প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল – ১০
_________________________
রাতের দুটো বাজছে৷তন্ময়কে শাহজাহান বাড়িতে দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় উপস্থিত সকলেই৷ তাকে দেখে সবাই খুশি হবে নাকি চিন্তা করবে বুঝে উঠতে পারছে না৷ মোস্তফা সাহেব ড্রয়িংরুমের চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে এলেন৷ সাথে দৌড়ে এসেছে অরুও৷ দীপ্তর ‘ তন্ময় ভাইয়া ‘ চেঁচানো শুনে অরুর ঘুম ভেঙে গিয়েছে৷ সে আপাতত ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তন্ময়ের দিক৷ সুমিতা বেগম এবং মুফতি বেগম কি রেখে কি করবেন দিশে পাচ্ছেন না খুঁজে৷ রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের পানি বসিয়ে দিয়েছেন দ্রুত৷ তন্ময় এসেই হাতের সব ডক্যুমেন্টস পেপার্স টি-টেবিলে ছুঁড়ে মারল৷ মোস্তফা সাহেব তখন টি-টেবিলের সামনেই৷ এসব ডক্যুমেন্টস দেখে তিনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন৷ ছেলে তার নিশ্চয়ই কোম্পানির আপ-ডাউন সম্পর্কে জেনেছে। শান্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসলেন৷ ছেলের চোখে চোখ না রেখে বললেন,
– বিজনেস নদীতে ভেসে যাক৷ তাতে তোমার কী? তোমার তো কিছু না! বাবার অল্পকিছু কথাতেই রেগে কোম্পানি ছেড়েছ৷ তোমার মা আমার কিছু কথায় ঘরবাড়ি ছেড়েছে৷ ভালো কথা! এখন কোম্পানি ভেসে যাক, ঘরবাড়ি উড়ে যাক৷
তন্ময় উলটোদিকের সোফায় বসেছে৷ ডক্যুমেন্টস গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোস্তফা সাহেবের দিক এগিয়ে দিয়ে বলল,
– দাদার একটা কথায় তুমি শহর ছেড়েছিলে৷ আমিতো শুধুমাত্র কোম্পানি ছেড়েছি৷
– এখন তুমিও কী শহর ছাড়তে চাচ্ছ নাকি?
– আমার বাবার মতো অতটা চাইল্ডিশ আমি নই৷
আনোয়ার সাহেব মুখ চেপে হেসে উঠলেন৷ মোস্তফা সাহেব চোখ রাঙাতেই চেহারা শক্তপোক্ত করার মিথ্যে চেষ্টা করলেন৷ তন্ময় বলল,
– যোগ্যতা প্রমাণ করতে বলেছ৷ যোগ্যতা প্রমাণ করে দিলাম৷ তোমার টাকাপয়সা, দামী গাড়ি ব্যবহার না করে চলতে পেরেছি ৷ অন্যের কোম্পানিতে চাকরিও করতে পেরেছি৷
তারপর ডক্যুমেন্টের ফ্রোন্ট পেইজ মেলে দিয়ে পুনরায় বলল,
– এসব কিছুর লিস্ট আমার চাই৷ গতকালেরর মধ্যে উল্লেখ্য সবগুলো কর্মচারীকে ডিসমিস করে দিবে৷ একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং বসাবে, বাকি কথা আমি কালই বলবো৷ শুভ রাত্রি!
তন্ময় উঠে চলে যাচ্ছে৷ সুমিতা বেগম পিছু
ডাকল,
– তন্ময়!
– মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে এক্ষুনি ফিরতে হবে চাচী!
তন্ময় বেরিয়ে গেল৷ মোস্তফা সাহেব তখনো বসে৷ ডক্যুমেন্টসের দিক তাকিয়ে৷ ওহী সাহেব ভাইয়ের পাশে বসলেন। বড়ো ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখতেই, মোস্তফা সাহেবের কাঁধ কাঁপা উপলব্ধি করতে পারলেন৷ মোস্তফা সাহেব তখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, ছেলের কথাগুলো। ছেলের এসব কথাবার্তা বা কাজ একটা দিকে ইশারা করছে, তার ছেলে কাল থেকে নিজেদের কোম্পানিতে ফিরে আসবে৷ ওহী সাহেব হাসিমুখে বললেন,
– আমি ফ্ল্যাটের লোকেশন দিয়ে, তন্ময়ের ম্যানেজারকে বলে দিচ্ছি গাড়ির চাবি নিয়ে সকালে পৌঁছে যেতে?
