আশার_হাত_বাড়ায়|১০| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
143

#আশার_হাত_বাড়ায়|১০|
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকালের সমস্ত কাজ শেষ করলো শ্রেয়া।বলা যায় না কোর্ট থেকে আসার পর মন মানসিকতা কেমন থাকে।মা আসবে আজ।সেও তো অনেক কথা শুনিয়ে দিবে।তাই শ্রেয়া এখনই সমস্ত কাজ শেষ করে নিচ্ছে।এতদিন অনেক পরিশ্রম করেছে।একটু শান্তির নিশ্বাস নিতে পারেনি।আজকে নিবে শান্তির নিশ্বাস।শ্রেয়ার কাজ শেষ হতেই অর্পা এসেছে।একটু পর তারা কোর্টে যাবে।

সৃষ্টি বেগম ও রিমলি ফজরের নামাজ পড়েই রওনা দেয়।রিমলি অন্যদিন ঘুম থেকে উঠেই রান্নাবান্না শেষ করে।আজকে ঘুম থেকে ইচ্ছা করেই উঠতে চায়নি।সৃষ্টি বেগম জোর করে নিয়ে আসে রিমলিকে।শেষে না পেরে শ্রেয়াকে লিখে দেয়,”আমরা আসছি রে আপু।এখন ট্রেনে উঠব।কোর্টে মনে হয় আমরা সময়মত পৌঁছাবো।কি জানি কি হয়!”
ম্যাসেজটি দিয়ে রিমলি বার কয়েক কল করে শ্রেয়াকে।যার কারণে ঘুম থেকে উঠে যায় শ্রেয়া আর দেখতে পেলো ম্যাসেজটি।বেশি দেরি না করে বুদ্ধি করে সব কাজ করে নিলো। পরে অলসতায় কাজ করতে মন চাইবে না।

অর্পা এসে শ্রেয়ার হাতে হাত রেখে বলে,”শোন আমি তোর ভালোর জন্যই এগুলো করেছি। যাই হয়ে যাক আমাকে ভুল বুঝবি না তো?”

একটু অবাক হলো শ্রেয়া।ভুল বোঝার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?শ্রেয়া অর্পাকে দেখে নিলো।তারপর বলে,”এখানে ভুল বোঝার কি আছে?”

শ্রেয়ার থেকে একটু দূরে সরে বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”কোর্টে যেয়ে যখন দেখবি তোর বরের নামে কে মামলা করেছে তখন তো আমাকেই বকবি।”

সব কাজ শেষ করে নিজেকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুললো শ্রেয়া।খুব বেশি না সাজলেও নিজেকে যে একেবারে তুচ্ছ করা যায় না সেভাবে করে সাজিয়ে তুলেছে।অর্পার হাত ধরে অটোতে উঠে চললো কোর্টের দিকে।ট্রেন এসে থেমেছে মাত্র।ট্রেন আসার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।মেইন রাস্তা থেকে কিছুটা দূরেই স্টেশন।তাই তো ট্রেনের শব্দ সবার কর্ণপাত হতে থাকে।যেটা শুনেই শ্রেয়ার বুকের মধ্যে কেপে উঠলো।কখনও মায়ের মুখের উপর না করেনি এই মেয়ে।সেই মায়ের অগোচরে সে অনেক বড় স্টেপ নিয়েছে।মাকে ফেস করতেও ভয় লাগছে তার।অর্পা শক্ত করে হাত ধরে শ্রেয়ার।অর্পার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটা প্রসারিত করে হেসে দেয় শ্রেয়া।একটু সাহস যুগিয়ে তুলতে পারে অর্পার কারণে।

