প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১৫

0
142

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১৫
__________________________
হলুদ প্রোগ্রাম থেকে ধরে অরু কানে দুল পরছে৷ দুদিন হয়ে গিয়েছে। এতো বড়বড় দুল কানে চব্বিশ ঘন্টা পরে থাকা যায় নাকি? কিন্তু তবুও অরু পরে থেকেছে৷ তন্ময়ের পরিয়ে দেওয়া এই দুল সে এই জীবনে আর খুলবে না শপথ করেছে৷ এখন কান ছিঁড়ে পড়ে যাক, নাহলে পচে যাক। সুমিতা বেগম কান টেনে অরুকে রুমে এনেছেন৷ কানের দুল জোড়া খোলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু খুলতে পারেননি৷ অরু বোয়ালমাছের মতো নড়েচড়ে পালিয়ে এসেছে৷ পালাতে নিয়ে সামনে পড়লো আনোয়ার সাহেবের। আনোয়ার সাহেবের হাতে তিনটা কামিজ। সেগুলো অরুর হাতে দিয়ে বললেন,
–‘ দুটো আপুদের দিয়ে একটা তুমি নাও৷ ‘
আনোয়ার সাহেব প্রায়শই এটাসেটা নিয়ে আসেন নিজের মেয়েদের জন্য। বলা যায় এই বাড়িতে একজনের জন্য কিছু আনা হয়না৷ সবাইকে নিয়ে কাপড়চোপড়, খাওয়া-দাওয়া ইভেন ঘুরাঘুরিও করা হয়৷ অরু শাবিহার রুমে একটা কামিজ এবং রুবির রুমে একটা কামিজ রেখে তৃতীয়টা সে নিয়ে নিজের রুমে এসেছে৷ কাল সকালেই বানাতে দিয়ে আসবে৷ সিলেটে অরু এই কামিজ পরেই যাবে৷

সন্ধ্যায় তন্ময়ের কাছে পড়তে বসে, অরু বারংবার কানের দুল জোড়া ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাচ্ছে৷ কিন্তু তন্ময়ের কোনো সাড়াশব্দ নেই৷ সাড়াশব্দ কেন করছে না? তন্ময় কী জানে কতটা ব্যথা সহ্য করে রয়েছে এই দুলের জন্য? এইযে ব্যথায় অরু কানে হাত ছোঁয়াতে পারছেনা৷ কার জন্য? তার সামনে গম্ভীরমুখে বসে থাকা, এই মহারাজার জন্য৷ অথচ মহারাজার ধ্যানজ্ঞান কিছুই নেই৷ কলম ফেলে দেবার ভঙ্গিমা করে অরু তন্ময়ের দিক ঝুকে গেল৷ তার কানের দুল ঠিক তন্ময়ের মুখের সামনে। কলম তুলে সোজা হয়ে বসলো৷ না তন্ময়ের কোনো রিয়েকশন নেই।কেন? নিজেকে আর সামলাতে পারছেনা না। অরু এবার সোজাসাপটা প্রশ্ন করলো,
–‘ কানের দুল আমার জন্য কিনেছেন, তাই না? ‘
তন্ময় বইয়ের পৃষ্ঠা উলটপালট করে দেখছে। অরুর প্রশ্নে মাথা তুলে তাকালো না অবদি, প্রশ্নের জবাব দিবে তো দূরের বিষয়! অরু পুনরায় বলল,
–‘ বলেন না! ‘
জবাবে তন্ময় হুট করে পাশে রাখা বেত দিয়ে অরুর হাতে মেরে বসলো৷ ব্যথিত হাত ধরে অরু হাসফাস করতে লাগলো৷ যেখানে লেগেছে বেতের বারি সেখানটায় লাল হয়ে গিয়েছে মুহুর্তেই। চোখজোড়া জলে টলমল করছে তার। হাত ডলতে ডলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো৷ যেমন সে এখনই চলে যাবে৷ কিন্তু তন্ময়ের, ‘ বোস। ‘ শুনে পুনরায় বসে পড়লো নিজ যায়গায়৷ এবার মনোযোগ পড়াশোনায় দেবার চেষ্টা করছিল৷ হঠাৎ তন্ময় হাতের কলম রেখে অপ্রস্তুত অরুর দিক নজর রেখে বলল,
