পূর্ণতা ” #নন্দিনী_নীলা ১৬.

0
85

#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
১৬.
(কপি করা সম্পুর্ন নিষেধ) ❌

এতো দিন পর পূর্ণতা বাসায় ফিরেছে খবর পেতেই প্রতিবেশী সবাই এসে পূর্ণতার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করছে। সবাই এসে পূর্ণতা কে নানান ধরনের কথা জিজ্ঞেস করছে। এতো দিন পর কেন? শশুর বাড়ি কি অনেক ভালো লাগে যে একবার ও এখানে আসেনি! আরো নানান কথা শেষে সবাই জামাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতে লাগে।
জামাই ক‌ই আসেনি কেন?
পূর্ণতা তখন খুব শান্ত স্বরেই সবাইকে গলা উঁচু করে বলে দিয়েছে,,” আমি ডিভোর্স নিয়ে একেবারে চলে এসেছি। তাই জামাই বলে কাউকে সম্বোধন করো না। আমি এখন ডির্ভোসি।”
প্রথমে সবাই অনেক আহ্লাদ আদ্যিখেতা করতে লাগলেও পূর্ণতার মুখে এমন বেশরমের মতো ডির্ভোসি কথা টা শুনতেই সবাই কানাঘুষা শুরু করে দেয়। সবাই বলতে লাগে,,” কী নির্লজ্জ হয়েছে দেখেছেন? কেমন গলা উঁচু করে কথাটা বলল যেন কত গর্বের কথা বলছে। লাজ লজ্জার বালাই নাই বুঝা যায়। আগে থেকেই এই মেয়ের লজ্জা শরম কম। বিয়ে হয়ে তো আরো গেছে।”
পূর্ণতা সবার কথা শুনে বলে উঠে,,” আমার বাড়ি এসে আমাকে নির্লজ্জ বলছেন? বাইরে গিয়ে যা বলার বলুন। এই বাসার ভেতরে থেকে কেউ আমাকে খারাপ কথা বলবেন না। আর সত্যি কথা বলতে লজ্জা পাবার কি আছে? বাবা মায়ের ইচ্ছাতে বিয়ে করেছি। পালিয়ে যায়নি। আর কাকিমা আপনার মেয়ে নাকি বেগে গেছে কোন ছেলের সাথে আপনার লজ্জা লাগে না? আমাকে নির্লজ্জ বলতে এসেছেন আমি নির্লজ্জের মতো কোন কাজটা করেছি যে আপনি এবং আপনারা আমার বাসায় দাঁড়িয়ে আমাকে নির্লজ্জ বেশরম বলছেন? আমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করিনি। আর সংসারে টিকে নি এজন্য সম্মানের সাথে ডির্ভোস নিয়ে চলে এসেছি এখানে দ্বিতীয় কথা আসবে কেন? আর সুমনা আন্টি আপনার মেয়ে মেয়ের জামাই তো বছরের পর বছর আপনার বাসায় পরে থাকে আর আপনার ছেলের ব‌উ এর সাথে ঝগড়া করে তাই আপনার ছেলে তার ব‌উ নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকে। আপনার লজ্জা লাগে না মেয়ে বিয়ে দিয়েও নিজের বাড়িতে রাখতে? ফারদার আমাকে কেউ বাজে কথা বলতে আসবেন না। এবার আপনারা সবাই আসতে পারেন।”

পূর্ণতার কড়া গলায় অপমান শুনে সবাই রাগে অপমানে পূর্ণতার মাকে কথা শুনাতে শুনাতে চলে যায়‌। বাসায় পূর্ণতার বাবা ছিল না কোথায় গেছে পূর্ণতা জানে না। পূর্ণতার মা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল কোন বাক্য বের করতে পারছিল না মুখ দিয়ে।
সবাই চলে যাবার পর পূর্ণতা রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালে রোজিনা বেগম বলে উঠে,,” কি লাগবে আমাকে বল।”
পূর্ণতা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে কিচেনে চলে যায় প্রতি উত্তর না দিয়ে। পূর্ণতা রান্না ঘরে এসে কফি করতে লাগে। রোজিনা বেগম গোমড়া মুখো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়ের দিকে চেয়ে। পূর্ণতা কফি মগে ঢেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,” সামান্য কফি আমি করতে পারি আম্মু। এখন তোমার মেয়ে সমস্ত রান্না ও করতে পারে। পাঁচ বছর শশুর বাড়ি সব কাজ করেছে এখন আমি দক্ষ। আমার কাজ আমি করতে পারব তোমার আর প্যারা নিতে হবে না‌।”
রোজিনা বেগম মেয়ের কথা শুনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।
পূর্ণতা বলল,,” তোমার মেয়ে এতো বেয়াদবি করল বকবে না?”
