আশার_হাত_বাড়ায়|২| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
188

#আশার_হাত_বাড়ায়|২|
#ইশরাত_জাহান
🦋
বাড়িতে এসে ফল ও বাদামের প্যাকেটগুলো টেবিলে রাখতেই রুবিনার কটু বাক্য কর্ণপাত হলো শ্রেয়ার।
“মহারানীর তাহলে বাসায় আসার সময় হয়েছে।তো বাইরে কি এমন রাজ কার্য করেছিলে শুনি?আমার ছেলের পিছনে পিছনে কোনো সম্পর্কে যাওনি তো?”

বিদ্রুপের হাসি ফুটে এলো শ্রেয়ার ঠোঁটে।যে কাজ তার ছেলে করছে সেই কথাটি নিয়ে বলছে তাকে।শ্রেয়া ভদ্রভাবে বলে,”আসলে মা আজকাল বাজারে যে ভিড়।ফলের দোকানে থাকতে বেশি সময় লেগে যায়।বাকি দোকানগুলো তো বাদই দিলাম। আর বোনেরা(ননদ) তো আবার কিছু ফেস প্যাক এর কথাও বলেছিলো ওগুলো কিনতে হয় তাই।”

“বাহ এখন আমাদের দোষ দিচ্ছ ভাবী?তুমি নিজে দেরি করে আমাদের দোষারোপ করো এটা কেমন কথা।বাইরে যাবে তাই দুটো জিনিসের লিস্ট দিয়েছি।”
বলে ওঠে শ্রেয়ার বড় ননদ রুহি।

রুবিনা খোঁচা দিয়ে বলেন,”দেখ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে।ঠিকই বাইরে এতক্ষণ কার না কার সাথে ফুর্তি করেছিলো।”

“আসলে মা আপনি যেটা ভাবছেন ওটা আমি নাও করতে পারি।তবে অন্য কেউ করতে পারে।”

“কি বোঝাতে চাও তুমি?”

“কিছু না মা।আমি সন্ধার জন্য কি কি নাস্তা বানাবো বলে দিন।”

রুবিনা বলে,”আমার জন্য নুডুলস আর চা।”

রুহি বলে,”আমার জন্য বেগুনি আর রুমার জন্য আলুর পরোটা।”

রুহি আর রুমা শ্রেয়ার দুই ননদ।এরা কেউই কখনও শ্রেয়াকে সম্মান করেনি আজও করলো না।শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।রান্না করতে শুরু করলো শ্রেয়া এমন সময় তার মা তাকে কল করেছে।রিসিভ করতেই সৃষ্টি বেগম বলেন,”কেমন আছিস মা?”

“খারাপ থাকলেও তো তোমার যায় আসেনা মা।তাহলে জিজ্ঞাসা করো কেনো?”

“এটা কেমন কথা?তুই আর রিমলি তো আমার জীবন।তোদের সুখের কথা চিন্তা করেই তো আমি এতকিছু করি।”

“কি করছো এখন তুমি?”

“নকশী কাঁথা বুনছি রে।তোর জন্য একটা আর রিমলির জন্য একটা।তোদের দুই বোনের জন্য দুইটা আলাদা আলাদা কাঁথা।এবারের কাঁথা তোর আগে যেটা পছন্দ হবে ওটা তুই নিবি। রিমলিকে বলে দিয়েছি মেয়েটা আমার দূরে থাকে।ওর যেটা মন চাইবে ওটা নিবে।শশুর বাড়িতে তো আবদার করতে পারবি না।মায়ের কাছেই নাহয় আবদার করলি।”

শ্রেয়ার কান্না পাচ্ছে।মা তার জন্য সবকিছু করে।এখন যদি কথা আসে মেয়ের সুখের জন্য তার জীবন দিতে হবে সে নির্দ্বিধায় দিয়ে দিবে।কিন্তু সমাজের কথা ভেবে সে মুখ লুকিয়ে রাখে।পুরাতন সময়ের মানুষ তিনি।কোনো ঝামেলায় জড়াতে পছন্দ করেন না।আগেকার বউদের শিক্ষা দীক্ষা ছিলো ভিন্ন।ওরা সব সময় মুখ লুকিয়ে মাথা নত করে রাখতেন।সৃষ্টি বেগম হয়েছেন ঠিক তেমন।শ্রেয়ার বাবার অঢেল ভালোবাসা পেলেও তিনি ছোট থেকে শিক্ষা পেয়েছেন স্বামী যেমন রাখবে তোমাকে তেমন থাকতে হবে।এই শিক্ষাটা তিনি শ্রেয়া ও রিমলিকেও দিয়েছেন।এটা ভালো শিক্ষা হইলেও সব পুরুষের জন্য যে এই শিক্ষা সমান না এটা সৃষ্টি বেগমের মাথায় আসেনি।

শ্রেয়া কিছু একটা ভেবে সৃষ্টি বেগমকে বলে,”আচ্ছা মা।রনির যদি বাইরে কোনো নারীর প্রতি আসক্তি আসে আমার কি করা উচিৎ?”

