পুড়ে যাওয়া হাত নিয়ে কষ্ট করে রান্না করছে শ্রেয়া।এমন না যে তার আশেপাশে কেউ নেই। বিয়ের বয়সী দুজন ননদ আছে।সুস্থ শাশুড়ি মা আছে।কিন্তু সকাল বেলা সবার জন্য ভিন্ন আইটেমের ব্যাবস্থা শ্রেয়াকে একাই করতে হবে।শ্রেয়ার শাশুড়ি রুবিনার ভাষ্যমতে,”আমি অসুস্থ মানুষ।বেশি কাজ পারি না।আমার মেয়েরা এখন রান্না বান্না কাজ কর্ম করলে সুখ করবে কোন সময়?তুমি এখন এই বাড়ির বউ হয়ে এসেছো।তোমাকেই সব করতে হবে।”
শ্রেয়া প্রতিবাদ করেনা।বিয়ের পর প্রথম দিক একবার তার মা সৃষ্টি বেগমকে বলেছিলো একদিন।সৃষ্টি বেগমের ভাষ্যমতে,”বিয়ের পর মেয়েদের জীবন পাল্টে যায়।ওমন একটু আধটু হয়।মানিয়ে নেও।বউ হয়ে এত খুদ ধরতে নেই।বাচ্চা কাচ্চা হলে সবকিছু তোমার দখলেই আসবে।”
শ্রেয়া তার মায়ের থেকে এসব শুনে বোবা হয়ে থাকতো।মাঝে মাঝে কোনো কাজে ভুল হলে শ্রেয়ার স্বামী রনি ঠাস করে তার গালে থাপ্পড় দিলে শ্রেয়া অভিমান করে থাকতো।কিন্তু কেউ এমন ছিলো না যে তার অভিমান ভেঙ্গে দিবে।এখন সেই শ্রেয়া গড়ে উঠেছে রোবটের ন্যায়।যে যা বলে শ্রেয়া তাই করে।এই যে আজ তার হাত পুরে গেছে।শ্রেয়ার ছোট ননদ রুমা দেখেছে।কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া না করেই সে তার মতো ব্যাস্ত থেকেছে।শ্রেয়ার কষ্টগুলো মাটি চাপা দিয়েই রেখেছে।বাবা নেই তার।পুলিশ ছিলেন তিনি।রিটায়ার্ড করার কয়েক মাস পর মারা গেছে।ছোট বোন রিমলি এখন এসএসসি দিয়েছে।তার পিছনে খরচ তো আছেই।শ্রেয়া গ্রামের সরকারি কলেজ থেকে বিবিএ কমপ্লিট করেছে।বাসা থেকে কলেজ আবার কলেজ থেকে সোজা বাসা।মায়ের করা নজরে থাকতো সে।মায়ের বাধ্য মেয়ে শ্রেয়া।তাকে যা বলা হয় সাথে সাথে করে দেয়।বাবা বেঁচে থাকলে আজ শ্রেয়া আরো পড়াশোনা করতে পারতো।আর নিজের মতো একটা চাকরি জোটাতে পারতো।শ্রেয়াকে নিয়ে তার বাবা দেখেছিলো অনেক সপ্ন।বাবার মারা যাওয়ার দুই কি তিন মাস পর শ্রেয়ার বিয়ের সম্মন্ধ আসে।শ্রেয়ার প্রতিবেশীর আত্মীয় রনিরা।সরল সহজ ঘরকুনো শ্রেয়াকে পেয়ে বাড়ির বউ করে নেন রুবিনা।
পোড়া হাত নিয়ে রান্না করতে করতে পুরনো বাবা মেয়ের স্মৃতিগুলো কল্পনা করছিলো শ্রেয়া।চোখ থেকে পানিও পড়ছে তার।হঠাৎ স্বামী রনির চিৎকার কানে ভেসে এলো।রনি বলে,”আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।মহারানীর রান্না কতদূর?আজকাল দেখছি সময়মত খাবারটাও পাবো না।”
রনির কথা কানে ভেসে আসতেই শ্রেয়া তাড়াহুড়া করে খাবার বাড়তে লাগলো।টেবিলে নিয়ে সাজিয়ে দিলো খাবারগুলো।গলা উঁচিয়ে একটু জোরে বলে,”খাবার রেডি আসতে পারো।”
একেক করে ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে আসে।কি অদ্ভুত বিষয়।রান্নার সময় শ্রেয়ার হাত পোড়ার চিৎকারে কেউ আসেনি কিন্তু এই পোড়া হাতের রান্না খাওয়ার জন্য একবার ডাকতেই সবাই হাজির।শ্রেয়া হাসি মুখে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়।সবাই দিব্বি খেয়ে নিলো।কেউ একটু তার হাতের খোঁজ নিলো না।শ্রেয়া নিজেই তাকালো তার পুড়ে যাওয়া হাতের দিকে।করাইতে তেল বসিয়ে দেওয়ার পর অপেক্ষা করছিলো।