তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্বসংখ্যা_৬

0
122

#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_৬

” কি ব্যাপার? লাগেজ হাতে বিনা নিমন্ত্রণে হাজির। এখানেই পাকাপাকিভাবে খুঁটি গাড়তে এলে নাকি? ”

বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে শুধালো জাওয়াদ। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলে। মুয়ীয হাসিটুকু লক্ষ্য করলো। তবে নিঃশব্দে হজম করলো না। বসলো সোফায়। অভিজাত ভঙ্গিতে বসলো সে। বাম পায়ের ওপর তুলে ডান পা। দু হাত অবস্থিত সিঙ্গেল সোফার হাতলে। লাগেজটি পড়ে পায়ের ধারে, জাওয়াদমুখী হয়ে। আরেকটি লাগেজ সোফার ধারে, মুয়ীযের সঙ্গী হয়ে। মুয়ীয তীক্ষ্ণ চোখে এক বি°ষাক্ত হাসি উপহার দিয়ে বললো,

” খুঁটি গাড়া, বাঁশ দেওন হয়তো তোগো জাত ব্যবসা হইতে পারে। মোগো না। তয় মোরা বাঁশ দিলে পাল্টা বাঁশ আর ইট মা^রলে পাটকেল দিতে বেম্যালা ওস্তাদ। কথাটা মাথায় পেরেকের লাহান আচ্ছা মতো গাইড়া ল, আজাইরা জাওয়াদ মিয়া। ”

কপালের ডান পাশের রগ বরাবর আলতো টোকা দিয়ে শেষোক্ত কথাটা বললো মুয়ীয। জাওয়াদ হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে! এই ছোটলোকটা ওদেরই বাড়িতে দাঁড়িয়ে ওর সাথেই তুই তোকারি করছে! জাওয়াদ আস্তে করে বাবার দিকে তাকালো। কায়সার সাহেব তখন গাম্ভীর্যের সহিত একমাত্র জামাতার দিকে তাকিয়ে। নিশ্চুপ। বাবার অসহনীয় নীরবতা সহ্য করতে না পেরে জাওয়াদ ফুঁসে উঠলো। বেশ ভাব নিয়ে বসলো মুয়ীযের বিপরীত দিক বরাবর সোফায়। সে-ও পায়ের ওপর পা তুলেই বসলো। টেক্কা দিলো অভিজাত ভঙ্গিমায়। চোখে চোখ স্থির দু’জনার। শীতল স্বরে শুধালো জাওয়াদ,

” এখানে কেন এসেছিস? ”

” বাড়িতে কিছু ময়লা জমছিল। হেইয়া সাফ করতে। ” পাল্টা জবাবে বললো মুয়ীয।

” মানে? এটা কি ময়লার ভাগাড়? ”

” হ্যার চে কম কিছু না। ”

অপমানগুলো বুকে শূল হয়ে বিঁধে যাচ্ছিল। সশব্দে শ্বাস প্রশ্বাস চলছিল জাওয়াদের। মুয়ীয দৃষ্টি হটিয়ে নিলো। পা দিয়ে হালকা এক ধাক্কা। শব্দ করে লাগেজ শুয়ে পড়লো টাইলসের মেঝেতে। মুয়ীয ত্বরান্বিত ভঙ্গিতে লাগেজের পাশেই হাঁটু গেড়ে বসলো। ফট করে এপাশ হতে ওপাশে টান দিয়ে খুলে ফেললো চেইন। উন্মুক্ত হলো লাগেজের ওপরের অংশ। দৃশ্যমান লাগেজে অবস্থিত সকল জিনিসপত্র। মুয়ীয বিলম্ব করলো না। হাতে নিলো লাল টুকটুকে বেনারসী শাড়িটির প্যাকেট। হাতে নিলো। ঠাস করে এক শব্দে রাখলো মেঝেতে। লাগেজের ঠিক পাশেই।

” এই হইলো হাজার টাহার বেনারসী। ”