থমকে গেলেন সৃষ্টি বেগম।তারপর বলেন,”এমনটা কেনো হবে শুনি?তুই কি কম সুন্দরী যে তোর বর অন্যদিকে যাবে।”

“যেতে কতদূর?”

“যদি যায় তাহলে আচল দিয়ে বেঁধে রাখবি।তোকে কতদিন বলেছি কাজ শেষ করে একটু নিজেকে পরিপাটি রাখবি।স্নো পাউডার মাখবি।তাহলে দেখবি বর তোর কাছেই থাকবে।ঘরের বিরিয়ানি বাসি হইলে ওমন একটু পান্তা ভাতে নজর দেয় কিন্তু বিরিয়ানি যখন আবার স্বাদের হয় তখন ঘরের মালিক সারা দুনিয়া ছেড়ে ঘরেই ফিরে আসে।”
(এটা এক দাদীর মুখে শুনেছিলাম।কেউ পার্সোনালি নিবেন না।দুঃখিত )

মলিন হাসলো শ্রেয়া।তার মা একবারও বললো না যে আমি আছি।তুই আমার সাথে আমার মতো অল্প দুটো খেয়ে থাকবি কিন্তু সুখে থাক।মা মেয়ে কিছু একটা জুটবে।উল্টো তার মা তাকে পুরনো কিছু বাণী শুনিয়ে দিলো।অবশ্য সৃষ্টি বেগম যে পরিস্থিতিতে আছেন তাতে করে নিজেই ঠিকভাবে চলতে পারেন না।দুই মেয়ে কিভাবে টানবেন?যে সমাজে বেঁচে আছে সে সমাজ প্রতি পদে পদে মানুষের পিছনে লেগে থাকে।নিজ স্বার্থ না থাকলেও মানুষ অন্যের পিছনে লাগতে খুব পছন্দ করে।এটা তাদের অভ্যাস।সেখানে শ্রেয়া ডিভোর্স হয়ে ফেরত গেলে নিজে তেমন কিছুই করতে পারবে না উল্টো সমাজ কুরে কুরে খাবে।এর থেকে এই ঢাকা শহরে থেকে তাকে নিজের পথ নিজে খুঁজে নিতে হবে।সুযোগ যখন আছে তার ব্যাবস্থা তাকেই করতে হবে।

মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে একেক জনের জন্য নাস্তা বানিয়ে নিলো শ্রেয়া।সবাই মিলে একেকজনের মনের মত খাবার উপভোগ করছে।কিন্তু শ্রেয়াকে একটুও বলছে না তাদের সাথে বসতে।শ্রেয়ার মনে পরে যায় তাদের বাসায় থাকতে পুরো পরিবার একসাথে অনেক আনন্দ করতো।শ্রেয়ার বাবা আসার সাথে সাথে শ্রেয়া ও রিমলি পড়ার টেবিল থেকে উঠে বারান্দায় আসতো।সৃষ্টি বেগম নাস্তা রেডি করে রাখতো।পুরো পরিবার একসাথে বসে খেতো।কেউ অভিমান করলে তার অভিমান ভাঙিয়ে দিতো।ছোট টিনের ঘরে থেকেও সুখ ছিলো শ্রেয়ার।এখন ঢাকার এত বড় ফ্ল্যাটে থেকেও সেই শান্তি পাচ্ছে না শ্রেয়া।

রনি এসেছে মাত্র।শ্রেয়া এখন কিছু বললো না। স্বাভাবিক ভাবে কেউ বাইরে থেকে আসার সাথে সাথে তার সাথে ঝগড়া লাগলে অশান্তি আরো বাড়বে।তাই শ্রেয়া এখন রাতের খাবারের ব্যাবস্থা করবে।

রান্না শেষ করে হাত মুছে যেই শ্রেয়া ফোন হাতে নিলো দেখলো অর্পার ম্যাসেজ।অর্পা বলে,”দোস্ত রনি ভাইয়ের ফোন পাসওয়ার্ড জানলে ওর গ্যালারি আর বিভিন্ন একাউন্ট দেখিস। আর কোনো প্রমাণ পেলে ছবি তুলে নিবি।”

শ্রেয়া লিখে দেয়,”আচ্ছা। ওদিকটার কি খবর?চাকরির কি ব্যাবস্থা হয়েছে?”

