প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১১

0
132

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১১
__________________________

শাবিহা এজ ইউজুয়ালি বাস স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে৷ কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে বেরিয়েছে। আপাতত বাসের অপেক্ষায়৷ সেলফোন হাতে নিয়ে কয়েকবার চেইক করেছে৷ নো মিসডকলস ওর নো ম্যাসেজেস! অয়নের সাথে তার গত বৃহস্পতিবার কথা হয়েছে৷ এবং আজ বৃহস্পতিবার। সাতদিন ধরে তাদের কথা হয়না৷ শাবিহা নিজের মস্তিষ্ককে হারিয়ে মনের কথা শুনে যেচে একটা কল দিতে পারছেনা৷ অবশ্য সে শতসহস্র বার একটা কল দেবার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু তার দ্বারা সম্ভব হচ্ছেনা৷ কিছু একটা তাকে বাঁধা দিয়ে চলেছে৷ হয়তো তার বিবেক। এখনো শাবিহার মনে হয়, অয়ন সম্ভবত কিছুদিন পর নিজের খামখেয়ালীপনা শুধরে নিয়ে দূরে চলে যাবে৷ তাই যথাসম্ভব নিজেকে আঁকড়ে রেখেছে৷ অতল সাগরের গভীরে নিজেকে ভাসতে দিচ্ছে না৷ সামনে বাস এসে থেমেছে৷ শাবিহা উঠে গেল তাতে৷ জানালার সাইডে এসে বসলো৷ সুন্দর বাতাস বইছে৷ আজকের ওয়েদার বেশ রোমান্টিক৷ কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিয়ে আনমনে তাকিয়ে রইলো৷ বাস চলছে, বাতাস বইছে৷ বাস চড়তে শাবিহার সর্বদাই ভালো লাগে৷ ভালোলাগার বিশেষ কারণ জানালার পাশের সিট, এবং দুর্দান্ত বাতাস অনুভব করা৷ হুট করে চোখ গেল নিচে৷ বাসের পাশ দিয়ে একটা বাইক যাচ্ছে৷ বাইকটা একদম তার দিকটাই ফলোআপ করছে৷ একপর্যায়ে হেলমেটের মুখের সামনের কাচটা সরিয়ে মুখ তুলে তাকাল অয়ন৷ হাতের ইশারায় শাবিহাকে নামতে বলছে বাস থেকে৷ শাবিহা কানের ইয়ারফোন খুলে বেক্কলের মতো তাকিয়েই রইলো ৷ অয়ন এবার শব্দ করে চেঁচিয়ে বললো,
– নেমে আসুন!
শাবিহা দ্রুত উঠে দাঁড়ালো৷ হেল্পারকে বললো সে এখানেই নেমে যাবে, বাস থামাতে৷ বাস থামতেই নেমে আসলো৷ অয়নও নিজের বাইক সাইড করে থামিয়েছে৷ শাবিহা এগিয়ে আসতেই অয়ন
বললো,
– এতটা তাড়াহুড়ো করে এসেও আপনাকে বাস স্ট্যান্ডের সামনে পেলাম না৷ আপনার বাসটা ধরতে কতটা পরিশ্রম করেছি জানেন?
হেলমেট খুলে অয়ন বাইক থেকে নেমে এলো৷ শাবিহা বেশ কয়েকবার তাকিয়েছে অয়নের পানে৷ এক সপ্তাহ না দেখেই তার মনে হচ্ছে অয়নকে সে বছর বছর ধরে দেখেনি৷ চোখের সামনে অয়নকে হেসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শাবিহার মনে হলো, সে সপ্তাহ খানিক ধরে এই দৃশ্যটি দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিল৷ ঠিক অয়নের অপেক্ষায় ছিল৷ অয়ন দুষ্টু হাসি এঁকে বলল,
– আমাকে দেখে ইমোশনাল হয়ে পড়লেন নাকি শাবিহা? কান্না পাচ্ছে? আপনি কান্না করতে চাইলে কিন্তু করতে পারেন৷ আমার কাঁধ, বুক সব আপনার জন্য ফ্রি৷ আপনি ইউস করলে মাইন্ড করবো না৷ আমার কাছে আবার রুমালও আছে৷ চোখের পানি মুছিয়ে দিতে পারব৷
শাবিহা জবাব দিলো না৷ তবে তার ঠোঁট জুড়ে হাসি বিচরণ করছে৷ অনুভূতির সাথে একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জেগেছে মনে৷ অয়নকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে৷ সেদিনের বৃষ্টির রাতের মতো৷ শাবিহার চোখে এখনো স্পষ্ট ভেসে উঠে সেদিনের দৃশ্য। অয়নের শান্ত কথাগুলো, তাকে আগলে ধরে রাখা, মাথায় ধীরে ছুঁয়ে চলা। শাবিহা চায় অয়ন তাকে আরেকটি বার ওভাবেই জড়িয়ে ধরুক৷ হুট করে অয়ন শাবিহার গালে স্পর্শ করল। তখনকার দুষ্টু হাসি এখন আর নেই৷
– কী হয়েছে? খারাপ লাগছে?