মেরুন রঙা এবং সী গ্রীন রঙা দু’টো কাতান শাড়ি বের করে,

” দুইডা কাতান। ”

টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় দু’টো শাড়ি, রয়্যাল রেড রঙের লেহেঙ্গা সেট, মেকআপের যাবতীয় সামগ্রী, গহনাগুলো, টয়লেট্রিজ সামগ্রী… দু’টো লাগেজে বিদ্যমান সকল জিনিস একে একে বের করলো বেপরোয়া মুয়ীয হাসান। বিনা দ্বিধায় ছুঁড়ে ফেলতে লাগলো মেঝেতে। একে একে সকল জিনিসের ঠাঁই হলো দামী লাগেজদ্বয় হতে শুভ্র রঙা মেঝেতে। অপমানের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে কাঁপছিল জাওয়াদের পুরুষালি বলিষ্ঠ দেহটা। মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসছিল দুই হাত। দু চোখে বা°রুদের উত্তাপ। হা করে খোলা লাগেজের মুখ। সোফায় হেলান দিয়ে বসলো মুয়ীয। মেঝেতেই বসে সে। উঁচু শ্রেণী হতে নিচুতে যার অবস্থান। বাঁ পা ভাঁজ করে মেঝে ছুঁয়ে। ডান হাঁটু সোজা দাঁড় করিয়ে রাখা। মানুষটির চওড়া পিঠ ছুঁয়ে সোফা।

” তিন লাখ। লাগেজ দুইডায় তিন লাখের মালামাল আছে। সব গুইন্না গুইন্না দেইখা ল। একখান জিনিসও এদিক ওদিক হয় নাই। তিন লাখ পুরাই আছে। তিন পয়সাই ছোডে নাই।… মুয়ীয হাসান তোগো বাড়ির মাইয়া বিয়া করছে। তোগো ওই হাভাতি সম্পত্তিরে না। বিয়ার দিন খুব তো টাহার গরম দেহাইলি। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম মুখ ফাডাই ফাডাই কইলি। এমন ভাব দেহাইলি যে বুইনের লেইগা পিরিত উতলাই উতলাই পড়ে। এমন চোখ ঝলসাইন্না আয়োজন। মাগার আসল কিচ্ছা তো ভিন্ন কিছুই। কথায় আছে না, ফাডা কলসি বাজে বেশি! তোগো হেই হালই হইছে। উপরে উপরে রণবীর সিং। তলে তলে গাব্বার সিং। হা°লার ফু^ডাঙ্কি! হাহ্! ”

মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভৎর্সনা প্রকাশ করলো মুয়ীয। জাওয়াদের ডান হাতটি অত্যধিক ক্রো’ধে খামচে ধরলো সোফার হাতল। কায়সার সাহেব এতক্ষণে মুখ খুললেন। ঠাণ্ডা স্বরে বললেন,

” একটু বেশিই মুখ চলছে না? ”

” মুয়ীযের খালি মুখ না। হাত-পা দোনোই চলে। আমনের ওই আজাইরা ছ্যাড়ারে কইয়া দেবেন। উক্তি নামের কেউ ওরে চেনে না। যে চিনতো, হারা জীবনের লেইগ্গা ভুইলা গেছে। আইজকের পর থে আর কোনো মিথ্যা সম্পর্ক থাকবো না। যা ছিল, সব শেষ। অল ওভার! ”

তিল পরিমাণ বিলম্ব না করে সটান উঠে দাঁড়ালো মুয়ীয। অন্ধকার, ধারালো চোখ দু’টো মেপে নিলো সমন্ধির অপ্রিয় মুখটি। ঘুরে দাঁড়াতেই যাচ্ছিল মুয়ীয। তখনই সেথায় উপস্থিত হলো নিশাত। এতক্ষণ সে অনুপস্থিত ছিল। কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই বাড়ির জামাইয়ের দর্শন লাভ করেছে। উচ্ছসিত বদনে দ্রুত ছুটে গেল চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে। ফিরে এসে উপলব্ধি করতে পারলো, ঝড় একদফা বয়ে গেছে। এখন সব তলিয়ে যেতে বাকি শুধু। নিশাত দাঁড়িয়ে। নাস্তার ট্রে বাড়িয়ে নরম স্বরে বললো,

