প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১৬

0
148

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১৬
__________________________
শুক্রবার দিন সকাল সকাল শাহজাহান বাড়িতে হৈচৈ পড়েছে একপ্রকার! কেউ পূর্ব দিক ছুটছে তো কেউ পশ্চিম দিক৷ কেউবা উত্তর কেউবা দক্ষিণ৷ যেমন সুমিতা বেগম এবং জবেদা বেগম রান্নাঘরে রান্নাবান্নায় মহাব্যস্ত। অনেক দূরের রাস্তা পেরোতে হবে তাদের। মাঝরাস্তায় নিশ্চয়ই বাচ্চাদের খিদে পাবে। সাথে বড়োদের ও। তাই বেশকিছু ডিমান্ড করা আইটেমস রান্না হচ্ছে৷ জয়তুন বেগমের জন্য পুষ্টিকর স্যুপও বাড়িতেই রান্না করছেন৷ মোস্তফা সাহেব কিছুক্ষণ আগে এসে সকলের উদ্দেশ্যে বলে গিয়েছেন, নিজেদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুঁছিয়ে নিতে৷ প্রত্যেকজনের একেকটা ল্যাগেজ থাকতে হবে মাস্ট। নাহলে পড়ে দেখা যায়, একজন আরেকজনের ল্যাগেজে নিজেদের জিনিসপত্র ঢুকিয়ে রেখেছে৷ জিনিসপত্র না পেয়ে, হট্টগোল বাঁধিয়ে দিবে তখন৷ তাই আগেই সাবধান করে দিয়েছেন সবাইকে, নিজেদের ল্যাগেজ ব্যবহার করতে৷ এবং সবাই নিজেদের ল্যাগেজ তৈরি করতে ব্যস্ত৷ যেমন রুবি তার সাদা কামিজের ওড়না পাচ্ছে না৷ এটা তার কোন বোনের আলমারিতে চলে গেছে কে জানে! সে দৌড়ে দৌড়ে সকলের রুমের আলমারি চেইক করছে৷ অবশেষে ওড়না খুঁজে পেয়েছে তার মায়ের আলমারিতে৷ ওড়না নিয়ে নিজের রুমে দৌড় লাগিয়েছে। অনেক কাজ আছে! জিরিয়ে নেবার সময় নেই হাতে।
এদিকে দীপ্ত ছোট প্যান্ট পরে মুফতি বেগমের পেছনে দৌড়াচ্ছে ক্যামেরার জন্য৷ ক্যামেরা সে ভেঙে ফেলে বিদায় সেটা দীপ্তর ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখেন মুফতি বেগম৷ দীপ্ত বারবার বলে চলেছে,
–‘ সাবধানে রাখবো৷ ভাঙব না একদম৷ বের করে দাও মা! ‘
–‘ হাতের কাজ শেষ করতে দিবি তো নাকি? ‘
–‘ আগে দিয়ে যাও৷ নাহলে পড়ে ভুলে যাবো৷ ‘
–‘ তুই ভুলে যাবি তাও ক্যামেরার কথা? ‘
মুফতি বেগম চোখ উল্টিয়ে নিজের রুমের দিক রওনা হলেন৷ ক্যামেরা বের করে না দেওয়া অবদি এই ছেলে তাকে শান্তি দিবে না।
ওদিকে আকাশ নিজের পার্সোনাল ডিজাইনিং ক্যাপ খুঁজে পাচ্ছে না৷ জিন্স-প্যান্টের সাথে ক্যাপটা মারাত্মক দেখাবে, তাই না? ভাবতেই আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো ক্যাপের জন্য৷ সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজে ক্যাপ পেয়েছে শাবিহার রুমে৷ শাবিহা ধুয়ে শুঁকতে দিয়েছে৷ আকাশ আসমানের আকাশ ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
–‘ এই তুই কি করে ফেললি শাবিহা! আমার ক্যাপটা খেয়ে দিলি? ‘
–‘ আশ্চর্য! আমি কি জানি নাকি এটা রঙ তুলিতে আঁকিবুঁকি করা ক্যাপ! আমিতো ধুয়ে দিয়েছিলাম ভালো মনে। ‘
–‘ ছাতার মাথা! তুই জানিস এটা আমি কতটা সময় নিয়ে এঁকেছিলাম? ‘
–‘ কিভাবে জানব না বললে? ‘
–‘ তোর জানতে হবেও না! ভাগ! ‘