শাবিহাকে মাথা দোলাতে দেখে চিন্তিত সুরে অয়ন বলল,
– কোথায়? মাথা ঘুরছে? দুপুরে খেয়েছিলেন?
শাবিহার মনে পড়লো সে আজ লাঞ্চ করেনি৷ সকালের পর থেকে এখনো কিছু খায়নি৷ জবাব না পেয়ে অয়ন বলল,
– বাইকে চড়তে পারবেন তো? সামনেই রেস্টুরেন্ট একটা!
শাবিহা উঠে বসলো বাইকে৷ অয়ন হেলমেট পড়ে বাইক স্টার্ট করেছে৷ শাবিহা নিজের দু’হাত অয়নের দুকাঁধে রেখেছে৷ আনমনে দেখে চলেছে অয়নের কাঁধে রাখা তার হাত দুটো৷
—–
তন্ময়ের নানী বাড়ির লোকজন যে হুট করে সিলেট থেকে চলে আসবে, কে জানে? মুফতি বেগম তাড়াহুড়ো করে তাদের ড্রয়িংরুমে বসিয়েছেন৷ বাড়িতে কেউ নেই তিনি আর সুমিতা বেগম ছাড়া৷ কী করবেন এখন? কীভাবে সামাল দেবেন সবকিছু? জবেদা বেগম আর তন্ময় যে আলাদা থাকে, তা তো তারা জানেন না। জানলে তুমুল ঝগড়া হবে৷ পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন জবেদা বেগম৷ যদি শুনে সেই আদরের বোন ঘরবাড়ি ছাড়া থাকে, সবকিছু উলটপালট করে দিবে৷ দেখা যাবে সম্পুর্ন শাহাজাহান বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে গেছে৷ মুফতি বেগম আঁড়চোখে সুমিতা বেগমকে ইশারা করলেন৷ সুমিতা বেগম আড়াল হয়ে ভেতরে এলেন৷ দ্রুত কল করলেন আনোয়ার সাহেবকে৷ খুলে বললেন সবকিছু৷ শুনে আনোয়ার সাহেবও দোটানায় পড়লেন৷ কিছু একটা করবেন বলে কেটে দিলেন৷ এদিকে আজ শাহজাহান বাড়ি এসেছে তন্ময়ের নানী জয়তুন নেছা৷ এবং তন্ময়ের বড়ো মামামামী এবং ছোট মামা মামী, সাথে তাদের ছেলেমেয়েরা তো আছেই৷ জয়তুন বেগম বারবার তার মেয়ে এবং নাতি-নাতনীর কথা জিজ্ঞেস করে চলেছেন৷ মুফতি বেগম বানিয়ে বললেন,
– তন্ময় তো অফিসে৷ শাবিহা এক্সাম দিতে গিয়েছে৷ ভাবী একটু বেরিয়েছে! সবাইকে কল করেছি, এক্ষুনি চলে আসবে৷
জয়তুন বেগম বিড়বিড় করে বললেন,
– আমার ছানাটাকে কল করে আসা উচিত
ছিলো৷
তিনি চশমা ভালোভাবে পড়ে নিজের বাটন ফোন ঝুলি থেকে বের করলেন৷ খুঁজে খুঁজে নিজের নাতির নাম্বারে ডায়াল করলেন৷ রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হয়নি৷ নাতি তার ব্যস্ত ভেবে দ্বিতীয় বার কল করলেন না৷ এরমধ্যে সুমিতা বেগম তাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন৷ টি-টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে তাদের