প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ৮

0
135

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ৮
________________________

সাতসকালে অরুর মেজাজ তুঙ্গে উঠে গিয়েছে৷ গতকাল পরিক্ষা শেষ হয়েছে৷ পরিক্ষার ছুতোয় মাস খানেক ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেনি৷ আজ একটু বেলা করে ঘুমাবে তাও পারছেনা৷ সুমিতা বেগম সাতসকালে রুমে এসে হাঙ্গামা করছে৷ আজ শুক্রবার৷ তাদের দাওয়াত পড়েছে৷ এলাকার সুনামধন্য খান বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে৷ বাড়ির বাচ্চাদের পরিক্ষা বলে হলুদ প্রোগ্রাম অ্যাটেন্ড করেনি৷ কিন্তু দাওয়াতে তো যেতে হবে? সুমিতা বেগম অরুর শরীরের কাঁথা টেনে নিলেন৷ ভাঁজ করতে করতে বললেন,
— তোর চাচ্চু বলে গেছে এখনই উঠতে৷ এগারোটার আগে সবাইকে তৈরি থাকতে হবে৷ দাওয়াতে যাবার পূর্বে খান বাড়ি যেতে হবে৷ সময় নেই হাতে৷
সুমিতা বেগমের কথা যেমন অরুর কান অবদি পৌঁছাচ্ছে না৷তার উঠার কোনো নামগন্ধ নেই৷ মরার মতো বিছানায় উবুড় হয়ে পড়ে৷ ঘর গোছাতে গোছাতে সুমিতা বেগম আনমনে বলে চলেছেন,
— দাওয়াতের ছুতায় ভাবী আর তন্ময়কে এক নজর দেখা যাবে৷ কত মাস হয়ে গেল ওদের দেখিনা৷
যেহেতু তন্ময় আলাদা দাওয়াত পেয়েছে৷ ইফরাদের সাথে ওর ভালো বন্ধুত্ব, ওকে তো দাওয়াতে আসতেই হবে৷ তন্ময় কী আর একা আসবে? ভাবীকেও সাথে নিয়ে আসবে৷ এই সুযোগে যেনো তাদের মানাতে পারি বাড়ি ফিরতে৷
হুট করে অরু ঘুম ছেড়ে উঠে বসলো৷ মায়ের দিক চমকে তাকিয়ে বলল,
— তন্ময় ভাই যাবে? না মানে বড়ো মা যাবে?
— যাবেনা আবার? বাধ্যতামূলক যেতে হবে৷
— আমাদের সাথে যাবে তো?
— বাড়ির ঝগড়াঝাটি বাড়িতেই সীমাবদ্ধ৷ তোর চাচ্চু তাদের আলাদা যেতে দিবে তোর মনে হয়?
— সেটাই তো৷
অরুর ঘুম আকাশপথে উড়ে গিয়েছে৷ খুশিতে চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে৷ বিছানা ছেড়ে দ্রুত পায়ে উঠে দাঁড়ালো৷ কোমর সমান চুলগুলো খোঁপা
করতে করতে ওয়াশরুম ছুটেছে৷ গোসল সেড়ে বেরিয়ে নিচে নামলো৷ কেউই নেই! সবাই নিজেদের রুমে তৈরি হতে ব্যস্ত হয়ত৷ অরু বাবামায়ের রুমে উঁকি দিল৷ বিছানার উপর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির স্যাট৷ সাদা পরবে তার বাবা৷ তারপর অরু বড় চাচ্চুর রুমে উঁকি দিল৷ সেখানেও সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির স্যাট গুঁছিয়ে রাখা৷ তারপর গেল ছোট চাচ্চুর রুমে৷ তার বিছানাও সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির স্যাট৷ অরু ডিসিশন নিল সে সাদা কিছু পরবে৷ সাদা গ্রাউন নাকি সাদা কামিজ? দোটানায় ভুগতে থাকা সে পাখির সামনে দাঁড়ালো৷
— পাখি আমাকে গ্রাউনে মানাবে নাকি কামিজে?
পাখি ঝিমাচ্ছে, জবাব নেই৷ অরু রেগে গেল৷ পাখির খাঁচা ঝাকিয়ে পাখিটাকে বিরক্ত করলো কিছু৷ তারপর বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরছে৷ ঘুরতে ঘুরতে এলো রুবির রুমে৷ রুবি বিছানায় কাপড়চোপড় মেলে রেখেছে৷ অরুকে দেখতেই টেনে নিয়ে আসলো,
— দেখ তো কোন কালারের কামিজ আমাকে বেশি মানাবে?