“বড় ভাই আসুক তারপর কথা বলছি আমি। মিরাজের সাথে কথা বলেছি আমি অনেক আগে।ও বললো বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলবে।তারপরও আমি আর মিরাজ মিলে কথা বলবো একবার।ওরা দুই ভাই একে অপরের কলিজা প্রায়।একজন আরেকজনের মুখ থেকে কিছু ইচ্ছার কথা শুনলেই পূরণ করে দেয়।এই যে আমাকে এই বাড়ির ছোট বউ করেছে।মিরাজ একবার বলেছে ও আমাকে ভালোবাসে আর বড় ভাই শশুর মিলে আমাদের বাসায় হাজির।”

অর্পা একটু বেশি কথা বলে।এটা ইচ্ছা করেই বলে।কারণ ও জানে ওর এই বেশি বেশি কথা বলাতে শ্রেয়ার মন ভালো হয়ে যায়।বিশেষ করে মানুষের মুখে পজেটিভ কথা শুনলে মন নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।শ্রেয়া অর্পার ম্যাসেজ দেখে হেসে দেয়।

****
গাড়িতে জানালার দিকে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মিমি।ড্রাইভ করছে ফারাজ।একবার মিমির দিকে তাকিয়ে দেখছে তো একবার ড্রাইভ করতে মন দিচ্ছে।কিছুক্ষণ এরকম করে ফারাজ বলে,”তা মামণি কি এমন হলো যে মুখ ফুলিয়ে আছো? পাপার দিকে তাকাবে না?”

“পাপা আমাকে এখন নাগরদোলায় উঠতে দিলো না কেনো?এমনিতেই আমার মন খারাপ আজ তার ভিতরে আমাকে খেলতেও দিলো না।”

সাত বছর বয়সী চঞ্চল মিমির এমন কথা শুনে হেসে দেয় ফারাজ।বলে,”এই রাতে নাগরদোলায় উঠলে তুমি অসুস্থ হয়ে যেতে মা।নাগরদোলায় এমনি একটু রিস্ক থাকে কিন্তু দিনে চারদিকে আলো জ্বলতে থাকে।তখন যত খুশি নাগরদোলায় উঠাবো।আজ প্লে গ্রাউন্ডের লাইট নষ্ট ছিলো। ওরা ঠিক করতেছে।আমরা নেক্সট দিন খেলবো না হয়। আর এমনিতেও তোমার মাইগ্রেইনের জন্য আমি তোমাকে এখন উঠতে দেই নি।সারাদিন অনেক লাফালাফি করেছো।পাপা এতটাও পঁচা না।”

“হ্যাঁ,পাপা অতটাও পঁচা না কিন্তু পাপা একটু একটু পঁচা।”

স্মিত হাসে ফারাজ।মেয়ের সাথে কথায় পারবে না।মন দিতে থাকলো ড্রাইভে।গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে।মিমি এখনও মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।জানালার দিকে মুখ তার।ফারাজ ব্যাক সিট থেকে একটি পুতুল নিলো।মিমির দিকে দিয়ে বলে,”এটা আমার প্রিন্সেসের জন্য কিনেছি।প্রিন্সেস কি এটা একসেপ্ট করবে?”

মিমি ঘুরে তাকালো।পুতুল দেখে অবাক হয়ে খুশি হলো সে।সাথে সাথে পুতুল নিয়ে ফোকলা দাঁতের হাসি মুখে ফুটিয়ে নিলো।তারপর দুজনে একসাথে বাসার দিকে হাঁটতে থাকে।

ড্রইং রুমে ছুটে আসতে নেয় অর্পা।ফারাজ আর মিমি এসেছে এখন।তাদের সাথে কথা বলবে শ্রেয়াকে নিয়ে।দ্রুত হাঁটতে যেয়ে অর্পার সাথে ধাক্কা লেগে একটি ফুলদানি পরে যায়।জোরে শব্দ পেয়ে বাইরে এসে দেখলো অর্পার শাশুড়ি জিনিয়া।মডার্ন শাড়ি পরিহিতা এক রমণী। অর্পার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে।অর্পাকে তার পছন্দ না।গরীব ঘরের ক্ষেত মেয়ে বলে তার যত সমস্যা।তেড়ে এসে অর্পাকে বলে,”এগুলোর মূল্য কত তুমি জানো? থেকেছো তো ওই গ্রামের টিনের ঘরে।কোনরকমে পড়াশোনা টুকুই করেছো।সেই গুন দিয়েই আমার ছেলের মাথা খেয়েছো।না আছে সুন্দর রূপ না আছে এই সমাজে চলার গুন আর না আছে মা হওয়ার ক্ষমতা।”