সামনে বসেছে৷ গল্পসল্পের মাধ্যমে তাদের ব্যস্ত রাখার অমায়িক প্রচেষ্টা চলছে৷ আধঘন্টার মাঝে মোস্তফা সাহেব এবং আনোয়ার সাহেব চলে আসেন। বাড়িতে ঢুকেই সালাম জানালেন। জয়তুন বেগম সালামের জবাব দিলেন৷ তারপর কড়াকড়ি দৃষ্টিতে মোস্তফা সাহেবকে পা থেকে মাথা অবদি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে
বললেন,
– এমন শুঁকিয়ে গেছ কেন বাবা? তোমার বউ বাচ্চা তোমাকে ছেড়ে চলে গেলে না এমন শোঁকালে কাজে দিবে৷
মোস্তফা সাহেব কেশে উঠলেন। শ্বাশুড়ির খোঁচা মেরে কথা বলার অভ্যাস আর গেল না৷ তার ছেলেটা ঠিক তার নানির মতো হয়েছে৷ স্বভাবও ঠিক তার মতো পেয়েছে৷ দুজন একই নৌকার মাঝি৷ ঘুরেফিরে এটাসেটা নিয়ে খোঁচাবে মোস্তফা সাহেবকে৷ তিনি এগিয়ে এসে উল্টো পিঠের সোফায় বসলেন৷ প্রশ্ন করলেন,
– আসতে সমস্যা হয়নি তো মা?
– এখান থেইকা এখানে আসতে আবার কীসের সমস্যা।
– শরীর ভালো আছে?
– হু৷ শরীর ভালো দেইখাই তোমার উপর নজর দিতে আইলাম৷ তা কই আমার ছানা? দেখিনা কে?
মোস্তফা সাহেব দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন৷ শ্বাশুড়িকে সত্যিইটাই বলতে হবে৷ কতক্ষনই বা লুকিয়ে রাখতে পারবেন সবকিছু৷ আজ নাহয় কাল তো জেনেই যাবে৷ নিজেকে প্রস্তুত করছেন সবকিছু সত্যি বলার জন্য। নিজের উপর সম্পুর্ন দোষ নিয়ে নিবেন৷ অবশ্য বেশিরভাগ দোষ তারই।
– আসলে মা…
এমন সময় গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল৷ পরপরই তন্ময় দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকছে৷ আশ্চর্যজনক ভাবে পেছনে জবেদা বেগম৷ তাদের দেখে চমকে সম্পুর্ন শাহাজাহান পরিবার৷ মুফতি বেগমের নয়ন জোড়া ছলছল করছে৷ দৌড়ে ভাবীকে ধরতে যাবে পূর্বেই সুমিতা বেগমের টান অনুভব করলেন৷ নিজেকে সামলে পরপরই আলগোছে রান্নাঘরের দিক ছুটলেন৷ এখানে থাকলে তিনি সবকিছু নিজের আচার-আচরণেই বুঝিয়ে দিবেন৷ এদিকে মোস্তফা সাহেব ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছেন নিজের স্ত্রীর দিক তারপর ছেলের দিক৷ তন্ময় আপাতত জয়তুন বেগমের কোলে মাথা
রেখে আছে৷ জয়তুন বেগমের চিন্তিত ভ্রু জোড়া শান্ত হয়ে গেল৷ মনের খটকা গুলো নিমিষেই মিশে গিয়েছে৷ নাতির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– এমন শুঁকাই গেলি কেমতে?
