তোমাকে_চাই_নিরবধি (৬) লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
434

#তোমাকে_চাই_নিরবধি (৬)
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓

“হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না, বালিকা! বালিকা বধূর ওমন লজ্জা রাঙা মুখ দেখলে নিজেকে সামলেতে পারবো না আমি। বেসামাল হয়ে কিছু একটা করে ফেলবো! তখন আবার আমাকে চরিত্র’হী’ন উপাধি দিও না যেন! সেসব না চাইলে যাও, গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে শাড়ীটা পাল্টে নেও।”

ফারহান ভাইয়ের বলা কথা শুনে লজ্জায় নাক-মুখ লাল হয়ে গেলো কুহেলিকা’র। তীব্র লজ্জা আর অস্বস্তি থেকে বাঁচতে মাথা নুইয়ে, দ্রুত গতিতে হাম্মাম খানায় ঢুকলো সে। কাঠের দরজা খানা আঁটকে বুকে হাত চেপে লম্বা লম্বা শ্বাস ছাড়লো খানিকক্ষণ। লোকটার এহেন কথায় এতক্ষণ তার শ্বাস আঁটকে ছিলো যেন।

ফারহান মল্লিক নিজ বধূর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাওয়ার পানে একপলক তাকিয়ে, ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। অতঃপর নিজেকে পরিপাটি করে দাম্ভিকতা নিয়ে কক্ষে’র বাইরে, অন্ধর মহলে চরণ ফেললো। এরিমধ্যে অন্ধ’র মহলের এক ভৃত্য এসে সালাম দিয়ে নিচু কণ্ঠে জানান দিলো,

“জমিদার পুত্র, আপনাকে জমিদার পিতা গোপন কক্ষে’র বৈঠক খানায় এক্ষুণি ডাকিয়াছে।”

যা শুনে ততক্ষণাৎ ফারহান গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“চলো, যাই।”

অনুমতি পেয়ে ভৃত্য মাথা নিচু করে সামনে এগোতে লাগলো, তার পিছনে ফারহান মল্লিক।
জমিদার মহল থেকে বেশ কিছুটা বাগানের ভিতরে পুরনো আমলের জমিদারদের একতলা বিশিষ্ট একখানা বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটি “গোপন কক্ষ” নামেই পরিচিত। আশেপাশের চারপাশে ঘনো জঙ্গল, উঁচু চেনা-অচেনা গাছগাছালি’র মধ্যে পাকা দালান। লম্বা বড়োসড়ো আটটি ঘর নিয়ে তৈরী এই গোপন কক্ষ।

এখানের চারপাশটা উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মজবুত লোহার গেইটে’র চারপাশে পাহারাদার, ভিতরে দেহরক্ষী সৈনিকও নিয়োজিত রয়েছে। গোপন কক্ষে জমিদার বাড়ির কর্তারা কিংবা জমিদার পুত্র’রা নিজস্ব গোপন আলাপ-আলোচনা, গোল বৈঠক করে থাকেন। মহলের লোক ছাড়া এখানকার ভিতর কক্ষে বা প্রাচীরের ভিতরে অন্য কারো প্রবেশ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ! কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাকে দেওয়া হয় মৃ’ত্যু সজ্জা।

গোপন কক্ষে’র বৈঠক খানায় কাঠের কারুকার্যে শোভিত আরাম কেদারায় বসে হুক্কা টানছেন দাদাজান। তান্মধ্যে, হেলেদুলে ভিতরে প্রবেশ করলো ফারহান মল্লিক। আজকে দাদাজানের জরুরী তলব সম্পর্কে সে অবগত, আগেই আন্দাজ করেই এখানে এসেছে। আজ তার ভিতরে কোনো তাড়া নেই।

ফারহান’কে দেখেই দাদাজান নড়েচড়ে বসলেন। হাতে রাখা দৃষ্টি আকর্ষণীয় পিতলের হুক্কা’টায় আরো একটা লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে, সেটা পাশের গোলটেবিলে রাখলেন। ফারহানকে পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে বললো,

“বসো, এখানে।”

ততক্ষণাৎ দাদাজানে’র পাশে আয়েশী ভঙ্গিতে বসলো, ফারহান। সব কাজে তার গা-ছাড়া ভাব। যা পর্যবেক্ষণ করে দাদাজান আকবর কোনো ভনিতা ছাড়াই গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“তুমি নিশ্চয়ই শুনিয়াছো, আলতাফ কতকাল রাত্রে খু-ন হইয়াছে?”