দুঃখ বেদনা নিয়ে আকাশ বেরিয়ে গেল৷ এই ক্যাপ এখন বাদ! আজ, এখনই সে ক্যাপ কিনতে যাবে৷ ক্যাপ ছাড়া গ্রামে যাবেনা, ব্যস্।
জয়া বেগম তন্ময়ের ল্যাগেজ গোছাচ্ছেন। ছেলেটা আর্জেন্ট কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। ফিরতে দেরি হবে৷ তখন আর ল্যাগেজ গোছানোর সময় কই? তাই তিনি নিজেই ছেলের ল্যাগেজ গোছাচ্ছেন। অরু তার পাশেই প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে৷ অল্প একটু গরম ভাতের সাথে আলুভাজি! খাচ্ছে আর জবেদা বেগমকে
বলছে,
–‘ বড়ো মা ওই মেরুন রঙের শার্টটা নাও৷ ‘
–‘ হ্যাঁ এইটা খুব সুন্দর৷ ‘
–‘ জিন্সের প্যান্ট নিবে না? এটা বেশ ইউনিক! ‘
–‘ তন্ময় এটা পরেনা তো! ‘
–‘ তুমি নিলে না পরবে৷ নাও নাও! ‘
অরু নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাপড়চোপড় সাজেস্ট করছে৷ জবেদা বেগম তাই ল্যাগেজে নিচ্ছেন৷ অরু মনে মনে ভীষণ খুশি৷ এগুলো সব তার পছন্দের কাপড়চোপড়৷ গ্রামের সাতদিন তন্ময় শুধু তার পছন্দের কাপড়চোপড় পরবে।

শাবিহা বেশ চিন্তায় পড়েছে৷ সে এখনো সিলেট যাওয়ার কথা অয়নকে বলেনি৷ ছেলেটা কি রিয়েকশন দিবে? রেগে যাবে নাকি অভিমান করবে? চিন্তায় মগ্ন সে ল্যাগেজ গোছাচ্ছে৷ আঁড়চোখে কয়েকবার ফোনের দিক তাকাল৷ এখনো কোনো মেসেজ বা কল করেনি। শাবিহার হৃদয় বিষন্ন হয়ে উঠছে। পরে বিষয়টি জানলে অয়ন খুবই কষ্ট পাবে৷ দ্রুতভাবে সে সেলফোন তুলে সঙ্গে সঙ্গে অয়নকে কল করলো৷ আন রিচেবেল বলছে! অয়নের দ্বিতীয় সিমে কল করলো৷ এটায় কল ঢুকেছে৷ শাবিহা হ্যালো বলতে যাবে পূর্বেই একজন নারীর কন্ঠ ভেসে এলো,
–‘ হ্যালো কে? ‘
শাবিহার শ্বাসপ্রশ্বাস থেমে গেল৷ গলাটা চেনাচেনা লাগছে৷ অয়নের মায়ের কন্ঠ না? ওপাশ থাকে আবারো বলা হলো,
–‘ অয়ন ঘুমিয়ে৷ পরে কল করুন। ‘
কল কেটে গেল৷ শাবিহার হৃদপিণ্ড শান্ত হলো কিছুটা৷ ফোন রেখে গোসল করতে গেল৷ এসে সেলফোনে উঁকি মারল, না কল ব্যাক আসেনি।এখনো ঘুমিয়ে! ছেলেটা না বিজনেস করে? এই বিজনেস করার নমুনা! সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাচ্ছে, অথচ তিনি এখনো ঘুমিয়ে৷ অবশ্য ঘুমাবেই তো৷ সারারাত শাবিহাকে জ্বালাতন করেছে৷ কল কাটবে না তো কাটবে না৷ মধ্যরাত পর্যন্ত শাবিহাকে ফোন কানে রাখতে হয়েছে৷ ভাবতে বসেই অয়নের কল ব্যাক এলো। ঘুমন্ত কন্ঠ৷ যেমন এখনো বিছানায় চোখ বুঝে শুয়ে৷
–‘ ফ্রেশ হয়ে কল ব্যাক করি? ‘
শাবিহা সিলেটের কথা বলতে নিয়ে থেমে গেল৷ আরে পড়ে ব্যাক করবে মানে? মাত্র দু-এক ঘন্টা বাকি৷ তারপর তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হবে৷ শাবিহা ভাবলো ভালোই হয়েছে। পড়ে আর তাকে দোষারোপ করতে পারবে না৷ সে সাফসাফ বলে দিবে, ‘ তোমাকে কল করে বলতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তুমি শুনতে চাও নি। ‘
কিন্তু মনেমনে শাবিহার খারাপ লাগছে৷ অয়নকে রেখে তার যেতে ইচ্ছে করছে না৷ সপ্তাহ খানের দেখাসাক্ষাৎ হবেনা, বিষয়টি আসলেই বেদনাদায়ক!
