আশার_হাত_বাড়ায়|২১| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
278

#আশার_হাত_বাড়ায়|২১|
#ইশরাত_জাহান
🦋
সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ক্যান্টিনের সবকিছু নিজের কেবিনে বসে উপভোগ করছে ফারাজ।শ্রেয়া খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে মিমিকে।মিমির মুখে হাসি।চোখ বন্ধ করে অতীত কল্পনা করতে থাকলো এখন।মিমির যখন তিন মাস বয়স তখন দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় ফারাজ।যাওয়ার আগেরদিন রাতের ঘটনা।অহনা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।ফারাজ রাত জেগে খেলা করছে মিমির ছোট ছোট হাত পা নিয়ে।জীবনে প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি পেয়েছিলো সে।ফারাজ ভেবেছিলো অহনাও মাতৃত্বের স্বাদ পেলো।ফারাজ তখন অহনাকে আর মিমিকে কিছু করে দেওয়ার চেষ্টায় থাকতো।বড় ব্যাবসা থাকলে কি হবে?ফারাজ যদি মারা যায় অহনা আর মিমি কি নিয়ে থাকবে।কিছু একটা তো বউ আর সন্তানের জন্য করে রাখা দরকার।তাই ব্যাবসার উন্নতির জন্য বাইরে যাওয়া লাগে।সে মারা গেলেও যেনো কোনো কিছুর অভাব অহনা না পায়।মিমিকে নিয়ে যেনো কারো কাছে হাত পেতে খেতে না হয়।এসব চিন্তায় ফারাজ দিনরাত কাজ করেছে।এমনকি অহনার যেনো কষ্ট না হয় তাই সে যখন অহনার কাছে থাকতো মিমিকে নিজে দেখতো।মিমিকে গোসল করিয়ে দেওয়া মিমিকে নিয়ে খেলাধুলা করা।এগুলো ফারাজ করতো।সেদিন গভীর রাতে মিমি ক্ষুধায় কান্না করে।ফারাজ অহনাকে তখন ডাক দেয়।বলে,”এই ওঠো।মিমিকে ফিডিং করাতে হবে তো।”

অহনা আড়মোড়া দিতে থাকে।ফারাজ অনেকক্ষণ ডাকার পর বিরক্তির সাথে খিটমিট করে উঠে মিমিকে ফিডিং করিয়ে দেয়।মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু ফারাজ এটাকে একটি মায়ের কষ্ট হিসেবে ধরে নেয়।মা তার সন্তানের পিছনে সারাদিন পার করলে রাতে একটু শান্তিমত ঘুমাতে চায়।ফারাজ অহনাকে সেই দৃষ্টিতে দেখেছিলো।কিন্তু এখন বুঝতে পারছে ওগুলো অহনা কেনো করতো।সে তো মিমিকে জন্ম দেয় নিজের স্বার্থে।ফারাজ জোরাজুরি করে বলেই আজ মিমির জন্ম।আনমনে বলে ওঠে,”একজন স্ত্রী বে***শ্যা হতে পারে কিন্তু একজন মা কখনোই না।আমার মেয়েটার ভাগ্য শুধু ভিন্ন।কেনো একজন পারফেক্ট মা হতে পারলে না?”

মিমির মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে শ্রেয়া।টেবিলের সামনে বসে আছে অর্পা আর অহি। অহি নিজেও দেখছে শ্রেয়া আর মিমিকে। অহির কাছে ভালো লাগছে এই দৃশ্য।মিমির মুখে তার মেয়ের পক্ষ থেকে কখনও হাসি দিতে দেখেনি।কিন্তু আজ বাইরের মেয়ে তাও দুদিনের পরিচয়।সেও কি না ছোট বাচ্চাকে আগলে রাখছে।অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছে,”শ্রেয়াকে মিমির মা বানালে ভালো হতো।”