” ভাইয়া খালি মুখে যাবেন না। অন্তত এক কাপ চা। ”

নিশাত জানে, এ অসম্ভব। এমন আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষটি কখনোই এ বাড়ির অন্ন স্পর্শ করবে না। এটা যে তার নীতি বিরুদ্ধ, স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ। ঠিক তা-ই হলো। আলতো স্পর্শে ট্রে সরিয়ে দিলো মুয়ীয। অকৃত্রিম হেসে বললো,

” ভাবি সাহেবা… সমুন্দির মাথায় সকাল ও রাইতে নিয়ম কইরা কদুর তেল ঘষবেন। মাথায় থাহা শ°য়তান পোক সব কিলবিলাইয়া মইরা যাইবো। আসি তয়। আল্লাহ্ হাফিজ। ”

স্বল্প মাথা নেড়ে সালাম জানালো মুয়ীয। পায়ের ধারে থাকা লাগেজ দু’টো অদৃশ্য কল্পনা করে চমৎকার ভঙ্গিতে পাশ কাটিয়ে গেল। যেভাবে এসেছিল তার থেকে দ্বিগুণ জাঁকাল ভঙ্গিমায় প্রস্থান করলো সেথা হতে। সিনিয়র ও জুনিয়র কায়সার দেখলো। সহ্য করলো। হলো বাকশূন্য।

সময় তখন শেষ দুপুর। ম্লান হয়ে এসেছে রবি’র তেজদীপ্ত রূপ। বাড়ি হতে মাত্র কয়েক কদম দূরত্বে অবস্থিত কলপাড়। ট্যাপকল লাগানো সেথায়। আশপাশের বাড়ি হতে লোকজন আসে সেথায়। থালা বাসন পরিষ্কার করে। উক্তিও আসছে বিগত দু’দিন ধরে। আগে জান্নাত আসতো। এখন আসতে হচ্ছে তাকে। শাশুড়ি মায়ের ভাষ্যে ‘ বইয়া বইয়া আর কত অন্ন ধ্বংস করতা? একটু তো গা হাত-পা চালাও। ‘ বিবাহিত জীবনের দ্বিতীয় দিন হতেই গা, হাত-পা চলছে তার। সম্পূর্ণ নতুন, ভিন্ন এ পরিবেশে যথেষ্ট কাজকর্ম করছে সে। তবুও শাশুড়ির নজরে সে অলস দিনযাপন করে।

উক্তি বাঁ হাতের উল্টো পিঠের সাহায্যে কপালে লেপ্টে থাকা ঘামে ভেজা চুল সরিয়ে নিলো। বসে এক পিঁড়িতে। হাত ব্যস্ত এঁটো বাসন মাজতে। পরিহিত শাড়ির আঁচলে অর্ধ আবৃত মস্তক। কোলে গুজে শাড়ির অবশিষ্ট আঁচল। কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই দুপুরের খাওয়া সমাপ্ত হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। বাকিরা এ মুহূর্তে নিজ নিজ ঘরে আরাম করে চলেছে। আর সে একবিন্দু বিশ্রাম বিনা এখানে গরমে ঘেমেনেয়ে বাসন মেজে চলেছে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সে। আরাম আয়েশে বড় হয়েছে। এই পরিবেশ, এমনতর কাজকর্ম কখনো করা হয়নি। হ্যাঁ, সে কাজকর্ম পারে। নিজে থেকেই শিখেছে। তবে সেসব কাজের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। এমন নিম্ন পরিবেশে টিকে থাকা, কাজকর্ম করা এই মূক মেয়েটির জন্য যথেষ্ট কষ্টকর। তবুও নিজের সেরাটা দিয়ে করে যাচ্ছে সে। উক্তি এ মুহূর্তে এখানে একাকী নয়। ওর পাশেই আরো দু’জন বসে। প্রতিবেশী হয় তারা। তারা দু’জন ওকে দেখছে। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে ফুসুরফুসুর গুজুরগুজুর করছে। হাসছে মিটিমিটি। ওকে হেয় করে নিজেদের মধ্যে মন্তব্য আদান-প্রদান করছে। উক্তি মেয়েটা সবই লক্ষ্য করলো। টের পেলো। তবুও রইলো চুপ। কেননা বহুল প্রচলিত এক কথা রয়েছে,

