পূর্ণতা ” #নন্দিনী_নীলা ১৭.

0
349

“ পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
১৭.

পূর্ণতা জব এক্সাম দিতে যাবে শুনে শাহিন আলম এক সপ্তাহ পর মেয়ের সাথে একটু কথা বলল,” আমাদের কি কম আছে তোমার জব করতে হবে কেন?”

” আমি পড়াশোনা করেছি কি বসে থাকার জন্য। আমি কারো উপর নির্ভরশীল হতে চাই না‌।”

” এখানে নির্ভরশীল হ‌ওয়ার মতো কি হলো? তুমি আমাদের একমাত্র সন্তান সব কিছু তো তোমার‌ই!”

” যদি সব আমার‌ই হতো তাহলে আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দিতে না‌। কতটা বোজা হয়ে গেছিলাম আমি যে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিলে।”

শাহিন আলম আর কোন কথা বলল না। মেয়ের কথার প্রেক্ষিতে কথা বলতে পারল না। পূর্ণতা সবার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে সিদ্ধান্ত নিল। যথাসময়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল ওর সাথে শাহিন আলম যেতে চাইল। কিন্তু পূর্ণতা বলল,,” আমি একাই যেতে পারব।”

রোজিনা বেগম মেয়ের কাছে এসে বলল,,” তোর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন? অসুখ হয়েছে নাকি দেখি কপাল।”

বলেই রোজিনা বেগম ওর কপাল ছুঁইয়ে দিতে চাইল পূর্ণতা মাথা সরিয়ে বলল,,” আমি একদম সুস্থ আছি‌‌ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসছি।”

বলেই পালিয়ে এলো বাসা থেকে পূর্ণতা। ওর রাত থেকেই জ্বর গায়ে সারারাত একাই বিছানায় ছটফট করে কাটিয়েছে। কিন্তু তবুও বাসার কাউকে ওর ছটফটানি টের পেতে দেয়নি। জ্বরের জন্য এখন ওর মাথা সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। শরীর অসাড় হয়ে আসছে। পূর্ণতা নিজের দূর্বলতা কে কাবু না করে সাহস মনেই কাঙ্খিত জায়গায় এসে পৌঁছালো। কিন্তু বিপদ হয় এক্সাম হলে গিয়ে দশ মিনিটের মাথায় ও নিজের হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক বিট শুনতে পায় ওর মাথা ঘুরিয়ে ও অজ্ঞান হয়ে যায়। পরীক্ষা আর দিতে পারে না।

অচেতন পূর্ণতা যখন সজ্ঞানে আসে ও চোখ পিটপিট করে মেলতেই সামনে বসে থাকা মানুষটা কে দেখে চমকে উঠে। ওর চোখের সামনে ট্রেনের ঘটনার কথা মনে পরে যায়। ওকে বিরক্ত করা সব কিছু পূর্ণতা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মনে হয় ও এই মুহূর্তে হয়ত সেই ট্রেনেই আছে। মিনিট খানেক পার হতেই ওর সব কিছুই মনে পরতে শুরু করে। ও তো এক্সাম হলে ছিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আর পাঁচ মিনিট আছে।

ও মাথায় হাত দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে,,” আমি এখানে কেন আমার তো পরীক্ষা ছিল‌!”

ওর চোখে মুখে অপার টেনশন ফুটে উঠল।
” কুল, এতো উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই। পরীক্ষা আর আপনার দেওয়া হবে না। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কেউ বের হয়? পরীক্ষা তো দিতেই পারলেন না মাঝখানে থেকে জ্ঞান হারিয়ে সবাই কে হয়রানি করালেন?” বলল তুষার।

পূর্ণতা চমকে উঠে তাকাল তুষারের দিকে। তুষার পূর্ণতা দুশ্চিন্তায় অস্থির হ‌ওয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,” আপনি এই অবস্থা বাসা থেকে বের হয়েছেন কেন?”

