#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৪
বড্ড অস্থিরতায় ভরপুর নয়ন নিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিতা ফারিশের দিকে। আশ্চর্য ফারিশের এত ঘাবড়ানোর কি আছে? সে কি সিরিয়াস হয়ে কথাটা বলেছিল নাকি! বলেছে তো মজা করে। হঠাৎই আদ্রিতার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেললো। সে মনে মনে হাসলো। ফারিশের গা ঘেঁষে বসলো একটু। ফারিশ চমকে উঠলো এতে। বললো,“এখনই গা ঘেঁষে বসার কি আছে দূরে সরো?”
আদ্রিতা সরলো না। ফারিশের কানে কানে ফিসফিস করে বলে,“এত ঘাবড়াচ্ছেন কেন মাফিয়া সাহেব? আমি বউ হয়ে ঘাবড়াচ্ছি না আর আপনি স্বামী হয়ে ঘাবড়াচ্ছেন।”
ফারিশ সরাসরি চাইলো আদ্রিতার দিকে। আদ্রিতার চোখে মুখে রহস্যের হাসি। ফারিশ বুঝেছে এ মেয়ে মতলব। ফারিশ এবার সিরিয়াস হলো। নিজেই আদ্রিতার কোমড় জড়িয়ে কাছে আনলো। বললো,“প্রথমবার তো তাই একটু ঘাবড়াচ্ছি। তুমি মানিয়ে নিতে পারলে দেখবে আর ঘাবড়াবো না।”
আদ্রিতা চমকালো এবার। হাসি আসলো তার। তবে হাসলো না। আদ্রিতা বুঝেছে তার আর মজা করা হলো না। এই ছেলে এখন ভয় পেল না কেন! ফারিশ বুঝি আদ্রিতার মনের কথা বুঝলো। আদুরে গলায় বললো,“ফারিশকে ভয় পাওয়ানো এত সোজা বুঝি।”
আদ্রিতা ভ্রু-কুচকে নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করলো। বললো,“ছাড়ুন তো। আপনি একটা পাঁজি লোক শুধু শুধু এতক্ষণ নাটক করছিলেন।”
ফারিশ চমৎকার ভাবে হাসলো। আদ্রিতার সেই হাসিতে চোখ আটকালো। লোকটা এত সুন্দর হাসে যে আদ্রিতা বার বার প্রেমে যায়। আদ্রিতার চাহনি খেয়াল করলো ফারিশ। সে শীতল গলায় আওড়ালো,
“এভাবে তাকাবেন না ডাক্তার ম্যাডাম, আপনার চাহনি যে আমাকে ভিতর থেকে বড্ড ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়।”
আদ্রিতার মুখভঙ্গি পাল্টালো। এই ছেলে আবার তাকে আপনি করে বলছে। কি সুন্দর এতক্ষণ তুমি বলছিল। ফারিশের তুমিটাতে আদ্রিতা অন্যরকম সস্থি পায়। আদ্রিতা বললো,“ক্ষতের কি আছে ভালোবাসায় কোনো ক্ষত নেই। আছে শুধু পবিত্রতার ছোঁয়া। ”
ফারিশের আচমকা কি যেন হলো সে ছেড়ে দিলো আদ্রিতাকে। আদ্রিতা খানিকটা অবাক হলো এতে। বললো,“কি হয়েছে?”
ফারিশ মাথা নিচু করে বলে,
“আমার জীবনে আপনার আসাটা কি ঠিক হলো?”
“কেন ঠিক হবে না।”
“আমার জীবন যে বড্ড অগোছালো।”
“থাকুক না একটু অগোছালো ক্ষতি কি তাতে?”
“ক্ষতি কি সত্যি নেই?”
“আমি তো দেখি না।”
“তুমি কি পারবে আমার সাথে সারাজীবন অগোছালো হয়ে থাকতে?”
“আপনি সাথে থাকলে আমি ঠিক মানিয়ে নিবো।”
ফারিশ আদ্রিতার দু’হাত আঁকড়ে ধরলো। মলিন মুখে বললো,
“জানো তো আমি এই জীবনে আসতে চাই নি কিন্তু সময়, পরিস্থিতি আমায় এখানে এনে ঢেকিয়েছে।”
“ছেড়ে আসা কি সম্ভব?”
“ছেড়ে দিলে আমার মৃত্যু নিশ্চিত।”
আদ্রিতা সঙ্গে সঙ্গে থমকে গেল। বললো,“দরকার নেই। আড়ালের জিনিস আড়ালেই রাখুন। আজ আমি আড়াল করবো ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানেরা আড়াল করবে। তারাও নিশ্চয়ই বাবা প্রেমিক হবে। আপনি আর এসব নিয়ে ভাববেন না। কাল আমাকে হসপিটাল যেতে হবে আসুন ঘুমিয়ে পড়ি।”
ফারিশ কিছু বলে না। চুপ করে রয়। আদ্রিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার গায়ে জড়ানো ছিল ভাড়ি লেহেঙ্গা। আদ্রিতার হঠাৎ মনে হলো সে একটা কঠিন ভুল করে ফেলেছে। আসার সময় কোনো জামাকাপড় আনা হয় নি। এগুলো পড়ে তো ঘুমানো সম্ভব নয়। আদ্রিতা ফারিশের দিকে তাকিয়ে বললো,“আপনার জামা কাপড় কোথায় থাকে মাফিয়া সাহেব?”