–‘ এসব এখনো পরে আছিস কেন? ‘
–‘ সুন্দর লাগছেনা? ‘
–‘ খোল! ‘
–‘ না খুলবো না৷ ‘
তন্ময় শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো৷ তন্ময়ের শান্ত নজর অনেকটা সাদা ফকফকা আকাশ থেকে হুট করে বজ্রপাত শুরু হয়, ঠিক তেমনটাই লাগছে। অরুর ঘাড়ের পশম দাঁড়িয়ে গিয়েছে৷ এভাবে তাকিয়ে থাকার কী আছে? চোখ নামিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
–‘ আপনি খুলে দিবেন? ‘
অরু ভেবে রেখেছে তন্ময় আকাশ ফাটিয়ে ধমক দিবে৷ নাহলে মুখ ঘুরিয়ে ফেলবে৷ তাকে পাত্তাই দিবেনা৷ কিন্তু আজ তাকে ভড়কে তন্ময় বলল,
–‘ সামনে আয়৷ ‘
অরু উঠে এসে তন্ময়ের সামনে দাঁড়ালো৷ চেয়ারে বসেও তন্ময় তার মাথা সমান। কতো লম্বা! কানে তন্ময়ের আঙুল লাগতেই অরু অস্পষ্ট স্বরে আর্তনাদ করে উঠলো৷ কান দুটো লাল হয়ে গিয়েছে৷ বিষদায়ক যন্ত্রণা এযেন! তন্ময় দাঁতে দাঁত চেপে অরুকে ধমকাতে নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো৷ খুব নরম ভাবে খোলার চেষ্টা করছে। অরু তখন ভ্যাবলার মতো তন্ময়ের গম্ভীর মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত৷ তন্ময়ের ডান গালে একটা লাল তিল৷ খুব আকর্ষণীয় ভাবে ফুটে আছে তার উজ্জ্বল মুখমন্ডলে। অরুর ইচ্ছে করছে সেটা ছুঁয়ে দিতে৷ এবং সে হুট করেই তিল’টা ছুঁয়ে দিল৷ ছুঁয়ে নিজেই কেঁপে উঠলো। তন্ময় কিছুই বললো না৷ সে তখনো সিরিয়াস হয়ে অরুর দুল খুলছে৷ তন্ময় কিছু বলছে না বলে অরু আরও সাহস পেয়ে বসলো। মুহুর্তেই মনে আরেকটি ইচ্ছে জাগলো। এখন ইচ্ছেটাকে পূর্নতা দিবে নাকি না? দোটানায় ভুগতে থাকা তার চোখজোড়া তখনো তন্ময়ের চেহারায়৷ বুকের ধুকপুকানি অগ্রাহ্য করে অরু দ্রত গতিতে তন্ময়ের তিলের যায়গাটিতে চুমু খেয়ে বসলো৷ তন্ময়ের দুল খুলতে থাকা হাতটি কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেল৷ পিনপতন নীরবতা চারদিকে৷ শুধু অরুর ঘনঘন নিশ্বাস নেওয়া শোনা যাচ্ছে। বুকের ভেতর তোলপাড় করতে থাকা হৃদয় বিস্ফোরণ ঘটাবে যেমন। কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক হারিয়ে এহেন কাজ করে অরু ভয়ে গুটিয়ে আছে৷ দৌড়ে যে পালাবে তাও অসম্ভব! ভয়ে ভয়ে পুনরায় তাকাল তন্ময়ের দিক৷ তন্ময় তখন তার বাম কানের দুল খুলছে৷ অরুর দিক না তাকিয়েই গম্ভীর স্বরে বলল,
–‘ মাইর খাবি? ‘
–‘ না না! আর করবো না৷ ‘
মুখে এক বললেও অরুর মন বলছে এই সুযোগে তন্ময়ের পুরো মুখ জুড়ে চুমু খেয়ে নিতে৷ এইযে এভাবে গম্ভীরমুখ করে বসে আছে৷ এই গম্ভীরমুখ দেখলেই তার প্রেমপ্রেম পায়৷ ইচ্ছে করে…
–‘ আহ! আস্তে ব্যথা পাই! ‘
অরু এতক্ষণ প্রেমের নদীতে ডুবে ছিলো বলে ব্যথা নামক অস্তিত্ব ভুলে বসেছিল৷ এখন যখন বাস্তবে ফিরেছে তার চোখ ভিজে উঠেছে।
–‘ আপনি ইচ্ছে করে ব্যথা দিচ্ছেন!’
