৩ দিন গল্পটা না দিতে পারার জন্য।। আইডির ঝোল ঝামেলা আজকে ২ দিন বাসায় নেট ছিল না😔😔 তাই গল্পটা দিতে এতো লেট।। আমি জানি আমার পাঠক- পাঠিকারা এই গল্পটার জন্য অনেক ওয়েট করেছেন ২/৩ জন তো আমাকে ইনবক্সে নক দিয়েছেন গল্পটা কখন দিব তাই।। আমি আপনাদেরকে আবার বলছি আমি কোনো প্রবলেম ছাড়া গল্প দেওয়া অফ করবনা।। আপনারা কেউ প্লিজ অধৈর্য হয়ে পড়বেন না।। মেইবি নেট আবার চলে যাবে😥😥😥।। আমি নিজেও খুব জ্বালায় আছি।। সবাই ভালো থাকবেন।। ধন্যবাদ❤।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here