— সাদা!
— না না৷ সাদা গতকাল পরেছি৷ আবারো সাদা পরব না৷ ভাবছি লাল কামিজ পরব৷ তুই কি পরবি?
অরু মহানন্দে বলল,
— সাদা!
ঠিক অরু একটি সাদা কামিজ পরেছে৷ সবার আগে তৈরি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ ভালোভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখছে৷ নাকটা পিটপিট করছে৷ দাওয়াত খেতে গিয়ে আবার হাঁচি চলে আসবে না তো? অরু ইদানীং হাঁচিকে খুব ভয় পায়৷ পাবে না? হাঁচি আসলে যদি সর্দি বেরিয়ে যায়? আর তখন যদি তন্ময় সামনে থাকে? অরু লজ্জায় এবার কেঁদেই ফেলবে। হাত ব্যাগে টিস্যু নিয়ে নিলো কিছু৷ পারফিউম স্প্রে করে বেরিয়ে পড়লো৷ আনোয়ার সাহেব সোফায় বসে আছেন৷ পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি৷ মোস্তফা সাহেব মোবাইলে কথা বলছেন৷ তিনিও সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরেছেন এবং উপরে কোটি৷ অরুকে দেখে আনোয়ার সাহেব হাসতে লাগলেন,
— আমরা আজ ম্যাচিং?
— হু! কেমন লাগছে আমাকে বাবা?
আনোয়ার সাহেব ছোট্ট অরুর কপালে চুমু এঁকে বললেন,
— ভীষণ সুন্দর৷ মাশাআল্লাহ!
— তোমাকেও সুন্দর লাগছে বাবা৷
মোস্তফা সাহেব অরুকে তার দিক আসতে ইশারা করলেন৷ অরু চোখমুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে এলো৷ মোস্তফা সাহেব বললেন,
— আর আমাকে? আমাকে কেমন লাগছে?
— চাচ্চু তোমাকে এতটাই সুদর্শন লাগছে যে, একটুখানি মেয়েরা তোমার পাগল হয়ে যাবে৷
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন মোস্তফা সাহেব৷ ওহী সাহেব এসে পাশে বসেছেন মাত্র৷ তিনি তন্ময়কে কল করছেন৷ তন্ময় কল ধরতেই বললেন,
— কখন বেরোবি?
তন্ময় কিছু বলবে তার পূর্বেই মোস্তফা সাহেব পাশ থেকে বললেন,
— বাড়ি ছেড়েছে ভালো কথা৷ এখন মানুষের সামনে আমাকে হাসাহাসির পাত্র যেন না করে৷ গাড়ি পাঠাব সেটা করেই সবাই একসাথেই যাবে৷ আলাদা করে যাওয়া যেন না হয়!
স্পিকার লাউডে দেওয়া৷ মোস্তফা সাহেবের কথা শেষ হতেই, তন্ময়ের গম্ভীর স্বরের হাসি শোনা গেল৷ হাসতে হাসতে বলল,
— চাচ্চু!
— হু!
— তোমার ভাইয়ের মাথা গরম?
ওহী সাহেব বড় ভাইয়ের মুখের দিক তাকিয়ে চুপ রইলেন৷ ওপাশ থেকে তন্ময় পরপর কল কেটে দিয়েছে৷ যেহেতু তন্ময় না বলেনি তারমানে এক গাড়ি করেই যাবে সবাই৷ এবার মোস্তফা সাহেবের গম্ভীরমুখ নরম দেখাল৷ তিনি আঁড়চোখে ওহী সাহেবের দিক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন৷
— আমাকে যেতে হবে এখনই৷ বাচ্চাদের নিয়ে সময়মত চলে আসবে৷
— জি ভাই৷
অরু শাবিহার সাথে বসেছে৷ এই গাড়িতেই তন্ময় উঠবে৷ ভাবতেই অরু উত্তেজিত হয়ে পড়ছে৷ মাস খানেক যাবত তন্ময়ের দেখা নেই৷ অরুর মন কেমন আনচান করছে লোকটাকে দেখার জন্য৷ তাদের গাড়ি মাত্র পৌঁছেছে তন্ময়দের ফ্ল্যাটের সামনে৷ অরু জানালার কাঁচ খুলে মাথা বের করে রেখেছে৷ ওইতো তন্ময় আর জয়া বেগম আসছেন৷ আশ্চর্যজনক ভাবে তন্ময়ও সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরেছে৷ এবং মোস্তফা সাহেবের মতো একই ডিজাইনের কোটি পরেছে উপরে৷ অরুর বুকের ভেতরটা কাঁপছে৷ শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল৷ ধ্যান মেরে তাকিয়ে রইলো৷ ছোট থেকেই অরু ভেবে এসেছে তন্ময় অসম্ভব সুন্দর দেখতে৷ সুন্দর সে সকলের কাছেই প্রিয় ছিলো সবসময়৷ যখন কাজিনদের আড্ডা বসত সবার নজর তন্ময়ের দিক থাকতো৷ এমনকি অরুরও৷ এদিকে অরুর তীক্ষ্ণ চাহনি তন্ময় দেখেও যেমন দেখল না৷ আকাশের পাশে এসে ড্রাইভিং সিটে বসলো৷ জয়া বেগম পেছনে অরু আর শাবিহার মধ্যে বসেছে৷ অরুর চোখজোড়া আঁড়চোখে তন্ময়ের দিক চলে যাচ্ছে বারবার৷ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সে জানালার বাইরে তাকাল৷ লোকটা এতো সুন্দর কেন? অরুর আনমনে মিনমিন করে বলল, ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই৷ একদম নেই!