পরপর অনুভব করলো তন্ময়ের শক্ত হাতের সেই নরম স্পর্শ৷ যেমন একটু আগে ব্যথা দেওয়া লোকটা ইনি নন। অরু ভেজা নয়নে তাকিয়ে রইলো। ব্যথিত কন্ঠে ডাকল,
–‘ তন্ময় ভাইয়া! ‘
–‘……… ‘
–‘ এইযে তন্ময় ভাই! ‘
–‘……..’
–‘ কথা বলবেন না? ‘
–‘….. ‘
–‘ আচ্ছা আর এমনটা করবো না৷ আমার কী দোষ বলুন। সব দোষ আপনার গালের তিলটার৷ এটাই আমাকে বারবার ডাকছিল! এই তিলটাকে শাস্তি হিসেবে একটা চিমটি দিয়ে দেই? ‘
অরু চিমটি দেবার সুযোগ পেল না৷ পূর্বেই তন্ময় তার গাল শক্ত করে টেনে ধরেছে৷ গালের ব্যথায় অরু আর্তনাদ করে উঠলো৷ সাদা গাল লাল করে দিয়ে তন্ময় চলে গেল৷ অরু গালে হাত চেপে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ আলগোছে ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে দিলো৷ পরপর লজ্জায় গাল দুটো তার লাল হয়ে গেল৷ বোকার মতো হেসে ভাবতে বসলো, এভাবে তন্ময়ও তো তাকে চুমু খেতে পারে ? সে খুব করে চায় তন্ময় তাকে চুমু খাক! আদর করুক! কেন করেনা!

একটি দৈনন্দিন প্রবাদ চারপাশে ঘুরঘুর করে৷ সেটা হলো, আমরা তাদের পাত্তা দেইনা, যারা আমাদের পাত্তা দেয়৷ আমরা তাদেরই পাত্তা দেই, যারা আমাদের পাত্তা দেয়না৷ এই প্রবাদটি আজকাল অরুর মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে যন্ত্রের মতো! তন্ময় তাকে পাত্তা দেয়না অথচ তার তন্ময়কেই চাই। এরজন্য আজ সে কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না৷ চোখ বুঝলেই তন্ময়কে দেখছে৷ চোখ খুললেও তন্ময়কে দেখছে৷ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো৷ জানালা দিয়ে দমকা বাতাস আসছে৷ আঁধার রাতের আকাশে চাঁদের রাজত্ব চলছে৷ ছোটছোট তারারা যেমন সৌন্দর্যের প্রতিক চাঁদকে পাহারা দিচ্ছে৷ অরু উঠে জানালার সামনে দাঁড়ালো৷ একমনে তাকিয়ে রইলো আকাশের পানে৷ কানে ভেসে আসছে ধীর শব্দের কথাবার্তা৷ অরু নিচে তাকাল। গার্ডেনের লাইটগুলো জ্বলছে৷ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুটো চেয়ারে কেউ বসে৷ ভালোভাবে দেখতেই চিনতে পারলো তন্ময় এবং মোস্তফা সাহেবকে। অরু দেয়াল ঘড়ির দিক নজর দিলো৷ ঘড়ির কাঁটা রাত একটা পঁয়তাল্লিশে। এই গভীর রাতে তারা কি নিয়ে আলাপ করছে? সেও নিচে যাবে কি-না? চিন্তাভাবনার মধ্যেই অরুর পা জোড়া কাজ করতে শুরু করেছে একান্তই৷ রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো৷ আশ্চর্যজনক ভাবে ড্রয়িংরুমে দীপ্ত বসে৷ এখনো ঘুমোতে যায়নি ছেলেটা? অরু ধমকাতে যাবে পূর্বেই দেখল মুফতি বেগম ট্রে নিয়ে বাইরে যাচ্ছেন। অরু দীপ্তকে ছেড়ে সদরদরজা খুলে বেরিয়ে গেল। সামনেই আনোয়ার সাহেব, ওহী সাহেব দাঁড়িয়ে৷ মুফতি বেগম ট্রে’র থেকে সকলকে একেকটা চায়ের কাপ দিচ্ছেন। অরুকে দেখে আনোয়ার সাহেব বললেন,