ফারহান কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সেভাবে বসেই বললো, “শুনিয়াছি।”

“আমি যতটুকু শুনিয়াছি, গতকাল সন্ধ্যা রাত্রি’রে সে তোমার সাথেই গাড়ি নিয়ে বের হইয়াছে মহল থেকে। তার তোমার সাথেই থাকিবার কথা ছিলো, তাহলে সে খু’ন হইলো কি ভাবে? তুমি বুঝতে পারছো, আমি কি বলিয়াছি? সন্দেহ কিংবা অপরাধী যদি শনাক্ত করা হয়, সেখানে তোমার নামটাই কিন্তু আগে আসে। তাছাড়া, গতরাত্রে তোমাকে দেখিবার পায়নি মহলে। আমরা কতো ধকল করিয়াছি, এরমধ্যে তোমারও সন্ধান করিয়াছি। কিন্তু, পেলাম না তোমায়। কোথায় ছিলে তুমি?”

“সীমান্ত’কে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে ছিলাম আমি।”

“মানে? সীমান্ত, সীমান্ত নানু ভাইয়ের কি হইয়াছে? সীমান্ত হাসপাতালে কেনো, ফারহান?”

উওেজিত হয়ে বললেন, দাদাজান। ফারহান মল্লিক উঠে দাঁড়ালো, হঠাৎ ক্রো’ধ নিয়ে হুংকার ছাড়লেন। বললেন,

“আলতাফ, আলতাফ আমাদের সাথে বিশ্বাস’ঘা’ত’ক’তা করেছে দাদাজান। ও আমাদের গতকাল রাতে নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে প্রা’ণ’হা’নি’র আক্রমন করিয়াছে। তার সাথে মুখোশ পরিহিত আরো কয়েকজন লোক আড়ালে ছিলো। তাদের এই চক্রান্ত আগে থেকেই গোছালো। বিশ্বস্ত লোকেরা যখন আকস্মিক বিশ্বাসঘাতক করে, সেখানে ধ্বং’স অ’নি’বা’র্য।”

টানটান উওেজনা নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, দাদাজান। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুধালো,

“কি বলছো, তুমি? খোলসা করে বলো?”

ফারহানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো, গতকাল রাতে’র কিছু কঠিন চ’ক্রা’ন্ত। রাত তখন নয়টা কি দশটা। দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নিজ কার্য শেষ করে, মহলে ফেরার জন্য গাড়িতে বসেছিলো ফারহান মল্লিক ও সীমান্ত। আলতাফ কাঁচা রাস্তায় ঘোড়া’র গাড়ি চালাচ্ছিলো আর তারা দু’জন নিজেদের মতো কথা বলছিলো। গ্রামে’র পরিবেশে তখন যেন মধ্যেরাত! গ্রামের মানুষজন ইতোমধ্যে যে যার কুটিরে, কেউ বা ঘুমিয়েছে। জরুরী কাজকর্ম ছাড়া এই সময়ে গ্রামের খুব কম মানুষই বাহিরে থাকে। হঠাৎ ঝোপেঝাড় নির্জন রাস্তা দেখে গাড়ি থামিয়ে ফেলে, আলতাফ। যা দেখে ফারহান মল্লিক ততক্ষণাই জিজ্ঞেস করলো,

“কি হলো, গাড়ি থামালে কেনো আলতাফ?”

