হিয়ার_মাঝে ৩৩. #মেঘা_সুবাশ্রী ®️

0
318

#হিয়ার_মাঝে ৩৩.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হল অস্বস্তিতে। ভাবতেই যেনো শিউরে উঠছে বার বার। শরীরের মৃদু কাঁপুনি এখনো বিদ্যমান, আর একটু হলে দমবন্ধ হয়ে যেত। নুবাহর সময় যেন থমকে গিয়েছিল তৎক্ষণাৎ। কি এক শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত, জিতুর কিঞ্চিৎ সংস্পর্শেও সে বরফখন্ডের ন্যায় জমে যাচ্ছিল। বুক ঢিপঢিপ ক্রমশই বেড়ে চলেছে, বন্ধ হওয়ার অভিপ্রায় নেই তার। তবে অজান্তেই জিতু তার বড্ড উপকার করেছে, লম্বা ঘোমটা পুনরায় ঢেকে দিয়েছে। মুখ দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। লজ্জায় আড়ষ্ট পুরো তনুশ্রী। পরে কি হবে ভাবতেই যেন আৎকে উঠছে। সে জিতুর সামনে দাঁড়াবে কীভাবে? তারপর, কিভাবে এত লজ্জা থেকে নিজেকে লুকাবে? লাজুকলতার ন্যায় নুয়ে পড়েছে তার ভারী তনুজা।

জিতুর অবস্থাও যেনো বেগতিক। পুরোদস্তর লোকারণ্যই টাসা কনভেনশন হল। সবার কৌতুহলী দৃষ্টি তার দিকে। অস্বস্তিতে ডুবে আছে, দু’হাতের আঙ্গুল কিঞ্চিৎ কাঁপছে তার। কিন্তু বক্ষস্থল জুড়ে এক স্নিগ্ধ শীতলতা ছুঁয়ে যাচ্ছে। মন কেমনের বৃষ্টি হচ্ছে তার শীতল মন জুড়ে। সেই মন কেমনের বৃষ্টিতে সিক্ত দু’মানব অবয়ব। যে নিজের বাম পাঁজরের দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে তার সদ্য হওয়া নববধূকে। কল্পজগতে কি সুন্দর মুহুর্ত তাদের। কিন্তু বাস্তবতায় চলছে ভিন্নকিছু। লজ্জা’রা হানা দিয়েছে তার মুখাবয়বে। ইশশ, তারও যদি নুবাহর মত লম্বা ঘোমটা থাকত, বেশ ভালো হত। নিজেকে লুকিয়ে রাখত ঘোমটার আদলে। লজ্জায় আর অস্বস্তিতে ডুবতে হত না এখন।

বউয়ের মুখ দেখে আবার ঘোমটা টেনে দেওয়া, এটা নিয়ে আত্নীয় স্বজনদের মাঝে তেমন কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু বন্ধুমহল বেশ সন্দিহান। মুবিন দু’য়েক ইঞ্চি দূরত্বে দাঁড়ানো। কিন্তু চিন্ময় জিমান একদম জিতুর মুখোমুখি দাঁড়াল। চিন্ময় উৎসুক হয়ে বলে উঠল,

‘কিরে ভাবীর মুখ ডাকলি কেনো? আমরা মুখ দেখব না।’

জিতু তড়িৎ জবাব দিল, ‘না দেখতে হবে না।’

জিমানও বেশ সন্দিহান। ব্যগ্র কন্ঠে বলল, ‘কেনো বউ দেখব না, তোর বউ তো আমরা নিয়ে যাব না। শুধু মুখই দেখব।’

জিতু ফের প্রতিত্তোর করল, ‘অন্যের বউ তোরা কেন দেখবি? দেখতে হবে না।’

সানিরও সন্দিহান দৃষ্টি জোড়া। এক ভ্রু উঁচিয়ে জিতুর দিকে তাকাল। হিন্দি ভাষায় আওড়ালো, ‘হুমম, ডালমে কুচ কালা হে।’