শাবিহা কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে একটি মেসেজ পাঠাল অয়নকে, ‘ সিলেট যাচ্ছি পরিবারের সাথে সপ্তাহ খানেকের জন্য। সাবধানে থেকো! ‘
মিনিট পাঁচেক পর অয়নের ছোট্ট জবাব এলো,
‘ ওকে! ‘
শাবিহার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো যেমন। মাত্র ওকে? ব্যস? আর কিছুনা? কোথায় অয়ন হন্তদন্ত ভঙ্গিতে তাকে কল করবে! চিন্তিত সুরে জানতে চাইবে, হঠাৎ সিলেট কেন যাচ্ছে ইত্যাদি! অথচ ছেলেটা শুধু লিখেছে ওকে? শাবিহা ভাবলো অয়ন নিশ্চিত এখনো ঘুমের ঘরে৷ নাহলে এমন রিপ্লাই তার অয়নের হতেই পারেনা৷ একদম না!
___________
তন্ময় ফিরেছে যখন তখন সবাই নিজেদের ল্যাগেজ নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে৷ সকলে তৈরি! এখন তন্ময় রেডি হলেই বেরিয়ে পড়বে! মোস্তফা সাহেব হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে বললেন,
–‘ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে এসো৷ ল্যাগেজ গাড়িতে তোলা হোক তাবত! ‘
তন্ময় মাথা দুলিয়ে উপরে চলেছে৷ তন্ময়ের পেছন পেছন দীপ্ত ছুটলো৷ সে কালো প্যান্টের সাথে সাদা টি-শার্ট পরেছে৷ গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে মাথায় সানগ্লাস দিয়েছে। আপাতত তন্ময়ের পেছন ছুটছে ঝাকড়া মাথার চুলগুলো স্যাট করতে এবং পারফিউম দিতে। তন্ময় রুমে ঢুকেই ওয়াশরুম ঢুকে গেল৷ সেই মুহুর্তেই অরু উঁকিঝুঁকি মারল৷ সে সম্পুর্ন রেডি৷ আনোয়ার সাহেবের শার্টের সাথে মিলিয়ে, নেভি ব্লু কামিজ পরেছে। ব্লু রঙের সানগ্লাস মাথায় দিয়ে রেখেছে। উঁচু জুতো জোড়া খটখট শব্দ তৈরি করছে। তন্ময়কে চারপাশে দেখতে না পেয়ে রুমে ঢুকে গেল৷ বাথরুম থেকে শব্দ আসছে। নিশ্চয়ই গোসল করছে? অরু আলগোছে সেখানে ওঁৎ পেতে রইলো। পেছন থেকে দীপ্ত পারফিউম শরীরে দিতে নিয়ে বলল,
–‘ এমন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছ যে? ‘
অরু ভয় পেয়ে ধীর স্বরে, ‘ আল্লাহ গো! ‘ বলে কেঁপে উঠলো৷
–‘ তুই কখন এলি?’