মোস্তফা সাহেব মাথা দোলালেন৷ আনোয়ার সাহেব বললেন,
– এইভাবে একদিন বাড়িতেও ফিরে আসবে ভাই৷ আপনি চিন্তা করবেন না৷
মোস্তফা সাহেব তো তাই চান৷ সেদিনের ভুলের মাসুল তো দুবছর ধরে গুনছেন৷ আর কতো? আর পারছেন না তিনি৷ ছেলে, স্ত্রী ফিরে আসুক, আপাতত শুধু এটাই তার চাওয়া৷
অরু তখনো দরজার দিক তাকিয়ে৷ ভ্যালেন্টাইন্সের সুন্দরতম তার তন্ময় বেশিদিন টিকলো না, আহারে!কয়েকদিন আগে আবেগে আপ্লূত হয়ে কল দিয়েছিল বলে খুব বড়সড় ধমক খেয়েছে তন্ময় থেকে৷ ধমকে ধমকে অরুকে শেষ করে দিয়েছিল। অভিমানে সে আজ দুদিন তন্ময়কে কল দেয়নি৷ কিন্তু তিনদিনের বেলায় ঠিকই কল দিয়ে কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে ফেলল৷
– একটু কথা বললে কী হয়?
– অনেক কিছু হয়৷
– যখন মেয়ে ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলেন, তখন কেন কিছু হয়না!
– কারণ তারা মেয়ে ফ্রেন্ডস৷
– আপনার কাছে কার গুরুত্ব বেশি?
– আপাতত কাজের গুরুত্ব বেশি৷ ফোন রাখ৷
– আমারও তো পড়াশোনা আছে৷ আমি আমার পড়াশোনা থেকে আপনাকে বেশি গুরুত্ব দেই৷
– দে না করেছে কে!
– তাহলে আপনি আমাকে কেন গুরুত্ব দেন না! আমি একাই কেন আপনার এতো গুরুত্ব দেই! আপনাকে নিয়ে এতো ভাবি কেন! আপনি আমাকে একটুও পছন্দ করেন না৷ আমাকে নিয়ে একটুও ভাবেন না৷
অরু নিজের কন্নার শব্দে তন্ময়ের মিষ্টি হাসির শব্দ মিস করে গেল৷ সে শুধু শুনল,
– ফোন রাখ৷
তন্ময় যেমন অরুর কান্নাকাটি শুনেনা৷ তেমন ভঙ্গিতে কল কেটে দিল৷ তারপর মাসখানেকের মধ্যে কলেজ পোগ্রাম শুরু হয় অরুর৷ প্রোগ্রাম শেষ করেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের টেস্ট শুরু হয়ে গিয়েছে তার৷ পড়াশোনার চিন্তাভাবনা মাথায় গেঁথে আছে দেখে, তন্ময়ের চিন্তাভাবনা নিতে পারছেনা৷ তাই ডিসিশন নিয়েছে কিছুদিন তন্ময়কে কল, ম্যাসেজ করে বিরক্ত করবেনা৷ এভাবেও সে খেতে নিলে বা পড়াশোনায় ডুবলে পৃথিবীর সবকিছু ভুলে যায়৷ এমনকি তন্ময়কেও৷ কাল অরুর হায়ারম্যাথমেটিকসের এক্সাম৷ সন্ধ্যায় বইখাতা নিয়ে দৌড় লাগিয়েছে তন্ময়ের বাসায়৷ কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে৷ আসায় আছে জবেদা বেগম দরজা খুলে দিবে৷ কিন্তু তার সামনে স্বয়ং তন্ময় দাঁড়িয়েছে৷ তন্ময়কে দেখে অরু অবাক হলো বটে৷ কিন্তু তার অবাক হওয়ার সময় নেই৷ সে তন্ময়কে সরিয়ে গটগট করে ঢুকে গেল ভেতরে৷ টেবিলে বইখাতা বিছিয়ে বসে পড়ল৷ যেসব ম্যাথ সে বুঝতে পারছেনা খোলাখুলি তুলে ধরলো তন্ময়ের সামনে৷ কিন্তু তন্ময়ের জবাব নেই৷ জবাব নেই কেন? অরু চিন্তিত ভাবে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল৷ তন্ময় বুকে দুহাত পেঁচিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে৷ অরু ডাকল,
– ভাইয়া?
