প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১৭
__________________________
রাত সাতটার মধ্যে সিলেটের গন্ডি পেরোনোর কথা। সেখানে তাদের গাড়ি এখনো ঢাকার ত্রিসীমায়। জ্যাম দিয়ে ভর্তি ঢাকার রাস্তাঘাট৷ তার উপর মধ্য- রাস্তায় ধর্মঘট পড়েছে৷ সম্পুর্ন রাস্তা পরিবর্তন করতে হয়েছে৷ মধ্যে আবার মোস্তফা সাহেবদের গাড়ি ব্রেকডাউন খেয়েছে। সেটাকে মেরামত করতে তিন ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে৷ এখন সন্ধ্যা নেমেছে! আঁধার হয়েছে পৃথিবী৷ তন্ময়দের গাড়ি নিরবচ্ছিন্ন রাস্তা ধরেছে। রাস্তার দু’পাশে ফেলে যাচ্ছে সারি সারি গাছ, দালানকোঠা! তন্ময়ের গাড়ির পেছনে তিনটা গাড়ি সোজাসাপটা সারি করে আসছে৷ একটি গাড়িও আগপাছ হচ্ছে না। দীপ্ত বসেছে তন্ময়ের গাড়িতে৷ তার দুপাশে অরু এবং শাবিহা! সে তার দু বোনের মধ্যে লেপ্টে আছে। ড্রাইভিংয়ে তন্ময় এবং তার পাশে অয়ন। তন্ময় ড্রাইভ করার পাশাপাশি টুকটাক আলোচনা করছে অয়নের সাথে। দীপ্ত নড়েচড়ে উঠছে একটু পরপর। যেমন তার অস্বস্তি হচ্ছে!
–‘ আমাকে চেপে মেরে ফেলবে নাকি! ‘
–‘ তুই তো বললি আমাদের সাথে লেপ্টে বসতে চাস। ‘
–‘ বলে বড়ো পাপ করে ফেলেছি। আমাকে মুক্তি দাও প্লিজ! ‘
হেসে অরু জানালার দিক চেপে গেল। হঠাৎ দীপ্ত শব্দ করে বায়ু দূষণ করে বসলো। নিস্তব্ধ গাড়ির মধ্যে শুধু তার উচ্চ শব্দের বায়ু দূষণের আওয়াজ শোনা গেল। চমকে উঠেছে অরু, শাবিহা৷ পরপর শব্দ করে হাসতে লাগলো৷ লজ্জায় হতভম্ব ছোট দীপ্ত৷ কিন্তু এখন লজ্জা দেখাবার সময় নেই। পূর্বেই সে পেট দু’হাতে চেপে ধরলো৷ হুট করে ভীষণ পেট ব্যথা করছে৷ দীপ্ত হু হু করে কেঁদে উঠলো,
–‘ আমার আর্জেন্ট দুই ধরেছে তন্ময় ভাইয়া৷ ইট’স ভেরি আর্জেন্ট। পেটের মধ্যে খুটুরমুটুর করছে৷ কিছু একটা করো! আমি বোধহয় প্যান্টেই করে বসব। মানে গাড়িতেই! ‘
তন্ময় অস্পষ্ট স্বরে ‘ শিট! ‘ বলে দ্রুত গাড়ি থামাল।
–‘ একটু অপেক্ষা করতে পারবি না? ‘
–‘ একদম না৷ ‘
–‘ আটকে রাখ, দেখছি! ‘
তন্ময় চারপাশে নজর বোলালো৷ আশপাশে শুনশান নিরবতা। এদিকটায় বাড়িঘর নেই তেমন। তবে কিছুটা দূরে কিছু বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে৷ সে আবারো গাড়ি স্টার্ট করলো, সেখানটায় গাড়ি থামাবে বলে৷ পেছনে দীপ্ত এতটুকু ধৈর্য ধারণ করতে পারছেনা। অরু দীপ্তর মাথা বুলিয়ে দিয়ে বলল,
–‘ ওইতো সামনে বাড়ি৷ আরেকটু অপেক্ষা কর শোনা!’