–‘ অনেক আগেই৷ কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে পাবেনা কারণ তন্ময় ভাই ছাড়া তোমার চোখে আর কেউ কি আছে? ‘
অরু চোখজোড়া বড়সড় করে বলল,
–‘ কীসব বলছিস? ‘
–‘ আমি সব জানি হি হি! ‘
দীপ্ত চিকন সুরে গান গেয়ে দুলতে দুলতে চলে গেল৷ অরুর ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে এসেছে৷ আঁড়চোখে বাথরুমের দিক তাকিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো৷ আবার উঠে দাঁড়ালো। এভাবে বসে থাকা ভালো দেখায় না বলে বাইরে চলে এলো৷ কিছুক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রুমে চলে এলো৷ নিজেকে আয়নায় পর্যবেক্ষণ করে নিল! সবকিছু নিয়েছে নাকি চিন্তাভাবনা করলো৷ হ্যাঁ সব নিয়েছে৷ ল্যাগেজ ধরে অরু বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার সময় আবারো উঁকি দিল। তন্ময় শার্ট পরছে৷ তন্ময়ের সুঠাম দেহের কিছু অংশ দেখে লজ্জা পেল৷ দ্রুত পায়ে নিচে চলে এলো। এভাবেও তন্ময়কে চুমু দেবার পর থেকে অরু ভীষণ লজ্জা পেতে শুরু করেছে৷ সে আগের মতো তন্ময়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা৷ হৃদয় কাঁপে!

মোট চারটি গাড়ি নেওয়া হয়েছে৷ দুটো বড়ো গাড়ি এবং দুটো ছোট গাড়ি৷ বড়ো গুলোর মধ্যে মুরব্বিরা যাবেন৷ ছোট দুটোর মধ্যে বাচ্চারা। অরু ছোট একটা গাড়ির মধ্যে উঠতে গিয়ে অয়নকে দেখল। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাইকে উঠছে। পরনে জিন্সপ্যান্ট – শার্ট! অরু মুহুর্তেঅ দৌড়ে বাইকের সামনে এসে পৌঁছাল৷ অরুর দেখাদেখি দীপ্তও ছুটে এসেছে। তাদের কিছুটা সামনেই মোস্তফা সাহেব এবং ওহী সাহেব দাঁড়িয়ে৷ অয়ন এখনই হেলমেট পড়ে বাইক স্টার্ট করবে, এমন ভাব। অরু দ্রুত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
–‘ কোথায় যাচ্ছ অয়ন ভাইয়া? ‘
–‘ শহরের বাইরে! আম্মু আব্বু বিজনেস ট্যুরে গেছেন। একলা অনুভব করছিলাম বিদায় ভাবলাম কোথাও থেকে ঘুরে…. । ‘
আনন্দে অরুর চোখজোড়া জ্বলছে করছে। মাঝপথে অয়নকে থামিয়ে বলল,
–‘ আমরা সিলেট যাচ্ছি সবাই মিলে৷ তুমি যাবে আমাদের সাথে? ‘
–‘ এটা কীভাবে হয়? তোমরা পরিবার মিলে যাচ্ছ! আমি বাইরের লোক কেমন দেখাবে? ‘
অরু মোস্তফা সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল,
–‘ চাচ্চু দেখ না! তুমি একটু বুঝিয়ে বলো ত! আমরা আমরাই তো তাই না? একা একা অয়ন ভাইয়া কোথায় ঘুরবে? আমাদের সাথেই চলুক। ‘
মোস্তফা সাহেব এগিয়ে এসে অয়নের কাঁধে হাত চেপে হেসে বললেন,
–‘ চলো আমাদের সাথে৷ তুমি এলে ভালো লাগবে৷ ‘
–‘ কিন্তু… ‘
পেছন থেকে আকাশ এসে বলল,
–‘ আরে কীসের কিন্তু ব্যাটা? চল আয় একসাথে
যাবো! ‘
অয়ন লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকে বলল,
–‘ আপনাদের সমস্যায় ফেললাম তাহলে! ‘
–‘ কোনো সমস্যা নেই! ‘

আনোয়ার সাহেব গাড়িতে উঠতে নিচ্ছিলেন। হুট করে মন পড়লো তিনি সেলফোন বিছানায় ফেলে এসেছেন। অরু তার সামনেই দাঁড়িয়ে৷ তাই অরুকেই বললেন,
–‘ আম্মু দৌড়ে সেলফোন আনতে পারবে না? ‘
–‘ খুব পারবো! ‘
বলতে বলতে অরু দৌড় লাগালো৷ ভেতরে ঢুকতেই দেখল তন্ময় নামছে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে৷ অরু আঁড়চোখে তাকিয়ে আনোয়ার সাহেবের রুমের দিক ছুটলো। সেলফোন সহ ফিরতে নিয়ে তন্ময়কে যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে এটা সে মোটেও আশা করেনি। অরু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে। তন্ময় সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে৷ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে সে যাবে কীভাবে? হুট করে তন্ময় পকেট থেকে রুমাল বের করে এগিয়ে আসলো৷ অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে অরু কিছুটা পিছিয়ে গেল৷ তার মুখশ্রীর থুতনি জুড়ে কালি লেগে আছে৷ হয়তো কাজল! তন্ময় সেখানটাই মুছতে ধরলো৷ অল্প ঘষতেই অরুর মেক-আপ উঠে এলো। রুমালে লেগে থাকা হলদে মেক-আপ দেখে তন্ময় বাকরুদ্ধ! অরু হাসার চেষ্টা করে বলল,
–‘ এভাবে ডলাডলি করলে ফাউন্ডেশন তো
উঠবেই! ‘
–‘ দেখি দাঁড়া সোজা হয়ে! এভাবে নড়চড় করছিস কেন!’
