ভয়_আছে_পথ_হারাবার ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম] ১৭,,

0
175

#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]

১৭,,

নাসীরা পারভীন তিলোর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিলো ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে আবারও নিজের ফোনে মনোযোগ দিলো। কিছুক্ষণ পর মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো ঠিকই। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা। ফাহাদের স্ত্রী কলি ওর অনলাইন ফ্রেন্ড। তার কিছু পোস্ট নিজের চোখের সামনে পড়তেই তিলোর মনে বিষাদের কালো মেঘ ছেঁয়ে গেলো। ফাহাদকে নিয়ে তার সুখী দাম্পত্যের বর্ণনায় বিভিন্ন পোস্ট। তিলো ফাহাদকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওর মনেও পড়েনা সবসময়। তবে প্রথম ভালোবাসা সবসময়ই মনে আলাদা স্থান দখল করে থাকে, এটা ও অস্বীকার করতে পারে না। এখনো ফাহাদের সাথে কলিকে দেখলে ওর ভেতরটা বারবার মুচড়ে ওঠে। সে হয়তো আবারও কাউকে নিজের জীবনে, নিজের মনে জায়গা দিতে পারবে, কিন্তু তাকে ভোলা অসম্ভব ওর পক্ষে।
তিলো না চাইতেও ওর চোখ ভরে উঠছে পানিতে। ফোনের স্ক্রিন বন্ধ করে পাশে রেখে দিলো। আর ভালো লাগছে না ওর ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে। বিছানা ছেড়ে উঠে ছাদে চলে গেলো। ইতিমধ্যে ও শাড়ী পাল্টে সালোয়ার কামিজ পরে নিয়েছে। ছাদের কিনারে রেলিঙের উপর ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বিকাল শেষ হতে যাওয়া আকাশটার দিকে চেয়ে আছে। পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরছে। কাকগুলো কাঁ কাঁ করে ডাকছে। দূরে কোথাও ঘুড়ি ওড়ানো হচ্ছে। এক কথায় আকাশটা ফাঁকা নেই। ভালোই লাগছে এখন। মৃদু বাতাস ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। শিরশির অনুভূতি হচ্ছে শরীরে। তিলো চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিলো।
কিছু সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাড়ির গেট থেকে শাহানা আন্টিকে ঢুকতে দেখলো ও। তিলো সেদিকে কোনো কৌতুহল দেখালো না। নাসীরা পারভীনের সাথে গল্প করে চলে যাবেন৷ এতে ওর ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। আজ আবার ওকে নিয়ে যে বিশাল আলোচনা হবে সেটাও ও বুঝতে পারছে। তিলো স্থির দৃষ্টিতে ঐশ্বরিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ অস্তমিত সূর্যের হালকা আলোয় আলোকিত আকাশটার দিকে তাকালো। আকাশটাও রঙিন৷ কেবল ওর গায়ের রঙের সাথে সাথে জীবনে কালো রঙ ছেঁয়ে আছে। কিছু সময় পর টের পেলো ছাদে কেউ আসছে। তিলো ঘাড় না ঘুরিয়েও বুঝতে পারলো এটা তুলি।
তুলি এগিয়ে এসে ওর পাশেই দাঁড়ালো। আজকে সারাদিনের ঘটনায় তুলির কথাটা ওর মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলো। তিলো চোখ ফিরিয়ে তুলির দিকে তাকালো। একদিনেই চেহারায় বিষন্নতার ছাপ পড়ে গিয়েছে। চোখ মুখ শুকিয়ে আছে। তিলো কোনো কথা খুঁজে পেলোনা বলার জন্য। হয়তো এমন পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই বলা যায় একটা মানুষকে। তবে তিলো সেই ভাষা খুঁজে পেতে ব্যর্থ। মস্তিষ্ককে চাপ দিলো না ভাষা খোঁজার দ্বায়িত্বে লেগে পড়ার জন্য।
দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজ করছে। কেবল কাকগুলোর ডাক শোনা যাচ্ছে। অপূর্ব সুন্দর গোধূলিতে কেবল দুজনের মনের ভেতরকার সৌন্দর্যটুকু নেই। দুজনেই আলাদা আলাদা মনতাপে দগ্ধ হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। দুজনের যন্ত্রণার কারণ এবং ধরণ ভিন্ন প্রকারের হলেও তারা একই বিষন্নতার শিকার। পাশাপাশি দাঁড়িয়েও কেউ কাউকে সেটা না বলে কোনো সেতু তৈরি করছে না নিজেদের ভেতর বিধায় তারা আসলে মানসিকভাবে একে অপরের থেকে বহুদূরে অবস্থান করছে।