তেল হালকা তেতে আসলেই পেঁয়াজ কুচি দিবে।কিন্তু তেল গরম হওয়ার সাথে সাথেই শ্রেয়ার ননদ সেখানে আসে পাশে থাকা ফ্রিজ থেকে বরফ নিতে।বরফ দিয়ে এখন সে মুখে ম্যাসাজ করবে।শ্রেয়া পেঁয়াজ হাতে নিয়ে কড়াইয়ের উপরে আসতেই ওর ননদ এসে ধাক্কা দেয়।ডান হাতের বুড়ো আংগুল কড়াইয়ের কোনায় লেগে পুড়ে যায়। রুমার হাতে থাকা বরফের টুকরো থেকে এক টুকরো বরফ তেলের উপর পড়তেই তেল ছিটে আসে শ্রেয়ার হাতের তালুতে।বেশ জোরেই চিল্লিয়ে বলে,”আঃ।”
কিন্তু কেউ আসলো না তার কাছে।উল্টো রুমা মুখ ভেংচিয়ে বলে,”সং সেজে দাড়িয়ে ছিলে কেনো?একটু সাইড হলেই তো হয়।”
অথচ পিছনে অনেক জায়গা ছিলো।যেখান থেকে রুমা নিজেই যেতে পারতো।তারপর শ্রেয়াকে এই হাত দিয়ে ঝাল বাটা লেগেছে। হাতের পোড়া জায়গাগুলো ফুলে ছিলো। বাটাবাটি করতে যেয়ে শ্রেয়ার পোড়া জায়গাগুলো ফেটে পানি বের হয়।ঝাল বাটে কারণ রুবিনা ঝাল বাটা তরকারি খেতে খুব ভালোবাসে।মন মতো তরকারি না হলে শ্রেয়ার অনেক কথা শুনতে হয় সাথে রনির কাছে মার তো খাবেই।আজকে শ্রেয়ার হাত পুরো লাল হয়ে আছে।একটু রনির দিকে তাকালো।সে তার ফোন নিয়ে ব্যাস্ত।মনের মধ্যে অভিমান জমা হলো শ্রেয়ার।কিন্তু কিছু বললো না।রনি তার মতো খেয়ে চলে গেছে।
ঘরের সব কাজ শেষ করে একটু বসলো শ্রেয়া।এইতো একটু পরেই দুপুরের রান্নার ব্যাবস্থা করতে হবে।এর মধ্যেই শ্রেয়ার হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ আসলো।শ্রেয়ার বান্ধবী অর্পা ওকে ম্যাসেজ দিয়েছে।বললো,”বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে একটা ম্যাসেজ দিবি।আমিও তখন বের হবো। তোর শাশুড়ি সংসার এর চক্করে আমাকে দুইদিন রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে চলে যেতে হয়। আর এমন পরিস্থিতি চাই না।তুই আগে বের হবি তারপর আমি আসবো।”
ম্যাসেজ দেখে হেসে দেয় শ্রেয়া।এই অর্পা আর রিমলি আছে বলেই শ্রেয়া আজ হাসিখুশি।বেস্ট ফ্রেন্ড আর বোন সময় না দিলে শ্রেয়া এতটাও শান্তিতে থাকতে পারতো না।অর্পাকে লিখে দেয়,”আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বের হওয়ার পর তোকে ম্যাসেজ দিবো।”
বাড়ির কাচা বাজার ও ভিন্ন কেনাকাটার জন্য শ্রেয়াকে যেতে হয়।রনি ব্যাস্ত মানুষ।তাই বাজারের দায়িত্ব শ্রেয়ার। আর এই বাজারের সুযোগে প্রায় বান্ধবী অর্পার সাথে সাক্ষাৎ করে শ্রেয়া।আজকে শাশুড়ি ও ননদদের জন্য ফল আর বাদাম আনতে হবে।তাই আজ অর্পার সাথে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছে সে।
হাতির ঝিল এসে একটি বেঞ্চে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে দুই বান্ধবী শ্রেয়া ও অর্পা।বাজারের লিস্ট ও টাকাটা অর্পা ধরিয়ে দিয়েছে ড্রাইভারের হাতে।অর্পার শশুর বাড়ির নিজস্ব গাড়ি এটা।ড্রাইভারকে দিয়ে বাজার করতে দিয়ে দুই বান্ধবী এই সময়টুকু আনন্দ করতে থাকে।ছোটবেলা থেকে একসাথে পড়াশোনা করে খেলাধুলা করে বড় হয়েছে দুজনে।কথার মাঝে অর্পা চোখ গেলো শ্রেয়ার ডান হাতে।শ্রেয়ার হাতটি নিজের কাছে নিয়ে বলে,”নিশ্চয়ই হাত পুড়ে যাওয়ার পর কেউ দেখেনি। লাট সাহেবগুলো খুব ব্যাস্ত ছিলো তাই না?”
