হিয়ার_মাঝে ১২. #মেঘা_সুবাশ্রী ®️

0
702

#হিয়ার_মাঝে ১২.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

কুয়াশায় মোড়ানো ঊষালগ্ন। হিমশীতল ঠান্ডায় ছাদের এক কোণে বসে আছে নুবাহ। উদাস মুখে গায়ে চাদর জড়ানো। মর্মদহনে ব্যথিত তার তনুমন। নিজেকে শান্ত করতে ভোরবেলায় ছাদের দিকে ছুটে এসেছে।

ব্রিটিশ আমলের তৈরি দু’তলা বাড়ি তাদের। নিচতলায় বাড়িওয়ালা থাকে। দ্বিতীয় তলায় তাদের পরিবার। মাত্র দু’পরিবারের বসবাস এই বাড়িতে। তাই যেভাবে ইচ্ছে চলা যায়। একদম নিজের বাড়ির মতই। গত পনেরো বছর ধরে এই বাড়িতেই বসবাস করছে। অবশ্যই তার বাবার কল্যাণে। উনার বেশ পছন্দের বাড়ি। ছোট্ট শহরে এমন বাড়ি হর হামেশা দেখা যায় না। বাড়ির চারপাশ গাছ-গাছালিতে ঘেরা। দক্ষিণ দিকে বেতবন আর ছোট্ট ডোবা। কিছু সুপারি গাছ, নারিকেল গাছ, আর আমগাছও আছে।

দু’তলা ঘরের দক্ষিণ কোণ বাগানবিলাস গাছে ঘেরা। সেই গাছের পাশে দাঁড়ানো। আনমনে গাছ থেকে বেশ কিছু ফুল ছিঁড়ে নিয়েছে। ফুলগুলো আবার কুচি কুচি করে অজান্তে তার অধম টিচারের নাম লিখে যাচ্ছে। হঠাৎই সে মাঝপথে থামল। তার অন্তঃকরণে একটা ব্যাপার উঁকি দিল। অচেনা এক ছেলের জন্য কেন এত পাগলামি করছে সে। ছেলেটা নেহাৎই তাকে সাহায্য করেছে। অন্যকিছু নাও তো হতে পারে। যেমন’টা সে ভাবছে। তার মত অচেনা কাউকে কেন সে পছন্দ করবে। এমন’টা কি আদৌও সম্ভব! সহসাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নিজের কাছেই তো উত্তর অজানা। তার অধম টিচার তো আরও বহুদূর।

কিন্তু তার যে অচেনা ছেলেটাকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগে। কোনদিন তাকে দেখা আদৌ সম্ভব হবে কি’না জানা নেই তার। কি হবে তাদের ভবিষ্যৎ? অজান্তে মুঠোফোন হাতে নিল। কেন নিল তাও জানা নেই। তবে ভাবনার অতীত কিছু একটা ঘটল। যা কস্মিনকালেও সে ভাবেনি। তার মুঠোফোন কম্পিত হচ্ছে। কলটা অধম টিচারের। নুবাহ হতভম্ব। সত্যিই না স্বপ্ন! তড়িঘড়ি কল রিসিভ করল।
‘আসসালামু আলাইকুম।’

অপর প্রান্ত থেকে চিন্তিত ব্যাকুল স্বর ভেসে এল। ‘ফাইনালি তুমি। আমি অনেক ভয়ে ভয়ে কল দিয়েছি। ভেবেছিলাম, হয়তো কথা হবে না। যাক তোমায় পেলাম। শুভ সকাল, তা কেমন আছ, আমার মিষ্টি ছাত্রী’টা?’

এত মুগ্ধময় বাক্যে শুনে নুবাহর তনুমন জুড়ে শীতলতা বয়ে গেল। যেন হাজার বছর পর সে কথা বলছে। মর্ম যাতনা যেন সতেজতায় পূর্ণ হল মূহুর্তে। মুখের কোণে তার স্নিগ্ধ হাসি।
‘হুমম, ভালো। আপনি কেমন আছেন স্যার?’