শাশুড়ির মুখে শেষের কথাটি শ্রবণ হতেই অর্পা কষ্ট পেলো।চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে তার। অর্পার বিয়ে হয়েছে শ্রেয়ার আগে।প্রায় দুই বছর হতে চললো।এখনও বাচ্চা হয়নি তার।শাশুড়ি আগে তার গরীব আর ক্ষেত হওয়া নিয়ে কথা শোনালেও এখন বাচ্চা না হওয়া নিয়েও কথা শুনিয়ে দেয়।

“আমাদের এখনও বাচ্চা হয়নি মানে এই না যে এটা অর্পার সমস্যা মা।অর্পা আমার বউ মানে তোমাদের ছোট বউমা।তাহলে ওকে কেন সম্মান দেও না তুমি?গরীব ঘরের মেয়ে হলেও ও কারো মেয়ে ছিলো এখন এই মিরাজ চৌধুরীর বউ হয়ে এসেছে।গরীব ঘরের মেয়ে হয়ে না হয় সম্মান নাই আসলো কিন্তু তোমার বউমা হিসেবে ওকে সেই সম্মানটা দেওয়ার কথা।”

মিরাজের কথা শুনে সবাই তাকালো উপরের দিকে।কথাগুলো বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নামছে মিরাজ।অর্পাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে সে।গ্রামে বসবাসরত চঞ্চল দুষ্টু মেয়েকে দেখে বাবা আর ভাইকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় মিরাজ।বাসার বাকি সদস্য রাজি না থাকলেও একমাত্র মিরাজের ভালো লাগাতে বিয়েটা হয়।মিরাজের সব সময় একটাই কথা,”বাচ্চা হোক বা না হোক এই হাত আমি কখনও ছাড়বো না।যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি তার সুখ দেখতে না পারলে ব্যার্থ স্বামী হলাম আমি।”

মিরাজের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায় জিনিয়া।খিটমিট করতে করতে ঘরে আসেন।মিমি দৌড়ে এসে অর্পাকে জড়িয়ে ধরে। অর্পার কানের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,”জানো কাকিয়া!আমি না পাপাকে বুদ্ধু বানিয়েছি।”

“তাই!কিভাবে?”

“মিথ্যে মিথ্যে রাগ করে।পাপা আমার রাগ ভাঙাতে এই পুতুল দিয়েছে।”
বলেই মুখের সামনে ছোট ছোট হাত নিয়ে হাসতে থাকে।দূর থেকে ফারাজ ফোঁস করে এক নিঃশ্বাস নেয়।মিমি যে দুষ্টুমি করছে এটা ফারাজ জানে।এখন সে তার কাকিয়ার সাথে সবকিছু বলবে।এটা প্রতিনিয়ত হয়।ফারাজ উপরে উঠতে নিলে অর্পা বলে,”একটু কথা ছিল ভাইয়া।”

ফারাজ দাড়িয়ে পড়ে। অর্পার দিকে তাকিয়ে বলে,”মিরাজ আমাকে বলেছে তোমার বান্ধবীর বিষয়ে।তার সিভি দিও।আমি সবকিছু দেখে তোমাকে জানাবো।”

“আচ্ছা।”

ফারাজ উপরে চলে যায়।অর্পা খুশি হয় খুব।তার বান্ধবীর কোনো একটা ব্যাবস্থা তো হলো।শ্রেয়ার রেজাল্ট ভালো।এমনিতেও অর্পা বিয়ের পর পরীক্ষা দেওয়ায় ওর মন খুব বেশি একটা পরীক্ষার খাতায় ছিলো না।কিন্তু শ্রেয়া মনোযোগ দিয়ে সবসময় পড়ালেখা করেছে।এটুকু অর্পা শিওর যে শ্রেয়ার রেজাল্ট নিয়ে ফারাজ আপত্তি করবে না।সাথে সাথে অর্পা শ্রেয়াকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে,”তোর সিভি পাঠা আমার কাছে।আমি বড় ভাইয়াকে দিবো।”

বলেই মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে খেলা করতে থাকে মিমির সাথে।শ্রেয়া ম্যাসেজটি দেখে রিমলিকে কল করে।শ্রেয়ার বাবার ফোনটি রিমলি ব্যাবহার করে।টাচ ফোন ব্যাবহার করতে পারেন না সৃষ্টি বেগম।তিনি সাদা সিধা মানুষ। রিমলি ফোন ধরতেই শ্রেয়া বলে,”কেমন আছিস বোন?”