‘ বোবার কোনো শত্রু হয় না। ‘

তারা বলছে, বলুক। একদিন, দু’দিন, তিনদিন বলতে বলতে ক্লান্ত হবে। বিপরীত দিক হতে একটুও জবাব না পেয়ে, একসময় নিজেরাই চুপ হয়ে যাবে। আমাদের ইসলাম ধর্মে, মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে রাসূল (সাঃ) বলেন যে,

يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوْا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تُعَيِّرُوهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِى جَوْفِ رَحْلِهِ،

‘হে ঐ জামা‘আত! যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ, কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মযবূত হয়নি। তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ্ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ্ প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও’। [তিরমিযী হা/২০৩২; মিশকাত হা/৫০৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৩৯।]

” বাপের বাড়ি থে কোন কচুডা শিইখা আইছো? কোনডাই তো ঠিকমতন পারো না। ”

মোমেনা বেগমের কণ্ঠে উপহাসের ছাপ। উক্তির চোখে নোনাজল। আদিত্য তখন ডুবে পশ্চিম দিগন্তে। লালচে আভার চিত্রপট নিভু নিভু করছে। শীঘ্রই ঘন আঁধারে তলিয়ে যাবে বসূধা। উক্তি বাড়ির সম্মুখভাগে অবস্থিত বড় ঘরটিতে, মেঝেতে বিছানো মাদুরে বসে। পাশেই সিলিন্ডারের এক চুলা। মাঝেমধ্যে দরকারের সময় ঘরে বসেই এটি ব্যবহার করা হয়। যেমন এই মুহূর্তে হচ্ছে। ‘ ছিটা রুটি ‘ পিঠা তৈরি করছে উক্তি এবং বড় জা জান্নাত। মোমেনা বেগম বসে স্বল্প উঁচু এক মোড়ায়। পান চিবোতে চিবোতে কূচুটে শাশুড়ির ভূমিকা পালন করছেন উনি। উক্তি এই ছিটা রুটি পিঠা চেনে না। কখনো খায়নি, দেখেনি। বানানো তো দূরের কথা। তাই স্বাভাবিকভাবেই ওর কাজকর্মে ভুলত্রুটি হচ্ছিল। চালের গুঁড়ার মিশ্রণে হাত চুবিয়ে চুলায় বসানো প্যানের উপর আঙ্গুল গুলো ঝেড়ে দিতে হবে। এই কাজটা উক্তি ঠিকমতো পারছিল না। তাই পাশেই থাকা বড় জা ফোঁড়ন কেটে উঠছিল একটু পর পর। বলে উঠছিল,

” আরে আরে ভাবি। অ্যামনে না তো। আমনে তো দেহি পিডাডা নষ্ট কইরা হেলাইবেন। ”

উক্তি’র শুনে খারাপ লাগছিল। ও যথাসম্ভব চেষ্টা করছিল ঠিকমতো করার। তবে প্রথমবার তো। একটু না একটু ত্রুটি হয়েই যাচ্ছিল। যাতে সাপের মত ফোঁস করে উঠলেন মোমেনা বেগম। বলে উঠলেন,

” বাপের বাড়ি থে কোন কচুডা শিইখা আইছো? কোনডাই তো ঠিকমতন পারো না। ”

উক্তি অবনত মস্তকে বসে। চোখে নোনোজলের খেলা। বোবা মেয়েটি কিচ্ছু বললো না। বরাবরের মতই নিঃশব্দে সয়ে নিলো। প্রতিবাদের তিল পরিমাণ চেষ্টা চালালো না। যা মোটেও পছন্দ হলো না বাড়ির দোরগোড়ায় উপস্থিত মানুষটির। তাই তো শাণিত কণ্ঠে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