আলতাফে’র চোখ-মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো যেন। অজানা ভয়ে ঘন ঘন শুকনো ঢোক গিলে ঘোড়া থেকে নেমে গেলো। ভয়ে ভয়ে নিজেকে ধাতস্ত করার চেষ্টা চালালো। গাড়িতে হারিকেন জ্বলছে। আগুনে’র চিকচিকে লালচে আলোয় চারপাশ স্পষ্ট।
আলতাফ ভীত চোখে চারপাশে নজর বুলালো। তান্মধ্যে ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে দশ-বারোজন মুখোশ পরিহিত পুরুষ তাদের ঘিরে ধরলো। সবার হাতে ত’র’বা’রি, চা’কু, বড়বড় রা’ম’দা। আকস্মিক আলতাফ এসে ততক্ষণাৎ তার গলায় ত’লো’য়া’র ধরে বললো,

“ক্ষমা করবেন জমিদার পুত্র, এই মুহূর্তে মা’রি’বা’র চাই আপনাকে! ম’রা’র জন্য প্রস্তুত হইয়া যান।”

ঘটনাটি এতোটা দ্রুত ঘটেছে যে, ঠাহর করতে কয়েক মিনিট সময় লাগলো তাদের। বুঝতে পেরেই,গর্জে উঠলো ফারহান মল্লিক। আলতাফে’র বুক বরাবর এক লা থি দিয়ে সরিয়ে দিলো তাকে। ফারহান ও সীমান্তের নিকটও ত’র’বা’রি ছিলো। ততক্ষণাৎ দু’জন ত’র’বা’রি বের করে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়লো। শ’ত্রু পক্ষও হামলে পড়লো তাদের দিকে। দু’দফার মাঝে তুমুল হাতাহাতি চলছে। শক্তিশালী বিশাল দেহের অধিকারী, ফারহান মল্লিক। তরবারি চালানো’র প্রশিক্ষণ বিদেশ থেকে ভালো করে রপ্ত করে এসেছে সে। তাকে মা’রা এতোই সহজ! এক হাতে পাঁচ-ছয়জন’কে জ’খ’ম করেছে। তার তেমন কিছু না হলে ও হঠাৎ সীমান্তের পিঠে গুরুতর ভাবে লেগে যায়, তরবারি। নরম হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে যায়, সীমান্ত। ততক্ষণাৎ ব্যাথুতো স্বরে শুধালো,

“দাদাভাই! পারলাম না, আমি আর পারলাম না। ”

সেদিকে এক পলক তাকায় ফারহান মল্লিক। ত’র’বা’রি চালাতে চালাতে তাকে আশ্বাস দিয়ে বললো,

“আমি আছি ভাই, আমি আছি। তুই একটু সময় নিজেকে র’ক্ষা কর। দূরে সরে যা, গাড়ি নিয়ে ছুটে যা কোথাও। আমার কথা ভাবিস না, আমি দেখছি এদিকটা। কাউকে ছাড়বো না আমি, কাউকে না!”

তীব্র ক্রোধ নিয়ে বিপক্ষে’র সাথে নড়ছে ফারহানা মল্লিক। বিপক্ষে’র কিছু লোক গুরুতর আহত হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আলতাফসহ সবাই জা’ন নিয়ে পালিয়ে যায়। ক্রোধে কাঁপছে, ফারহান। হিং’স্র বাঘের মতো খেঁকিয়ে উঠলো। আলতাফের পিছন বরাবর হাতের ত’র’বা’রী খানা ছুঁড়ে মে’রে বললো,

“কু’ত্তা’র বা’চ্চা আমাদের খেয়ে আমাদের সাথে বেইমানী করলি। ছাড়বো না তোকে, ছাড়বো না। জাস্ট, জানে মে’রে ফেলবো।”

তবুও ম’র’লো না, আলতাফ। তার গায়ে লাগার আগেই লুকিয়ে পড়েছে কোথাও। অন্ধকার রাস্তা, ঝোপঝাড়ে তাদের সন্ধান পাওয়া গেলো না। ফারহান মল্লিক নিজেকে সামলে দ্রুত ছুটে গেল সীমান্তের নিকট। র’ক্তে মাখোমাখো হয়ে গিয়েছে তার শরীর, নিস্তেজ হয়ে আসছে দেহ। ফারহান তার শরীর ছুঁয়ে ডাকলো,

“সীমান্ত, সীমান্ত? ভাই তুই ঠিক আছিস, তোর খুব কষ্ট হচ্ছে ভাই?”