তন্ময়ের গাড়ি থামতেই পেছনের গাড়িগুলোও থেমে গেল। মোস্তফা সাহেব কাঁচ খুলে মাথা বের করে ছেলের উদ্দেশ্য বললেন,
–‘ কি সমস্যা তন্ময়? ‘
তন্ময় মোস্তফা সাহেবের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল৷ ইশারায় তার গাড়ি দেখিয়ে বলল,
–‘ দীপ্তর বাথরুম পেয়েছে৷ স্যাটেল করে আসছি৷ তোমাদের অপেক্ষা করতে হবেনা! তোমরা যেতে থাক। ‘
–‘ আচ্ছা আসো তাহলে। ‘
মোস্তফা সাহেবদের গাড়ি সহ বাকি দুটো গাড়ি চলে গেল। গাড়ি যেতেই দীপ্ত নড়েচড়ে পেট ধরে দ্রুত পায়ে বেরিয়েছে৷ পেট ব্যথায় তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। অয়ন বেরিয়ে দীপ্তকে ধরে রেখেছে ৷ ছেলেটা ব্যথায় ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছে। তন্ময় অরু আর শাবিহার উদ্দেশ্যে বলল,
–‘ তোদের কারো বাথরুম ব্যবহার করতে হবে? এখনই করে নিতে পারিস সামনে বাড়িঘর পাওয়া মুশকিল৷ খুব নিরব অঞ্চলে পড়বে বাকিটা রাস্তা। ‘
শাবিহা অরুর দিক তাকাল৷ অরু মাথা দোলাল। তার বাথরুম ব্যবহার করতে হবেনা৷ শাবিহারও প্রয়োজন নেই৷
–‘ তাহলে গাড়ি লক করে যাচ্ছি ভেতরেই থাক। ‘
গড়ি লক করে দীপ্তকে নিয়ে তন্ময় এবং অয়ন একটি কোয়াটার বাসার সামনে এলো। এই বাড়িটার দরজা খোলা। বাকি দুটোর সদরদরজা আটকে রাখা! সেখানে কড়াঘাত করার থেকে ভালো, খোলা বাড়ি থেকে সাহায্য চাওয়া। একজন বৃদ্ধা দরজার সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে৷ হাতে লাঠি। তন্ময় তাকেই জিজ্ঞেসবাদ করলো, বাথরুম ব্যবহার করা যাবে নাকি! বৃদ্ধা ভীষণ সৌখিন প্রজাতির মানুষ৷ তিনি লাঠি হাতে উঠে দাঁড়ালেন৷ হাসিমুখে দীপ্তকে সাথে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। তন্ময় পিছু পিছু গেল। দীপ্তকে বাথরুমে দিয়ে বেরিয়ে আসলো৷ পেছন পকেট থেকে একটি সিগারেট বের করলো৷ সিগারেট খানা ঠোঁটে গুঁজে ধরলো। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষন লাইটার ঘুরালো। একসময় সেটা দ্বার সিগারেট ধরিয়ে টান মারল৷ মাথা উঁচু করে আকাশের পানে, নিকষকালো ধোঁয়া ছেড়ে দিল। তার চোখ অয়নের দিক যেতেই, অয়ন কন্ঠে বিষ্ময় নিয়ে বলল,
–‘ ভাই তুমি সিগারেট খাও? ‘
–‘ হু! মাঝেসাঝে৷ ‘
–‘ আমি এসব মোটেও খাইনা। এগুলো খেলে তো ক্যান্সার হয়। হৃদপিন্ড পুড়ে ছারখার হয়ে যায়৷ ‘
তন্ময় হাসলো৷ অয়নের কাঁধ চাপরে বলল,
–‘ আমিতো তোকে প্রায়শই দেখি আলী চাচার দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে৷ ‘
অয়ন ঠোঁট কামড়ে ফেললো৷ ভালো সাজতে গিয়ে খারাপ হয়ে গেল৷ লজ্জিত অয়ন হেসে বলল,
–‘ ভাই ওই আরকি মাঝেমধ্যে.. ‘
–‘ সিগারেট খাওয়া বাবা পছন্দ করেন না৷ তাই কমিয়ে দিয়েছি৷ তবে হুটহাট মাথায় চড়ে বসলে খাই একটু আকটু! ‘
–‘ সেইম ভাই! আমারও৷ ছাড়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনা। ‘
–‘ আছে না দিব? ‘
–‘ আছে দুটো৷ ‘
অয়ন নিজের পকেট থেকে একটা বের করে ঠোঁটে গুঁজল। সিগারেট’টা তন্ময়ের লাইটার দিয়ে ধরালো। দুজন নিস্তব্ধতায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে৷ নিরজন পরিবেশ শীতল আবহাওয়া! দু’একজনের যাতায়াত দেখা দিচ্ছে৷ মিনিট খানেক পর দীপ্ত বেরিয়ে আসলো৷ চোখমুখে তৃপ্তির হাসি। তন্ময় শুধালো,