–‘ আম্মু এখনো জেগে যে? ‘
–‘ ঘুম আসছেনা বাবা৷ ‘
বলতে বলতে বাবার কোলে ঢুলে পড়লো৷ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সকলের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলো ঠিক কি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে৷ শুক্রবার তারা
সিলেটের উদ্দেশ্যে বেরোবে৷ মাসখানেক থাকা সম্ভব নয়৷ তবে সাতদিন থাকবে৷ মানে এক সপ্তাহ! শুক্রবার আসতে আর মাত্র চারদিন। অরু খুশিতে গদগদ। সে এখনই ভাবতে বসেছে কি কি নিবে। ভাবতে ভাবতে তন্ময়ের দিক তাকাল৷ পায়ের উপর পা রেখে বসে আছে৷ ট্রাউজার আর টি-শার্ট পরা৷ তন্ময়কে সবসময় ভালো দেখায়৷ সন্ধ্যায় করা নিজের কাজটি মনে করে, অরুর গাল দুটো লাল আভায় রাঙিয়ে গেল৷ বারংবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো চুমু খাওয়ার দৃশ্যটি৷ বলতেই হয় তার ভীষণ সাহস! অবশ্য সাহস রাখতে হয় এমন পুরুষকে পছন্দ করলে৷ আনমনে ভেবে অরু মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। তন্ময় তার দিক তাকাতেই নিজের বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে হেসে উঠলো ৷ এখন অরুকে দেখতে লাগছে স্নিগ্ধ আঁধারের প্রেয়সী! চন্দ্রিমা আকাশের আঁধার রাতের স্নিগ্ধ প্রেয়সী।
____________
শাবিহা বড়সড় একটি ভুল করে ফেলেছে৷ ভুলটা হচ্ছে অয়নকে তুমি করে তাকে সম্বোধন করতে দেওয়া৷ আজকাল অয়নের কথার বুলি ফুটেছে৷ তুমি, তুমি, তুমি সারাদিন করতেই থাকে৷ তুমি সম্বোধন করে শাবিহার হৃদয় নিয়ে খেলছে একপ্রকার। তুমি বলে ছেলেটা সাহসী হয়ে গিয়েছে৷ কীসব উদ্ভট কথাবার্তা বলে৷ মুখে লাগাম রাখা যেন ভুলে বসেছে৷ শাবিহা বেশ কয়েকবার ধমক দিয়েছে৷ তবে এখন ধমকে অয়ন একদম ভয় পায়না৷ মাথায় চড়ে বসেছে একপ্রকার৷ তাই শাবিহা একটা ভয়ংকর শাস্তি তৈরি করেছে অয়নের জন্য৷ সেটি হলো টোটালি দুদিন কোনোপ্রকার কথা অয়নের সাথে বলবে না৷ এই দুদিন অয়নকে নিজের মুখও দেখতে দিবেনা৷ এরজন্য লাগলে সে বাড়ির গাড়ি ব্যবহার করবে। এইতো সকাল সকাল আবারো কল করছে৷ এখন সে অফিস যাবে৷ আর অয়ন যাবে ভার্সিটি৷ তাহলে এই সময়টায় কেন কল করছে ছেলেটা? শাবিহা কল ধরলো না৷ তৈরি হয়ে নিবে তখন পুনরায় কল এসেছে অয়নের৷ শাবিহা সেলফোন সাইলেন্ট করে রাখল৷ গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লো৷ যেতে নিয়ে অয়নকে রাস্তার মোরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল৷ চা খাচ্ছে, ভার্সিটির ড্রেস পরে৷ অয়নের গলায় ঝুলানো টাই খানা দেখলেই তার ইচ্ছে করে টেনে ধরতে৷ তবে সুযোগ হয়ে উঠেনি কখনো। নিশ্চয়ই তারজন্য দাঁড়িয়ে ছিলো? শাবিহা মুচকি হাসলো৷ ছেলেটা পারেও বটে। কতটুকু পারে এটাই দেখার বিষয়!

সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরোনোর সময় শাবিহা টপ ফ্লোরের জানালা দিয়ে নিচে তাকাল৷ তার অনুমান মতে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে! আজ স্টেশনের সামনে নয় তার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে৷ শাবিহা সেলফোন বের করলো৷ অয়নের শতাংশ মেসেজ৷ মেসেজ গুলো দেখে বুঝতে পারলো খুব ভয় পেয়েছে অয়ন৷ মাত্র দেড় দিন হয়েছে৷ এতটুকু সময়ে এত ভয় পেতে হয় নাকি? শাবিহা উল্টো ভেবেছিল কালও দেখাসাক্ষাৎ, কথা টোটালি ওফ রাখবে৷ কিন্তু এই ছেলে এখনই দিশেহারা অবস্থায় ঘুরছে৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাবিহা বেরিয়ে এলো৷ নিচে নামতেই অয়ন সামনে এসে দাঁড়ালো৷ চোখমুখ ঘামে ভিজে আছে৷ বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে৷ উত্তেজিত কন্ঠে শুধালো,
–‘ কি হয়েছে? ‘
শাবিহা জবাব দিল না৷ নিঃশব্দে ব্যাগ থেকে রুমাল বের করলো৷ খুব যত্নে অয়নের মুখ মুছিয়ে দিল৷ নাকের ডগায় জমে থাকা ঘাম খুব কৌশলে মুছল৷ তারপর বিনয়ী সুরে বলল,
–‘ কি হবে? ‘
–‘ কল, মেসেজের জবাব কেন দিচ্ছিলেন না? ‘
–‘ ব্যস্ত ছিলাম৷ ‘
–‘ ইচ্ছে করে করেছেন তাই না? ‘
শাবিহা একটি জিনিস লক্ষ্য করেছে৷ অয়ন রাগলে ইদানীং আপনি বলে। নাহলে সর্বক্ষণ তুমি, তুমি করে৷ তারমানে এই পিচ্চি এখন রেগেছে। অয়ন হুড়মুড়িয়ে চলে যাচ্ছে৷ হেসে শাবিহা তার পেছন পেছন চলছে৷ হুটহাট ডাকছে তবে সাড়াশব্দ করছে না৷
–‘ ওই পিচ্চি অয়ন! ‘
অয়ন ঘুরে চোখ রাঙাল৷ শাবিহা শব্দ করে হেসে উঠলো৷ হাসতে হাসতে সে অয়নের হাত ধরলো৷ অয়ন মুহুর্তেই নরম হয়ে গেল যেমন৷ সারাদিনের রাগ, অভিমান নিমিষেই শেষ৷ আঁড়চোখে শাবিহার হাসিমুখ দেখে শান্তি অনুভব করলো৷ তবে পিচ্চি ডাক তার মোটেও পছন্দ হলো না।
–‘ একদম পিচ্চি বলবে না৷ ‘
–‘ পিচ্চি একটা ছোট অয়ন! ‘
বলেই শাবিহা উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো৷ অয়ন ভুরু জোড়া কুঁচকে শাবিহার হাসিমুখের দিক তাকিয়ে৷ হঠাৎ দুষ্টু হেসে মাথাটা শাবিহার মুখের সামনে নিয়ে বলল,
–‘ পিচ্চি বললে কিন্তু চুমু খাব৷ ‘
শাবিহার হাসি বিলুপ্ত হয়ে গেল মুহুর্তেই। চোখমুখ শক্ত করে হনহনিয়ে সামনে চলে গেলো৷ এবার অয়নের হাসার পালা৷ পেছন থেকে উচ্চশব্দে হেসে চলেছে সে৷ হাসতে হাসতে শাবিহার উপর পড়ে যাচ্ছে একপ্রকার! শাবিহার একটু অভিমান হলো বটে৷ ছেলেটা কী জানেনা প্রেমিকাদের যে ছাড় দিতে হয়? এভাবে প্রতিশোধ নিতে হয়না ছোট ছোট বিষয়ে৷ শাবিহার প্রেমিক আসলেই পিচ্চি! কিছুই বোঝেনা৷ বোকা, অবুঝ এবং নাদান প্রেমিক!

চলবে ~~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here