মুখ বেঁকিয়ে অরু সোজাসাপ্টা ভঙ্গিতে দাঁড়ালো৷ মনেমনে আওড়াল, আপনি স্পর্শ করলে আমি আর নিজের মধ্যে থাকিনা৷ আপনি কী বোঝেন কিছু? অভিমান পুষে অরু অন্যদিকে তাকিয়ে। সে আবদার করতে চাইলো গাড়িতে তন্ময়কে তার সাথে বসতে দিতে৷ তারপর ভাবলো থাক কি দরকার! এগুলো কিছুই কখনো লোকটা বুঝবে না৷ হঠাৎ চোখ গেল রান্নাঘরের দিক! মুফতি বেগম দু’হাতে টিফিনবাক্স নিয়ে বেরোচ্ছেন। তন্ময়ও দেখেছে৷ অরুর থুতনি মুছে মুফতি বেগমের দিক এগিয়ে গেল৷ তার থেকে টিফিনবাক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়লো৷

শাবিহা বেশ চিন্তিত৷ অয়নের চিন্তায় মাথা ফেটে যাবার জোগাড়৷ বেশ কয়েকবার সেলফোন চেইক করেছে। কোনো মেসেজ নেই৷ চিন্তিত শাবিহা যখন অয়নকে আকাশের সাথে হাসি তামাসা করে গাড়িতে উঠতে দেখল, মুহুর্তেই পাথর বনে গেল। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো৷ অয়ন হুট করে ফিরে চোখ মেরে আবারো ভদ্রলোক সেজে থাকলো। শাবিহা হতভম্ব! দীপ্ত পাশ থেকে খোলাখুলি আলোচনা করছে অয়নের সম্পর্কে। সবকিছু শুনে শাবিহা বুঝতে পারল, তার ঘন্টা খানেকের চিন্তা কোনো কাজেরই না৷ এই ছেলে আগ থেকেই সব জেনেশুনে এই চাল পেতে রেখেছে৷ কতটা সেয়ানা! শাবিহা রাগ করে মুখ ফুলিয়ে রাখল। কথা নেই তার ওই ছেলেটার সঙ্গে!

চারটে গাড়ি একসাথে রওনা হয়েছে সিলেটের উদ্দেশ্যে৷ ঘুরেফিরে সবশেষে অরু নিজেকে তন্ময়ের গাড়িতেই পেল। তন্ময়ের পাশে! খুশি হবে নাকি ব্যথিত, বুঝতে পারলো না! তবে অরু খুব খুশি৷ পরিবারের সাথে ঘুরতে যাওয়া তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি! আর সিলেট ঘুরবে ভেবে তার সর্বাঙ্গ জুড়ে প্রত্যাশা জেগে উঠলো৷ জাফলং, মাদবকুন্ড জলপ্রপাত, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চায়ের শহর মৌলভীবাজারও অরু ঘুরতে চায়৷ মোট কথা, সিলেটের সব সুন্দর সুন্দর জায়গা সে ঘুরতে চায়৷

চলবে ~~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here