ওপাশ থেকে হতাশার সুর ভেসে এল।
‘সর‍্যিই! আসলে হঠাৎ নানুর বাড়ি আসছি। আমার নানু ভীষণ অসুস্থ। তাকে দেখতে এলাম। তাড়াহুড়োতে তোমাকে বলতে পারিনি। জানো, আমার নানার বাড়ি একদম ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পাশে। তাই এদিকে নেটওয়ার্ক পাওয়া অনেক দুর্লভ। এজন্য তোমাকে কলও দিতে পারেনি। আজকে সকাল সকাল ঘর থেকে বেরিয়েছি। নানুর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে আছি এখন। শুধু তোমাকে কল দেয়ার জন্য। তবে ভয়ে ছিলাম। আদৌও তোমার সাথে কথা হবে কিনা। তাই মেসেজ দিয়ে চলে যেতাম। যাই হোক ফাইনালি কথা হল।’

এত সুন্দর করে সর‍্যিই বললে, তাকে কিভাবে ক্ষমা না করে থাকা যায়। একটু আগেও সে কত সন্দিহান ছিল। এখন মনে হচ্ছে একদমই না! আপনাকে আমি ছাড়ছি না ইমদাদ। নিশব্দে হাসল নুবাহ। লাজুকলতার ন্যায় লজ্জায় আড়ষ্ট হল। নরম সুরে জবাব এল,
‘এত সর‍্যিই বলার কি আছে। সমস্যা থাকতেই পারে। একদমই আমাকে নিয়ে ভাববেন না। ঠিক আছে।’

‘কেনো ভাববো না। আমার তো তোমাকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগে। নাহ, আ,,আসলে বলছিলাম কি তোমার পড়ালেখার কি অবস্থা? কালকে পড়তে অসুবিধা হয়নি তো? আমি তো কল দিতে পারিনি। তা, সাজেশনের কতটুকু শেষ হয়েছে তোমার? আজকে কিন্তু পদার্থ আর রসায়নের বাকিটা পড়বে, ঠিক আছে। কি করছিলে এখন?’

‘ছাদে বসে ঠান্ডা বাতাস খাচ্ছি? আপনি খাবেন স্যার।’

‘এই ভোরবেলায় তুমি ঠান্ডা বাতাস খাচ্ছো। তোমার ঠান্ডা লাগছে না, বাসায় যাও।’

‘আরে না, ঠান্ডা লাগবে কেন? বরং বাসায় দমবন্ধ লাগছিল। তাই একটু সতেজ বাতাস নিতে ছাদে আসলাম।

‘কতক্ষণ হল, ছাদে এলে যে।’

‘এইতো আধাঘন্টা হবে।’

‘আজকে সাজেশনের বাকিটা শেষ করবে কিন্তু। সময় তো আর বেশি নাই তোমার। আমিও এ কয়দিন সময় দিতে পারব না। দয়া করে পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি কর না একদম। মিষ্টি ছাত্রীটা আমার, বাসায় যাও এবার।’

কি আদুরে ডাক! এভাবে বললে আমি সব করতে রাজি ইমদাদ সাহেব। কিন্তু আর একটু কথা বলি না। দুইদিন পর এত অল্প কথা বললে মন ভরবে। কেন বুঝেন না আপনি? কিন্তু মনের কথা মনেই থাকল। নুবাহর মুখ ফুটে বের হল অন্যকিছু।
‘ঠিক আছে স্যার, যাচ্ছি।’

ইমদাদ প্রসন্ন হল। মিষ্টি স্বরে বলল,
‘ভালো থেকো আমার মিষ্টি পাখি’টা। স,,স,, সর‍্যিই অ্যাই মিন মিষ্টি ছাত্রীটা।’ এটা বলে দ্রুতই কল কাটল ইমদাদ।

‘মিষ্টি পাখিটা’
বার’কয়েক আওড়াল নুবাহ। ডাকটা কি মধুর ছিল। এভাবে সব সময় ডাকতে পারে না? তার বেশ মন খারাপ হল।। শুনতে কি ভালো লাগছিল। মুখের কোণে লাজুক হাসি। আজ সে উত্তর পেয়ে গেছে। তার অধম টিচারও তাকে পছন্দ করে। কিন্তু তাহলে বলে না কেন? তবে কেন এত লুকোচুরি? কল কেটেছে বহুক্ষণ। কিন্তু সে এখনও কানের মাঝে মুঠোফোন চেপে ধরে আছে। এভাবে আরও কিছু সময় পেরুলো। মন না চাইতেও ঘরের দিকে পা বাড়াল।