সীমান্ত ঝাপসা চোখে একবার তাকালো। কণ্ঠ স্বর টেনে টেনে বললো,

“দাদাভাই চিন্তা করো না, ঠিক আছি আমি। র’ক্ত বন্ধ করার ব্যবস্হা করো।”

ফারহান দ্রুত নিজের পড়ে থাকা চাদরখানা কুড়িয়ে এনে ক্ষ’ত স্থানে শক্ত করে বেঁধে দিলো। ভাইকে পাঁজা কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। আশ্বাস দিয়ে বললো,

“কিছু হবে না, তোর কিছু হবে না। ভয় পাসনে, আমি আছি।”

অতঃপর নিজেই দ্রুত গতিতে ঘোড়া’র গাড়ি চালাতে শুরু করলো। যদিও সেও কম-বেশি আঘাত পেয়েছে, তার শরীর দিয়েও র’ক্ত ঝড়ছে। সেসব পাত্তা দিলো না। সীমান্ত’কে নিয়ে স্হানীয় হাসপাতালে ছুটলো। ডক্টররা প্রাথমিক চিকিৎসা চালিয়ে সীমান্তে’র র’ক্ত পড়া বন্ধ করলেও তার অবস্থা বেশ শোচনীয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালাতে হবে। গতকাল রাতে ফারহান সীমান্ত’কে তার বিশ্বস্ত কিছু লোকের কাছে হাসপাতালে হেফাজতে রেখে, তবেই শেষ রাতে ছুটে এসেছে মহলে। ভাগ্য ক্রমে সে রাতে জা’নে বেঁচে যায় দু’জনই।

এসব একেএকে সব ঘটনা দাদাজানে’র নিকট পুনরাবৃত্তি করলো, ফারহান। দাদাজান সবটা শুনে অধৈর্য হয়ে বললো,

“আলতাফ, আলতাফ এই কার্য কিভাবে করিয়াছে? নিশ্চয়ই, এর পিছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র রইয়াছে, ফারহান। আমাদের নিয়ে কঠিন কোনো চক্রান্ত চলছে, দাদাভাই। নিরীহ মানুষ গুলোকে কাজে লাগিয়ে, কেউ খুব সূক্ষ্ম ভাবে এই চাল চালিয়াছে৷ খুঁজে বের করো দাদাভাই, খোঁজ লাগাও। কে এই গোপন শত্রু? জমিদার বাড়ির পুত্র’কে মা’রি’তে চাইছে, কার এতো বড় সাহস? তাছাড়া, আলতাফ’কেই আবার খু’ন করা হলো। কে করলো এই কাজ?”

“আমি যাদের আন্দাজ করিয়াছি, শত্রু যদি তারা হয় কারো রক্ষা নেই দাদাজান, কারো নয়!সে যাই হোক, দাদাজান! আলতাফ’কে আমি নিজ হাতে খু’ন করতে পারলাম না। আফসোস! আফসোস! জমিদার পুত্রে’র সাথে বি’শ্বা’সঘা’ত’ক’তা, বি’শ্বা’স’ঘা’ত’কা! এই শাস্তি কতটা ভয়ংকর হয়, জানা হলো না জা’নো’য়া’রের’ বাচ্চা’র!

ভয়ংকর ক্রো’ধে কাঁপছে ফারহান। তাকে শান্ত করলো, দাদাজান। দু’জন মিলে আরো কতক্ষণ যুক্তি পরমর্শ করে একসাথে গোপন কক্ষ ত্যাগ করলো। ফারহান আর মহলে ফিরলো না। ভোর বেলা কিচ্ছুটি না খেয়েই চলে গেলো সীমান্তে’র নিকট হাসপাতালে। আজ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরের হাসপাতালে পাঠানো হবে। দাদা-নাতি সীমান্তসহ গতকাল রাতে’র পুরো ব্যাপারটা সবার থেকে আড়াল করলো।
_____________