কোর্টের সামনে এসে অটো থামতেই নেমে গেলো শ্রেয়া ও অর্পা।কোর্টের চারপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিলো শ্রেয়া।অহরহ পুলিশের গার্ড।কিছু সাংবাদিক এসেছে সেখানে।ওরা ব্যাস্ত ওদের মতো।শ্রেয়ার এদিক ওদিক তাকানোর মাঝেই পুলিশের গাড়ি হাজির।সেখান থেকে রনিকে নামিয়ে আনছে শিহাব।রনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রেয়া।মুখটা পুরো শুকিয়ে গেছে।যেটা দেখে শ্রেয়ার মনে তৃপ্তি মিললো।শ্রেয়াকে ক্রস করতে যাবে ওমনি রনির চোখ যায় শ্রেয়ার দিকে।রনির চোখে চোখ রেখে শ্রেয়া বলে,”জেলের মধ্যে আপ্পায়নটার বড্ড অভাব পড়েছিলো তাই না?যেটা বাড়ির বউ নামক কাজের মেয়েটা করতে পারে ওটা কি আর জেলের সুন্দরী রমণী করবে!করবে না।”

রনি দেখলো শ্রেয়ার মুখ।অনেকটাই বদলে গেছে শ্রেয়া।তবে শ্রেয়ার কথাগুলো গায়ে লাগেনি রনির।ঠোঁটে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলে,”এই জেলে বেশিদিনের জন্য থাকা হবে না।ওই যে দেখতে পাচ্ছো উকিল উনি আমার হয়ে লড়বে।”

রনির আঙুল বরাবর তাকালো শ্রেয়া।রনির হয়ে তো কোনো উকিল থাকার কথা না।শ্রেয়া অবাক হলো সাথে অর্পাও।শ্রেয়া ঘুরে তাকালো অর্পার দিকে।অর্পা উকিলের দিকে তাকিয়ে আছে।শিহাবের ইশারা পেয়ে রনিকে ভিতরে নিয়ে যায়।অর্পা আনমনে বলে ফেলে,”বড়ভাই যে বলেছিলো রনির হয়ে কোনো উকিল আসবে না।”

চোখ ছোট ছোট করে শ্রেয়া বলে,”এখানে স্যার কোথা থেকে আসবে?”

শ্রেয়ার কথার উত্তর দেওয়ার আগে পিছন থেকে একটি মেয়ে বলে ওঠে,”কি ভেবেছিলে তোমরা!আমার পিছনে পিছনে আমার ক্ষতি করতে চাইবে আমি চুপ করে দেখবো।এতটা কাঁচা খিলাড়ি আমি না।রনিকে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে শুনেই আমার সন্দেহ হয়।তাই তো উকিল নিয়ে এসেছি।”

মেয়েলি কণ্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে দাড়ালো শ্রেয়া ও অর্পা।দেখেতে পেলো সেই সুন্দরী রমণীকে।যার সাথে প্রেম চলে রনির।চোখে সানগ্লাস গায়ে মডার্ন ড্রেস।পুরো চেহারায় মেকআপের সৌন্দর্য।চুলের ফাঁকে ফাঁকে লাল রং করা।অর্পা মেয়েটিকে দেখে বলে,”লজ্জা হয় না তোমার?তোমাদের মতো মেয়ের জন্যই তো সংসার ভেঙ্গে যায় সরল সহজ মেয়েদের।”

অর্পার এমন স্বাভাবিক ব্যাবহার দেখে সন্দেহ হতে থাকে শ্রেয়ার মনে।মেয়েটি কাছে এসে বলে,”তোমার মতো মিডল ক্লাস ঘরের মেয়ে আমাকে লেকচার দেয়।এই অহনাকে?হাউ ফানি।”

রাগ জেদ মিশিয়ে অর্পা বলে ওঠে,”আসলেই তাই।তোমাদের মতো হাই লেভেলের মেয়ে যার কি না একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে আছে যে ঘর থুয়ে পরের বর দেখে তাকে লেকচার দেওয়া মানায় না।”

কথাটা গায়ে লাগল অহনার।তবে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেলো নিজের হায়ার করা উকিলের দিকে।শ্রেয়া এবার অর্পাকে বলে ওঠে,”ওই মেয়ের যে একটা মেয়ে আছে তুই জানলি কিভাবে?”