ঘরে ঢুকতেই বড়সড় ঝটকা খেল। সামনের সোফায় রশিদ বসা। নিজের বাবাকে দেখে আৎকে উঠল নুবাহ। আসল কখন? গতকাল সে’তো বেশ রাত করেই ঘুমিয়েছিল। ভাবনায় মগ্ন হল কিয়ৎক্ষন। রশিদের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করেই সালাম দিল।
‘আসসালামু আলাইকুম, আব্বু।’
রশিদ সালামের উত্তর নিল দ্রুতই। মেয়েকে আপাদমস্তক ভালো করে দেখল। কিছু একটা জিজ্ঞেস করার আগে আচমকাই রুকাইয়ার কর্কশ ধ্বনি শোনা গেল। নিশাত এদিকে আয় তো। নুবাহও বাধ্য মেয়ের মত কিচেনে গেল।

রুকাইয়া মেয়েকে আস্ত এক নারিকেলের মালা দিলেন। জলদি কোড়াই দেয় তো। তোর আব্বু আসার সময় খেজুরের রস নিয়া আইছে। রসের সিন্নি বানাইতে কইছে। তুই নারিকেল কোড়াই দেয় জলদি। পিঠা বানানো হলে খেয়ে পড়তে যাইস। আর যাওয়ার সময় নীলাভ’রে ডাইকা দিস।
নুবাহ হ্যাঁ বলে মাথা নাড়াল। পরক্ষণেই মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
‘আম্মু, আব্বু কখন আসছে?’

‘ভোর চারটার দিকে।’
নুবাহ ফোৎ করে নিশ্বাস ছাড়ল। তার মানে ভোরবেলায়। কিঞ্চিৎ শব্দ করে বলল, অহহ’।

মিনিট দশের মাঝেই নারিকেল কোড়ানো শেষ করল নুবাহ। রুকাইয়া পিঠার জালি এগিয়ে দিলেন। সে খেয়ে রুমে ফিরে গেল। আবার কয়েক সেকেন্ড বাদে ফিরেও এল। রুকাইয়া মেয়েকে দেখে অবাক হলেন। কি’রে আবার কেন এলি? নুবাহ আলতো করে হেসে উঠল। আদুরে গলায় বলে উঠল,
‘আম্মু, যাওয়ার সময় তমা আর ওবায়দুল স্যারের জন্য সিন্নি নেয়া যাবে।’

রুকাইয়া মাথা নাড়িয়ে বলল, হু’ নিয়ে যাইস।

কিচেন থেকে বের হতে ফের রশিদের সাথে দেখা হল। রশিদ মেয়েকে ডাকলেন। পড়ালেখার কথা জিজ্ঞেস করল। নুবাহ ভালো বলে মাথা নাড়াল। ফের নিজের রুমের দিকে পায়ের কদম বাড়াল। হুট করে রশিদ ডেকে উঠল।
‘নিশাত, পড়াশোনা কর ভালো করে। রেজাল্ট ভালো হলে ঢাকা নয়ত চট্রগ্রাম। যেকোনো ভালো কলেজে ভর্তি করাব। কিন্তু রেজাল্ট ভালো হওয়া চাই তোমার।’

বাবার কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই নুবাহর মনে লাড্ডু ফুটল। এটাই তো সুবর্ণ সুযোগ। ঢাকা শহরে পড়াশোনা করার। এ সুযোগ সে হাতছাড়া করবে, একদমই না। তৎক্ষনাৎ তার ইচ্ছে করছিল বাবার পা ধরে সালাম করতে। কিন্তু লজ্জায় তেমন কিছুই করল না। তার ওপর বাবা নামক প্রানীটাকে ভীষণ ভয় পায়। তাই চুপচাপ মাথা দুলিয়ে ‘আচ্ছা’ বলে নিজের রুমে ফিরে এল।