“এভাবে বলছিস কেনো?ওদের কত ব্যস্ততা।ওর তো অফিসে যেতে হয় ওর বোনদের পড়াশোনা আর মা তো নিজেই অসুস্থ।”
“তোর ওই শাশুড়ি মাকে তো আমি দেখি প্রায় টো টো করে ঘুরে বেড়ায়।কখন অসুস্থ থাকেন তিনি? আর তুই জানিস রোগ আসলে বাড়ে কিসে?রোগ বাড়ে অলসতায়।নিজেকে একটু খাটালে এই রোগ জমে থাকে না।”
“এই বয়সে খাটানো যায় নাকি?”
“ঘরে যে দুটো বড় বড় বিয়ের বয়সী মেয়ে রেখেছে।তাদেরকে দিয়ে কেনো কাজ করায় না?”
“ওরা পড়াশোনায় ব্যাস্ত। আর এমনিতে এখানেও কাজ করবে আবার শশুর বাড়িতেও করবে এটা হয় নাকি।এই যেমন আমি বাপের বাড়ি থাকতে আরামে কাটিয়েছি।এখন তো জীবন আলাদা।”
“শোন শ্রেয়া আমাকে ভূগোল বোঝাতে আসবি না।শশুর বাড়ি আমারও আছে।কই তারা তো এমন না।ননদ আমারও আছে। হ্যা একটু অহংকারী কিন্তু আমাকে কাজের উপর চাপিয়ে রাখে না।আমার স্বামী তো এমন করে না আমার সাথে।আমার সামান্য হাতে চোট লাগলে ও মলম লাগিয়ে দেয়। আর তোর হাতে তো বিন্দু বিন্দু করে অনেক জায়গায় পুড়েছে।বুড়ো আঙুলের কি বিশ্রী অবস্থা তোর আর হাতটি তো পুরোই লাল জমাট বেঁধেছে। আর কি কি করেছিস এই হাত দিয়ে?”
“প্রতিদিন যা করি।আমার শাশুড়ির তো ব্লেন্ডারের খাবার ভালো লাগেনা।তাই পাটায় বেটে রান্না করি। কাঁচা মরিচ বাটতে যেয়ে হাতে একটু লেগেছিলো এই আর কি।”
“তুই তো প্রতিদিন তাদের মন জুগিয়ে চলিস।আজকের একটা দিন কি খুব কষ্ট হয়ে যেত ভিন্ন রান্নার খাবার খেলে? অতটাও খারাপ লাগে না ব্লেন্ডারে রান্না করলে।অন্তত তোর অবস্থার দিকে তাকিয়ে।”
চোখ ভিজে আসে শ্রেয়ার।এরকম কতবার গেছে আসছে।সৃষ্টি বেগম সব জানেন।তিনি যখন সহ্য করতে বলে তখন আর শ্রেয়া কি করবে। রিমলি একটু প্রতিবাদ করতে চাইলে সৃষ্টি বেগম তাকেই আটকিয়ে দেয়।সবকিছু ভেবে শ্রেয়া বলে,”সবকিছু ছেড়ে ছুটে তোর কাছে আসি একটু শান্তির জন্য।এখন তুইও দেখছি এই নিয়ে পড়ে আছিস।ভালো লাগে না আর আমার এসব।”
“আ আচ্ছা দোস্ত সরি।আচ্ছা চল আজ রেস্টুরেন্টে যাই।ওখানে আজ ডিসকাউন্ট আছে।চল ছোটবেলার মত ডিসকাউন্ট দেখে ছুটে খাবার খেতে যাই।”
সম্মতি জানালো শ্রেয়া।উঠে গেলো দুজনে রেস্টুরেন্টের দিকে।হাসিখুশি হয়ে শ্রেয়া ও অর্পা হাঁটছিলো রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে। আর দুই পা হাঁটলেই রেস্টুরেন্টে ঢোকার দরজা।ঠিক ওই সময় কাচের দরজা দিয়ে শ্রেয়ার চোখ যায় রেস্টুরেন্টের ভিতরে।থমকে যায় শ্রেয়ার পা। রেস্টুরেন্টের ভিতরে একটি মেয়ের হাত ধরে ভালোবাসার পরশ দিয়ে যাচ্ছে রনি।মেয়েটির চোখে চোখ রেখে প্রণয় বাক্য আদান প্রদান চালিয়ে যাচ্ছে তারা। দেড় বছরের সংসারে কতকিছু সহ্য করে এসেছে অথচ যার জন্য এতকিছু সহ্য করা সে অন্য নারীতে মেতে আছে।শ্রেয়ার কাধে হাত রাখলো অর্পা।বলে,”কি হয়েছে চল ভিতরে।”