ফারিশ শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকায় আদ্রিতার দিকে। হাত দেখিয়ে আয়নার পাশেই বিশাল আলমারিটাকে দেখিয়ে বলে,“ওইখানে।”
আদ্রিতা দ্বিতীয়হীন এগিয়ে গেল সেখানে। আলমারি খোলাই ছিল। আদ্রিতা আলমারি খুলে দেখলো ফারিশের বেশ কিছু শার্ট প্যান্ট রয়েছে। আদ্রিতা অনেক খুঁজেফুজে মেরুন রঙের একটা ফু’হাতার টিশার্ট বের করলো। সঙ্গে কালো জিন্স। এরপর সেগুলো নিয়ে ছুটে গেল ওয়াশরুমের দিকে। ফারিশ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো আদ্রিতার কর্মকান্ড। কিছু বলতে পারলো না। তবে বুঝেছে খানিকটা। কেন নিলো?’
আধঘন্টা পরই মুখের সাজগাজ মুছে ফারিশের টিশার্ট আর জিন্স পড়ে বেরিয়ে আসলো আদ্রিতা। গায়ে গাতোরের অলংকার খুলে রাখলো আয়নার সামনে। এরপর খুলে ফেলা লেহেঙ্গাটা ফারিশের বেলকনিতে টানাতে গেল। ফিরে এসে ফারিশকে একই ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে বললো,“আপনি কি সারারাত ওভাবেই বসেই থাকবেন?”
ফারিশের উসখুস চাহনী। অস্থিরতায় বুকভাড়। সে মলিন মুখে আবদারের স্বরে শুধালো,“আমায় একটু জড়িয়ে ধরবে বউ?”
আদ্রিতা চকিত চমকে উঠলো। কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকার নামলো। কারণ ফারিশের ঘরে তখন লোডশেডিং হয়েছে। আদ্রিতা তখনও বেলকনির দরজার মুখে ঠায় দাঁড়ানো। হঠাৎ ম্যাচের কাটি জ্বলে উঠলো। ড্রয়ার থেকে মোমবাতি বের করে সেটা জ্বালালো ফারিশ। আলতো হাতে রাখলো ড্রেসিং টেবিলের উপর। আদ্রিতা এগিয়ে এলো। মুখোমুখি বসলো। মিষ্টি হেঁসে বললো,“ধরুন।”
ফারিশ দেরি করলো না মোটেও তক্ষৎনাৎ জড়িয়ে ধরলো আদ্রিতাকে। আদ্রিতা চুপচাপ বসে নিজেও ধরেছে তো ফারিশের পিঠ। লোকটার বুকভরা চাপা আর্তনাদ আদ্রিতা টের পাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমরা ভুল কাজ থেকে সরে আসতে চাইলেও সরে আসতে পারি না। কারণ সরে আসার সময়টায় যে আমরা বড্ড দেরি করে ফেলি। আদ্রিতা চায় ফারিশ সব থেকে বেরিয়ে আসুক। কিন্তু ফারিশ যে বললো, বেরিয়ে আসতে চাইলেই মৃত্যু নিশ্চিত। কথাটা ভেবেই বুক কেঁপে উঠলো আদ্রিতার। সে ফারিশের শার্টটা পিছন থেকে শক্ত করে চেপে ধরলো। আদ্রিতা হঠাৎ বললো,“আপনি একবার আমায় আবদার করে ছিলেন আমাদের যতবার দেখা হবে ততবার যেন আমি আপনায় দশ মিনিট করে জড়িয়ে ধরি। সে আবদার এতদিন আমি রাখি নি। তাই আজ থেকে আপনি দশ মিনিটের জায়গায় আমায় ত্রিশ মিনিট জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে পারবেন আমি কিছু মনে করবো না।”
ফারিশ কথাটা শোনে। ঠোঁট মেলে কিঞ্চিৎ হাসে। তবে কিছু বলে না। আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরার মাঝে ফারিশ বরাবরই অন্যরকম প্রশান্তি পায়। ফারিশ চোখ বন্ধ করলো। প্রকৃতি তখন নীরব। অন্ধকারে টুইটুম্বর পুরো শহর। আকাশ জুড়ে থাকা চাঁদটাও বুঝি মেঘে থাকতে ব্যস্ত। তবে এতো ব্যস্ততার ভিড়েও মিট মিট করে জ্বলছিল একখানা আগুনবাতি।”
—-
সূর্যের তীব্র রোদে ঘুম ভাঙলো ফারিশের। পাশ ফিরে আদ্রিতাকে না দেখে খানিকটা চমকে উঠলো। শোয়া থেকে উঠে বসলো দ্রুত। জোরে হাক দিয়ে ডাকলো,“আদিব।”
আদিব দ্রুত ছুটে আসলো তখন। থরথর করে বললো,“বলুন ভা…
পুরো কথা শেষ করার আগেই ড্যাব ড্যাব করে ফারিশের দিকে তাকিয়ে রইলো আদিব। ফারিশ নিচের দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করলো,“আদ্রিতা কোথায় আদিব?”