অর্পা নিরব থাকে।শ্রেয়া আরো প্রশ্ন করতে থাকে কিন্তু অর্পা কিছু বলতে পারছে না।এর মাঝেই বড় একটি গাড়ি আসে সেখানে।গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায় ফারাজকে। ফারাজের পর গাড়ি থেকে নামলো মিমি।মিমিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও কিছুটা নার্ভাস।মিমির হাত ধরে চোখের ইশারায় শান্তনা দিতে থাকে ফারাজ।একটু এগিয়ে যেতেই শ্রেয়াকে দেখে অবাক হলো ফারাজ।অর্পাকে বলে,”মিসেস শ্রেয়া এখানে কেনো?আমাদের ফ্যামিলি প্রবলেমে মিসেস শ্রেয়াকে ইনভলব করা উচিত হয়নি বোন।”

অর্পা এমনি ঘাবড়ে যায় অহনার হয়ে উকিল দেখে।শ্রেয়া এক হাত দিয়ে ধাক্কা দিলো অর্পাকে।হুশ ফিরে আসতেই অর্পা বলে,”অহনা তো উকিল নিয়ে এসেছে।ওই রনির হয়ে কেউ লড়াই করবে।”

“লাভ হবে না।শক্ত পোক্ত প্রমাণ নিয়েই মাঠে নেমেছে এই ফারাজ চৌধুরী।আমার উকিলও কম না।কিন্তু মিসেস শ্রেয়াকে এখানে এনেছো কেনো?”

আমতা আমতা করে অর্পা বলে ওঠে,”আসলে বড়ভাই।তুমি যার নামে কেস করেছো তার ওয়াইফ শ্রেয়া।”

স্তব্দ হয়ে যায় ফারাজ ও শ্রেয়া।অর্পার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মিমি এসে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।বলে,”ওই পঁচা আংকেল তোমার হাসব্যান্ড আণ্টি?”

মিমির মুখে এমন কথা শুনে কিছু বলতে পারে না শ্রেয়া।কি বলবে সে।এইটুকু মেয়ে কতটুকু কি জানে এটা তো শ্রেয়া জানে না।তবে শ্রেয়া এটুকু বুঝতে পেরেছে এই অহনা হলো ফারাজ চৌধুরীর আর বউ মিমির মা।রনির জন্য ঘৃণা বাড়তে থাকে শ্রেয়ার মনে।সাথে ঘৃণা বাড়ছে অহনার জন্য।অর্পার দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া বলে,”তুই আমাকে আগে বলিসনি কেনো?খুঁজে খুঁজে এমন কোম্পানিতে কাজ দিলি যেখানে গেলে কি না লোকের আঙুল উঠবে আমাদের দিকে।”

ফারাজ নিজেও বলে ওঠে,”আমাকে আগে বলনি কেনো?এখানে অহনার উকিল আছে।সে যদি বিষয়টা নিয়ে আমাদের দিকে উল্টো কেস ঘুরিয়ে দেয় অনেক বড় সমস্যা হবে।”

অর্পা এবার দুজনের দিকে তাকালো।তখনই মিরাজ এসে বলে,”ও বলেনি কারণ তোমরা দুজন এখন যেমন নরমাল আছো এটা প্রথম দিন থাকতে না। মানে শ্রেয়ার চাকরিটা হতে সমস্যা হতো।না শ্রেয়া তোমার কোম্পানিতে চাকরি পেতো আর না শ্রেয়া ওই কোম্পানিতে চাকরির জন্য যেতো।”

শ্রেয়া অর্পাকে প্রশ্ন করে,”তারমানে রনির ব্যাপারে তুই আগে সব থেকেই সব জেনেছিলি?”