খান বাড়ির সামনে অলরেডি শাহজাহান বাড়ির দুটো গাড়ি পৌঁছেছে৷ রুবি, দীপ্ত, সুমিতা বেগম, মুফতি বেগম এখানো গাড়িতে বসে৷ তন্ময়দের গাড়ি পৌঁছাতে দেখে নেমে আসলেন। জয়া বেগমকে দেখে তাদের চোখজোড়া ভিজে উঠেছে৷ খান বাড়ির কর্তা এগিয়ে এসেছেন তাদের আপ্যায়নের জন্য৷ কর্তার সাথে মোস্তফা সাহেব দাঁড়িয়ে৷ তার সাথে আনোয়ার সাহেব, ওহী সাহেব ও উপস্থিত৷ তন্ময়ের পাশেই মোস্তফা সাহেব দাঁড়িয়েছেন৷ ছেলেকে দেখে স্ত্রীর দিক আঁড়চোখে তাকালেন৷ কিন্তু কিছুই বললেন না৷ জয়া বেগম মাথা নত করে রেখেছেন৷ সে ভুলেও আশেপাশে তাকাচ্ছেন না৷ স্বামীর দিক তো আরও আগে নয়৷ এতসব আলাপ-আলোচনা শোনার সময় অরুর নেই৷ সকলের আঁড়চোখে সে তন্ময়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে৷ উঁকিঝুঁকি মেরে কিছুক্ষণ পরপর তন্ময়ের মুখমণ্ডল দেখছে৷ সকলে যখন খান বাড়িতে ঢুকতে ব্যস্ত সেসময় তন্ময় হুট করে অরুর কান টেনে ধরলো৷ আচমকা টানে অরু আর্তনাদ করে উঠলো,
— আহ, আহ ছাড়ুন৷ কানে দুল পরেছি তো৷ ব্যথা পাই৷
— এমন ভারী কানের দুল পরার মানে কি? দেখে মনে হচ্ছে কান ছিড়ে পরে যাবে৷
— দেখতে এমনটা দেখায়, তবে ওত ভারী নয়৷ আপনি পরে দেখুন একদম ভারী না, খুব হালকা৷
তন্ময় এবার একটু শক্তি দিয়েই কান টেনে দিয়ে শুধালো,
— আমি পরব?