তন্ময়ের কাঁটা গায়ে যেমন নুনের ছিঁটে লাগলো৷ ছ্যাত করে উঠে অরুকে চোখ রাঙিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল৷ আশ্চর্য! অরু বই হাতে তার পিছু ছুটেছে৷ দ্রুত ছুটতে গিয়ে পিছলে পড়তে নিয়ে, পেছন থেকে তন্ময়ের টি-শার্ট টেনে ধরলো৷ ছিঁড়ে যাবার মতো শব্দ হলো মুহুর্তেই৷ অরু দ্রুত ছেড়ে দিলো টি-শার্ট৷ বোকার মতো চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো৷ ছেঁড়া টি-শার্ট পরিহিত তন্ময় অরুর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে৷ মুখের সামনে ঝুকে প্রশ্ন করলো,
– আমাকে ফ্রী পেয়েছিস?
– না তো!
– যখন তখন আমার কাপড়চোপড় ছিঁড়ে ফেলিস, ভিজিয়ে দিস৷ এখানে সেখানে ধরিস৷ সেইম টু সেইম আমি করলে কেমন হবে?
– শোধবোধ হবে৷ আমি কি পানি নিয়ে আসবো?
তন্ময় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চলে গেল৷ অরু আশেপাশে নজর বুলিয়ে খেয়াল করলো জবেদা বেগম কোথাও নেই৷ অরু উচ্চস্বরে ডাকতে
লাগলো,
– বড়ো মা? ওই বড়ো মা!
জবাব না পেয়ে, অরু ভয় পেয়ে বলল,
– বড়ো মা কোথায়? দেখছি না কেন? বাইরে গেছে বুঝি?
তন্ময়ের জবাব নেই৷ অরুর একটু খটকা লাগলো৷ তন্ময়ের নিশ্চয়ই মেজাজ ভালো নেই৷ রেগে আছে লোকটা৷ রেগে থাকলেই এমন নিশ্চুপ থাকে এবং জবাব দেয়না। অরু সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ৷ অনেকগুলো ইম্পর্ট্যান্ট ম্যাথম্যাটিকস বুঝতে পারছেনা। ভেবেছে তন্ময় থেকে বুঝবে তাই বাসার শিক্ষককে আসতে বলেনি৷ এখন তো মনে হচ্ছে আসতে বলতে হবে৷ অরু আবারো দৌড় লাগালো টেবিলে৷ বইপত্র গুঁছিয়ে নিলো৷ সে এখন বাড়িতে গিয়ে চাচ্চুকে বলবে, তার হোম টিচারকে এক্ষুনি আসতে বলতে৷ ম্যাথম্যাটিকস যতটুকু পারবে বুঝিয়ে দিবে৷ অরু বেশকিছু ম্যাথম্যাটিকস কভার করে ফেলেছে৷ তাড়াহুড়ো করে বেরোতে গিয়ে, চেঁচিয়ে উঠলো৷ হুট করে ইলেকট্রিসিটি চলে গেল৷ অন্ধকারে অরু ভীষণ ভয় পায়৷ বলা যায়, তার ফোবিয়া আছে অন্ধকারে৷ বইপত্র ফেলে দৌড় লাগালো অন্ধকারের মধ্যে৷ সামনে যা পেয়েছে সেটাই জাপ্টে ধরলো৷
– তন্ময় ভাইয়া লাইট কীভাবে গেল?
– আমি কীভাবে বলবো?
– দেখেন না কেন গেল! আমি ভয় পাই৷
– পেতে থাক৷
– মানে? কথা বলেন না কেন! আমি কিন্তু..
– কিন্তু, কী করবি?
অরু ভয়ে একপ্রকার তন্ময়কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে,
– কিছুই করবো না৷ আপনি প্লিজ দেখেন না কি হইছে! নাহলে দরজাটা খুলে দেন, আমি বাসায় যাবো৷
– যা ধরেছে কে তোকে!
– অন্ধকারে কিভাবে যাবো? আপনার মোবাইলের ফ্ল্যাসলাইট ওন করেন না৷
– করবো না৷
তন্ময়ের ত্যাড়াত্যাড়া কথা শুনে অরুর গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ৷ আচমকা তার গাল চেপে ধরলো তন্ময়৷ ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো অরু৷ এতো শক্তি দিয়ে ধরেছে যে তার চোখজোড়া ভিজে উঠেছে৷
– আমি কিন্তু কেঁদে দিব।
– কেঁদে দে৷
– আমি কিন্তু হাঁচি দিব৷
– দে৷
নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
– দেখুন না লাইট ফাইট আছে নাকি কোথাও!