তিলো মাগরিবের আযান পড়তেই নেমে আসতে নিলো। তুলি ওদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীরটা টপকে তিলোর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
-গতকাল তুই আমাকে বাইরে দেখেছিস। তাই না?

তিলো ওর দিকে না তাকিয়েই কেবল ছোট করে ‘হুম’ বললো।

তুলি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
-আম্মাকে বলার আগে আমাকে একবার জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজনবোধ করলি না?

তিলো এবার মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে কঠোর ভঙ্গিমায় বললো,
-কাজটা খুব মহান কোনো কাজ ছিলোনা যে আলোচনা করে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

-একবার আমাকে কারণটা জিজ্ঞাসাও করলি না? কৌতুহল হয়নি?

-তোর নোংরামিতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।

তুলি কেবল একটু হাসলো। হাসিতে তার স্পষ্ট উপহাস। তিলো আবারও ফিরলো যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

-লোকটা আসলে ভালো তিল। ওনার ব্যক্তিগতভাবে তোকে পছন্দ হয়েছে। বিয়ে করলে অসুখী হবি বলে মনে হয়না। জানিস তো, এই ধরনের মানুষেরা কম বয়সী বউ পেলে তাদের যত্ন করে।

-আমি সম্মান প্রত্যাশী। যত্ন,,, খুব প্রয়োজন নেই।

তিলো আর দাঁড়ালো না। নিচে নেমে এলো নিজের ঘরে। মাগরিবের নামাজ আদায় করে মীরার কাছে থেকে আজকের নোটগুলো সংগ্রহ করে নিজের খাতায় তুলতে শুরু করলো। আজও সন্ধ্যাকালীন নাস্তা ওর নাগালে আপনাআপনি আসছে না দেখে তিলো রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। ও দেখলো এখনো শাহানা আন্টি বসে গল্প করে যাচ্ছেন। মাঝখানে বোধহয় নামাজের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন। তিলো নিজের মনেই বিরবির করে উঠলো, ফের মিলেঙ্গে ব্রেক কি বাদ।
কথাটা মনে পড়তেই ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়লো। ওর বাবা মায়ের ঝগড়া খুব কমই হয়। তবে একবার বেশ বড়সড় ঝগড়া বেঁধেছিলো। তিলো তখন জি টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল আর রান্নার অনুষ্ঠানের নিয়মিত দর্শক ছিলো। রান্নার অনুষ্ঠানে কথাটা বলা হতো ব্রেক নেওয়ার আগে। ওনাদের ঝগড়া চলতে চলতে আছরের আযান পড়ে যায়৷ তাও থামে না। এবার ওয়াক্ত শেষ হতে নিতেই তুলি মাঝখান থেকে চিৎকার করে ওনাদের সতর্ক করে। নাসিরা পারভীন রাগে গজগজ করতে করতে বলেন,
-দাঁড়াও নামাজের পর তোমার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আনিস সাহেবও তাল মিলিয়ে বলেন,
-আমি ছেড়ে দেবো ভেবেছো? আজ একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়বো।

বলে দুজন দুদিকে নামাজের উদ্দেশ্যে লিভিং ত্যাগ করতেই তিলো বলে ওঠে, ফের মিলেঙ্গে ব্রেক কি বাদ।
কথাটা বলে ওর মুখে চন্দ্র জয় করা হাসি ফুটে ওঠে, যেন কথাটা বলার পরিস্থিতি সে আজ অর্জন করেছে। নাসীরা পারভীন এবং আনিস সাহেবের কানে বাক্যটা প্রবেশ করতেই ওনারা নিজেদের ঝগড়া ভুলে তিলোর ওপর চড়াও হলেন। তিলোর হাসি মুখটা নিমেষে কালো মেঘে ছেঁয়ে গেলো।