মুখে প্রশান্তির হাসি। এত সুন্দর সকাল! এক নব্য ভোরের সূচনা হল যেন তার জীবনে। দু’ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দিল। ধন্যবাদ অধম টিচার, ধন্যবাদ আব্বু।
_____________________

ইমদাদ নিজের মুখে হাত চেপে বসে আছে। দুইদিন কথা না বলে অতিরিক্ত আবেগের বশে কি বলতে কি বলে ফেলেছে। মেয়েটা তাকে নিয়ে এখন কি ভাবছে কে জানে ? ফোৎ ফোৎ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মুঠোফোন এখনো হাতের মাঝে ধরে রেখেছে। উঁচু ঢিবিতে দাঁড়িয়ে আছে সে। নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য এত উপরে উঠা। দৃষ্টি বুলালো আশেপাশে। এখান থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এক অসাধারণ গ্রামের প্রকৃতি অবলোকন করল। ঊষার আলোয় দেখতে ভীষণ সুন্দর দৃশ্য এটা। আচমকা কারও হিম করা হাতের স্পর্শ পেল। ভয়ে কেঁপে উঠল সে। আনমনে এলোমেলো অনেক কু-চিন্তা মাথায় এল। চকিতে মুখ ঘুরতে থ’ হয়ে গেল। সামনে তার ছোট মামার বড় ছেলে জহির দাঁড়ানো। তাকে দেখে চক্ষুদ্বয় গোল গোল করে তাকাল। গলার স্বর বেশ উদ্বিগ্নতায় পূর্ণ।
‘ইমু তুই এত সকাল, ঠান্ডার মধ্যে এতদূর ক্যান আইলি? বাড়িতে সবাই তোরে খোঁজতাছে। বড় ফুফু তোরে খুঁজতে আমারে পাঠাইলো।’

ইমদাদ কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল। আমতা আমতা করল, আ,,আসলে এইদিকে তেমন আসা হয় না। তাই আর কি? ঘুরতে চলে আসলাম।’

জহিরের দৃষ্টি জোড়া সন্দিহান। হাতের মুঠোফোনের দিকে ইশারা করল। কার লগে এতক্ষণ কথা কইলি তাইলে। ইমদাদ ফের লজ্জা পেল। তড়িৎ বলে উঠল, আরে বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলাম। তাদের বলে আসিনি। তাই সবাই ক্ষেপে আছে আমার উপর। জহির পুনরায় কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে থামাল। নিজমনে হাসল। তাদের ইমু প্রেমে পড়ছে। প্রেমে পড়লে মানুষ প্রচুর মিথ্যে বলে। এই কথা তার থেকে বেশি কে জানে?

বাড়ি ফিরতেই ইমদাদের ডাক পড়ল তার নানুর ঘরে। নানু তার বিছানায় আধা-শোয়া অবস্থায় বসে আছে। ইমদাদ যেতেই নানু ইশারায় পাশে বসতে বললেন। মুখে জড়ানো কন্ঠস্বর।
‘কোথায় গেছিলা নানুভাই?’
ইমদাদ দ্রুতই জবাব দিল। নানু পূর্বদিকে গেছিলাম। ভারতের বর্ডার দেখতে। এখান থেকে পাহাড়গুলো একদম কাছে মনে হয়। কিন্তু কতদূরে সব। তার নানু ঈষৎ হাসলেন। বক্ষস্থল থেকে ফোৎ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। নানুভাই তোমারে এত চিন্তিত ক্যান লাগতাছে? কিছু হইছে তোমার? ইমদাদ হতভম্ব। মাথা নাড়াল তড়িৎ। না নানু, চিন্তিত হব কেন?
নানুর মুখে প্রানবন্ত এক হাসি। পান খাওয়া লালচে দাঁত দেখিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলেন। নাতীর দিকে ইশারা করে বলে উঠল,
‘আমার বইনের নাম কি? বাড়ি কোথায়? কতদিনের পরিচয় তোমগো?’