“ভিতরে যেতে পারবো না।”
“কেনো?”
“ওখানে রনি আছে তাও কি না অপ্রীতিকর অবস্থায়।”
অর্পা তাকালো শ্রেয়ার দৃষ্টি বরাবর।রনির গা ঘেঁষে বসে আছে মেয়েটি।রনির গালের কোনায় লিপস্টিকের ছাপ স্পষ্ট।অর্পা সেদিকে তাকিয়ে আবার তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়া নিশ্চুপ নিরবতা পালন করছে।কোনো হেলদোল নেই তার।অর্পা সুযোগ বুঝে কিছু ছবি তুলে নিলো।তারপর শ্রেয়ার হাত ধরে নিয়ে আসে আবারও হাতির ঝিলে।বলে,”এই অন্যায়ের কি বিচার করবি না?”
শ্রেয়া অসহায় দৃষ্টি দিলো অর্পার দিকে।বলে,”আমি একা কিভাবে অন্যায়ের বিচার করবো?মাকে তো বললে বলবে সহ্য করে নিতে।মায়ের একটাই কথা স্বামীরা এমন একটু আধটু হয়।আমাদের মানিয়ে নিতে হবে।আমার ফুফুর এমন হয়েছিলো। ফুফুকে মা বলেছিলো মানিয়ে নিতে।এই সমাজ নাকি ডিভোর্সি নারীকে স্বীকৃতি দেয় না। আর আমার কিছু হলে তার ইফেক্ট নাকি রিমলির উপরও পড়বে।ওর জন্য কোনো ছেলে পাবো না।”
“বাহ কি সুন্দর একটা যুক্তি দিলো। বড় মেয়ের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায় আর উনি দেখছেন সমাজ।কিন্তু এভাবে কি সংসার হয় বল?যেখানে তোর স্বামী অন্য নারীতে মেতে আছে।তোকে সুখে রাখে না তার সাথে কিভাবে থাকবি সুখে?”
“কি করবো আমি?আমার তো কোনো রাস্তা নেই।আমার বাবা বেঁচে থাকলে ছুটে বাবাকে বলতাম,বাবা তোমার মেয়ে সুখে নেই।তার সাথে এমনিতেই অন্যায় অবিচার হয় আর আজ তোমার মেয়ে তার স্বামীর আরেক রূপ দেখলো।বাবাকে বললে বাবা আমাকে গ্রহণ করতো।কিন্তু মা তো এমন না।বাবা মারা যাওয়ার পর কোনো মতে চলে যাচ্ছে।আমি নিজেই দেখছি মা কোনো মতে প্রায় সময় পান্তা ভাত খেয়ে বোনের পড়াশোনা চালায়।বাবার অল্প কয়টা রিটায়ার্ড এর টাকা।সংসার চলেই বা কোথায়?আমি যে কিছু করবো সে উপায় তো আমার জানা নেই।”
শ্রেয়ার কথাগুলো যুক্তি সম্মত।সংসার ত্যাগ করা সহজ কিন্তু তার পরের জীবন খুবই কঠিন।কতশত মেয়ে আছে স্বামী সংসার ছেড়ে আসার পর আরও বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছে।আবার এর পরে ভালো কোনো ছেলের সাথে বিয়ে হবে কি না এটার গ্যারান্টি বা কি?প্রিয় বান্ধবীকে নিয়ে ভাবতে লাগলো অর্পা।কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”আরে বোকা আমাদের তো বিবিএ কমপ্লিট। খুব হাই রেঞ্জের জব না পেলেও মান সম্মত জীবন চালানোর মত জব আছে।”
“কিন্তু আজকাল জবের জন্য যে দালাল লাগে।মানুষের কু নজর তো আছেই।আবার আজকাল চাকরি ক্ষেত্রে কিছু অ্যাডভান্স দেওয়া লাগে।আমি কোথায় পাবো এগুলো?”