এমন উদ্ভট ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটলো জিনিয়ার কণ্ঠ কর্ণপাত হতে।জিনিয়া আর অতসী এসেছে লাঞ্চ করতে।সিনথিয়ার কল এসেছিলো।ওর আসতে এখনও আধা ঘণ্টা দেরি।জিনিয়ার কণ্ঠে অহির ঘোর কেটে যায়। পরে মনে মনেই বলে,”এক ভুল আমি করেছিলাম আমার মেয়েকে ফারাজের মত ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে।এখন শ্রেয়াকে নিয়ে এসব ভাবতে চাই না।মেয়েটা ভালো হলেও বড় ভাবীর পছন্দ মডার্ন হাই ক্লাস পরিবারের মেয়ে।শ্রেয়া তো আমার মত।এক অর্পা আর আমি যা ভোগ করছি শ্রেয়াকে আর ভোগ করাতে চাই না।যে যেমন আছে তেমনই ভালো।”

লাঞ্চ শেষ করে যে যার মতো উঠতে নিলে শ্রেয়ার হঠাৎ মনে হয় সবাই লাঞ্চ করেছে কিন্তু ফারাজ এখনও না খাওয়া।বসকে নিয়ে বেশি ভাবতে দেখলে লোকে নিন্দা করবে।আবার যে না খেয়ে পরিশ্রম করছে তার কথা তো মাথায় আসা স্বাভাবিক।বেশি কিছু না ভেবে ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে চলে যায় শ্রেয়া।এটা দেখে এনি মনে মনে বলে,”কেয়ারিং,লুকিং কিউট এন্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট ইজ ইনোসেন্ট।ইয়েস শেহনাজ ইজ এ পারফেক্ট লেডি ফর হ্যান্ডসাম।”

এতক্ষণ মিমিকে খাইয়ে দেওয়া সময়টুকু নিজের ফোনে ক্যাপচার করে নেয় এনি।অর্পা নিজেও কিছু ছবি তুলে নেয়।অর্পার পিছনের টেবিলে এনি বসেছিলো।শ্রেয়া চলে যেতেই অর্পা ঘুরে তাকালো।এনি মিষ্টি হাসি দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলো শ্রেয়া আর ফারাজ একসাথে হলে ভালোই মানাবে।কিন্তু এরা কথাগুলো মনে মনে রেখে দিলো।ফারাজ অথবা শ্রেয়া এরা তো একে অপরকে নিয়ে ভাবে না।আপাতত কয়েকটা মাস যাক তারপর দেখা যাবে।

গেটে নক করার শব্দ পেতেই ফারাজ বলে,”কাম ইন।”

শ্রেয়া ভিতরে ঢুকে যায় হাতে ট্রে নিয়ে।ফারাজ এটা দেখে কিছু না বলে ল্যাপটপের দিকে তাকায়।খাবারগুলো টেবিলের ফাঁকা জায়গায় রেখে শ্রেয়া বলে,”মিস সিনথিয়া আসতে এখনও দেরি আছে স্যার।আপনার লাঞ্চ করা হয়নি।মিমি বলেছিলো যে আপনি নাকি লাঞ্চের পর একটা ঔষধ খান।তাই আপনার জন্য লাঞ্চ এনেছি।”

ফারাজ কোনো রিয়েকশন না করে ছোট করে উত্তর দিলো,”ওকে।”

শ্রেয়া চলে গেলো।যতটুকু করেছে তার জন্যই শ্রেয়ার ভয় লাগছিলো।ফারাজ এমনিতেই তার বস হয়।তার উপর ফারাজকে দেখতেও ভয় লাগে।যেমন মুডি ফেস থাকে তাতে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।নিজের মতো খাবার শেষ করে ফারাজ কল করে খাবারের প্লেটগুলো নিয়ে যেতে বলে। এটো খাবারের প্যাকেট ট্রেতে নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলো শ্রেয়া।পথিমধ্যে লিজার সাথে দেখা হলে চোখাচোখি করে মিষ্টি হাসি দেখিয়ে দেয় একে অপরকে।স্টাফ সবাই দেখেছে শ্রেয়াকে খাবার নিয়ে যেতে।কিন্তু কেউ কোনো নেগেটিভ দিক থেকে দেখেনি।দেখার কোনো রাস্তাই শ্রেয়া বা ফারাজ রাখেনি।শ্রেয়া যখন খাবারের ট্রে নিয়ে লিজার দিকে তাকিয়ে হাসে ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হয় সিনথিয়া।হাতের ব্রেসলেট ঠিক করতে করতে আসছে সে।চোখের সানগ্লাস এখন মাথায়।চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। হাই হিল সাথে শর্ট ড্রেস।আশেপাশে না তাকিয়ে ব্রেসলেট ঠিক করে হাঁটার কারণে ধাক্কা লাগে শ্রেয়ার সাথে। ফারাজের খাওয়ার এটো খাবার পানি সব গড়গড়িয়ে পড়ে সিনথিয়ার গায়ে। অফয়েড কালারের উপর তেল পানি পড়েছে।নিজেকে হা হয়ে দেখলো সিনথিয়া।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।ধমকিয়ে বলে ওঠে,”ইউ ইডিয়ট।কোনো কমন সেন্স নেই।তুমি আমার ড্রেসের কি করেছো? জানো এটার দাম কত?ইনফ্যাক্ট আমি একটা ব্র্যান্ডেড ফারফিউম লাগিয়েছিলাম।তুমি এটা বিশ্রী করে দিলে।”