ইমদাদ যেনো আকাশ থেকে পড়ল। আমতা আমতা করল। মা,,মানে কোন বইন নানু’?
‘যার লগে কথা কইতা পূর্ব দিকে গেলা। নানু মইরা গেলে কি আর তোমার বিয়াশাদি দেখমু। নানুর লগে কথা কইতে দিবা। চোখে না দেখবার পারি কিন্তু ম্যাইয়ার লগে কতা তো কইবার পারি।’ ইমদাদ স্তব্ধ। বাবরে! এরা বুঝল কিভাবে? লজ্জায় আড়ষ্ট সে। নিশ্চুপ বসে আছে নানুর এহেন বাক্যেই। দ্বিধাদ্বন্দে ভুগল কিছু সময়। ফের বলে উঠল, কিন্তু নানু তুমি বেশি কিছু বল না। শুধু ভালো আছে কি’না বলিও। আসলে মেয়েটার সাথে আমার গভীর কোন সম্পর্ক নেই এখনও। নানু আবারও খিলখিল করে হাসল। ইমদাদ মনের মাঝে বেশ সাহস সঞ্চার করে কল দিল। প্রথম কল রিসিভ হল না। ভয় পেল বেশ। মাত্র ঘন্টা খানেক আগে কথা বলেছিল সে। এখন আদৌও কি কল উঠাবে এই মেয়ে। নানা জল্পনা কল্পনা শেষে কল রিসিভ হল। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কাঁপা কাঁপা ভেজানো গলা ভেসে এল। ইমদাদ বুঝল নিশ্চয়ই আশেপাশে ওর মা-বাবা আছে। তাই দ্রুতই বলে উঠল,
‘তোমাকে বিরক্ত করার জন্য সত্যি দুঃখিত। জানি হয়ত ব্যস্ত আছ। আসলে আমার নানু তোমার সাথে কথা বলবে। কথা না বললে আজকে সারাদিন আমার মাথার পোকা খাবে। শুধু দু’মিনিট কথা বলবে, এরপর আমিই কল কেটে দেব।’
ইমদাদ মোবাইলটা নানুর হাতে দিল। উচ্ছ্বসিত নানুর কন্ঠস্বর। মোবাইল কানে দিয়ে বলে উঠল,
‘কেমন আছো বইন?

নুবাহ হতভম্ব। কম্পিত গলায় প্রথমে সালাম দিল। তারপর ধীরগলায় জবাব দিল, ‘জ্বী ভালো।’

‘বুবু তোমার বাড়ি কই? আমার ভাইয়ের লগে যোগাযোগ হইলো কেমনে?’

‘আ,,আমার বাড়ি বরিশাল। আ,,আসলে ভুল করে বিকাশে টাকা চলে গিয়েছিল। তারপর আর কি?’

‘ঐখানে কি তোমগো নিজের বাড়ি বুবু?’

‘নাহ, আব্বুর চাকরিসূত্রে এখানে থাকি। কিন্তু আমাদের নিজেদের বাড়ি নোয়াখালী কোম্পানিগঞ্জ। তবে নিজেদের এলাকায় কখনো যাওয়া হয়নি। আসলে আব্বু নিজেই কখনো নিয়ে যায়নি।’

‘নোয়াখালীতে। তাইলে সমস্যা নাই। আইচ্ছা, আমার পাগল ভাই’রে দেইখা রাইখো। তোমার লগে হয়ত দেখা হইবো না আমার। ততদিন কি আর বাঁচমু। তয়, নানুর কথা মনে রাইখো কিন্তু। পাগলা’টারে নিয়া নানুর কবর জিয়ারত করতে আইসো। কি, আসবা তো বইন।’

ইমদাদ নানুর মুখে এমন কথা শুনে রেগে গেল। আর কিছু বলার আগে মুঠোফোন কেড়ে নিল। নুবাহকে বিদায় বলে কল কাটল। নানুর সাথে কপট রাগ দেখাল। এভাবে মরার কথা বলবে না নানু। কিন্তু তার নানু খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে। ইমদাদের ভীষণ মন খারাপ হল। কথায় কথায় তার নানু কেন মরার কথা বলে।

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here