“আমার শ্বশুরের নিজস্ব বিজনেস আছে।ওটা এখন আমার ভাসুর দেখে।উনি ওই ফ্যাশন হাউজের সিইও।ওখানে এখন নিয়োগ চলছে।তুই সেখানে জব করবি?আমি এতটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি আমার ভাসুর মানুষটা ভালো।একদম আমার বরের মতো।আমার শ্বশুর বাড়িতে যদি ভালো ব্যাবহার আর ভালো মনের কাউকে দেখে থাকি তারা হলো আমার স্বামী শশুর ভাসুর আর আমার কাকি শাশুড়ি। বাকিরা আছে একটু কেটকেটে কারণ আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি ওদের মত ওয়েস্টার্ন হয়ে চলি না।তবে আমার স্বামী ঠিক থাকাতে আমার জগৎ ঠিক আছে।অত কিছু বাদ।তুই চাকরি করবি কি না বল?তাহলে মিরাজের সাথে কথা বলে আমার ভাসুরের কোম্পানিতে জবের ব্যাবস্থা করে দিবো।”
“আমি পারবো কি না এটাই তো ভাবছি।”
“দেখ শ্রেয়া দুনিয়াটা না অনেক কঠিন।তুই যেভাবে আছিস তাকে বলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া।আজকে কালকে ছার দিতে দিতে তুই যে সারাটা জীবন এভাবে ভুগবি তুই বুঝতে পারছিস তোর ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?তুই ওই নোংরা পুরুষের থেকে সরে আয় আমি বলছি আমি তোকে সাধ্য মত সাহায্য করবো।তার আগে একটু মিরাজের সাথে কথা বলি।যদিও আমি আর মিরাজ মিলে ভাইয়াকে বোঝালে ভাইয়া রাজি হবে।”
“আর রনি কি আমাকে ছেড়ে দিবে?ও যদি আমার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে।”
“আমি সেই সুযোগ আসতেই দিবো না।প্রমাণ নিয়ে এসেছি।তোর হাতের স্পট তারপর এই ছবি এগুলো কি কম নাকি?শুধু ওই কাপুরুষকে শাস্তি দিতে হবে।সমাজে এদের মতো পুরুষদের জন্য মেয়েরা অবহেলিত।বর ঠিক থাকলে হাজার হোক শান্তিতে থাকা যায়।এতদিন যেভাবে থেকেছিলি আমি কিছু বলিনি।কিন্তু এমন বাজে লোকের সাথে থাকছিস অবশ্যই আমি এর প্রতিবাদ করতে বলবো।যেই মেয়ের সাথে তোর স্বামী ঘুরছে তাকেও তো সবটা বুঝতে হবে।”
“তুই একদম ঠিক বলেছিস।তুই আমাকে এই চাকরি দিতে পারলে আমি একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো দোস্ত।”
“শোন আমি চাকরী দিবো যেমন ঠিক তেমন আজকে থেকে তোকেও কিছু করতে হবে।”
“কি করতে হবে আমাকে?”