–‘ এখন ভালো লাগছে? ‘
–‘ হ্যাঁ ভীষণ। কি যে খারাপ লাগছিল তখন বলে বোঝানো যাবেনা! ‘
হেসে অয়ন দীপ্তকে নিজের ঘাড়ে তুলে নিল। দীপ্ত ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো৷ পরপর নিজেকে সামলে নিয়ে, আনন্দে পা দোলাচ্ছে৷ কোলে ওঠার যে কি আরাম তা সে মুখে বলবে না৷ পুরুষ মানুষ কোলে চড়ে নাকি? গাড়ির সামনে আসতেই অয়ন নামিয়ে দিল দীপ্তকে। তন্ময় ড্রাইভিংয়ে উঠে বসলো৷ পাশে অয়ন। দীপ্ত সেই দুই বোনের মধ্যে গিয়ে বসেছে৷ চিন্তিত সুরে অরু বলল,
–‘ ব্যথা কমেছে? ‘
–‘ হু৷ খিদে পেয়েছে এখন। প্রচন্ড! ‘
শাবিহা বলল,
–‘ বাবার গাড়িতে খাবার আছে। দাঁড়া গাড়িটা আমরা ধরে নেই। ‘
অরু বলল,
–‘ কিছুক্ষণ পর ডিনারের জন্য নিরিবিলি যায়গায় গাড়ি পার্ক করা হবে৷ তখন খেয়ে নিস! ‘
–‘ অতক্ষণ আমি অপেক্ষা করব?’
–‘ আলবাত করবি। ‘
মোস্তফা সাহেবের গাড়ি ধরতে তন্ময়ের আধঘন্টা লেগেছে মাত্র। চারটি গাড়ি এখন একসাথে চলছে৷ মোস্তফা সাহেবের গাড়ির পাশে গাড়ি নিয়ে তন্ময় শব্দ করে বলল,
–‘ দীপ্তর খিদে পেয়েছে৷ ‘
–‘ রাত আটটা এখন। সিলেটের সীমানা ধরতে কমছে কম আরও দু’তিন ঘন্টা লাগবে৷ অর্ধেক রাস্তাও শেষ করিনি। ‘
–‘ পূর্ব অঞ্চলে গাড়ি থামাব? সেখানটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন! মানুষজনের যাতায়াতও ভীষণ কম। ‘
–‘ তাই করো তাহলে। ‘
তন্ময় একটানে সামনে চলে গেল। মিনিট দশেকের পর গাড়ি থামিয়েছে পর্বতের চুড়ায়৷ এখানে টুকটাক পাথরের মেলা৷ হলদে স্ট্রিট লাইটের খাম্বা গাড়া বড়সড়। চারপাশ উজ্জ্বল। এখান থেকে আকাশের চাঁদ স্পষ্ট ভাবে কাছে দেখায়৷ যেমন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেওয়া যাবে। গাড়ি থেকে নেমে এসেছে মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেব এবং ওহী সাহেব। পরপর আকাশ ও বেরিয়ে এসেছে৷ শুধু বিবাহিত নারীগণ গাড়িতেই৷ অরু, শাবিহা, রুবি মোস্তফা সাহেবদের সঙ্গে৷ তারা বোনেরা মিলে গাড়ি থেকে খাবার এনে বাপ-চাচাদের হাতে দিয়ে যাচ্ছে। অরু তন্ময়ের পছন্দের ডিস প্লেটে নিয়ে, গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সবে৷ তন্ময় গাড়ির বোনাটের উপর বসে আছে। প্লেট তার হাতে ধরিয়ে অরু নিজের খাবার আনতে চলে গেল৷ খাবার নিয়ে এসে অয়নের পাশে দাঁড়ালো৷ তার অয়নের সাথে জমে ভালো৷ কথায় কথায় বলল,
–‘ অয়ন ভাইয়া এখান থেকে চাঁদ দেখতে বেশ স্বচ্ছল লাগছে তাই না? ‘
–‘ হ্যাঁ৷ বিষয়টি এমন আমাদের ওদিকে দালানকোঠা এবং গাছগাছালির মেলা। সেখান থেকে চাঁদ দূর আসমানে দেখায়৷ তবে এখানটা সম্পুর্ন ফকফকা৷ নদীর ঝিলসে যাওয়া পানি বিহীন তৃতীয় কিছু নেই। তাই আমরা সরাসরি দেখতে পাই চাঁদ’টাকে! মনে হয় এইতো কাছে৷ হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবো। ‘
–‘ হ্যাঁ৷ সাথে নদীর দিক লক্ষ্য করো। চাঁদ প্রতিফলিত হয়েছে৷ মনে হচ্ছে নদীর মধ্যে আরেকটি চাঁদের পৃথিবী। ‘
দুজন গল্পে মশগুল৷ এই দুজনকে শাবিহা আঁড়চোখে দেখে তন্ময়ের পাশে এসে দাঁড়ালো৷ দুই ভাইবোন একটু খাচ্ছে তো আরেকটু চাঁদের দিক তাকাচ্ছে, নাহলে গল্পে মশগুল দুই ব্যক্তির দিক। যারা দুনিয়া ভুলে প্রকৃতির প্রেমে ডুবে বসে। পৃথিবীর মানুষগুলো আসলেই নিষ্ঠুর!