সাল ১৯৩২। বসন্ত ঋতু চলছে। প্রকৃতি জুড়ে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। সময়, মধ্যাহৃ-দিপ্রহর। প্রকৃতি জুড়ে সূর্য মামা সোনালী কিরণ ছড়িয়ে দিয়েছে, সেই সাথে মৃদু মৃদু হাওয়া বইছে ধরণী’র বুকে।
আঁকাবাঁকা নৌপথে দ্রুতগতিতে চলছে একখানা পালতোলা নৌকা।
তপ্ত রোদকে উপেক্ষা করে ছাওনির পাশে দাঁড়িয়ে আছে, জমিদারের বড় পুত্র মাহাদ মল্লিক। লম্বাচওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষ। দফেদফে ফর্সা পুরুষটির গায়ে শুভ্র রাঙা, পাঞ্জাবি। গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি তার মাঝে কায়দা করে সূচলো গোঁফ টানা। লম্বা ঝাঁকড়া চুল গুলো, বাতাসে’র তালে তালে উড়ছে। ফর্সা মুখখানায় কি অমায়িক হাসি! জমিদার বাড়ির সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষটি, মাহাদা মল্লিক। এই পুরুষটিকে দেখলে মনে হবে, সে যেন কোনো এক রুপ কথার রাজপুত্র!

কিন্তু, আজ এই সুদর্শন পুরুষটি’কে বড়ই উদাস লাগছে! তার চোখেমুখে আকুলতা! মহলে ফেরার তাড়না চেপে ধরেছে তাকে। এক জোড়া তৃষ্ণার্ত চোখ নিয়ে বারবার উঁকিঝুঁকি দিয়ে বাড়ি’র পথ নির্ণয় করছে। পথটা এতো দৈর্ঘ্য! এখনো বহুপথ বাকি। তার তর সইছে না। মন চাচ্ছে আকাশে উড়াল দিয়ে, এক ঝটকায় নিজের বাড়িতে পৌঁছাতে। কিন্তু তার তো পাখা নেই! হতাশ হলো পুরুষটি। মাঝিকে অহেতুক একখানা ধমক দিয়ে শুধালো,

“এতক্ষণে, কি করিয়াছো তুমি? এখনো এতো পথ বাকি! তাড়াতাড়ি বৈঠা চালাও মাঝি, আমার দ্রুত বাড়ি ফিরিতে হইবে। কতদিন দেখি না তাহারে! শুনিনি তাহার কণ্ঠস্বর । আমার যে আর ধৈর্যে কুলাচ্ছে না গো, মাঝি! কখনো দেখিবো তাহার মুখের মিষ্টি ওই হাসি!”

মাঝি বিস্মিত চোখ তুলে একবার তাকালো। মাহাদ আনমনে হাসছে। এই হাসি, এই কথা তার বোধগম্য হলো না। তবুও প্রশ্ন করা যাবে না, এরা জমিদার পুত্র। এদের কাছে হুটহাট প্রশ্ন করার, সাহস তাদের নেই।
নিজেকে ধাতস্ত করে মাঝি, আরো দ্রুত বৈঠা চালাতে চালাতে ভাটিয়ালী গান ধরলো।

মাহাদ সেদিকে খানিকক্ষণ মনোযোগ দিলো।
আজই শহর থেকে বাণিজ্যিক কাজ সম্পুর্ণ করে, ফিরছে সে। কতদিন দেখা হয় না, প্রিয় মুখটা। একরাশ আকুলতা নিয়ে নৌপথে’র দিকে তাকিয়ে আছে যুবকটি। এরিমধ্যে মাথার উপর থেকে এক ঝাঁক কাক কর্কশ স্বরে কা-কা করে উড়ে গেলো। তাদের এই স্বর যেন কোনো পূর্ব বার্তার আগমন! তারা যেন নিজস্ব ভাষায় বলে গেলো,

“জমিদার বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হতে চলছে।”

চলবে……

[কিছু পার্সোনাল সমস্যার জন্য এতোদিন গল্প দিতে পারিনি, তার জন্য আমি দুঃখিত! এখন থেকে আবারো নিয়মিত হবো, ইনশাআল্লাহ!ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।]
#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here