“আজ তোর স্বামী বাসায় আসার পর ফোনের ক্যামেরা অন রেখে তার সাথে ঝামেলা করবি।এগুলো থাকবে আসল প্রমাণ।তুই নির্যাতন সহ্য করেছিস তার প্রমাণ থাকবে। আর তোর বরের এসব বাজে কাজের প্রমাণ থাকবে।তাহলে আঙুল তোর দিকে না রনির দিকে আসবে। আর আমি আজকে ভাইয়ার সাথে কথা বলে তোকে জবের ব্যাবস্থা করে দিবো।তোর কোয়ালিফিকেশন দিয়ে জব হয়ে যাবে।শুধু তোর এই ভীত ভাব কমাতে হবে।একটা কথা মাথায় রাখবি তোকে দুর্বল করতে অনেক বাধা আসবে শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে কেউ পাশে না থেকে বড় বড় কথা বলে চলে যাবে।কিন্তু পায়ের নিচের মাটি শক্ত রেখে নিজের প্রতি কনফিডেন্ট রেখে তোকে একাই এগিয়ে যেতে হবে। তুই দুর্বল ছিলি বলেই তোকে সবাই পেয়ে বসেছে।এখন একটু কঠর হ দেখবি কেউ কিছু করতে পারবে না।”
“একদম ঠিক কথা বলেছিস তুই।আমাকে পরিবর্তন হতে হবে।তুই পাশে আছিস বলে আমি একটু স্বস্তি পেলাম।তোর মতো ফ্রেন্ড যেনো সব অসহায় মেয়ের হয়।”
বলেই অর্পাকে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়া।অর্পা মুচকি হেসে বলে,”আমার মতো ফ্রেন্ড পাওয়ার আগে দোয়া কর আমার বরের মতো বর যেনো সবার থাকে।ইনফ্যাক্ট শুধু আমার বর না আমার শ্বশুর বাড়ির অর্ধেক মানুষ অনেক ভালো।এমন পরিবার হলে আর কিছু লাগেনা।”
“আসলেই তুই লাকি।”
“তুইও লাকি হবি।শুধু ধৈর্য ধর।”
ড্রাইভার চলে এসেছে।শ্রেয়া ফল ও বাদাম নিয়ে ড্রাইভারকে বলে,”আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কাকু।”
“আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না মা।তোমার ব্যাপারে অনেক শুনছি অর্পা মায়ের থেকে।আসলে আমি আমার মেয়েটারে ছোট বেলা থেকে তৃপ্তি করে কিছু খাওয়াই নাই।ওর কোনো পছন্দের জামা কাপড় কিনে দেই নাই।মেয়েটাকে না দিয়ে সব ছেলের পিছনে শেষ করছি।অথচ ছেলে আমার সফল হয়ে আমাকে চেনে না।আমার মেয়েটা বেচে থাকতে ওর শশুর বাড়িতে থেকে অনেক নির্যাতন সহ্য করে মারা যায়।আমার নাতিরে পেটে নিয়েই অভিমান করে পরপারে চলে গেছে মেয়েটা।এখন বুঝি মেয়েটা কত অভিমান করেছে আমার উপর।আমার বড়লোক ছেলের বাপ হয়েও আমি আজ ড্রাইভার।এটাই হয়তো প্রকৃতির বিচার।তাই আমি নিজে থেকে অর্পা মাকে বলছি তোমার জন্য যতটুকু সাহায্য লাগে আমি করবো।তুমি মন খুইলা অর্পা মার লগে এইটুকু গল্প করবা।আমি এক অসহায় বাপ হইয়া নাহয় আপন মেয়ের সুখ না দেখলেও আরেক মেয়ের সুখ দেখলাম।এতেও কেন জানি আমার শান্তি লাগে।”
কথাগুলো বলতে বলতে লোকটির চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।শ্রেয়ার নিজেরও কান্না পায়।আসলে এই পৃথিবীতে একেক মেয়ে একেক দিক থেকে সুখে থাকে।কোনো মেয়ের বাবা তাকে মূল্য দেয় না আবার কোনো মেয়ের স্বামী মূল্য দেয় না।আবার কোনো কোনো মেয়ের বাবা স্বামী কেউই মূল্য দেয় না।যেমন এই ড্রাইভার আংকেলের মেয়ের জীবন।আবার কোনো কোনো মেয়ে তার বাবার কলিজা হয়ে থাকে।যেমন শ্রেয়া ও রিমলি। অর্পার মতো কিছু কিছু মেয়ে আছে ভাগ্য করে স্বামী পায়। অর্পা নিজেও কষ্ট করে বড় হয়েছ।কিন্তু ওর বর একজন আর্কিটেকচার।সেদিক থেকে তার মনে নেই অহংকার।অর্পাকে যথেষ্ঠ সম্মান করে। অর্পার ছোট ছোট ইচ্ছা পূরণ করে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে শ্রেয়া।
চলবে…?
#আশার_হাত_বাড়ায়
#পর্ব ১
#ইশরাত_জাহান
সিজন ১
#ক্রস_কানেকশন
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122112052544106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc