এক_চিলতে_রোদ #Writer_Nondini_Nila #বোনার্স_পর্ব

0
78

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#বোনার্স_পর্ব

গাড়িতে বসে ইমা কেঁদেই যাচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে রিফাত থামাতেই পারছে না। তাই উপায় না পেয়ে ওর মাথা টেনে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।

“এমন করে কান্না করলে কিন্তু শশুর বাড়ি নিয়ে যাব না। গাড়ি ঘুরিয়ে তোমাদের বাসায় রেখে আসি কি বলো?”

ইমা ফুঁপিয়ে কাঁদছে তার মাঝে এসব করায় ও লজ্জা ও পাচ্ছে গাড়িতে আরো লোক আছে সামনে তাদের সামনে এভাবে। সরে আসতে চাইলে রিফাত শক্ত করে ধরে তাই আস্তে পারে না। ও কটাপ রাগ নিয়ে বলে,,

“ছারো কি করছো এমন চেপে ধরেছো কেন?সবাই দেখছে ?”

“দেখুক আমি আমার ব‌উকে ধরেছি কার বাপের কি?”

“তুমি এই ভাবে কথা বলছো?”

“হুম বলছি কেন?”

“না এমনি তোমার তো আবার মান সম্মান আগে ছিলো আমার হাত ধরো নাই কখনো কোন মানুষ থাকলে। আর এখন!”

“সে সময় ইচ্ছে করেই ধরিনি।”

“মানে?”

“তখন তুমি আমার ব‌উ ছিলে নাকি তাই। আর এখন তো ব‌উ সব কিছু করতে পারি অধিকার নিয়ে।”

‘তারমানে?”

রিফাত ইমাকে ছেড়ে দিলো।ইমা ভ্রু কুঁচকে বলল,

“ছারলে কেন?”

যার জন্য ধরেছিলাম তা এখন নাই তাই প্রয়োজন নাই ।

কি জন্য ধরেছিলে?

ইমার কান্না থেমে গেছে তাই রিফাত ওকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ইমা সেটা বুঝতে পারেনি। তখন সামনে থেকে রিহান কথা বলে আর ওরা ওদের ধ্যান ভেঙে ফেলে।
দের ঘন্টা পর বাসায় এসে পৌছে ওরা। সবাই ব‌উ বরন করে ভেতরে নেয়।

🖤🖤🖤

ঊষা বিছানায় বসে থরথরিয়ে কাঁপছে। কি হলো তখন সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেছে। ভাইয়ার কাছে গেলে আমার বরাবরই এমন হয় কিন্তু আজকে ভাইয়ার আচরণ আর কথা সব কিছু আমার মাথায় উপর দিয়ে গেলো।

চোখ বন্ধ করতেই ভাইয়ার লাল চোখে ভয়ঃকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ভেসে উঠলো। ভাইয়া তখন আচমকা আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসে আমি ভাইয়াকে আটকাতে পারছিলাম না। সে আমার খুব কাছে ছিলো ও হাত দিয়ে আমাকে জাপটে ছিলো আমি সরতে পারছিলাম না। এতো কাছে আসতে দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম। তার ঠোঁট আমার ঠোঁটে স্পর্শ করবে এমন সময় ভাইয়া ফট করেই আমাকে কোলের উপর থেকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো। আর নিজেও উঠে অন্যদিকে তাকালো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার দিকে আর তাকালো না। সোজা ভেতরে চলে গেলো আমি থমকে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম।

এদিকে ইহান নিজের রুমে এসে মাথার চুল খামচে ধরে।পাগল লাগছে নিজেকে কি সব করছিলো ও। এলোমেলো পায়ে বেলকনিতে যায় সিগারেট বের করে খেতে লাগে। ওইখানেই বসে পরে। নিজের অনুভূতি কন্ট্রোল করতে পারলাম না আমি। এইভাবে সব বলে দিলাম ঊষাকে। ও আমাকে খারাপ ভাবছে আমি জানি। কিন্তু আমি কা করতাম আমার এই অনূভুতি আমি লুকাতে পারছিলাম না।বুকের ভেতর ব্যাথা অনুভব করেছি আমি ভালোবাসার জন্য। এসব মায়ের কানে গেলে কি হবে? কখনো ঊষাকে মানবে না সে। এসব না জেনেই মা আমার কাছে ঊষাকে আস্তে বারন করেছে আর জানতে পারলে আরো আসতে দেবে না।

চিন্তা ভাবনা করতে করতে সিগারেট খাচ্ছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। তখন ওর ফোনটা বেজে উঠলো,,

বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ফারিয়া কল করেছে। কয়েকদিন ধরে পাগল করছে ওকে বিদেশে যাওয়ার জন্য। বিয়ে করার জন্য। এখন এমনিতেই টেনশন তার উপর ওর কল রেগে ফোন রিসিভ করে কয়েক দফা ঝাড়ি দিলো ফারিয়াকে তারপর ফোন অফ করে দিলো।

ঊষা নিজের রুমে থেকে রাতে আর বের হলো না। পরদিন চাচির থমথমে মুখ দেখেছে ঊষা। ওর দিকে রেগে ও তাকায়নি বকেও নি। ও অবাক হয়ে সকালের খাবার খেয়েছে কিন্তু ইহান ভাইকে আশেপাশে কোথাও দেখেনি।

সবাই মিলে রেডি হয়ে এলো ইমা আপুর বাসায় যাবে বলে। তিনটার দিকে বের হলো সবাই আজকে লতাও যাবে আমার কাছে লতা বসেছে। আমি আজ আসতে চেয়েছিলাম না।আমাকে অবাক করে দিয়ে চাচি নিজে আমার কাছে এসে বলেছে,

” ঊষা তারাতাড়ি রেডি হয়ে যা। এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন সবাই তো রেডি হয়ে গেছে। ”

আমি যাব না বলে বেড়ি হয়েছিলাম না। কিন্তু চাচির কথা শুনে অবাক হয়ে রেডি হয়ে এসেছি। তার ব্যবহার আমাকে চরম মাত্রায় অবাক করেছে।

এই বাসায় আসার পর আমার পেছনে ঘুরঘুর করছে রিহান। আমি ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। লতার হাত ধরে। লতা আমাকে দাড় করিয়ে বললো,,,

“কি হয়েছে এমন করছিস কেন?”

“আরে ওই ছেলেটা আমাকে জ্বালাতন করে খুব খালি বকবক করে এসে।”

“কোন ছেলে?”

দেখালাম। লতা দেখে বললো।

“তোরে পছন্দ করে মনে হয় প্রেম করতে চায় নাকি?”

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম,, ” তা জানি না। কিন্তু ইহান ভাই ওর সাথে কথা বলতে মানা করছে।”

“কেন মানা করছে?

“তা জানি নাকি? কথা বললেই রেগে আসে আর ধমক দেয়। আচ্ছা লতা আজ ইহান ভাইকে দেখেছিস?”

বলেই ওর দিকে তাকালাম। কাল রাত ভর ভাইয়ার কথা ভেবেছি ওমন করার কারণ বুঝি নি‌। সকালে জিজ্ঞেস করবো ভেবেছিলাম কিন্তু আর তার দেখা নাই।

লতা বললো, ” সকালে দেখেছিলাম আর দেখি নাই।”

“সকালে দেখেছিলি?”

“হুম।”

” কোথায় আমি দেখলাম না তো। আর আজ এখানেও আসে নি নাকি।”

“আসবে কি করে? সে তো কোথায় জানি গেছে সকালে ব্যাগ একটা নিয়ে।‌আমি সকালে তাকে ম্যাডামের ঘরে কিছু নিয়ে রাগারাগী করতে দেখেছি। তারপর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে তোর রুমে উঁকি দিয়েছে।”

“কোথায় গেছে?” উত্তেজিত হয়ে বললাম।

“আমি কি জানি? কিন্তু তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে?”