সিনথিয়ার চিল্লাচিল্লিতে সবাই উঠে দাড়ালো।একেকজন একেকজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।দোষ তো শ্রেয়ার একার না।শ্রেয়া তো তাও সহানুভূতির হাসি দেখানোর পর ঘুরে সাবধানে যেতে চেয়েছিলো।কিন্তু সিনথিয়া নিজেই ব্রেসলেট ঠিক করতে যেয়ে সোজা ট্রেটা নিজ হাতে নিয়ে ছিটকে যায়।শ্রেয়া তো সরে যেতেই চেয়েছিলো।দোষ দেখতে গেলে দুজনেরই আছে।কিন্তু চাকরি যাওয়ার ভয়ে লিজা কিছু বলতে পারছে না।ক্যান্টিন থেকে সবাই এসেছে।জিনিয়া আর অতসী এসে দাড়ালো সিনথিয়ার পাশে।অর্পা মিমি এনি ও অহি এসেছে সেখানে।জিনিয়া আদিখ্যেতা করে বলে,”ওহ বেবী!এগুলো কিভাবে হলো?”

সিনথিয়া আঙুল উচু করে শ্রেয়াকে দেখিয়ে বলে,”এই ক্ষেত মেয়েটি করেছে।আমার ব্র্যান্ডেড ড্রেস।ইউ নো আন্টি?এটা কিনতে আমি কতটা দেরি করেছি।হ্যান্ডসাম দেখবে বলে আমি অনেক্ষন ধরে পারফেক্ট কিছু খুঁজছিলাম।এখন আমাকে দেখতে পুরো হরর লাগছে।”

বলেই ন্যাকী কান্না শুরু।মিমি হা হয়ে আছে।সরাসরি বলে,”তোমার সাজটি তো হরর লাগছে ডিস্কো আন্টি।”

স্টাফরা সবাই হেসে দেয়।অপমান বোধ করলো সিনথিয়া।জিনিয়া চোখ রাঙিয়ে বলে,”বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে না গ্রাণী।”

মিমিকে নিজের কাছে আনে অর্পা।অর্পা নিজেও মিটমিট করে হাসতে থাকে।সিনথিয়াকে একদম বাজে দেখা যাচ্ছে এখন।শ্রেয়া কিছু না বলে ট্রে নিয়ে চলে যেতে নেয়।কিন্তু পথ আটকে দাড়ায় অতসী।শ্রেয়াকে হাত দিয়ে থামতে বলে।দাড়িয়ে যায় শ্রেয়া।অতসী বলে,”এমনিতেও কেয়ারলেস তুমি।ঠিকভাবে চলাফেরা জানোনা।আমার বোনের ড্রেসটা নষ্ট করেছো।এর জন্য এট লিস্ট মেনার্স তো দেখাও।”

কিছু বুঝলো না শ্রেয়া।কি করতে হবে তাকে।অতসী আবার বলে,”সে সরি।”