সানির কথায় লরিন দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠল। সেও সানির মত করে বলে উঠল, ‘ডালমে কুচ ক্যালা নাহি, পুরা ডালিই কালা হ্যা সানলাইট।’

সানির সাথে সাথে বাকি’রাও অবাক। সবার দৃষ্টি তখন লরিনের দিকে। সানি ব্যগ্র কন্ঠে বলল, ‘ম্যাতলব।’

লরিনের পাশাপাশি জুঁই সিমি মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। ঈশিতা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘তোমরা এভাবে আমার দেবর জা’কে বিরক্ত কর না’তো। একটু তাদেরকে একা সময় দাও। দু’জন দু’জনের সাথে একটু কুশল বিনিময় করুক।’

লরিন হেসে উঠে বলল, ‘কি যে বলেন ঈশিভাবী? এরা কুশল বিনিময় করবে। এরা দুই কাপল সিনেমার মত একে অপরকে কি বলবে জানেন?’ লরিন জিতুর মত গলার স্বর দৃঢ় করে বলে উঠল, ‘জিতু বলবে, মিস কালরাত আমি আপনাকে বউ হিসেবে মানি না। আর জবাবে নুবাহ কি বলবে, আর আমি তো আপনাকে বর হিসেবে মানতে একদম বউ সেজে বসে আছি।’

লরিনের কথা শুনে বন্ধুমহলের সবাই হাসির পরিবর্তে হা’ হয়ে আছে। সানি চক্ষুদ্বয় গোল গোল করে বলল, ‘অ্যা, নিশিরাত।’

সহসাই জিমান চিন্ময় দু’জনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। জিমান চিন্ময়ের কাঁধে এক হাত রেখে বলে উঠল, ‘বুঝলি চিন্ময়, নুবাহ নুবাহ নুবাহ।’
চিন্ময়ও খাতায় লেখার মত করে জিতুকে দেখিয়ে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ, নুবাহ নুবাহ নুবাহ।’

এদের দু’জনের কথোপকথন কেউ না বুঝলেও মুবিন ঠিকই বুঝল। সে নিজমনে মুচকি হাসল। বির্তকের ক্লাবে সেদিন আনমনে জিতু নুবাহর নাম লিখেছিল অনেকবার। আর আজ অজান্তেই সেই মেয়ে তার বউ। ভালোয় জমবে এদের জুটি। একজন ক্ষ্যাপা বাঘ অন্যজন ক্ষ্যাপা বাঘিনী।

জিতু কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে। সে কি তাদের কানে কানে বলেছে এই বিয়ে মানবে না। আরে বিয়ে তো বিয়েই, সেটা সম্মতিতে হোক বা জোর করে। বিয়ে একবারই হয়, বার বার নয়। তার হাড়বজ্জাত বন্ধুগুলো তাকে এবার উঠতে বসতে নুবাহর নাম বলে ক্ষেপাবে। ভাবতেই কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল। কিন্তু এত কিছুর ভীড়েও তার মন উচ্ছ্বসিত ভীষণ। ভেতর থেকে জবাব এল, নুহাহকে পাসনি কিন্তু নুবাহকে তো পেয়েছিস। নিজের খুশি যেন বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু কিভাবে নিজেকে সংযত করবে? যদি মুখের কোণে হাসি দেখে, সবগুলো মজা উড়িয়ে ছাড়বে এখন। ভাবনা মাঝেই সে হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ল। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দ্রুত কদমে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। বন্ধুমহল পুরো অবাক জিতুর কান্ডে। তার এত জলদি ওয়াশরুম যাওয়া লাগল। খাবার তো এখনও খাওয়া হয়নি তাদের। ওয়াশরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করল দ্রুতই। দেয়ালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়াল। নিজের হাতে নিজে চিমটি কাটল। সত্যি মেয়েটা নুবাহ, নুবাহ তার বউ। অজান্তেই তার অধরকোণে হাসি ফুটল। সে হাসছে। ফের অদ্ভুত শীতলতা ছুঁয়ে গেল তার তনুমনে। হিয়ার মাঝে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে। এক অজানা উত্তেজনায় কেমন যেন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। কেন এত উত্তেজনা জানা নেই তার। শুধু বক্ষস্থল জুড়ে একটাই জবাব আসছে, নুবাহ তার বউ।