– তুমি আসছ না! এখন মোটাতাজা করে দিয়ে যাবা৷
– তা আর বলতে।
তন্ময়ের মামা আফরিন সাহেব পাশেই বসে৷ গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বললেন,
– মা বেড়াতে এসেছেন কিছুদিনের জন্য৷ তিনি মেয়ে-মেয়ের জামাই, নাতি-নাতনীদের মিস করছিলেন৷ নিয়ে আসলাম শত ব্যস্ততার মধ্যে৷ কিন্তু এখন আমাদের ফিরতে হবে! বাড়িতে সবকিছু ফেলে এসেছি৷
মোস্তফা সাহেব তাদের থাকার জন্য বলেছেন অনেকবার৷ কিন্তু থাকতে পারবেন না জানালেন৷ কাজকর্ম পড়ে আছে বাড়িতে, সেখানে তাদের প্রয়োজন৷ অগ্যত মোস্তফা সাহেব এবং তন্ময় বেরিয়ে এসে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে৷ গাড়ি চোখের সামনে থেকে যেতেই তন্ময়ের দিক ফিরলেন মোস্তফা সাহেব৷ কিছু বলতে চান কিন্তু বলে উঠতে পারছেন না৷ আসলেই তার প্রত্যাশার বাইরে সবকিছু ঘটেছে৷ কল্পনাও করতে পারেননি তন্ময় আর জবেদা বেগম এভাবে চলে আসবে৷ ভেতরে যেতে নিয়ে তন্ময় বলে গেল,
– কয়েকদিনের সুযোগ আছে মিটমাট করে নাও৷ নানী চলে গেলে মা ফিরতে চাইলে কিন্তু আমি তাকে মানাবো না৷ ফিরিয়ে নিয়ে যাবো৷
মোস্তফা সাহেব কিছুক্ষণ থমকে রইলেন৷ ছেলের কথাগুলো বুঝতে পেরে, পরপরই নিঃশব্দে হেসে উঠলেন৷ সুখময় অনুভূতিতে বুক ভরে উঠছে তার৷ সন্তান, স্ত্রী বাড়িতে আছে ভাবতেই আনন্দে তার চোখজোড়া ভিজে উঠেছে৷ নিজেকে সামলে নিয়ে, তন্ময়ের পেছনে তিনিও ভেতরে এলেন৷ জবেদা বেগম নিজের মায়ের পাশে বসে৷ জয়তুন বেগম মেয়ের চোখমুখ ছুঁয়ে বলছেন,
– মুখটা এমন শুঁকিয়ে কেন!
দীপ্ত সোফার পেছন থেকে বলল,
– তোমাকে দেখে মুখ শুঁকিয়ে গেছে বড়ো মায়ের৷
হাসির ছড়াছড়ি পড়ে গেল ড্রয়িংরুমে৷
——
অরু মাত্র নিজের রুম থেকে বেরিয়েছে৷ সে ঘুমিয়ে ছিলো কলেজ থেকে ফিরে৷ তাই ড্রয়িংরুমের হাসাহাসির কারণ জানেনা৷ উঁকিঝুঁকি মেরে তন্ময়কে দেখে স্তব্ধ খেয়ে গেল৷ তারপর তার চোখ গেল সোফায় বসে থাকা জবেদা বেগমের উপর৷ তারপর গেল জয়তুন নেছার উপর৷ আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত তারা৷ অরু নিজের দিক তাকাল। চুল এলোমেলো৷ কাপড়চোপড় কুঁকড়ে আছে৷ সে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম ছুটেছে৷ ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে দেখল ড্রয়িংরুমে কেউই নেই। রান্নাঘরে গিয়ে প্রথমে সুমিতা বেগমকে প্রশ্ন করলো,
– কি হয়েছে মা?
সুমিতা বেগম সবকিছু খুলে বললেন৷ বলতে বলতে তিনি রাতের রান্না বসিয়ে দিয়েছেন৷ কিছুক্ষণ আগেই ওহী সাহেব বাজারে গিয়েছেন৷ জয়তুন বেগমের পছন্দের সবকিছু রান্না হবে আজ৷ আর রান্না অবশ্যই জবেদা বেগম করবেন৷ করতে না চাইলেও তাকে দিয়ে জোরপূর্বক রান্না করাবেন৷ অরু বলল,
– তারমানে তন্ময় ভাই, বড়ো মা এখন থেকে বাড়িতেই থাকবেন?