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে অর্পা বলে,”তোকে নিয়ে হাতির ঝিল যাওয়ার কয়েকদিন আগে বড়ভাই আমাকে আর রনিকে এক ঘরে করে সবকিছু বলে।এই যে রনি আর অহনার সম্পর্ক আছে এই ব্যাপারে।অনেক ছবি ও ভিডিও দেখে বড়ভাই জানায় রনি ও অহনার নামে এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ারের জন্য কেস করবে।শাস্তি পাবে এরা।বিশ্বাস কর দোস্ত ছবিতে রনিকে দেখে আমি স্তব্দ হয়ে যাই।তখন আমার সামনে তোর মুখটাই ভেসে আসে।আমার মনে হয় তোর কিছু হলে তুই কিভাবে চলবি।বড়ভাই অহনার পিছনে একটা স্পাই লাগিয়ে রাখে বিভিন্ন প্রমাণের জন্য।আমরা অহনাকে কিছু বুঝতে দেইনি।বড়ভাই ওদের ঠান্ডা মাথায় শাস্তি দিবে তাই অহনাকে ছার দিয়ে স্পাই লাগিয়ে রাখে।যার সাথে আমারও কথা হয়।আমি ওনার থেকে জেনে নেই ওরা রনি আর অহনা কোথায়। আর ইচ্ছা করে তোকে ওইদিন ওই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাই।কারণ তুই আমাদের থেকে শুনে বিশ্বাস নাও করতে পারতি।চোখের দেখা সত্যি হয় যেটা কারো মুখে শুনে হতে চায় না।সেখানে তো রনি তোর বর।বড়ভাইয়ের থেকে শুনতে পারি বড়ভাই কেস করেছে আর শাস্তি খুব তাড়াতাড়ি হবে।তাই আমিও তাড়াহুড়ো করে বড়ভাইয়ের কোম্পানিতে তোর জন্য অ্যাপ্লাই করতে বলি।আমি ঢাকা শহরে এত তাড়াতাড়ি তোর জন্য চাকরি কোথায় পেতাম বল?আমার কাছে মনে হয় পরে যা হয় হোক তোর একটা চাকরি থাকলে নিজেকে শক্ত রাখতে পারবি।এই অন্যায়ের জন্য লড়তে পারবি।যেটা তুই করেছিস।তুই নিজেই দেখ তোর মধ্যে আগের মত জড়তা কাজ করছে না।কিন্তু আগে থেকে জানলে তোর মধ্যে এই জড়তা কাজ করতো।তুই এক পা এগোতে যেয়ে দশ পা পিছিয়ে যেতি।”

এবার শ্রেয়ার থেকে চোখ সরিয়ে ফারাজের দিকে তাকিয়ে অর্পা বলে,”আমার এই বান্ধবী আমার জন্য যা করেছে আমি কখনই ভুলব না।আমি কি করে ওর বিপদে ওকে ছেড়ে দেই।ও খুব সরল সহজ মনের মেয়ে। ঠকতে ঠকতে মেয়েটা একেবারে ভেঙ্গে পড়বে তাই আমি ওকে এই সাহায্য করেছি।হ্যাঁ আমি জানি আপনাদের জীবনে যেটা চলছে তাতে একসাথে কাজ করা সম্ভব না।কিন্তু আমি আর মিরাজ এটা ছাড়া উপায় পাইনি।আপনাকে আগে বলিনি যে শ্রেয়া রনির বউ কারণ আপনি তখন রনির পতন দেখতে চেয়েছেন।আপনার চোখে মুখে রনির জন্য হিংস্রতা দেখেছি আমরা।রনির বউ জানলে আপনি ওকে চাকরি দিতেন না।তাই ভয়তে আমি বলার সাহস পাইনি।শুধু এটুকুই জানিয়েছি যে আমার বান্ধবী ওর শশুর বাড়িতে অত্যাচারিত হয়।ওর এখন মুক্তির জন্য চাকরির প্রয়োজন।”

অর্পা আর কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন শ্রেয়ার গালে ঠাস করে একটি চড় লাগে।কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দিকে তাকাতেই সবাই দেখলো সৃষ্টি বেগমকে।চোখ দুটো বড় বড় করে লাল হয়ে আছে তার।চিন্তায় ঘুম হয়নি।দ্রুত হেঁটে এসেছে বলে এখন ক্লান্তিতে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। রিমলি হাত উচু করে আছে।উদ্দেশ্য ছিল সৃষ্টি বেগমের হাত ধরে আটকানো।কিন্তু পারলো না।কিছুক্ষণ শ্রেয়াকে দেখে সৃষ্টি বেগম বলেন,”অনেক সাহস বেড়েছে না তোমার?মায়ের ফোন ধরনা তুমি।ঢাকা শহরে একা একা থাকো। আর কত চিন্তায় ফেলবে আমাকে?”

