এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ৪৩

0
143

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৩

আঁধার রাতে কাজী অফিসের বাহিরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে নয়নতারা আর আশরাফ। দুজনের চোখে মুখেই লাজুকতার ছোঁয়া। আশরাফ বললো,“আপনি চাইলে কিন্তু আমরাও বিয়েটা করে নিতে পারি।”

নয়নতারা আশরাফের চোখের দিকে তাকালো। শান্ত স্বরে আওড়ালো,
“আমাদের কি বিয়ে করার কথা ছিল?”
“ছিল না। তবে কথা হতে কতক্ষণ!’

মৃদু হাসলো নয়নতারা। বললো,
“আপনায় আমি করবো কেন?”
“আপনার মন তো এই প্রশ্নের উত্তর জানে। আপনি না জানলে আমি কি করতে পারি।”

চমৎকার হাসি ফুটে উঠলো নয়নতারার ঠোঁটে। হৃদয় জুড়ে প্রেমাসক্তের ঢেউ। সে বললো,“আমি কিন্তু পুলিশ। সন্দেহের রেশ কিন্তু সবসময় থাকিবে।”

আশরাফ হাসলো হঠাৎ। বললো,“আমিও ডাক্তার। আপনায় চুপ করার ঔষধ কিন্তু আমার জানা।”

নিজেদের কথায় নিজেরাই হাসলো দারুণ। প্রশান্তিকর মুহূর্ত সৃষ্টি হলো মুহূর্তেই। আশরাফ হাত ধরলো নয়নতারার। বললো,“আমি কিন্তু আপনার জামাই হিসেবে খারাপ হবো না।”

নয়নতারাও হাতে হাত রাখলো আশরাফের। বলে উঠল,
“আমিও আপনার বউ হিসেবে খারাপ হবো না তবে।”
“তাহলে সবাইকে জানাই।”

লাজুকলতা মুখশ্রী নিয়ে বললো নয়নতারা,“জানান।”

দুজনেই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো দুজনের মুখশ্রীর দিকে। এরই মাঝে মৃদুল হেঁসে বলে উঠল,“দেইখা লাইছি কইয়া দিমু। ও ওহ দেইখা লাইছি কইয়া দিমু।”

মৃদুলের আচমকা কথা শুনে আশরাফ নয়নতারা দুজনেই চমকে উঠলো। হাত ছেড়ে দুজনেই ছিঁটকে চলে গেল দূরে। মৃদুল হেঁসে উঠলো তাতে। আবারও বললো,“দেইখা লাইছি কইয়া দিমু।”

আশরাফ কপট রাগ দেখিয়ে বললো,“কি দেখছোস তুই?”

মৃদুল আশরাফের কাঁধে হাত থেকে রেখে শান্ত স্বরে বললো,“পরপর কতগুলা বিয়া খামু দুস্ত।”

আশরাফ বলে,“এখনও দুটো।”
মৃদুল আফসোসের স্বরে বলে,“এই বিয়ার চক্করে আমি হানিমুন কবে যামু ভাই।”
আশরাফ মৃদুলের বাহুডোর থেকে স্বরে এসে বললো,“একা যাবি কেন আমরাও সঙ্গে যামু বার চা।”

আশরাফ চলে গেল। মৃদুল ফ্যাল ফ্যাল নয়নে শুধু আশরাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে।’

কাজী অফিস খালি হলো। মৃদুল নীলিমা, আশরাফ নয়নতারা, রনি আর মুনমুন চলে গেল মাত্র। এখন আদ্রিতাদের যাওয়ার পালা। ফারিশ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। গলায় তার এখনো মালা জড়ানো। আদিব একটু দূরে চাঁদনীর সাথে কথা বলছে। তাদের মান অভিমানের পাল্লা চলছে। ওই যে গত কয়দিন আদ্রিতার জন্য সে চাঁদনীর সাথে আড়ি করেছিল তারই বোঝা পড়া চলছে। আদিব শুধু বলেছে,“তার মাথায় হঠাৎ গন্ডগোল হয়েছিল যার দরুন এমন অবহেলা।”– চাঁদনী তো তা মানতে নারাজ। পরে অনেক ভুংভাং বুঝিয়ে শেষমেশ মানালো।’

আদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে তার বাবা মা আর ভাইয়ের সামনে। আদ্রিতা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন সে ফারিশের সাথে যাবে। তার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে ফারিশের তাকে খুব প্রয়োজন। আদ্রিতার বাবা খানিকটা রেগে আছেন বিষয়টায়। এভাবে হুট করে বিয়েটা তিনি মানতে পারছেন না। মূলত মেয়ের হঠাৎ পাগলামির দরুণ তাদের আসতে হয়েছে এখানে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা খুব আবেগী এরা একটু হলেও আত্মহত্যার ভয় দেখায়। আদ্রিতার বাবা ঘুনাক্ষরে টের পান নি তার মেয়েও এমন করবে। ফারিশ সম্পর্কে আদ্রিতার বাবা আগেই অবগত ছিলেন। মেয়ের হঠাৎ চুপচাপ হওয়ার সময়টাতেই তিনি বুঝেছেন। মেয়ের লেখা কিছু ডাইরিও তিনি পড়েছেন। আড়ালে খোঁজ করেছেন ফারিশের। ছেলে ভালো। বাবা মা নেই। বিষয়টায় প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও পরে মেনে নিয়েছিলেন। মেয়েকে আটক করা হয়েছিল ফারিশ বাঁচিয়েছে এ খবরও আদ্রিতার বাবা মা জানে। মূলত কাল রাতে আদ্রিতা বাড়ি না ফেরায় তারা পুলিশ স্টেশন যান। সব শোনেন। চিন্তিত হয়ে কিশোরের সাথে যেতে চাইলেও পরে কেন যেন যান নি। কিন্তু সকাল বেলাই মেয়ে হুট করে এসে বললো,“সে বিয়ে করবে ছেলের নাম ফারিশ। যে কিনা ঔষধ কোম্পানির মালিক।”

আদ্রিতার বাবার তাতে দ্বিমত ছিল না। কিন্তু আদ্রিতা বললো সে আজই বিয়ে করবে। এক্ষেত্রে নাকচ করেন আদ্রিতার বাবা। শেষে প্রচুর কথা-কাটাকাটি হয় তার আর মেয়ের মাঝে। এক পর্যায়ে আদ্রিতা হুমকি দেয় আজকের মধ্যে বিয়ে না দিলে সে আত্মহত্যা করবে। মেয়ের আচমকা এমন কান্ডে থতমত খেয়ে যান সবাই। শেষমেশ হার মানেন। আদ্রিতার বাবা বেশ বুঝতে পারছেন মেয়ের এমনটা করার পিছনে কোনো কারণ আছে। কিন্তু কারণটা কি তা ধরতে পারছেন না।’

আদ্রিতা তার মা ভাইয়ের সাথে কথা বললো। তারাও মুখ ভাড় করা ছিল। তবে অসুখী ছিল না। ছেলে তাদের পছন্দ হয়েছে।’

আদ্রিতা সবার পরে গেল তার বাবার কাছে। তিনি গম্ভীর এক আওয়াজে বললেন,“এদিক আসো।”

আদ্রিতা গেল। সে বোধহয় জানে এখন তার বাবা কি বলবে। আদ্রিতার বাবার প্রথম প্রশ্ন ছিল,
“এত তাড়াহুড়োর কি ছিল?”