আদিব জবাব দিলো না। ফারিশের দিকেই চেয়ে রইলো শুধু। ফারিশ এবার তাকালো আদিবের দিকে। বললো,“কি হলো আদিব কথা বলছো না কেন?”
পুরো কথা শেষ করে আদিবের মুখশ্রীর দিকে তাকাতেই বিব্রত হলো ফারিশ। আদিব যেন কিভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফারিশ অবাক স্বরে বললো,“কি হলো আদিব তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমাকে এর আগে দেখো নি।”
আদিব আচমকা লাজুক হাসলো। বেশ লাজুকতা নিয়ে বললো,“দেখেছি তো ভাই তবে আজকে।”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল আদিব। ফারিশ হতভম্ব হয়ে চেয়ে। ব্যাপারটা কি হলো?”
ফারিশ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। নিজের শার্টের দিকে তাকালো। সামনের কিছু বোতাম খোলা সঙ্গে বুকের উপরে লিপস্টিকের দাগ। ফারিশ বিস্মিত হয়ে গেল ঘটনাটায়। হতভম্ব স্বরে বললো,“এসব লাগলো কখন? কাল রাতে ছাহ্। আদিব কি ভাবলো তাকে। পরক্ষণেই ভাবলো এত ভাবার কি আছে বউ কিস করেছে পাশের বাড়ির খসেটি খালা তো দেয় নাই। ফারিশ নিজের আচরণে নিজেই অবাক। ফারিশ আবার লজ্জা পাওয়া শুরু করলো কবে!’ ফারিশ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে টাওয়াল হাতে ওয়াশরুমে চলে গেল।’
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আজকের ব্রেকফাস্ট তৈরি করছে আদ্রিতা। রান্না প্রায় শেষ। আদ্রিতার গায়ে জড়ানো সবুজরঙা শাড়ি। শাড়িটা আদিব তাকে দিয়েছে। কাল রাতেই চাঁদনীকে নিয়ে কিনেছিল এটা। শাড়িটা ফারিশের রুমের আলমারির পাশেই ব্যাগের মধ্যে ছিল। কিন্তু আদ্রিতা দেখে নি। দেখেছে আজকে সকালে। শাড়ির উপর ব্যাগের মধ্যে ছোট্ট চিরকুটে লেখা ছিল,“ডাক্তার ভাবি এটা আপনার জন্য।”
চিরকুট পড়ে আদ্রিতা মিষ্টি হাসে তখন। তারপরই শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে চলে আসে নিচে। আদ্রিতা খাবার বেড়ে টেবিলের রাখলো। সেই মুহূর্তে সেখানে হাজির হলো আদিব। বললো,“ডাক্তার ভাবি এসব কি করছো? সকালের নাস্তা প্রায় সময় আমি বানাই।”
আদ্রিতা মিষ্টি হেঁসে বলে,“আজ থেকে আমি বানাবো। আর কিছুদিন পর আমি আর চাঁদনী।”
আদিন লাজুক হাসলো এতে। বললো,
“বিয়েটা কি করতেই হবে ডাক্তার ভাবি?”
“অবশ্যই। বিয়ে না করলে আমি আর চাঁদনী একসাথে থাকবো কেমন করে। তুমি বসো ভাইয়া আমি বাকি খাবার নিয়ে আসছি।”
আদিবও বলে,
“আচ্ছা ডাক্তার ভাবি।”
আদিব চেয়ারে বসলো। আদ্রিতা গেল রান্নাঘরের দিকে। এমন সময় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো ফারিশ। গায়ে জড়ানো নেভিব্লু কালারের শার্ট, কালো প্যান্ট। আদিব ফারিশকে দেখেই হাসলো। ফারিশ এগিয়ে এসে বললো,“এভাবে হাসার কি আছে জীবনে লিপস্টিক দেখো নি।”
আদিব কোনোরকম বললো,“দেখেছি তো ভাই। তবে মেয়েদের ঠোঁটে। আপনার শরীরে পেতথমবার।”
ফারিশ বসতে বসতে বললো,“আমিও তোমার শরীরে পেতথমবার দেখার ব্যবস্থা করছি দাঁড়াও।”
কথা শুনে আদিবের কাশি উঠলো হঠাৎ।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]
#TanjiL_Mim♥️.