শ্রেয়া অবাক হলো।দোষ কি তার একার?শ্রেয়ার হাতে খাবারের প্লেট ছিলো ঠিক আছে।কিন্তু এই মেয়েও তো না দেখে হেঁটেছে।চোখ ছিল না তার?একটা ব্রেসলেট ঠিক করার জন্য চোখ কি আসমানে রাখছিলো।মনে মনে কথাগুলো ভাবছে।শ্রেয়া কিছু এক্সপ্লেইন করতে যাবে তখনই মিমি বলে,”কেনো সরি বলবে?আমি দেখেছি এই ডিস্কো আন্টি হাত দেখে হাঁটছিলো।কেনো রাস্তায় হাঁটতে গেলে কি ফ্যাশন দিতে হয়?আমাকেও তো পাপা শিখিয়েছে যে রাস্তায় হাঁটতে গেলে সবসময় চারপাশ ভালোভাবে দেখে হাঁটতে হয়।তাহলে এই আন্টি কেনো হাতটা ঠিক করতে করতে আসে?তাও আবার ব্রেসলেট ছিলো একটু বেকিয়ে তাই।”

মনে মনে অর্পা বলে,”ওরে মা তোমার পাপাকে দেখানোর জন্যই তো এতকিছু। একটু বেকা থাকলেও সোজা করে পারফেক্ট দেখাতে হবে।”

জিনিয়া থামিয়ে দিতে চায় মিমিকে।কিন্তু মিমি আবার বলে,”আমি কিন্তু পাপাকে বলে দিবো তুমি দোষ করে আন্টিকে বকেছো।আবার অন্যায় করে সরি শুনতে চাও!”

শুকনো ঢোক গিললো সিনথিয়া।এই মিমি যা বলবে ফারাজ চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবে।কথা না বাড়িয়ে সিনথিয়া বলে,”ওকে ফাইন।এই টপিকস এখানেই বন্ধ করা হোক।কাউকে সরি বলতে হবে না।”

এনির ইশারা পেয়ে চলে গেলো শ্রেয়া।সিনথিয়া মনে মনে বলে,”ফারাজের কাছে আসার চাবিকাঠি এই মিমি।ওকে আগে হাতের নাগালে পাই।তারপর আমি এই চৌধুরী বাড়ির বড় বউ হতে পারব।তার আগে এই মেয়েকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।এর জন্য আমি আজকে অপমানিত হয়েছি। হ্যান্ডসামকে কিভাবে ফেস করবো!”

শেষের কথাটি একটু জোরে আর কান্নামিশৃত কণ্ঠে বলে।জিনিয়া আর অতসী নিয়ে যায় সিনথিয়াকে।ময়লা পানি লাগা জায়গাটি পরিষ্কার করতে হবে।সময় এবং নিয়ম কানুন সবকিছু পরখ করে দেখছে ফারাজ।কেবিনের ভিতর থেকে সবকিছু দেখলেও সে বের হয়নি।অন্য দুইজন সেলিব্রেটি নব্য।একজনের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না।এদিক ওদিক কাজ খুঁজছে।আরেকজন পড়াশোনা চালাচ্ছে আর দুই একটা অ্যাড করেছে।সিনথিয়ার হাতে অন্য প্রজেক্ট থাকা সত্ত্বেও নিজে সেধে এসেছে।এনির কাছে জিনিয়া কথা বলে এই এপয়েন্টমেন্ট করে রাখে।বাকি দুজনকে পুনরায় লাঞ্চের পর আসতে বলা হয়।তারাও চলে এসেছে এখন।ফারাজ আজ কিছু বলছে না কারণ সে দেখতে চায় শ্রেয়া কি করে মডেল নির্বাচন করে।কাকে মডেল হিসেবে চুজ করে এই কোম্পানির মার্কেট বাড়িয়ে দিবে।শ্রেয়া যদি এই প্রজেক্ট ঠিকমত করতে পারে তাহলে ফারাজ শ্রেয়া ও এনির হাতে দায়িত্ব দিয়ে দুই মাসের জন্য দেশের বাইরে যাবে।ওখানে আবার কিছু কাজ আছে।

দুপুরে খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে শিহাবদের বাসায় আসে রিমলি ও সৃষ্টি বেগম।সকালের পরা লুংগি আর গেঞ্জি পাল্টে এখন সুন্দর শার্ট ও জিন্স।ছেলেকে ঘরের মধ্যে এমন পরিপাটি হয়ে থাকতে দেখে অবাক মিসেস জুই(শিহাবের মা)।দুপুরের খাবার খেয়েই চলে এসেছেন।বলেন,”কি রে বাবু!তুই এই দুপুরে কোথায় যাবি?”