__________
সিলেট চারটি জেলা নিয়ে গঠিত৷ সিলেট সদর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ। সিলেট সদর জাফলং নিয়ে বিশ্ব পরিচিত। জাফলং’কে প্রকৃতির কন্যাও বলা হয়। তেমন মৌলভীবাজার বিশ্ব বিখ্যাত মাদবকুন্ড জলপ্রপাতের জন্য। হবিগঞ্জ বিশ্বব্যাপী পরিচিত চায়ের জন্য, অপরদিকে সুনামগঞ্জের নাম উজ্জ্বল করে দেসবন্ধু মিষ্টি এবং পাথর! জবেদা বেগমের পিতৃস্থান সিলেট শহরের মৌলভীবাজার জেলায়। মৌলভীবাজার মনু নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটির চা বাগান ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনগুলির জন্য সুপরিচিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চা বাগান মৌলভীবাজারে অবস্থিত। মৌলভীবাজার উপজেলা শ্রীমঙ্গলে জবেদা বেগমের পিতৃস্থান , খান বাড়ি৷ বেশ সুনামধন্য পরিবার তার মৌলভীবাজার জেলার চেয়ারম্যান নরায়ুন মজুমদারের সাথে, জবেদা বেগমের বাবা হুশিয়ার সাহেবের খুব ভালো বন্ধুত্ব৷ তার উপর মৌলভীবাজারের সুনামধন্য রেস্টুরেন্ট খান বাড়ির মানে হুশিয়ার সাহেবের! এবং সাথে তাদের বেশকিছু মিষ্টিজাতীয় জিনিসের বিজনেস রয়েছে৷ পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র বোন এবং হুশিয়ার সাহেব- জয়তুন বেগমের একমাত্র কন্যা হিসেবে জবেদা বেগম ছোট থেকেই ভালোবাসায় বড়ো হয়েছেন। আদরের মেয়ে জামাই হিসেবে মোস্তফা সাহেব সেই আদরে ভাগ বসিয়েছেন৷ তাকে একপ্রকার মাথায় তুলে রাখা হয়৷ ঠিক তাদের দুজনের ভাগ এসেছে তন্ময়ের কাঁধে৷ সে তার নানাবাড়ির চোখের মনি। তেমনই শাবিহা। তাদের মূল্য সেখানে অপরিসীম৷
গাড়ি মৌলভীবাজার মনু নদীর তীরে এসে পৌঁছেছে। কাঁচ নামিয়ে অরু মাথা বের করে দিয়েছে জানালা দিয়ে৷ হুড়মুড়িয়ে চোখমুখে বাতাস ছুঁয়ে গেল। সম্পুর্ন নিরজন চারপাশ। কাকপক্ষীও নেই কোথাও৷ গাড়ি থেকেই অরু বড়ো নদীর এক ঝলক পেয়েছে৷ রাতের চাঁদের আলোয় জ্বলজ্বল করছে নদীর পানি। নদীটাকে ঘিরে আছে উঁচুনিচু গাছ। অরুর ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে নেমে যেতে। দৌড়ে ছুটে যেতে নদীর সামনে৷ নগ্ন পায়ে চারপাশে হাঁটতে৷ দু’একবার পা ভেজাতেও মন চাইল। কিন্তু এতরাত করে এটা কখনোই সম্ভব নয়৷ এদিকে তন্ময়ের নানাবাড়ি থেকে সমানে কল আসছে৷ এখনো কেন তারা পৌঁছোয়নি৷ পুরো বাড়ি তাদের অপেক্ষায় বসে৷ এমতাবস্থায় মনু নদীর তীর পর্যবেক্ষণ করার সময় কই? মন খারাপ করে অরু তাকিয়ে রইলো৷ গাড়ি চলছে অরু নদীর চারপাশ দেখছে৷ শুনেছে মনু নদী বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার একটি নদী৷ এই নদীর দর্শন করতে বিভিন্ন জেলা, দেশের মানুষ আসে। অরু ভাবছে কাল সকাল সে এখানে চলে আসবে। অরুর বিচলিত চেহারা লক্ষ্য করে শাবিহা বলল,
