পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤ #লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤ #পর্বঃ ৯❤ .

0
331

#পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে ❤❤
#লেখিকাঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি ❤
#পর্বঃ ৯❤
.
.
🍁
.
দেখতে দেখতে কেটে গেল ৫ টি দিন।।সিলেটের কম বেশি সব জায়গায় ঘোরা শেষ।। ঐদিনের পর সিয়াম ভাইয়ার সাথে আর দেখা হয়নি।। ভালোই হয়েছে!! এখানে এসে অন্তত সূর্য ভাইয়ার চালচলন দেখতে হয়নি আমার।। কিন্তু উনাকে একটুও ভুলতে পারিনি।। বরং আরও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি উনাকে।। এই কটা দিনকে আমার কতো যুগের মতো মনে হচ্ছে।। আজ শ্রীমঙ্গল চা-বাগানের উদ্দেশ্যে বের হবো।৷ সেখানে কিছুদিন থেকে তার অাশেপাশের এলাকা ঘুরে বাড়ি ফিরে যাবো।। একদিনে হয়তো ওদের বিয়ের নব আচার অনুষ্ঠানও শেষ হয়ে যাবে।। আজকে রাতেই তো গায়ে হলুদ।। আর পরশু বিয়ে।। ওরা ভালো থাকুক এটাই আমি চাই।। নিজের মনেই হালকে হাসলাম।। সাদা স্কার্ট আর নীল টপস পড়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিলাম,, চুলগুলো উঁচু করে বেধে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম।।

—————-

বিকেল ৫ টা বেজে ৫৫ মিনিট।। চা-বাগান ঘুরে গেস্ট হাউজে ফিরছিলাম।। চা-বাগান থেকে গেস্ট হাউজ বেশি দূর নয়।। তাই আমি বলেছি হেঁটে ঘুড়বো আজ।। যদিও ভাইয়া গাড়ি নিয়ে আসতে চেয়েছে বাট ঐযে আমি নাছোরবান্দা!! তাই গাড়িতে আসা হয়নি।। গাড়িতে আসলে কি আসেপাশের জিনিসগুলো এতো নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারতাম?? এতো সুন্দর স্নিগ্ধ বিকেলটা উপভোগ করতে পরতাম?? কেন জানি হঠাৎ খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।। খুব!! কিন্তু এখানে কই পাবো?? তাই আপাতত ইচ্ছেটাকে মাটি চাপা দিতে বাধ্য হলাম।। মনের সুখে বাচ্চাদের মতো করে হেলেদুলে হেঁটে চলেছি।। একটু পরপর দৌড়ও দিচ্ছি।। যেই গাছটা হাতের নাগালে পাচ্ছি ওটা ধরেই দিচ্ছি একটান!! ভাইয়া আমার পাগলামি দেখছে আর হাসছে।। একটু পরপর আমাকে থামতে বলছে……
.
—– বুড়ি থাম আস্তে দৌড়া ব্যাথা পাবি পড়ে।। বুড়ি দেখ তোর পেছনে দৌড়াতে গেলে আমি পড়ে পা ভাঙ্গব।।
.
ভাইয়ার কথা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম আমি।। ভাইয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।। অনেকদিনপর আবার এভাবে হাসলাম।। নিজের কাছেই অদ্ভুত লাগছে।। আশ্চর্য!! আমি কি বাচ্চা টাচ্চা হয়ে গেলাম নাকি?? কই নাহ তো আমি তো আগের সাইজেই আছি।। তাহলে এমন বাচ্চামো কেন করছি?? সন্দেহ!! বিরাট সন্দেহ!! ওহ মাই আল্লাহ!! বড় আম্মুর কাছে ছোট বেলায় অনেক শুনেছি,,, এসব বনজঙ্গলের রাস্তায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ভুতের আনাগোনাও বেড়ে যায়।। এমনি মানুষের উপরও ভর করে।। ওহ নো!! তার মানে আমার উপরও ভুত ভর করেছে?? 🥺আমাকে দিয়ে এগুলো করাচ্ছে?? 🥺 এখন আমার কি হবে😭?? আমার বেচারা বর না জানি দুনিয়ার কোন প্রান্তে আছে!! বেচারা বিয়ের আগেই বিধবা?? না না সরি বিপত্নীক হবে🥺?? তো আমার লগে রোমান্স কে করবে??😭 আরে আমি পাগল হয়ে গেছি এগুলো কি ভাবছি??🤔 সত্যিই বাচ্চা হয়ে গেলাম!! 😱বাচ্চাদের মতো উল্টা পাল্টা ভাবনা আসে কোত্থেকে কে জানে?? কথাগুলো ভেবে আবারও হেসে উঠলাম।। কিন্তু নিয়তি বলে একটা ওয়ার্ড আছে,,, যা খুবই নিষ্ঠুর!! সবসময় নিষ্ঠুর এক খেলায় সে মেতে থাকতেই ভালোবাসে।। যখনই দেখবে কেউ ভালো আছে খুশি আছে,, ঠিক তখনই তার জীবনটাকে নরক করে তোলে।। মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় তার খুশিগুলো,, আনন্দগুলো,, সুখগুলো আর তার জীবনটাকে ভাসিয়ে দেয় এক কালো অন্ধকারের সাগরে যেখানে শুধু অন্ধকার,, কষ্ট আর ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই নেই।। নেই কোনো ভালোবাসা,, নেই আনন্দ,, নেই খুশি।। হ্যাঁ,, এটাই নিয়তির নিষ্ঠুর খেলা।। তাহলে আমি কেন বাদ পড়ব এই খেলা থেকে?? আমাকে কেন ছাড়বে নিয়তি?? হুয়াই?? আমার সাথেও এর ব্যতিক্রম কিছুই ঘটেনি!!