“কি কথা? অবাক হয়ে বললাম।

“পরে বললো?”

আমরা চলে আসবো তখন রিহান এসে আমার হাত ধরে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো আমি হাত ছারানো জন্য ছুটাছুটি করেছি। কিন্তু পারিনি।

“এসব কি আমাকে এখানে টেনে আনলেন কেন?”
রেগে বললাম।

“সরি এভাবে টেনে আনার জন্য। কিন্তু তুমি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না আজ। তাই এটা করতে বাধ্য হলাম রাগ করো না প্লিজ।”

বিনীত সুরে বলল। আমি রাগ নিয়ে তাকিয়ে বলল,,

” রাগের কাজ করে বলছেন রাগ করবো না”

” সরি বললাম তো।”

” আচ্ছা বলুন কি বলবেন?”

রিহান ফট করেই আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। আমি বড় চোখ করে তা দেখছি। পাগল হলো নাকি বসে আছে কেন?

আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা ফুলের তোড়া এনে আমার সামনে ধরলো আর বললো,,

“আই লাভ ইউ ঊষা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই প্রথম দিন তোমাকে আমি পছন্দ করেছিলাম আস্তে আস্তে তা ভালোবাসায় পরিনিত হয়েছে। তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। রিহান একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে সে আমাকে খুব ভালো বাসে হ্যানত্যান। আমি কথা বলছি না দেখে রিহান জোর করেই আমার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

আমি চমকে উঠে ফুল ফেলে দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে এলাম।
লতা আমাকে দেখে বললো,,

“কোথায় গেছিলি? আর এমন দৌড়ে এলি কেন?”

আমি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলাম। লতা সারা রাস্তা অনেক জিজ্ঞেস করলো আমি আস্তে আস্তে সব বললাম ও কিছু ক্ষন হা করে তাকিয়ে বলল,,

“আমি উনার হাবভাব দেখেই বুঝেছিলাম। এমন কিছু বলবে?”

” তুই বুঝেছিলি। ”

” হুম তোর মতো গাধা নাকি!”

“আমি গাধা?”

“তুই কি রাজি হয়েছিস?”

“কিসে?”

“প্রপোজ এ?”

“না কিছু বলিনি দৌড়ে চলে এসেছি আমি শক খেয়েছি খুব রে।”

“রাজি হবি।”

” না না।”

“কেন দেখতে কিন্তু ভালোই। রাজি হয়ে বিয়ে করে নে। চাচির বাসা থেকে চলে যা। শান্তিতে থাকতে পারবি। উনি আর তোকে কষ্ট দিতে পারবে না। না কথা শুনাতে পারবে।”

“কি সব বলছিস? ”

“ঠিক‌ই তো বললাম। ভেবে দেখিস?”

সারা রাস্তা আর কথা বললাম না। রাতে বাসায় এলাম। আসার পর ইমা আপু কথায় থেমে গেলাম। আপু চাচি কে বলছে?

” ইহান কোথায় মা?”

চাচি বলল, ” আমি জানি না রে কোথায় গেলো যে? ফোন করেছিলো কিন্তু কোথায় তা বলেনি।”

“এইভাবে আমার বিয়ের অর্ধেক সময় কোথায় গেল ফাজিল টা। ”

আমি ধীরপায়ে রুমে চলে এলাম। মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাইয়া গেলো কোথায়?
কাল ওমন করলো আমাকে শাস্তি দেবে এসব বললো আর আজ সকাল থেকে লাপাত্তা হয়ে গেলো। ভাইয়া লাপাত্তা সাথে চাচি আমাকে একদম বকা ঝকা করছে না কেমন গুটিয়ে আছে। ভালো করেই কথা বলতে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার।

#চলবে

( নেক্সট নাইস না লিখে একটু বড় বড় কমেন্ট করো না সবাই এসব তো আর ভালো লাগে না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here