রোজিনা বেগম মাথা নিচু করে বলল,,” আমাদের ভুলে মাশুল তোকে দিতে হচ্ছে‌। আর তুই যা বলেছিস ঠিক‌ই তো বলেছিস।”
পূর্ণতা মায়ের কথা শুনে একটু হেসে বলল,,” আম্মু জীবনের প্রথম মনে হয় আমাকে সাপোর্ট করলে।”
রোজিনা বেগম মেয়ের কথা শুনে চলে এলো বাইরে। তাদের পাত্র নির্বাচনে এতো বড়ো ভুল হয়েছিল মেয়েটাকে কতটা সাফার করতে হয়েছে। সরাসরি মেয়ের সাথে কথা না হলেও কথা হয়েছে আশালতার সাথে সর্বক্ষণ। মেয়ের খোঁজখবর নিয়েছে তারাই আশালতা কে বলেছিল মেয়েকে পড়াশোনা করায় যেন মেয়ের টাকা পয়সা যা লাগবে তারা পাঠাবে আশালতা রাজি হয়েছিল কিন্তু টাকা নেয়নি। আশালতা বেগম রোজিনা বেগমের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। অনেক বিশ্বাস ও ভরসা করত তাকে কিন্তু এভাবে মেয়ে ফেরত আসবে তাদের কল্পনার বাইরে ছিল।

পূর্ণতার স্কুল কলেজ ফ্রেন্ড সবার বিয়ে হয়ে গেছে হয়ত ওর বিয়ের পর কারো সাথেই আর যোগাযোগ নেই। সবার সাথে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পূর্ণতা রাজশাহী থেকে অনার্স কমপ্লিট করেছে। নতুন বন্ধু বান্ধব হয়েছে তাদের অনেকেই ঢাকা আছে ও ঢাকা এসেছে সবাই জানতে পেরেই ওর সাথে দেখা করতে চাইছে ওর বাসায় আসতে চাইছে। পূর্ণতা বাসায় আসতে মানা করে বাইরে দেখা করবে বলেছে। রোজিনা বেগম মেয়ের কথা শুনে সবাইকে বাসায় আসার কথা বলল কিন্তু ও বলল দরকার নেই।
পরদিন বিকেলে পূর্ণতা রেডি হয়ে সবার সাথে দেখা করতে গেল। সবাই মিলে একটু ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে বসল। খাওয়া-দাওয়া করে বাসায় ফিরবে‌। বন্ধুমহল একটা ম্যাজিশিয়ানের মতো যত মন খারাপ ই থাকুক না কেন এরা ম্যাজিকের মতো মন ভালো করার ক্ষমতা রাখে। এই যে পূর্ণতা সমস্যা মন খারাপ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই হারিয়ে গেছে। ওরা সবাই রেস্টুরেন্টে বসে আছে খাবার অর্ডার দিয়ে নিজেরাই আড্ডা দিচ্ছে। পূর্ণতার বন্ধু মহল ছয় জন নিয়ে, উজ্জ্বল, রিতু, মায়া, দিঘি, রাসেল।
খাওয়া-দাওয়া পর বিল নিয়ে লড়াই লেগে গেল। পূর্ণতা বিল দিবে কিন্তু ওকে কেউ বিল দিতে দিল না‌। তখন পূর্ণতা বলল,,” সবাই তো বদমাইশ ছিলি এতো ভালো হলি কবে যে টাকা ভাঙছিস?”