আদ্রিতা চোখ গেল একটা ছেলে হাতে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে যাচ্ছে তার দিকে। আদ্রিতা উৎফুল্ল নিয়ে বললো,“বাবা চলো হাওয়াই মিঠাই খাই।”

আদ্রিতার বাবা বিমুঢ় মেয়ের পানে চেয়ে। আদ্রিতা তার বাবার হাত ধরে এগিয়ে গেল। দুটো হাওয়াই মিঠাই কিনে একটা বাবার হাতে আরেকটা নিজে নিলো। এরপর সামনের একটা ছোট্ট বেঞ্চিতে বসতে বসতে বললো,“বসো বাবা।”

আদ্রিতার বাবা বসলেন। আদ্রিতা পলিথিন ছিড়ে এক টুকরো হাওয়াই মিঠাই মুখে পুড়ে শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,“জানো বাবা আমি না আমার জীবনে একটা ক্ষতমিশ্রিত গভীর শিক্ষা পেয়েছি।”

আদ্রিতার বাবা বিস্মিত হলেন। কণ্ঠখাদে চিন্তিত স্বর এঁটে বললেন,“কি শিক্ষা?”

আদ্রিতার মলিন মুখ। চোখ ছলছল। ঠোঁটে জড়ানোর বিস্ময়ের হাসি। সে বললো,“শিক্ষাটা হলো কারো বিশ্বাস পাওয়ার পর তা ভেঙে দিলে দ্বিতীয়বার সেই মানুষটার বিশ্বাস পাওয়া দারুণ কঠিন।”

আদ্রিতার বাবা গম্ভীর কণ্ঠ বললেন,“বুঝিয়ে বলো।”
আদ্রিতা সরাসরি তার বাবার চোখের দিকে চাইলো। এরপরই মাথা নুইয়ে বললো,“আমি ফারিশের সাথে একটা অন্যায় করেছিলাম তার বিশ্বাস ভেঙেছি। তারপর চেষ্টা করেছি আমার বিশ্বাস আবার ফিরিয়ে আনতে কিন্তু পারি নি। এখনও পেরেছি কি না জানি না।”

আদ্রিতার বাবা নড়েচড়ে উঠলেন। অবাক হয়ে বললেন,“তার মানে তুমি শুধু ছেলেটার বিশ্বাস পাওয়ার জন্য বিয়েটা এত তাড়াহুড়ো করে করেছো?”

আদ্রিতা বাবার পানে তাকিয়ে বললো,
“কিছুটা। তবে আমার আরো একটা কারণ আছে।”
“কারন কি?”
“সেটা টপ সিক্রেট। তোমায় বলা যাবে না।”

আদ্রিতার বাবা আর জোর করলো না। আদ্রিতা তার বাবার হাত ধরে বললো,“আমায় ক্ষমা করো বাবা সকালের ওই পাগলামির জন্য।”

আদ্রিতার বাবা ক্ষমা করলেন কি না বোঝা গেল না। তবে তিনি আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,“যাই করো না কেন ভেবে করো।”

আদ্রিতাও মাথা নাড়িয়ে আশ্বাস দিলো। যার অর্থ ‘ভেবে করবে’!
—-
আচমকাই কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো ফারিশ। আদ্রিতার মা তার পিছনে দাঁড়িয়ে। ফারিশ দ্রুত ফোন কেটে পকেটে পুড়লো। আদ্রিতা মা বললেন,“এভাবে হুট করে তুমি আমার জামাই হয়ে যাবে এ আমি কস্মিনকালেও ভাবি নি। তা কেমন আছো তুমি?”

ফারিশ দ্বিধাবোধ নিয়ে কোনোরকম বললো,
“ভালো আপনি?”
“আমিও ভালো। আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। একটু পাগল টাইপ আছে কিন্তু এমনিতে খুব ভালো। তোমার খুব যত্ন নিবে দেখে নিও।”

ফারিশ কি বলবে বুঝচ্ছে না। সম্পর্কে এই মহিলা তার শাশুড়ী হয়। শাশুড়ীদের সাথে কিভাবে কথা বলতে তাও জানে না ফারিশ। ফারিশ কিছু সময় নিয়ে বললো,“চিন্তা করবেন না আমি দেখে রাখবো।”

উত্তরে মিষ্টি হাসে শুধু আদ্রিতার মা। রাফিন এগিয়ে আসে তখন। বলে,“দুলাভাই আমার নাম রাফিন। আমি আপুর ছোট ভাই। সম্পর্কে আপনার শালা।”

ফারিশ মাথায় হাত রাখলো রাফিনের। বললো,“কেমন আছো তুমি?”