কথাগুলো মনে পড়ায় তিলোর মনটা আরেক দফা খারাপ হলো। দিনগুলো কতো দ্রুত চলে যায়!
আজকে অতিথিদের আগমনের উদ্দেশ্যে অনেক প্রকার খাবারই আনা হয়েছে বাড়িতে। তিলো একটা গালে দিয়ে আরেকটা খুঁজছে। মন খারাপ হলে ওর বেশি ক্ষুধা পায় যেন। এখন কোনটা রেখে কোনটা খাবে এটার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই ওর জন্য দুষ্কর।

বিড়ালের ন্যায় রান্নাঘর থেকে পেট পুড়ে খেয়ে তিলো ডাইনিং এর ফ্রিজ থেকে চকলেট বের করে নিয়ে নিজের রুমে ফিরলো। মন ভালো করতে এটা বেশ কার্যকর। নিজেকে ওর গোপন এজেন্ট মনে হচ্ছে। সে শাহানা আন্টির চোখ ফাঁকি দিতে পেরেছে!! ওনি তিলোকে একবারও ডাকলেন না! নিশ্চয়ই খেয়াল করেননি। আরে বাহ্!

তিলো নিজেকেই নিজে বাহবা দিলো।

ডিনার শেষে কেবল ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় উঠতেই ওর ফোনে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো। তিলো ভ্রু কুঁচকে একবার সেটা দেখে রিসিভ করে নিলো। কানে ধরতেই ভদ্র তবে সামান্য গম্ভীর একটা কন্ঠ ওকে সালাম দিলো। তিলো তার উত্তর দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কে।

-আমি শামীম রেজা বলছি।

তিলো এই নামের কাউকে চেনে না। কন্ঠে ভদ্রতা ধরে রেখে বললো,
-দুঃখিত, আমি ঠিক চিনতে পারছি না আপনাকে।

লোকটা বোধহয় ব্যথিত হলেন। বললেন,
-আপনি আমার নাম জানেন না? আজ আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা হয়েছে।

তিলোর মুখটা আপনাআপনি হাঁ হয়ে গেলো। এখন গলা থেকে নূন্যতম স্বর বের করতেও তিলোর সংকোচবোধ হচ্ছে। অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে ও। লোকটা হয়তো বুঝতে পারলো ওর পরিস্থিতিটা। ওকে অভয় দেওয়ার সুরে বললেন,
-আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন?

কথাটা বলেই রেজা বুঝতে পারলো আসলে সে কতোটা নির্বোধের মতো একটা প্রশ্ন করেছে। ইচ্ছা করছে নিজের গলা টিপে ধরতে৷ একটা সদ্য পরিচিত মেয়েকে সরাসরি এভাবে জিজ্ঞাসা করা! রেজা চোখ বুজে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে চোখ মেললো। হয়তো দ্বিতীয়বারের মতো একটা মেয়ের সংস্পর্শে এসে সে একটু বেশিই ব্যস্ত এবং উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। প্রথমে তো সে কাউকে ভালোবাসতো। সেই কলেজ জীবনে। বেকার ছিলো বিধায় প্রথম ভালোবাসাটা তার পরিপূর্ণতা পায়নি। এরপর তো কোনোদিনই বিয়ে করবে না ভেবেছিলো। পরিবারের চাপে এই বয়সে এসে বাধ্য হয়েছে।

রেজার কথায় তিলো আরো বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে। তিলোকে চুপ করে থাকতে দেখে রেজা বললো,
-আসলে দুঃখিত।

এরপরও দুজনের মাঝে দীর্ঘ সময়ের নিরবতা। রেজা তারপর আবারও বললো,
-আপনার কি বিয়েতে মত আছে। না থাকলে নির্দ্বিধায় বলুন। আর এগোনো হবে না।

তিলো বলতে চাইলো ওর আসলে মত নেই। তবে লোকটার ভদ্রতা ওকে বাঁধা দিচ্ছে কোথাও। তিলো আমতাআমতা করে বললো,
-না আসলে… আসলে আমি ঠিক যাই না আপনার সাথে। আমার মতো একটা মেয়ে কোথায় আর কোথায় আপনি?