রাসেল বলল,,” দিঘির ব্রেকাপ হয়েছে তাই ট্রিট ওই দিবে।”
দিঘি চেতে উঠে বলল,,” হারামি আমার কবে ব্রেকাপ হ‌ইল?”
রাসেল বলল,,” কেন হয়নাই এখনো? টেনশন নিস না হয়ে যাবে আমি অভিশাপ দিলাম।”
দিঘি রাসেলের দিকে ঝুঁকে ওকে মারতে উদ্যত হলো।
” শয়তান।”
মায়া বলল,,” উফ থাম তো তোরা। এখন আমার তোদের সাথে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করে না। আমি বাদে সবাই এখন সিঙ্গেল। তোরা বিয়ে করবি কবে বল তো?”
রিতু বলে উঠল,,” ধুর কিয়ের বিয়ে। পূর্ণ মতো বিয়ে করে ডিভোর্সি হতে চাই না। সিঙ্গেল‌ই ভালো আছি। এখানকার পোলা রা যে পরিমাণ শয়তান এদের বিলিভ করার উপায় নাই।”
উজ্জ্বল খেপে উঠে বলল,,” দুইজন ছেলের মধ্যে বসে তুই ছেলে জাতির বদনাম করছিস?”
মায়া বলল,,” তোরা থাম তো? এই বয়সে এসেও তোরা বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস?”
রাসেল বলল,,” রিতু তুই কি আজীবন অবিয়াত্তা থাকবি?”
” হ তাই আমি সিঙ্গেল থাকার স্বপ্ন দেখতাছি!” বলল রিতু।
দিঘি বলল,,” হ তোমার মজনু তোমারে সিঙ্গেল থাকতে দেবো নি যাও।”
পূর্ণতা কথা বলছে না দেখে রাসেল বলল,,” কিরে পূর্ণ তুই মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন? তোর ওই হারামি জামাইয়ের কথা মনে পড়ছে নাকি?”
পূর্ণতা রাগী কন্ঠে বলল,” ওই লোকের আমার হাজব্যান্ড হ‌ওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। তাকে আমার জামাই বলে সম্বোধন করবি না।”
দিঘি বলল,,” দোস্ত কষ্ট পাইছ না। তোর জন্য সুদর্শন পুরুষ আছে তাই ওই খাটাশের সাথে তোর ডিভোর্স হয়েছে। ওর কথা ভেবে মন খারাপ করবি না। তোর জীবনটা আরো সুন্দর হবে।”
” আমার জীবনে আমি কোন পুরুষ চাই না। একা থাকতে চাই এবার বাসায় ফেরা দরকার।”
রাসেলের ঘাড়ে বিল চাপলো রাসেল বাদে সবাই এখনো বেকার ধরতে গেলে। উজ্জ্বল আর রিতু মাস্টার্স করছে। রাসেল পুলিশে আছে। মায়া বিবাহিত। আর দিঘির এনগেজমেন্ট হয়ে আছে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে। খুব শীঘ্রই বিয়ে।

পূর্ণতা কে বাসায় পৌঁছে দিতে আসলো রাসেল। মায়া আর দিঘি চলে গেল ওদের বাসা রাস্তা এক দিকে। উজ্জ্বল রিতুকে পৌঁছে দিয়ে চলে যাবে। সবার থেকে বিদায় নিতে একটুও ভালো লাগছিল না পূর্ণতার। সবাই যাওয়ার আগে পূর্ণতা কে বলে গেল মাস্টার্স এ ভর্তি হতে। পূর্ণতা হ্যাঁ না কিছু বলল না। রাসেল আর পূর্ণতা রিকশায় উঠে বসল। রাসেল পূর্ণতা কে বলল,,” তুই কি কোন আইনি ব্যবস্থা নিবি না?”