-ছাড় আমাকে৷ দেখি গিয়ে!
– না না আমি ভয় পাই৷ এভাবেই চলুন৷
দিশেহারা অরু অনুভব করলো তন্ময় ঠাঁই দাঁড়িয়ে৷ তাকে যেতে না দেখে অরু বলল,
– কি হলো? চলুন!
– তোকে কল দিয়েছিলাম, ধরিস নাই কেন?
– আমার ফোন তো বড়ো চাচ্চু নিয়ে গেছে৷ পরিক্ষা শেষ না হওয়া অবদি আর দিবেনা৷
তন্ময়ের জবাব এলো না৷ হঠাৎ তন্ময় তাকে ছেড়ে চলে গেল৷ অরু চিৎকার চেঁচামেচি করবে এর পূর্বেই ইলেকট্রিসিটি চলে এলো৷ বুকে থুঁ থুঁ ছিটিয়ে অরু আশেপাশে তাকাল৷ ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল৷ তন্ময় ফিরে এসে বলল,
– যা টেবিলে বোস!
অরু দ্রুত পায়ে টেবিলে গিয়ে বসলো৷ তন্ময় এসে তার পাশে বসেছে৷ অরু নিজেকে পড়াশোনায় ডুবাতে তৈরি৷ হুট করে তার চোখ গেল তন্ময়ের গলায়৷ লোকটার গলার মধ্যে উঁচু হয়ে আছে৷ এটাকে যেনো কী বলে? কলারবোন? দেখতে খুব আকর্ষণীয় লাগছে৷ ইচ্ছে করছে ধরতে৷ অরু নিজের হাত জোড়া গুটিয়ে ফেললো৷ ওটা ধরলে তন্ময় তাকে জিন্দা মাটিতে পুঁতে দিবে৷
– এভাবে হবে, বুঝেছিস?
তন্ময়ের কন্ঠে ভড়কে গেল অরু৷ বাজে চিন্তাভাবনায় বিভোর সে ম্যাথে মনোযোগ দেয়নি৷ তাহলে বুঝবে কীভাবে? নিজেকে মনেমনে বকাঝকা করে ভয়েভয়ে বলল,
– আরেকবার বুঝিয়ে দিবেন?
তন্ময় তার হাতের কলম ফেলে দিলো৷ চেয়ারে হেলান দিয়ে দুহাত বুকে গেঁথে তাকিয়ে রইলো৷ যেমন অরুকে খেয়ে ফেলবে৷ চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে এক্ষুনি৷ চোখ পিটপিট করে অরু ধীরে বলল,
– আপনি আমাকে কেন কল করেছিলেন?
– তোর কি মনে হয়? কেন করেছি?
– বকাঝকা করতে?
– থাপড়ে দাঁত ফেলে দিতে৷
– কল করে দাঁত ফালানো যায় নাকি?
– সামনে আছিস ফেলে দেখাব?
– না না৷
গম্ভীর স্বরে তন্ময় বলল
– চুপচাপ মনোযোগ দে!
অরু রোবটের মতো মাথা দোলাল৷
——-
শাবিহার ইদানীং অয়নের আপনি বলাটা পছন্দ হয়না৷ মনে হয় সে খুব বড় অয়নের৷ হ্যাঁ অবশ্যই শাবিহা অয়নের বড়, তাই বলে কী বারবার মনে করিয়ে দিয়ে, কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটে দিবে নাকি?