— না না আমিই পরব৷ ছাড়ুন, ছাড়ুন ব্যথা পাই৷ ভুল হয়ে গেছে আর বলব না৷
তন্ময় ছেড়ে দিলো৷ চেনপরিচিত মানুষদের ডাকে সেদিকে চলে গেছে৷ অরু তার যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো৷ লাল কান ধরে মায়ের পেছন পেছন হাঁটছে৷ আঁড়চোখে আরেকবার তাকাল তন্ময়ের দিক৷ এবার আচমকা তন্ময় তাকিয়ে চোখ রাঙাতেই অরু নজর ফিরিয়ে ফেলল৷ যেভাবে তাকিয়েছে মনে হলো অরুকে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে৷
——
শাবিহা জানে এখানে অয়নকে দেখতে পাবে৷ খান বাড়ির সাথে অয়নের বাবার খুব ভালো বন্ধুত্ব৷ তাই যখন অয়নকে সোফায় বসে কথা বলতে দেখেছে, মোটেও অবাক হয়নি৷ অবাক হয়েছে অয়নের বিহেভিয়ারে৷ আজ যেমন অয়ন শাবিহাকে চেনেই না৷ ছেলেটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কথাবার্তায় ব্যস্ত৷ অবশ্য অয়নের এমন ব্যবহার অযৌক্তিক নয়৷ কিছুদিন আগে রাগের মাথায় শাবিহা অনেক কথা শুনিয়েছে অয়নকে৷
এতটাই শক্ত কথা বলেছে যে অয়ন এই কয়দিন যাবত তার সামনেই আসেনি৷ নিশ্চয়ই অয়ন বুঝতে পেরেছে শাবিহা আর তার কখনোই সম্পর্ক হওয়া সম্ভব না৷ ভালোই হলো! শাবিহা নিরবে বুকের ভেতরের পিনপিনে ব্যথাটা অগ্রাহ্য করলো৷ মনেমনে ঠাঁই করেছে দ্বিতীয় বার তাকাবে না এই ছেলের দিক৷ কিন্তু তার নজর কীভাবে যেনো চলে যাচ্ছে ওদিকে৷ নজর ফেরাতে সে সেখান থেকে চলে এলো৷ এসে দাঁড়িয়েছে পূর্বদিকে৷ এদিকটায় মানুষের যাতায়াত কম৷ সবাই পশ্চিম দিকে আড্ডায় ব্যস্ত৷ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাবে তখনই ওড়নায় টান অনুভব করলো৷ ঘুরে দেখল তার ওড়না রেলিঙের সাথে আটকে আছে৷ টেনে ছুটাতেও পারছেনা৷ পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,
— সাহায্য লাগবে?
শাবিহা ফিরে তাকাল না৷ না তাকিয়েই জানে এটা কার কন্ঠ৷ অয়ন সামনে এসে দাঁড়ালো৷ খুব সহজেই ওড়নাটা ছাড়িয়ে দিল৷ শাবিহা চলে যেতে নিচ্ছিলো আবারো ওড়নায় টান খেল৷ ভেবেছে এবারও রেলিঙে বেজেছে৷ কিন্তু ঘুরে দেখল ওড়না অয়নের হাতে৷ শাবিহা চমকে তাকাল৷
— এসব কেমন অসভ্য ব্যবহার ?
অয়নের জবাব নেই৷ জবাবের বদলে ওড়নাটা হাতে পেচিয়ে নিতে লাগলো৷ শাবিহা অবাকের চুড়ান্তে৷
— অয়ন!
অয়নের কানে যেমন শাবিহার কন্ঠ পৌঁছাচ্ছে না৷ নিজের মতো ওড়না টেনে যাচ্ছে৷ রাগে লজ্জায় শাবিহা বাকরুদ্ধ৷ শাবিহা সামনে আসতেই অয়ন বলল,
— আপনার জন্য কি আসলেই আমি খুব অযোগ্য?
— ওড়না ছাড়ো!
— চার বছরের বয়সের গ্যাপ কী খুবই
লজ্জাজনক?
— অয়ন! কেউ আসবে৷
অয়ন গম্ভীর স্বরে বললো,
— আসুক৷ আমার কথার উত্তর দিন৷
শাবিহা রেগে তাকিয়ে৷ ওড়না ছুটাতে চাইলেও ব্যর্থ হচ্ছে৷ কন্ঠে ক্রোধ নিয়ে বলল,
— নিজের সীমানায় থাক৷
— সীমানায় ছিলাম৷ কিন্তু আজ থেকে থাকব না৷ আপনি শুধু আমার ভালো রুপ দেখছেন৷ এখন খারাপটা দেখবেন৷
শাবিহা কী করবে দিশে পাচ্ছেনা৷ রাগান্বিত অয়নের চোখজোড়ার দিক তাকিয়ে রইলো৷ কেন এই ছেলেটা সবকিছু উলটপালট করছে? কেন তার দুনিয়া তছনছ করছে প্রতিনিয়ত? কেন এতো জ্বালাতন করে৷ দূর থেকে অরুর কন্ঠের স্বর ভেসে আসছে৷ অয়ন শাবিহার ওড়না ছেড়ে দেয়৷ দাঁতে দাঁত ঠেকিয়ে বলল,
— রাতে ছাঁদে আসবেন৷ আপনার সাথে কথা আছে৷ আল্লাহর কসম আপনি না আসলে আমি সোজা আপনার ঘরে ঢুকে যাব৷
অয়ন যেভাবে এসেছে সেভাবে অন্যপাশ দিয়ে চলে গেল৷ অরু দৌড়ে এসে দাঁড়ালো শাবিহার সামনে৷
— একা দাঁড়িয়ে আছ যে? চলো এখনই রওনা হব। চাচ্চু ডেকেছে৷
যেতে নিয়ে শাবিহা পেছনে তাকাল৷ নেউ কেউ! দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো৷ কী হচ্ছে এগুলো?