” মায়ের পেট থে কেউই কোনোকিছু হিইখ্খা আহে না। ধীরে ধীরে করতে করতেই হেখে। ”

উপস্থিত তিনটা প্রাণ চমকালো, ভড়কালো! তাকালো শব্দ উৎসের খোঁজে। দাঁড়িয়ে মুয়ীয। ডান হাতের তর্জনীতে বাইকের চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে, নোংরা জুতো পায়েই ঘরে প্রবেশ করলো সে। স্বল্প উবু হলো। জুতো খুলে রাখলো দেয়াল ঘেঁষে নির্দিষ্ট স্থানে। তাকালো এবার পিছু ঘুরে অর্ধাঙ্গীর পানে। সেথায় চক্ষু স্থির রেখেই মা’কে বললো,

” দ°জ্জাল হাউরির পার্ট লওয়া বন্ধ করো মা। নিজের হাউরি তো জীবনডা ত্যানা ত্যানা কইরা গেছে। শিক্ষা হইয়া থাকলে তুমি একখান ভালা হাউরি হইয়া যাও। বৌয়ের বান্ধবী হও। বেমালুম ভুইলা যাইয়ো না, এককালে তুমিও কারোর ঘরের বৌ ছিলা। ”

এমন স্পষ্ট উপদেশ মোটেও পছন্দ হলো না মোমেনা বেগমের। তাই তো উনি অপ্রসন্ন কণ্ঠে বললেন,

” মুই দ°জ্জাল হাউরি! এতবড় কথাডা তুই কইতে পারলি বাপ? মুই অরে মা^রি না ধরি, হ্যাঁ? ”

মুয়ীয কৃত্তিম হাসি দিয়ে বললো,

” তরবারির আঘাতের চাইয়াও বেশি কষ্ট জিহ্বার আঘাতে। জানো না এ কথা? ”

মোমেনা বেগম পুত্রবধূর পানে অসন্তোষের চোখে তাকিয়ে বললেন,

” ভালাই তো। অহন থেই মোর পোলাডার কান পড়ানো শুরু হইয়া গেছে? ”

মুয়ীয বিরক্তিকর অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বাইরের চাবি দিয়ে কান চুলকে বললো,

” সন্ধ্যাডা কালেই তোমার কোকিলা মোদি’গিরি ভাল্লাগতাছে না মা। রাইতে খাইয়া দাইয়া অ্যানার্জি লইয়া তোমার ডায়লগ হুনুম নে। অহর ঘরে গেলাম। ”

স্পষ্ট কথাটা পেশ করে ঘরের দিকে পা বাড়ালো মুয়ীয। হঠাৎ থমকে গেল। তবে পিছু ঘুরে তাকালো না। শুধুমাত্র বাঁ কাঁধে মুখ এনে ওই নির্দিষ্ট রমনীকে উদ্দেশ্য করে বললো,

” ওই ছেমড়ি! ঘরে আয়। মোর জিনিসপত্র গুছাইয়া বাইর কইরা রাখ। মুই হাত-পা ধুইয়া আইতাছি। ”

” কি হইছে? অমন ভূতের লাহান বইয়া আছোছ ক্যা? জ্বিনে ধরছে নি? ”

প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুয়ীয। নিশ্চুপ উক্তি। বলবেটা কি? সত্যিই বলবে কি? সত্যিটা কি তার জন্য লজ্জার নয়?

চলবে।

[ আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। কেমন লাগছে জনাব মুয়ীয হাসানের ধোয়াপাকলা? সে তো বিনা ডিটারজেন্টে ভালোই ধুতে শিখে গেছে 😎

শেষে এটা কি হলো? হুঁ? ভাবনার বিষয় তো 🤔 ]

🍂 জয়েন করুন আমাদের গ্রুপে ~

https://facebook.com/groups/499389245208190/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here