চুল সেট করতে করতে শিহাব বলে,”কোথাও না মা।”

“তাহলে সাজছিস কেনো?”

“এমনি।ভালো লাগছে তাই।”

বলতে না বলতেই রিমলি এসে গেছে।শিহাব ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দেখেছিলো রিমলি ও সৃষ্টি বেগমকে।তাই দ্রুত রেডি হয়।কলিং বেল বাজতেই শিহাব দৌড়ে যায়।দরজা খুলতেই রিমলি বলে,”আম্মুকে নিয়ে এসেছি।আপনাদের ওই ঘরটা দেখবে আম্মু।”

মিসেস জুই বাইরে বের হলেন। রিমলি ওনাকে দেখে সালাম দিলো।মিসেস জুই উত্তর দিয়ে তাকিয়ে থাকলো।শিহাব বলে,”ওনারা আমাদের সামনের ঘর দেখবে মা।”

“আচ্ছা,চলুন তাহলে।”

সৃষ্টি বেগম ঘরটি দেখলো।পছন্দ হয়েছে তার।সাথে পরিবেশটা।ঘর দেখতে দেখতেই সৃষ্টি বেগম বলেন,”তোর মাথা ঠিক আছে রিমু(ভালোবেসে ডাকে)?এত ভালো ঘর মাত্র সাত হাজার টাকায় কিভাবে?”

ঘর ভাড়া এত কমে শুনে চোখ ছোট করে তাকালো মিসেস জুই। রিমলি ইশারা করলো শিহাবের দিকে।বলে,”উনি তো বললো সাত হাজার টাকা।ডিসকাউন্ট আছে নাকি।”

চোখ বড় বড় হয়ে গেলো মিসেস জিনিয়ার।ছেলে পুলিশ বানিয়েছে নাকি গাধা এটাই ভাবছে।এই ঘর কিভাবে সাত হাজার হয়?লোকজনের মাঝে কিছু বলতেও পারছে না।শিহাব ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে থাকে।মিসেস জুই ভিতরে চলে যায়।হাফ ছেড়ে বাঁচে শিহাব।আগে এদিক সামলাক তারপর ওদিক।সৃষ্টি বেগমের দিকে তাকিয়ে শিহাব বলে,”জি আন্টি আপনি তো অনেক বিচক্ষণ মানুষ। শাক সবজি নিয়ে যেভাবে বারগেডিং করছিলেন ভাবলাম আপনাকে ঘর নিয়ে ঝামেলায় রাখবো না।তাই সোজাসুজি ভাড়াটা কমিয়ে রাখলাম। আর পরিচিতদের থেকে বেশি নিবো কেনো বলুন?আমরা আমরাই তো।”

সৃষ্টি বেগম খুশি হলেন।তিনি বলেন,”আচ্ছা বাবা তাহলে আমরা পরশু দিন এই বাড়িতে উঠবো।একেবারে এক তারিখে এই বাড়িতে জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হবো।”

“আপনাদের জিনিসপত্র আনা নেওয়ায় অসুবিধা হলে বলবেন।আমি লোক পাঠিয়ে দিবো।”

ভ্রু কুঁচকে রিমলি বলে,”আপনাকে এমন জনদরদী হতে কে বলেছে?”

“একজন পুলিশ অফিসার হয়ে আমি জনগণের সেবা করবো না তো কি করবো?”

সৃষ্টি বেগম যেনো শিহাবের কথাগুলো শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলেন।শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলেন,”এমন পুলিশ অফিসার দরকার আমাদের দেশের জন্য।”

“আপনার মেয়ের জন্য হলেই হবে।”(বিড়বিড় করে শিহাব।)

সবকিছু ঠিক করে সৃষ্টি বেগম ও রিমলি চলে যেতেই শিহাব ঢুকলো ঘরে।ডাইনিং রুমে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে মিসেস জুই।শিহাব শুকনো ঢোক গিলতে থাকে।মাকে কিভাবে সামলাবে এখন তাই ভাবছে।

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here