—-
তন্ময় যেই গাড়িতে চড়েছে সেই গাড়ি অলরেডি ফিল-আপ৷ দীপ্ত, রুবি, শাবিহা আকাশ এমনকি জয়া বেগম, মুফতি বেগম এবং সুমিতা বেগম একসাথে বসেছেন৷ অরু ছোটছোট চোখ করে তন্ময়ের দিক তাকিয়ে৷ আনোয়ার সাহেব পেছন থেকে ডাকলেন,
— আম্মা! আসো বাবার সাথে বসবা৷
যাওয়ার সময় অরু ভেজা ভেজা চোখে তন্ময়কে দেখে গেল৷ মন খারাপ নিয়ে অন্যগাড়িতে তিন বাপ-চাচাদের সঙ্গে বসল৷ নাক পিটপিট করায় টিস্যু বের করতে নিয়ে দেখল তন্ময় আসছে এদিকে৷ চোখমুখে সানগ্লাস পরে৷ অরু দ্রুত টিস্যু সরিয়ে ফেললো৷ তন্ময় এসে ড্রাইভিংয়ে বসেছে৷ মুহুর্তেই গাড়ি চলতে শুরু করলো৷ তারমানে তন্ময় এই গাড়িতে যাবে? অরু খুশিতে গদগদ হয়ে আছে৷ বিড়াল যেমন তার প্রিয় মাছ দেখছে তেমন ভাবে তাকিয়ে রইলো৷ তন্ময়ের পাশে মোস্তফা সাহেব বসেছেন৷ তার চোখেও সানগ্লাস৷ অরু নিজের হাত ব্যাগ থেকে সানগ্লাস বের করে পরে নিল৷ সানগ্লাস পরিহিত সে মিটিমিটি হাসছে। আজ সে আর তন্ময় একদম সেইম টু সেইম৷
কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছাতে বিশ মিনিট লেগেছে৷ পুরো পরিবার এক টেবিলেই বসেছে৷ খাওয়ার সময় অরু কাউকেই চেনেনা৷ এমনকি তন্ময়কেও না৷ সর্বপ্রথম টেবিলে সেই বসেছে৷ সকলের আগে খেতেও আরম্ভ করেছে৷ তন্ময় যখন তার পাশে বসেছে সেটাও খেয়াল করেনি মহারানী৷ খেতে খেতে একে সেকে হুকুম দিচ্ছে খাবারের বাটি পাস করতে৷ তন্ময়ের সামনের বাটিতে ভালো ভালো গোস্তো। অরুর নজর সেটাতে পড়েছে৷ ধীর গলায় বলল,
— আমাকে তরকারির বাটি দিবেন? ওইযে আপনার সামনেরটা?
— না দিব না৷
অরু কষ্ট পেয়ে বলল,
— আপনি তো নিচ্ছেন না৷
তন্ময় মাথা ঘুরিয়ে তার দিক তাকাতেই নজর ফিরিয়ে বলল,
— লাগবেনা তো৷
কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো তন্ময় নিজেই তাকে তরকারি বেড়ে দিচ্ছে৷ অরুর মন ভালোলাগায় ছেয়ে গেল৷ জ্বলজ্বল নয়নে তন্ময়ের দিক তাকিয়ে রইলো৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে ভাবল তন্ময়ের পেছন পেছন ঘুরবে৷ কিন্তু সেটা হলোনা৷ তন্ময় কথাবার্তায় ব্যস্ত৷ একসময় দেখল মেয়েদের সাথে কথা বলছে৷ লম্বাচওড়া সুন্দরী মেয়ে যারা তন্ময়ের বয়সী৷ অরুর খারাপ লাগতে লাগলো৷ তন্ময়ের সাথে দাঁড়ানো মেয়ে গুলোকে তার আর সুন্দর মনে হলোনা৷ সবাইকে কালসাপ মনে হচ্ছে৷ ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল তন্ময়ের দিক৷ তার আশেপাশে ঘুরতে লাগলো৷ কিন্তু তন্ময় একবারও অরুর দিক নজর দিলো না৷ অভিমানী সে বাবার কাছে চলে এসেছে৷ বাকিটা সময় বাবার পেছন পেছন ঘুরতে লাগলো৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here