দীর্ঘ সময় ওয়াশরুমে কাটিয়ে ফিরে এসে ফের আরেক হোঁচট খেল। টেবিল সাজানো বিভিন্ন খাবারে। বন্ধুমহল বসে আছে পুরো টেবিল দখল করে। কিন্তু সেখানে মধ্যমণি হয়ে বসেছে এক লাল পরি। মুখের লম্বা ঘোমটা টেনে তোলা হয়েছে। উন্মুক্ত পুরো গোলগাল মুখখানা। আজ এত রূপবতী লাগছে কেন মেয়েটাকে? না’কি বউয়ের সাজসজ্জায় এত অপরূপা লাগছে। কিন্তু তার বউয়ের ঘোমটা তুলে দিল কে? এখন তো আরও বেশি অস্বস্তি লাগবে তার কাছে। না চাইতেই দৃষ্টি তার সেই লাল পরির দিকে চলে যাবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যেন দায় হয়ে যাচ্ছে। সে সামনে আসতেই বন্ধুমহল মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। জিমান গলা খাঁকারি দিল। বলে উঠল,

‘ভাই, তুই নুবাহ ভাবীর সাথে বস। ভাবী সেই কখন থেকে না খেয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছে। যদি পারিস তাকে খাইয়ে দেয়। বেচারী হাত দিয়ে খেতে পারছে না।’

ভাতের থালায় নিজের হাত নাড়াচ্ছে শুধু। কিন্তু আচমকাই জিমানের কথায় নুবাহ যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে কখন জিতুর ডিমের জন্য অপেক্ষা করেছে। শুধুমাত্র অস্বস্তি আর লজ্জার জন্য খেতে পারছে না। নয়তো কবেই খেয়ে নিত। এই বন্ধুমহল তাকে জ্বালিয়ে খেল। এক তো জিতুকে দেখে তার দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম, তার উপর এদের মজা। মাথা নিচু করে বসতে বসতে আজ তার ঘাড় ব্যথা হয়ে গেল।

সানি মুখে খাবার দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল। বলে উঠল, ‘আহ, সত্যিই খাবার অসাধারণ হয়েছে। জিতু তোর শ্বশুরের পছন্দ আছে বলতে হবে।’ তারপর নুবাহর দিকে তাকাল। হাসি দিয়ে বলল, ‘ভাবী আপনার সাথে সাথে আপনাদের খাবারও বেশ পছন্দ হয়েছে আমাদের। আমরা সত্যি ধন্য আপনার মত ভাবী পেয়ে।’

নুবাহ আরেকবার লজ্জায় আড়ষ্ট হল। চোখ তুলে তাকাতেই পারল না। কিন্তু আচমকাই এক মৃদু কম্পন অনুভব হল তার। তার পাশে জিতুকে বসতে দেখে। কিঞ্চিৎ দূরত্ব তাদের মাঝে। কিন্তু তার হৃদকম্পন হঠাৎই বেড়ে গেছে। থালার ভাত কিভাবে শেষ করবে এবার। অস্বস্তিতে যেন আজ মরেই যাবে। জিতু ভাবলেশহীন বসল। সামনেই খাবার সাজানো থালা। ভাতের থালায় হাত দিতেই ঈশিতা রগড় গলায় বলল,

‘জিতু আজকে কিন্তু নিজে একা খেলে হবে না। শালীদেরও খাওয়াতে হবে।’

জিতু যেনো অথৈজলে পড়ল। থম মেরে আছে। সে ঠিক করে কাউকে চেনেই না। ডাকবে কিভাবে? তার কঠিন কাজ সহজ করে দিল ঈশিতা। সে নীলাভ হৃদিকে ডেকে আনল। জিতু কোনোরকম দু’নোকমা তাদের মুখে তুলে খাওয়ালো। কিন্তু জিতু তাদের ভালো করে খেয়ালই করল না। শেষে নিভান এসে তার পাশে দাঁড়াল। ঈশিতা পরিচয় করে দিল।
‘এ হচ্ছে তোমার একমাত্র পিচ্চি শালা। তারেও খাওয়াই দাও।’