– যতদিন তোর নানি আছে ততদিন থাকতে বাধ্য৷ তারপর নাহয় আমরা আটকে রাখার চেষ্টা করবো৷
– ঠিক বলেছ মা৷ এবার তাদের বেরোতেই দিব না।
– তন্ময়ের জন্য কফি বানিয়েছি৷ দিয়ে আয়! ছেলেটা আমার হাতের কফি খায়না বছর হয়ে
গেল৷
অরু কফি হাতে উপরে উঠে এলো৷ তন্ময়ের তালা মারা রুম আজ খোলা৷ লোকটা নিশ্চয়ই ভেতরে? অরু পা টিপে টিপে উঁকিঝুঁকি দিলো! বুক ধুকপুক করছে ভীষণ ভাবে৷ আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে বসেছে হৃদয়৷ আবারো তন্ময় আর সে একই ছাঁদের নিচে বসবাস করবে, ভাবতেই অরুর শ্বাস আটকে আসছে৷ পেছন থেকে শব্দ শুনে কেঁপে উঠলো৷ হাতের কফিটাও পড়ে যেতে নিচ্ছিলো ভয়ে৷ বুকে থু থু ছিটিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো৷ তন্ময় ভ্রুক্ষেপহীন ভঙ্গিতে তার দিক তাকিয়ে,
– উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিস কেন?
– আপনার জন্য কফি!
তন্ময় কফিটা নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেল৷ অরু ঢোকার অনুমতি না পেয়ে মাথাটা ঢুকিয়ে দেখতে লাগলো৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রুম৷ ঠিক যেমনটা তন্ময় থাকলে থাকতো৷ মোস্তফা সাহেব তো প্রতিদিন কাজের লোক দ্বারা রুমটা পরিষ্কার করিয়ে রাখেন৷ আজও সকালে পরিষ্কার করানো হয়েছিলো৷ দরজায় হেলান দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে রাখা অরু হুট করে বেসামাল ভঙ্গিতে পড়ে গেল৷ পড়বে না? তন্ময় হঠাৎ করে দরজা টেনে, মেলে দিয়েছে৷ শব্দ করে ফ্লোরে পড়ে আর্তনাদ করে উঠলো অরু৷ কোমরটা শেষ তার৷ কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে মাথা তুলে দেখল তন্ময় তার সামনে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে৷
লোকটার একটুকরো মায়া নেই অরুর জন্য৷ নিষ্ঠুরভাবে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে তার নির্মম অবস্থা৷ অরু নাক ফুলিয়ে পড়ে রইলো৷ তন্ময় তাকে ধরে না ওঠালে সে উঠবে না৷ এভাবেই পড়ে থাকবে৷ একপর্যায়ে তন্ময় বলল,
– উঠছিস না কেন?
– আপনি সাহায্য কেন করছেন না!
তন্ময় পাশের চেয়ার এগিয়ে দিল সামনে। এটা ধরে উঠতে বলছে যেমন৷ অরু রেগে নিজেই উঠে দাঁড়ালো এবং হনহনিয়ে গেস্ট রুমের দিক চলল৷ গেস্ট রুমে জয়তুন বেগম থাকবেন। তার সাথে অরুর ভালো সম্পর্ক৷ দেখাসাক্ষাৎ হলেই দুজনের গোপন আলাপ-আলোচনা হয় প্রায়শই৷ মাঝেমধ্যে গল্পে মশগুল হয়ে থাকে৷ আজও তাই ঘটতে চলেছে৷