——————-

উল্টোদিকে ঘুরে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছিলাম।। ভাইয়া আমার পাগলামো দেখছে আর হাসছে।। আমিও হাসছিলাম।। মন খুলে হাসছিলাম।। হয়তো এই হাসিই জীবনের শেষ হাসি!! নয়তো না!!
.
—— আলো অনেক মজা করেছিস হয়েছে আর করতে হবে না।। প্লিজ রাস্তার মাঝখান থেকে সরে আয় বনু।। প্লিজ!! আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি বুড়ি…..
.
—– সরবো তো একশর্তে রাজি হলে সরে আসব।। নয়তো না হুহ😒।৷
.
—– রাজি এবার তো আয়…
.
—– আগে শর্ত শুনো… আমাকে এত্তো এত্তো গুলো আইসক্রিম দি…..

কথা শেষ করতে পারলাম না।। ভাইয়ার চিৎকারে পেছন ফিরে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে বিকট আওয়াজের সাথে ছিটকে পড়লাম বেশখানিকটা দূরে।। চোখ দুটো ভারী হয়ে আসছে।। বুঝতে বাকী রইল না যে আমি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছি।। চোখ দুটো বন্ধ করার আগমুহূর্তে ভাইয়ার সেই কান্না জড়ানো চোখ জোড়া দেখতে পেলাম।। বড্ড কষ্ট হচ্ছে ভাইয়ার জন্য।। বড্ড অসহায় লাগছে।। কেন শুনলাম না আমার ভাইয়ার কথা?? হুয়াই?? আমার ভাইটার কথা শুনলে আর ওকে কাঁদিয়ে এভাবে চলে যেতে হতো না।। আর হয়তো এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারবনা।। আর হয়তো কোমড় বেঁধে ভাইয়া আর সূর্যের সাথে ঝগড়া করা হবেনা।। আজকের পর আর বাবার প্রিন্সেস ডাকটা শোনা হবে না।। বড় আব্বুর সাথে দুষ্টুমিও কর্ হবেনা।। শোনা হবেনা তার মুখে আম্মু ডাকটা,,, শোনা হবেনা ভাইয়ার মুখে বুড়ি,, ফকিন্নি এসব মজার নাম!! না আমি তাকে ডাকতে পারবো এসব মজার নামে ডাকতে!! সূর্যর মুখেও মহারাণী ডাকটা শোনা হবেনা।। আমিও আর ঝগড়া করে উনাকে সূর্য বলে ডাকতে পারবনা।। ছোট বেলায় উনার হাতে আমার এই মাথায় কতো চাটি খেয়েছি!! শুধু সূর্য বলে ডাকতাম বলে।। প্রকৃতি কেন এতটা নিষ্ঠুর!! হুয়াই?? সূর্য ভাইয়া হয়তো খুব খুশি হবে!! ভালোও থাকবে।। উনার জীবনে আলো নামের কোনো পদার্থ থাকবেনা।। না আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না।। চোখ দুটো ভীষণ জলছে।।ভীষণ!! ঘুমেরা যে ডাকছে আমায়।। সরি ভাইয়া!! পারলে মাফ করে দিস!! আমি তোর সব কথা শুনেছি।। শুধু জীবনের শেষ কথাটা রাখতে পারলাম না।।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।।
.
🍁
.
আজানের শব্দে আমার ভাবনার ছেঁদ হলো।। একি ফজরের আযান দিচ্ছে!! আমি আজও নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম?? আশ্চর্য!! হায়রে নিয়তি!! বিয়ের আগে কখনো এক রাত নির্ঘুম কাটায়নি।। সেখানে বিয়ের পর থেকে দিনেরপর দিন রাত জেগে কাটাচ্ছি?? হয়তো এরই নাম ভাগ্য!! বুকের ভেতরে এক চাপা কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নামায পড়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম।। কিছু একটা নিয়ে ভীষণ মন খারাপ!! কিন্তু সেটা কি?? কফি হাতে ছাঁদের দিকে হাঁটা দিতেই হঠাৎ করে উনার কথা মনে পড়ে দাঁড়িয়ে যায়।।