শ্রেয়ার চোখ ভিজে আসে।সৃষ্টি বেগম নিজেও কান্না করে দেন।শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা খারাপ হতে পারে কিন্তু সন্তানের এতটাও খারাপ দেখতে পারে না।তোর কিছু হয়ে গেলে কি আমি খুব সুখে থাকতাম?”

শ্রেয়া একটু শান্তি পেলো।যে ভয়টা পেয়েছিলো তার কিছুই হয়নি।সৃষ্টি বেগম বকেছে ঠিকই কিন্তু রনির জন্য না এভাবে কন্টাক্ট অফ রাখার জন্য।শ্রেয়া এবার নিজেও ওর মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম মা।তুমি ফুফুর বেলায় যেভাবে করেছিলে আমার বেলায় যদি এমন করো তাই।”

“ওরে তোর ফুফু প্রেগনেন্ট ছিলো।ওর শশুর বাড়ির লোকেরা আমাকে ধমকে রেখেছিলো যে তোর ফুফু আর তার বাচ্চাকে আমরা আমাদের ঘরে নিলে তোদের দুই বোনকে…।বুঝতেই পারছিস কি বলেছিলো?ওরা গ্রামের মাস্তান পরিবারের লোক।আমি কি করতাম বল?তোর বাবা নেই এখন।পরিবার দেখতে হয় আমাকে।আমাকে ভাবতে হয় তোদের দুই বোনকে নিয়ে।তোর তো তাও সংসার আছে কোনমতে থাকলেও সুরক্ষিত থাকবি।রিমলি ওর কি হবে?এমনি জোয়ান মেয়ে বাপ নাই বলে ওর দিকেও বখাটেদের নজর।আমাকে ওই বেকার মাস্তান রাফির বাপ প্রস্তাব দিয়ে রাখছে।আমি না করে দেই বলে যা নয় তাই রটাতে থাকে।আমি কি করে কি করতাম বলতে পারিস?”

শ্রেয়া ওর মায়ের মুখে হাত রেখে বলে,”সব ঠিক হয়ে যাবে মা।আমি চাকরি পেয়েছি।এই অর্পা আমাকে চাকরি খুঁজে দিয়েছে।এই তো এই মাসের বেতন পেয়ে তোমার কাছে ছুটে যেতাম।তোমাকে আর বোনকে নিয়েই আসতাম।”

শ্রেয়ার হাত শক্ত করে ধরে সৃষ্টি বেগম বলেন,”তোকে কোনো চাকরি করতে হবে না।দিন দুনিয়া খুব খারাপ।চাকরির নামে কত কি হয় জানিস?অফিসের বস খারাপ হয় ওদের নজর ভালো থাকে না।আমাদের অত টাকা পয়সা লাগবে না।সম্মানটা আগে ধরে রাখতে হয়।”

সৃষ্টি বেগম আশেপাশে না তাকিয়ে কথাগুলো বলতে থাকে।ফারাজের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়ার একটু লজ্জা পেলো।সৃষ্টি বেগম এগোতে যাবে তখন মিমি হাত ধরে আটকে চোখ মুখ গোমড়া করে বলে,”আমার পাপা খারাপ না।তুমি না জেনে আমার পাপাকে বাজে বলবে না।”

মিমির দিকে তাকিয়ে আছেন সৃষ্টি বেগম।শ্রেয়া ওর মায়ের কাধে হাত রেখে বলে,”রনির কেস দেখবে না মা?ভিতরে ওর পাপের শাস্তি হবে কি না জানি না তবে ওর করা অন্যায়গুলো তো দেখো।”

মেয়ের কথায় মনে পড়লো আদালতে রনির বিচার করা হবে।উনি তো শ্রেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করেছিলো।মায়ের মন কথা না বলাতে কু ডাকতে থাকে।তখন কি আর পরের ছেলের কথা মনে পড়ে?শ্রেয়ার কথা শুনে সৃষ্টি বেগম বলেন,”আচ্ছা চল ভিতরে।”

বেল বাজলো জোরে জোরে।শ্রেয়া ও অর্পা একে অপরকে দেখে নিলো।না জানি অহনার মত মেয়ের উকিল কি প্রমাণ করবে আজ।আদৌ কি অন্যায়ের বিচার হবে নাকি উকিল সব উল্টে দিবে?

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here