–‘ ভাই নদীর সামনে যাওয়া যাবেনা? ‘
–‘ না! এতরাত করে যাওয়া ভালো না। এখানে প্রায়শই ডাকাতি হয়। সব যায়গায় খারাপ লোক মিলে৷ রিস্ক না নেওয়াই ভালো৷ ‘
শাবিহা অরুর কানে ফিসফিস করে বলল,
–‘ কাল তুই আর আমি আসবো, হ্যাঁ? ‘
অরু খুশি হয়ে গেল। একটিবার নিজ চোখে চারপাশ না দেখলে তার শান্তি মিলবে না। তাই সে দ্রুত গতিতে মাথা নেড়ে বলল,
–‘ আচ্ছা। ‘
উপজেলা শ্রীমঙ্গলের সীমানায় পৌঁছেছে তাদের গাড়ি। বিশ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করেই পেয়েছে বিশাল জমিন নিয়ে তৈরি খান বাড়ি। সাদা রঙে রাঙানো বাড়ি থেকে সদরদরজা অবদি। বাড়ির চারপাশ বড়বড় দেয়াল দিয়ে আটকে। কারুকার্য করা চারপাশের দেয়ালে৷ দেয়ালের উপরে বড়বড় কাঁটা ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর কারণ, রাতবিরেত ডাকাতি, চোরের হামলা হতেই পারে। দেয়ালের বাইর- ভেতর দিয়ে উঠেছে আসমান ছোঁয়া গাছগাছালি। এই রাতের আঁধারে একটি ভুতুড়ে বাড়িও বলা যেতে পারে। ভুতুড়ে বাড়ি বললেও বাড়ির সৌন্দর্য একাংশে ঘাটতি পড়বে না।
সদরদরজার সামনেই একজন সু’সাস্থ্যবান বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে৷ ইনি হুশিয়ার খান। জয়তুন বেগমের স্বামী, জবেদা বেগমের বাবা এবং তন্ময়ের নানা। ঘন্টা ধরে তিনি এখানেই ঘুরঘুর করছেন যেমন বাড়ির ভেতরে মন টিকছে না। গাড়ি দেখে তিনি স্পষ্ট বাংলা ভাষায় আওয়াজ দিলেন ছেলেদের। তবে তাতে সিলেটি টান রয়েই গেল।
–‘ এই আবু বক্কর, শফিক, রাসেল, মোজাহিদ বাইরে আয় তাড়াতাড়ি। ‘
–‘ আব্বা আইসি। ‘
বলতে বলতে মোজাহিদ সাহেব লুঙ্গি পরে বেরিয়ে এলেন। তার পেছনে এসেছে তার বড়ো মেয়ে কলি। উনিশ বছরের যুবতী। অন্যদিন গুলো হলে এসসময় কলি ছেঁড়া কাপড়চোপড় পরেই নিজের ঘরে পড়ে থাকতো। তবে আজকের দিন আর অন্যদিন তো এক নয়। আজকের দিন অন্যদিনের থেকে ভিন্ন। তাই সে সুন্দর ভাবে সেজেগুজে আছে। পরপর শফিক সাহেবও বেরিয়ে এসেছেন। তার সাথে এসেছে স্ত্রী নাজমা। মোস্তফা সাহেব আগে শ্বশুরের কাছে এলেন। জড়িয়ে ধরে বললেন ,
–‘ ভালো আছেন আব্বা? ‘
–‘ আলহামদুলিল্লাহ বাপজান৷ ভালাই আছি। চলো, চলো বাইরে দাঁড়ানোর লাগবো না। ‘
তন্ময়, শাবিহাকে দেখে তাদের বুকে জড়িয়ে নিলেন হুশিয়ার সাহেব। পরপর সালাম জানালেন আনোয়ার সাহেব, ওহী সাহেবকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন অরু, রুবি এবং দীপ্তর। আলাপ-আলোচনার মধ্যে ঢুকছেন ভেতরে। মুজাহিদ সাহেবদের সঙ্গে তন্ময়, অয়ন, আকাশও ল্যাগেজ নিচ্ছে ভেতরে ।
চলবে ~~~~