আচ্ছা উনি কই?? সারারাতে তো রুমে ফিরেছে বলে মনে হচ্ছে না।। তাহলে গেলটা কই?? কফির কাপটা টেবিলে রেখে সিড়ি দিকে হাঁটা দিলাম।। উপরে গিয়ে ২ টা গেস্ট রুম চেক করলাম।। কিন্তু ফলাফল শূন্য।। হতাশ হয়ে যখন আপুর রুমের সামনে দিয়ে ফিরছিলাম হঠাৎ চোখ যায় রুমের দিকে।। এক দরজা খোলা কেন!! আর একটু সামনে এগুতেই ভেতর থেকে ভেসে আসা এক চাপা আর্তনাদ কানে এলো।। আমি আরেকটু দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রুমে উকি দিতেই সূর্যকে চোখে পড়ে।। একি উনি কাঁদছেন!! কিন্তু কেন?? দরজায় কান পেতে দিয়ে যা শুনতে পেলাম……

—- কেন এমন করলি চাঁদ?? কেন আমায় ছেড়ে চলে গেলি?? কেন আমাকে তোর সাথে নিলি না?? তুই এতোটা স্বার্থপর কি করে হতে পারলি?? হুয়াই?? ওয়াট ডীড আই ডু রং?? ওয়াট ডীড আই ডু?? চাঁদ তুই তো বলেছিলি তা না?? আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবিনা।। তাহলে?? তাহলে কেন করলি এটা?? আমার ভালোর জন্য তাই না?? তোর কি আদৌও মনে হয় আমি ভালো আছি?? আমি ভালো নেই চাঁদ।। একদমই ভালো নেই।। একদম না!! আমি জাস্ট মরে যাচ্ছি রে… জাস্ট মরে যাচ্ছি!! ( ফুঁপাতে ফুঁপাতে)

আমি আর একমুহূর্তও সেখানে দাঁড়ালাম না।। কী করে দাঁড়াবো আমি?? দাঁড়াতে যে পারছিলাম না।। ভীষণ কান্না পাচ্ছে আমার।। ভীষণ!! জানিনা কেন উনি কাঁদছে তাই?? নাকি উনি আমাকে ভালোবাসেন না তাই?? নাহ আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা।। হ্যাঁ,,,, আমি কাঁদব।। আজ খুব কাঁদব।। কেঁদে কেঁদে চোখের জলে ভাসিয়ে দিব সূর্যকে।। ভেসে যাক না সে,,, তাতে আমার কি?? দৌড়ে চলে এলাম ছাঁদে।।

—————

চারদিকটা এখনো অন্ধকার।। রাতের আধার কেটে ভোরের সেই মিষ্টি আলো এখনো ফুঁটে ওঠেনি।। তবে একসময় তো ঠিকই রাতের আধার কেটে ভোরের সেই মিষ্টি আলো ফুটে উঠবে।। কিন্তু আমার এই অন্ধকার জীবনে কি কখনো আলো ফুটবে?? কেউ কি জানে এই প্রশ্নের উত্তরটা?? আমার উত্তরটা বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে।। খুব!! কেউ প্লিজ আমাকে বলোনা উত্তরটা।। প্লিজ!! বুড়ি তুই কি জানিস উত্তরটা?? আচ্ছা,, বুড়ি কই তুই কেন করলি এমনটা?? হুয়াই?? আমি যে এগুলো আর নিতে পারছিনা বুড়ি!! আমার দম আটকে আসছে!! আমি উনাকে এভাবে তেখতে পারছিনা!! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবর অতিতের পাতায় ডুব দিলাম……..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here