জিতু যন্ত্র মানবের মত ঈশিতার কথা শুনে যাচ্ছে। সে নিভানকে পাশে এসে বসতে বলল। নিভানও চুপচাপ নিজের দুলাভাইয়ের সাথে বসল। দু’জনেই কুশল বিনিময় করল। নিভান কিছুসময় কথা বলেই ছুটে গেল রিদানের কাছে। তাকে খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে আসল। দীর্ঘসময় এভাবেই অতিক্রান্ত হল তার। নুবাহ এখনো ভাতের মধ্যে হাত নাড়িয়ে যাচ্ছে। দু’নোকমা ভাত খেয়েছে শুধু। এরপর মুখে তোলা হয়নি আর। তুলবে বা কিভাবে? জিতুর বাম হাতের কনুইয়ের পুরো ভার তার ডান হাতের উপর দিয়ে রেখেছে। লজ্জায় সে বলতেও পারছে না হাত’টা সরান। সে বুঝতে পারল না এভাবে কেউ কনুই রাখে? না’কি ইচ্ছে করে দিয়ে রেখেছে। মহাবদ লোক একটা।

সহসাই ঈশিতা নুবাহর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘কি হল নুবাহ, খাচ্ছো না কেন?’
ঈশিতার সাথে সুর মিলিয়ে জিমানও বলে উঠল, ‘ঈশিভাবী আরেহ বুঝো না, সে’তো জিতুর হাতে খাবে, তাই একা খেতে চাইছে না।’
ঈশিতা হুট করে বলে উঠল, ‘জিতু তুই একা একা খাচ্ছিস। তোর বউটাকে খাওয়াই দেয়।’

নিচের দিকে দৃষ্টি জিতুর। না তাকিয়েই জবাব দিল ঈশিতার, ‘একা আর কই খেলাম, বউয়ের পুরো চৌদ্দগুষ্টিকে তো খাওয়ালাম। আর তাকে কেন আমার খাওয়াতে হবে। তার কি হাত নেয়।’

মুবিন খাওয়ার মাঝে খেয়াল করল জিতুর বাম হাতের কনুই নুবাহর ডান হাতের উপর ভর দেয়া। সে দৃঢ় গলায় জিতুকে বলে উঠল, ‘ঠিক বলেছিস, তার হাত আছে। কিন্তু তোর বাম হাতের কনুই’টা সরালেই নুবাহ ভাবী নিজের খাবার খেতে পারতো।’

মুহুর্তেই চাপা হাসি ছড়িয়ে পড়ল সবার মাঝে। জিতু ফের লজ্জায় আড়ষ্ট হল। নিজের বাম হাত দ্রুতই সরিয়ে নিল। নুবাহ নিজমনে দোয়া করল, এই মাটি ফাঁক করে দাও, সে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখুক। এত লজ্জা আর নিতে পারছে না। না পারছে খেতে, না পারছে বসতে। ঈশিতা নুবাহর কষ্ট বুঝল। সে এসে নুবাহর হাত ধুয়ে নিজ হাতে বাকি খাবার তাকে খাইয়ে দিল। খাবার পর্ব শেষে ফের মঞ্চে বসানো হল। তিন সিটের সোফায় পাশাপাশি বসেছে জিতু নুবাহ। কনের আত্নীয় স্বজন’রা এসে তাদের মিষ্টিমুখ করাচ্ছে। সম্মানী হিসাবে নুবাহর হাতে জুয়েলারি বক্স দিয়ে যাচ্ছে। এত কিছুর মাঝেও জিতুর চোখজোড়া নুবাহর মেহেদী রাঙানো হাতের মাঝে। ইচ্ছে করছে তার ঐ হাতদু’টো একবার ছুঁয়ে দিতে। কপালে এক আঙ্গুল দিয়ে চুলকানোর অজুহাতে আঁড়চোখে নুবাহকেই দেখে যাচ্ছে। তার এতবার কপালে হাত দেওয়া দেখে আজমল কোত্থেকে ছুটে এল। ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলল,