নয়টায় ডাইনিং সাজানো হয়েছে৷ ঘ্রাণে আশপাশ মৌ মৌ করছে৷ সুগন্ধে মাতোয়ারা হয়ে সবাই ডাইনিংয়ে বসে পড়েছে দ্রুত৷ অরু সর্বপ্রথম এসে বসেছে৷ পরপর দীপ্ত, শাবিহা, রুবি, আকাশ৷ জয়তুন বেগমকে ধরে এনেছে তন্ময়৷ সে তার নানির পাশেই বসলো৷ ওহী সাহেব, আনোয়ার সাহেব উল্টোপাশে বসেছেন৷ সকলের শেষে এসেছেন মোস্তফা সাহেব৷ তার চোখমুখ থমথমে তবে তাতে মুগ্ধতা বিরাজমান৷ কতটা হাসিখুশি তিনি সেটা অবশ্যই তার মুখমণ্ডলে ভেসে উঠেছে। আজকের সম্পুর্ন রান্না জবেদা বেগম একা হাতে করেছেন৷ বলা যায় দু,আড়াই বছর পর এই রান্নাঘরে পা রেখেছেন তিনি৷ সকলের জন্য রান্না করছেন দুটো বছর পর৷ খেতে নিয়ে আঁড়চোখে সকলেই জবেদা বেগমকে দেখছে৷ কিন্তু কিছুই বলতে পারছেনা জয়তুন বেগমের উপস্থিতির কারণে৷ সাবধানতা অবলম্বন করে কথাবার্তা বলতে হবে৷ তাইতো মুখ বন্ধ করে চেটেপুটে খেয়ে যাচ্ছে সবাই৷ খাওয়াদাওয়া শেষ হতেই বিশ্রাম নিতে বসেছেন ড্রয়িংরুমে৷ একপর্যায়ে জয়তুন বেগমের ঘুম ধরেছে বিদায় তিনি বললেন,
– রাত হয়েছে আমি ঘুমাই গিয়ে৷
বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়েছেন৷ জবেদা বেগমও উঠে দাঁড়ালেন মায়ের সাথে৷ তাকে সাথে নিয়ে যাবেন উদ্দেশ্য৷ কিন্তু তাকে থামিয়ে জয়তুন বেগম বললেন,
– জামাইয়ের শরীর ভালো দেখাইতেছানা! দেখ কিছু লাগবো নি৷
তারপর তিনি নিজেই একা যেতে পা বাড়িয়েছেন৷ অরু দৌড়ে জয়তুন বেগমের কাঁধ ধরে তাকে যেতে সাহায্য করছে৷ এখন জবেদা বেগমকে তো নিজেদের রুমেই যেতে হবে। কিন্তু তিনি যেতে চাচ্ছেন না৷ সোফায় বসে চুপচাপ৷ মোস্তফা সাহেবও তাকে তাড়া দিচ্ছেন না৷ বা রুমে আসতেও বলছেন না৷ এদিকে তাদের দুজনকে একা রেখে সবাই সবার মতো নিজেদের রুমে চলে এসেছে ঘুমোতে৷

তন্ময় মাত্রই নিজের রুমের দরজা লাগাতে নিচ্ছিলো৷ পূর্বেই অরু দৌড়ে ঢুকে গেল বইপত্র নিয়ে৷ আজ সে বইপত্রের ছুতোয় তন্ময়ের সাথেই থাকবে৷ একদম যাবেনা, না না না৷ তন্ময় বিরক্তির হাবভাব নিয়ে বলল,
– এসব কি হচ্ছে?
– আমাকে একটুখানি পড়াবেন?
মনের দিক দিয়ে অরুর কথার মানেটা দাঁড়ায়, আমাকে একটুখানি আপনাকে দেখতে দিবেন? তন্ময় গম্ভীরমুখে বলল,
– কাল সন্ধ্যায় পড়তে আসবি৷ এখন নিজের রুমে যা!
– একটুখানি৷
বলতে বলতে অরু তন্ময়ের নরম বিছানায় লাফিয়ে বসলো৷ পরপর অনুভব করলো সে কিছুর উপরে বসেছে৷ উঠে দাঁড়িয়ে সেটি হাতে নিলো৷ এবং এটা কি চিনতে অরুর বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না। এটাত আন্ডারওয়্যার! কালো রঙের আন্ডারওয়্যার! অরু সেটা ভালোমতো দেখার সৌভাগ্য পেল না। কারণ তন্ময় মুহুর্তেই তার হাত থেকে কেঁড়ে নিয়েছে৷ তারপর ধমকে উঠলো,
– নিজের রুমে যা! এক্ষুনি!
অরু কষ্ট পেল৷ এসব জাঙ্গিয়া টাঙিয়া কী সে ধরতে চেয়েছে নাকি? নিজেই সেধে বিছানায় রেখে, তাকে ধমকায়৷ ধমকানোর বাহানা চাই শুধু। নিজের বইপত্র গুঁছিয়ে বেরিয়ে পড়লো৷ যাওয়ার সময় আরেকবার উঁকি দিয়ে বলল,
– দেখে ফেলেছি!
তন্ময় তাড়া দিতেই দৌড়ে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দিল৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here