“আমি ভালো আছি।তোমার মতো শশুর বাড়ি আমার নেই যে আমি দুঃখে থাকবো।যদি বলো দুঃখ আমার কিসে তো আমি বলবো তোমার ওই শশুর বাড়ির অত্যাচার যেটা তুমি সহ্য করো ওগুলোতে আমার দুঃখ।”

ঠোঁট প্রসারিত করে শ্রেয়া।এই ছোট বোনটার কাছেও ধরা পড়েছে তার দুঃখ।কেনোই বা পড়বে না।এই যে বিবাহিত জীবনে প্রায় তিন থেকে চারবার শ্রেয়ার গালে রনির পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ দেখেছে।এগুলো তো প্রমাণ যে বোন কেমন আছে। রিমলি তো কম দেখেছে শ্রেয়া তো এর থেকেও বেশি সহ্য করেছে।শ্রেয়ার পিঠে মারের দাগ নজর এড়ায় না রিমলির।রনিকে কথা শোনাতে চেয়েছিলো শ্রেয়া আটকে দেয়।এই জন্য রিমলি রাগ দেখায় শ্রেয়াকে।কিন্তু বোনের সাথে কথা বলা থামেনি।শ্রেয়া হালকা হেসে বলে,”যদি বলি এবার আর তোর বোন থেমে থাকবে না তখন সুখে থাকবি তো?”

অবাক হয় রিমলি।বলে,”মানে কি আপু? মজা করছো তুমি!ওই নরপশুর কাছ থেকে সরে এসে আমাদের ছোট ঘরে আদৌ ফিরবে তুমি?”

“তোর বোনের আসল পরিচয় তো ওটাই।সে যাই হোক আমাকে ইমেইলে সিভি পাঠিয়ে দে।বাবার ইমেইলে দেখ আমার জন্য সিভি বানানো আছে।বাবাই করে রেখেছিলো সিভি।আর কম্পিউটার দোকান থেকে ফোনে ট্রান্সফার করে নেয়।আমাকে বলেছিলো বাবা।”

“তুমি সিভি নিয়ে কি করবে আপু?”

একটু জোরেই বলে রিমলি।শ্রেয়া বলে,”আস্তে বোন।মাকে এখন কিছু জানতে দিবো না।কাউকেই কিছু জানাবো না।অনেক কিছু হয়েছে যেটা আমি আর নিতে পারছি না।এবার আমি একটু মুক্ত হাওয়া চাই।তাই নিজে কিছু করে এখান থেকে চলে যাবো। তোদেরকেও আমি দেখবো।”

খুশি হলো রিমলি।ফিসফিস করে বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে আপু।আমি তোমাকে পাঠিয়ে দিবো। আর হ্যা আমাকে ফ্রী হয়ে সবকিছু জানাবে।তোমার যা যা লাগবে আমাকে বলবে।আমার আপুকে আমি হাসিখুশি দেখতে চাই।”

“হ্যাঁ,রাখছি তাহলে।”

ফোন রেখেই শ্রেয়া এদিক ওদিক তাকালো।রান্নাঘরে কেউ নেই।রুবিনা সিরিয়াল দেখছে। ননদরা কাজের ভয়তে এই দিকে তাকাবেও না। রনি ফোন নিয়ে ব্যাস্ত তার কুকর্মের সাথে।

রাতের খাবার খেয়ে রনি যায় ফ্রেশ হতে।শ্রেয়া রনির ফোনের পাসওয়ার্ড জানে।রনির ফোন মাঝে মাঝে রুমা নেয়।রুমার হাতে টাইপ করতে দেখে নেয় শ্রেয়া।কে জানতো আজ এটা কাজে লাগবে।ফোনের পাসওয়ার্ড খুলে শ্রেয়া গ্যালারিতে ঢুকে।বিভিন্ন নোংরা ছবি দেখে অবাক হয় শ্রেয়া।সাথে সাথে রনির হোয়াটসঅ্যাপ থেকে নিয়ে নিজের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠায়।তারপর রনির হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সব ডিলিট করে দেয়।ঠিক তখনই ওয়াশরুম থেকে খট করে শব্দ আসে।ভয় পেয়ে যায় শ্রেয়া।আতঙ্কে পিছনে তাকিয়ে দেখে…

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here