ওদিক থেকে অট্টহাসির আওয়াজে তিলো নিজের কথা থামিয়ে দিলো। তিলোর অবাক লাগছে। ওর কাছে এমন পেশার মানুষকে সবসময়ই গম্ভীর, একটুখানি রাগী, একদম আনরোম্যান্টিক, ফর্মাল হাসি ছাড়া কোনো হাসি থাকে না মুখে এমন মনে হতো। আজ ওনার হাসি আর কথা শুনে ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় তিলোর অদ্ভুত লাগছে। তাছাড়া বয়স্ক মানুষটাকে কখনোই মনে হলোনা যে ওনি হাসতে জানেন। রেজা হয়তো ওর মন পড়তে পারলো। হাসি থামিয়ে বললো,
-আমি আমার পেশাগত জীবন আর ব্যক্তিগত জীবন এক করে ফেলি না কখনো। বাড়িতে রসিক মানুষ বলেই আমাকে সকলে জানে। দেখুন, আজ কথা হয়ে পারেনি নির্লজ্জের মতো আমি ফোন করলাম।

ওদিকে অরিক রাতের খাবার টেবিলে বসে তিলোর বিয়ের কথা শোনার পর থেকে অস্থির হয়ে ওকে একের পর এক ফোন করে ফোন ব্যস্ত পাচ্ছে। তিলো যে ওর হবু বরের সাথে কথা বলছে, অরিক আন্দাজ করতে পারলো। কোথাও যেন নিজের ভেতর হিংসা ধরনের একটা ভাব ফুটে উঠেছে।

তিলো ধীরে ধীরে রেজার সাথে কথা বলে চলেছে। তিলো নিজেকে ছোট কেন মনে করে, এটা নিয়ে রেজা বেশ গম্ভীর গলায় কিছু বললো ওকে। তিলো যখন নিজের গায়ের রং নিয়ে বললো, রেজা হেসে উড়িয়ে দিলো বিষয়টা৷ ওর গায়ের রঙে রেজার কিছুই যায় আসে না। তিলো বললো সে কোনো কাজ পারে না। আজ ওর নামে বলা সব কথা সত্যি না৷ রেজা এবারও বললো, সে জানে সবকিছু। তিলোকে সে বাড়ির বউ করে আনছে, কোনো কাজের মানুষ না৷ বাড়িতে ওর মাও রান্না করে না। সবকিছুই কাজের লোক করে। সে তাকে বউ হিসাবে সম্মান দিতে চায়। যদি তিলোর মনে হয়, নিজে কিছু করে স্বামীকে খাওয়াবে৷ সেটা সম্পূর্ণ তার ইচ্ছাধীন। রেজার কথাগুলো তিলোর ভালো লাগছে। লোকটার মানসিকতা খারাপ না৷ তিলোর চিন্তার একদমই বাইরে। লোকটা খুব দ্রুত নিঃসঙ্কোচে তাকে আপনি থেকে তুমি সম্বোধনে নেমে এসে নিজেকে হ্যাংলা নয় বরং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রমাণ করলো। তিলোর প্রধানতম ভয় ছিলো, বু্ড়ো স্বামী কেবল স্বামী হবে কোনো বন্ধু নয়। তিলোর ধারণা দেড় ঘন্টার আলাপ চারিতায় রেজা ভেঙে দিলো। তিলো নিজের অজান্তেই তার সাথে সহজ হয়ে এসেছে। ও কথা বলছে সাবলীলভাবে এখন। কথা শেষে যখন সেদিনের মতো বলার কিছু ছিলোনা তাদের উভয়েরই, ফোন কেটে দেওয়ার আগে রেজা হঠাৎই বললো,
-তিল, তোমার ভাঙা দাঁতটা কিন্তু তোমার গোলগাল মায়াবী মুখটায় একদম মানানসই। আরো ভালো লাগে।

তিলো চমকে উঠলো ওর কথায়। দুটো কারণ ছিলো তার। মাত্র কিছুক্ষণের কথায় এভাবে তিলো সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করলেন! আরেকটা কারণ, ওর ভাঙা দাঁতটা কিভাবে রেজার চোখে ধরা পড়লো। ওর মা’ই তো দেখেছে দুদিন পর যখন ওর দাঁতটা ভেঙেছে। আসলে এতো ছোট এবং সূক্ষ্ম ভাঙা যে খুব গভীরভাবে খেয়াল না করলে একদমই বোঝার কথা নয়। কিশোরী বয়সে একটা ক্লিপ থেকে পাথর তুলতে গিয়ে সামনের দাঁতের একটা একটুখানি, অতি সামান্য পরিমাণ ভেঙে গিয়েছে মাঝখান থেকে। সামান্য ঢেউ তুলে থাকে যা কেউ বুঝতে পারে না। নাসীরা পারভীন দুদিন দেখেননি৷ দুদিন পর ওর সাথে গল্প করতে করতে যখন তিলো প্রাণ খুলে হাসছিলো তখন তিনি বিষয়টা আবিষ্কার করেন। তিলো আগে বলেনি, বকা খাওয়ার ভয়তে। আর রেজা খেয়াল করেছে! তিলো তো ওদের সামনে অনেক অল্প কথা বলেছে। হাসেনি। এতটুকুতেই খেয়াল করেছে। রেজা ওর এই কৌতুহল না মিটিয়েই ফোন কেটে দিলো। তিলোর ইচ্ছা করছে জানতে যে, রেজা এতোটাই সূক্ষ্মভাবে ওকে পর্যবেক্ষণ করেছে। কিন্তু লজ্জায় পড়ে নিজে থেকে ফোন করলোনা।

রেজার সাথে কথা শেষ করে তিলোর বেশ ভালোই লাগছে। সারাদিনের মন খারাপটা নেই। নাহ্। লোকটা ভালোই। তিলোকে তার প্রথম প্রেমের গল্পও সংক্ষেপে শুনিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, তিলোকে সে যথেষ্ট সম্মান দিয়েই কথা বলেছে। লোকটা দেখতেও খুব একটা খারাপ না৷ খাটো এবং টাক। এটুকুই। চেহারা দিয়ে কি হবে? মানুষের মানসিকতাই তো আসল। বয়স একটু বেশিই বেশি। মানিয়ে নেওয়া যায় কি?

তিলো আরও ভাবছে, এই বিয়েটা করলে ফাহাদকেও দেখিয়ে দেওয়া যাবে যে, সেও তাকে ছাড়া নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে জানে। নাসীরা পারভীনকে কিভাবে দোষ দেবে ও? প্রতিটা বাবা মাই চায় তাদের সন্তান ভালো থাকুক। আর সমাজের প্রেক্ষাপটে, টাকা ছাড়া জীবন অচল৷ সমাজের পরিবারগুলোও জামাইয়ের পেশার সাথেই মেয়ে বিয়ে দেয়। কোন বাবা তার মেয়েকে একটা বেকারের হাতে তুলে দেন? একটা সন্তান যখন পৃথিবীতে আসে, তখন তাদের মৌলিক চাহিদাটুকু মেটানোর জন্য হলেও তো বাবা মা আয় রোজগার করেন। টাকা ছাড়া ভালো স্কুলে পড়াতে পারবে না। ভালো ভালো খাবার খাওয়াতে পারবে না। ভালো চিকিৎসা দিতে পারবে না। সবকিছুই অর্থ কেন্দ্রীক বানিয়ে ফেলেছে মানুষ।

তিলো এতোটাও না ভেবে, কিছুটা ভাবলো সারারাত বসে। সিদ্ধান্ত নিলো, সে রেজাকে বিয়ে করবে। রেজা এখনো ওকে সময় দিয়েছে ভাবতে৷ বলেছে অমত থাকলে বলতে। যদি বাড়িতে ও না বলতে পারে তবে রেজাকে বললে রেজা নিজেই বিয়ে ভেঙে দেবে। তবে তিলো ফজরের সময় ওর মাকে নিজের মতামত জানিয়েই দিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here