” কি জন্য?”
” ওই শালা কে শিক্ষা দিবি না?”
” দেখ আমার নিজের ও এই বিয়েতে খুব একটা মত ছিল না। আমি স্বামীর জন্য পাগল ও না আলাদা হয়ে আমার নিজের ই ভালো লাগছে। তাই আমি কিছুই চাই না।”
রাসেল বলল,,” আচ্ছা না চাইলে আর কি। তোকে বাসায় আবার কিছু বলবে না তো?”
পূর্ণতা বলল,,” সেই সাহস আর কারো নেই। কিন্তু আমার বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। তোদের সাথে ছিলাম মনটা ভালো ছিল কিন্তু আবার মন খারাপ হচ্ছে।”
রাসেল পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,,” তো রাত কি আমার সাথে থাকবি? সবাই চলে গেল এখন তোর যাওয়ার ইচ্ছে বন্ধ হয়ে গেল।”
পূর্ণতা বলল,,” কেন আমার সাথে থাকতে তোর ভয় লাগে? গার্লফ্রেন্ড কে এতো ভয় পাস যে ফ্রেন্ডের সাথে দুই মিনিট থাকার কথা শুনেই গলা শুকিয়ে গেল?”
রাসেল পূর্ণতার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,,” আমার গার্লফ্রেন্ড জাহান্নামে যাক। সবার আগে ফ্রেন্ড তারপর বাকি রা। কিন্তু নয়টার উপরে বাজে এখন বাইরে থাকাটা উচিত হবে না। তোর মন ভালো করার জন্য ফোন আছে কথা বলবি। কল দিলে তো রিসিভ করিস না জীবনে কিন্তু দেখা হলে মনে হয় আমাদের ছাড়া কিছুই বুঝিস না।”
পূর্ণতা রাসেলের একা শুনে হেসে উঠল। রাসেল বলল,,” তাহলে চল রাতটা আমরা রাস্তায় নেমে হাঁটি একটু প্রেম করি দু’জনে।” বলেই রাসেল চোখ টিপল পূর্ণতা কে।
পূর্ণতা রাসেলের কথা শুনে ওর বাহুতে কিল দিয়ে বলল,,” ব‌দমাইশ হ‌ইছিস। আমি তোর ফ্রেন্ড মাথায় রাখিস।”
” তো কি তুই ও সিঙ্গেল আম…”
পূর্ণতা কথা কেড়ে নিয়ে বলল,,” হারামি বুঝেছি এসব তোর গার্লফ্রেন্ডের কানে পৌঁছায় দিতে হবে?”
রাসেল পূর্ণতার কথায় হেসে রিকশা থামিয়ে বলল,,” যা বাড়ি চলে আসছি। আজকে আর প্রেম করা হলো না। প্রেম আমি না করতে পারি কিন্তু তোর মনের মানুষ আমার মাধ্যমে আসবে এটা নিশ্চিত থাক।”
পূর্ণতা তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলল,,” আমার মনে মানুষ আর এ জন্মে কেউ হতে পারবে না।”
রাসেল পূর্ণতার কথার উত্তর এ বলল,,” বেফাঁস কথা বাদ দে পরে হয়ে গেলে কিন্তু বিপদে পড়বি আমি কিন্তু খোঁচা দিতে সেদিন উপস্থিত হবোই‌।”
“এমন দিন আসবে না।”
” দেখা যাবে। ভালো থাকিস। আর কল দিলে দয়া করে রিসিভ করিস।”
পূর্ণতা আচ্ছা বলে চলে গেল। রাসেল রিকশা ঘুরিয়ে চলে গেল।
#চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here