‘কি হয়েছে বাবা, মাথা ব্যথা করছে বেশি? দাঁড়াও এক্ষুনি বিয়ের ঝামেলা মেটানোর কথা বলছি।’

আজমল আবার অন্যদিকে ছুটে গেল। জিতু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে। হায় কপাল! নিজের বউটাকে শান্তিমত দেখতেও পাচ্ছে না। নিজমনে হাপিত্যেশ করল। কিছুসময় পর রশিদ আর রুকাইয়া ছুটে এল। পাশে দাঁড়ানো রুবি। সব আত্নীয় স্বজন জড়ো হয়ে আছে একসাথে। রুকাইয়া চোখের জল ফেলছে। কিন্তু রুবি ভিন্ন কারণে কাঁদছে। নিজমনে দোয়া করছে সে। মেয়েটা যেনো সুখী হয়। নিজের অতীত যেন তার পিছুটান না হয়। কম তো আর কাঁদে নি। এবার সুখ যেন আসে তার জীবনে।

নুবাহর চোখের জল টপটপ করে পড়ছে। কি হবে এরপর? আদৌ জিতুকে সে স্বামী হিসেবে মানতে পারবে তো। ভাবতেই বক্ষস্থল জুড়ে হাহাকার নেমে এল। রশিদ নিজের চোখের জল মুছে নিজের মেয়ের একহাত আর জিতুর একহাত নিলেন। দু’হাত এক করে ভেজানো গলায় বলে উঠল,

‘বাবা, আজ থেকে তোমার উপর আমার মেয়ের সকল দায়িত্ব দিয়ে দিলাম। তুমি তার যত্ন করতে না পারো কিন্তু কখনও অবহেলা কর না। তাকে বোঝার জন্য সময় নিও।’

রুকাইয়ার কান্নামিশ্রিত করুণ গলা। ‘বাবা মেয়েটারে দেইখো। আজ থেইক্যা তোমার আমানত।’

রুবি বেশি কিছু বলল না। শুধু ছোট্ট এক বাক্য উচ্চারিত করল। ‘দোয়া করি সুখী হও।’

জিতুর ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে। সত্যিই কি সে সবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু নিজমনে বিড়বিড় করল, সে অবশ্যই চেষ্টা করবে। নুবাহর হাত তখনও জিতুর হাতের উপর। জিতু অজান্তে নুবাহর হাতের আঙ্গুলের ফাঁক গলিয়ে তার হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করল। অদ্ভুত অনুভূতি আর একরাশ মুগ্ধতায় ছেয়ে গেল তার তনুমন। কিছুসময় আগেও বিয়ে করবে না বলা ছেলেটার মুহূর্তে ধ্যানজ্ঞান বদলে গেল। নুবাহ কান্নার চেয়েও লজ্জায় হাসফাস করছে বেশি। এই বদ ছেলে তার হাত ধরে রেখেছে কেন? ছাড়ছেই না। জিতু আনমনে মিটমিট করে হাসছে। কিন্তু তার এই হাসি বেশিক্ষণ টিকলো না। চিন্ময় আচমকাই চেঁচিয়ে উঠল,

‘কিরে হালা, ঘন্টা খানেক আগেও বিয়ে করবি না বলে চেঁচালি। এখন নির্লজ্জের মত এভাবে বউয়ের হাত ধরে বসে আছিস কেনো?’

মুহূর্তে লজ্জায় দু’গাল লাল হয়ে গেল জিতুর। তড়িঘড়ি নুবাহর হাত ছেড়ে দিল। বন্ধুমহলের সবাইর মুখে চাপা হাসি। অথচ নুবাহ বাকরুদ্ধ। বিয়ে করবে না বলেছিল, তাহলে পরে বিয়ে করল কেন? অযাচিত চিন্তায় তার মস্তিষ্ক ঘুরছে। কি এমন কারণ ছিল জিতুর। না’কি তাকে পছন্দ নয়?,,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here