রাফিনও ছোট করে উত্তর দিলো,“ভালো আপনি দুলাভাই।”

ফারিশও বললো,“ভালো।”
টুকটাকি কথা হলো মাঝে। রাত আটটা পেরিয়ে দশটা বেজেছে তারা এখনও কাজী অফিসের বাহিরে দাঁড়িয়ে।’

অতঃপর আদ্রিতা সে রাতেই ফারিশের গাড়ি করে ছুটলো শশুর বাড়ি। পুরো সময় তার খারাপ না লাগলেও গাড়িতে ওঠার পর বুক চিঁড়ে আর্তনাদ বের হচ্ছিল। মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো খুব। বিয়েটা হঠাৎ এমন ভাবে হয়ে যাবে এ যেন আদ্রিতাও ভাবে নি।’
—–
তখন গভীর রাত। ঘড়িতে বারোটা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। ফারিশের ফুল দেয়া বিছানায় পাশাপাশি বসে আছে আদ্রিতা আর ফারিশ। মূলত এই রাতটি তাদের বাসর রাত। হঠাৎ বিয়ে,হঠাৎ বাসর রাত। হঠাৎ নিজের রুম ভাগ হওয়ার বিষয়টায় ফারিশ বড্ড নড়বড়ে হচ্ছে। সবকিছু এত বেশি তাড়াতাড়ি হলো যে ফারিশ কিছু টেরই পেল না। তার যেন এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তার বিয়ে হয়েছে গেছে। খাটে ফুল বিছানোর কাজটা আদিবের। কতগুলো গোলাপ ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে দেয়া হয়েছে খাটে। আদ্রিতা ফারিশের হাত ধরলো হঠাৎ। সঙ্গে সঙ্গে ফারিশ চমকে উঠলো। আদ্রিতা বললো,“এত ভয় পাচ্ছেন কেন?”

ফারিশ আতঙ্কিত স্বরে বললো,
“আমার কি ভয় পাওয়া উচিত নয়?”
“আশ্চর্য! আপনি একজন মাফিয়া হয়ে আমার সামনে ভয় পাচ্ছেন স্বামী।”

ফারিশের কাশি উঠলো হঠাৎ। এই মেয়ে বলে কি ‘স্বামী’! ফারিশকে কাশতে দেখে আদ্রিতা দ্রুত একগ্লাস পানি দিলো ফারিশের হাতে। ফারিশ ঢকঢক করে পুরো পানিটা গিলে নিলো। নিজেকে ধাতস্থ করলো। চুপ থাকলো অনেকক্ষণ। আদ্রিতা বললো,“আমার বেবি চাই।”

এবার যেন ফারিশের শ্বাসকষ্ট উঠে যাবে। এই মেয়ের মাথায় নির্ঘাত সমস্যা হয়েছে। নয়তো পাচারকারীদের হাতে পড়ে ভয়ের চোটে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। একটু রাগ নিয়ে বললো ফারিশ,“বেবি কি বাজারে কিনতে পাওয়া যায় যে চাবে আর এনে দিবো। অদ্ভুত! তুমি এমন নির্লজ্জ কবে হলে?”

আদ্রিতা ফ্যাল ফ্যাল নয়নে ফারিশের দিকে তাকানো। ফারিশ সে দৃষ্টি দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না। রুম থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাবে নাকি ভেবে পায় না।’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আজকের পর্বটা কি খুব অগোছালো লাগলো। জানিও তো একটু]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here