আজকাল অয়নকে দেখা যায়না। খুব ব্যস্ত হয়ে গেছে৷ শুনেছে অয়ন তার বাবার বিজনেসে হাত লাগিয়েছে৷ কিছুদিন আগে চট্রগ্রাম গিয়েছে সেখানকার বিজনেসের ফিন্যান্সিয়াল অবস্থা দেখতে৷ এখনো ফেরেনি৷ শাবিহা স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার চারপাশে নজর দিচ্ছে৷ যেমন উড়ে অয়ন তার সামনে উপস্থিত হবে৷ বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসেছে৷ ফোনে বেশ কয়েকবার নজর দিলো৷ অয়ন কখনো ফোনে কল করেনি৷ বলা যায় তাদের কখনো ফোনে কথা হয়নি। সবসময় সামনাসামনি কথা হয়েছে৷ কিন্তু তার মন বলছে আজ অয়ন কল করবে৷ এবং মনের কথা সত্যি হয়ে অয়নের কল চলে এলো৷ দরজা লাগিয়ে সময় নিয়ে কল ধরলো শাবিহা৷ খুবই নার্ভাস সে৷ অয়নের সাথে কথা বলতে গেলেই এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়৷ লজ্জা, সংকোচ ঝেঁকে ধরে তাকে৷ বারবার মনে করিয়ে দেয় অয়ন তার ছোট৷ সে অয়নের বড়ো৷ আর এই সম্পর্ক ভীষণ লজ্জাজনক৷ মানুষ হাসবে তার উপর, তাকে কথা শোনাবে৷ এই বিষয় গুলো মস্তিষ্কে এলে কিছুই আর ভালো লাগেনা শাবিহার। ওপাশ থেকে অয়নের গভীর স্বর,
– শাবিহা!
– হু৷
– খেয়েছেন?
শাবিহা মিথ্যে বলে দিল,
– হ্যাঁ৷
– সত্যি? মাত্র আটটা৷ আপনি তো এতো তাড়াতাড়ি ডিনার করেন না।
– আজ করেছি৷
– মেনে নিলাম তাহলে৷ আমাকে মিস করছেন?
অয়নের স্বরে দুষ্টুমির আভাস৷ শাবিহা বলল,
– না৷ মিস করছি না!
– প্রয়োজন নেই৷ আমিতো আপনাকে ভীষণ মিস করছি৷ এবং হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করছি আগেকার রাজাদের কষ্ট৷ শুনেছি তাদের খুবই কষ্ট হতো সুন্দরী স্ত্রী ফেলে নিজের রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে ভ্রমণে যেতে৷ আমিতো ভাই এক শহর থেকে আরেক শহরে গিয়েই পাগল হয়ে গেছি৷
শাবিহার ঠোঁটে চলে এসেছিল, ‘ আমি কি তোমার স্ত্রী নাকি? ‘ কিন্তু সেটা ভাবতেই ভীষণ লজ্জা পেল৷ তাহলে বলবে কীভাবে? এই বিষয়ে কথা বলা অসম্ভব৷ পারবেনা সে৷ বরং বলল,
– তোমার কাজ নেই?
– আছে তো৷ কিন্তু কাজের থেকে আপনি বেশি ইম্পর্ট্যান্ট৷
– রাখি!
– না একদম না৷ আপনাকে কতটা মিস করছি জানেন?
শাবিহা চুপ হয়ে রইলো৷ অয়ন হেসে বলল,
– আপনার জন্য কি আনব? কী চাই আপনার শাবিহা?
– কিচ্ছু না৷
– শুনেছি আপনার নুপুর খুব পছন্দ!
– একদম না৷
– তাহলে কানের দুল?
– না৷
– নাকফুল?
– অয়ন!
অয়ন হো হো করে হাসছে৷ পরপরই শোনা গেল একজন গম্ভীর স্বর৷ যেমন কেউ ওপাশ থেকে অয়নকে ডাকল৷ অয়ন বলল,
– ডাকছে৷ রাখি এটি হ্যাঁ?
– আচ্ছা৷
কল কাটার পূর্বে অয়ন বলে গেল,
– আম মিসিং ইউ অ্যা লট!
ফোনের দিক তাকিয়ে রইলো শাবিহা৷ মনপ্রাণ, মস্তিষ্ক শরীর সবকিছু হালকা লাগছে৷ একটা চাপা কষ্ট গায়েব হয়ে গিয়েছে বুক থেকে৷ এখন শুধু ভালোলাগা বিরাজমান৷ শাবিহার ভাবতেও লজ্জা লাগে, অতটুকু ছেলের প্রেমের কথায় সে অনুভূতি পায়৷ ভালোলাগায় মন ছেয়ে যায় তার৷ অয়ন কি জানে সে কতটা দুর্বল করে ফেলেছে শাবিহাকে? শাবিহা ঠিক কতটা তাকে নিয়ে ভাবে জানে? কতটুকু অনুভূতি অনুভব করে আন্দাজ আছে ছেলেটার?
চলবে
কতটা কষ্ট করেছি আপনাদের ধারণা আছে? বাড়িতে বিয়ে৷ আমি সবকিছু থেকে মুক্তি পেয়েছি রাত বারোটায়৷ দু ঘন্টায় লিখে রাত দুটো উনিশে আপলোড করছি৷