পূর্ণতার চোখে জল চলে এসেছে এতো দিন ধরে পরীক্ষা প্রিপারেশন নিল আর হলে এসে ও পরীক্ষা দিতে পারল না। ও কথা বলছে না দেখে তুষার চুপ করেই পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে র‌ইল। পূর্ণতা চোখের জল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলল,,” সরি আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য।”

তুষার পূর্ণতা নরম কন্ঠে কথা শুনে বলল,,” দেখেন আমি কিন্তু আমাদের সময় নষ্টের কথা ভেবে কড়া কথা শুনাই নি। আপনি এই জ্বর শরীর নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন এই অবস্থায় যদি খারাপ কিছু ঘটে যেতো। নিজে আগে সুস্থ থাকবেন এরপর বাকি সব।”

” আই এ্যাম অল রাইট।”

পূর্ণতা এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল।রুম থেকে বের হবার জন্য। এদিকে তুষার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ও ভেবেছিল ওকে দেখে পূর্ণতা রিয়েক্ট করব কিছু জিজ্ঞেস করবে কিন্তু অপরিচিত দের মতো কথা বলে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আজকেই ওদের প্রথম দেখা হলো।

তুষার পূর্ণতা কে পিছু ডেকে বলল,,” আমাকে চিনতে পেরেছেন আমি আপনার ট্রেন জার্নির সঙ্গী ছিলাম।”
পূর্ণতা বলল,,” সরি আমি চিনতে পারছি না।”

তুষার পূর্ণতার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে বলল,,”কি বলছেন চিনতে পারছেন না? আমার নিজের ও পরীক্ষা ছিল। আপনি দিতে পারলেন না সেই দুঃখে আমিও পরীক্ষা দেয় নি। কতটা আপন ভাবি আপনাকে ভাবেন। আর আপনি আমায় চিনতে পারছেন না।”

পূর্ণতা নাকোচ কন্ঠে বলল,,” নাহ।”

পূর্ণতার পিছনে তুষার ও বেরিয়ে আসলো ক্যাম্পাস থেকে। পূর্ণতা তুষার কে নিজের পিছু আসতে দেখে বলল,,” আমার পিছু আসছেন কেন?”

” আমি আপনার জন্য এতো বড়ো ত্যাগ স্বীকার করলাম। আপনি মিনিমাম ধন্যবাদ ও দিচ্ছেন না।” মন খারাপ করে বলল তুষার।

পূর্ণতা বলল,,” আপনাকে কি আমি বলেছিলাম পরীক্ষা না দিতে?”

তুষার থতমত খেয়ে বলল,,” আচ্ছা চলুন কোথাও বসে কথা বলি।”

পূর্ণতা অটো থামিয়ে উঠে বসল। তা দেখে তুষার ও লাফিয়ে ওর পাশে উঠে বসল।
পূর্ণতা চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,,” আপনি উঠলেন কেন?”

” আপনার বাসায় যাব। ওইদিন কি বলেছিলাম মনে আছে তো?”

পূর্ণতা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে তুষারের দিকে।
তুষার মুখে হাসি এনে বলল,,” আপনাকে আজ এখানে পেয়েই আমার কি মনে হয়েছে জানেন? সৃষ্টিকর্তা ও চান আমি আপনার পিছু না ছাড়ি। মনে করুন আমি বলেছিলাম আমাদের আরেকবার দেখা হলে আমি আপনার পিছু ছাড়ব না। আমি আপনার পিছু আঠার মতো লেগে থাকার পারমিশন পেয়ে গেছি।”

” হোয়াট! আর ইউ ম্যাড?”
” বাসায় না গিয়ে চলুক হসপিটালে যাই আপনার চোখ মুখ দেখে মন বলছে আরেকবার জ্ঞান হারাতে পারেন।”
বলেই তুষার ড্রাইভার কে হসপিটালে যাওয়ার কথা বলল।

পূর্ণতা হতবিহ্বল চক্ষে তাকাল তুষারের দিকে। রেগে কয়েকটা কথা শুনাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মাথাটা চাপ ধরে ব্যথা হয়ে আছে কথা বলতেও দূর্বল লাগছে। পূর্ণতা ড্রাইভার কে জড়ানো কন্ঠে বলল শুধু,,” মামা বাসায় চলুন উনার কথা শুনবেন না‌।”

তুষার বলল,,” নিজের অবস্থা নিজেই বুঝার চেষ্টা করুন। আর জেদ না করে আমার কথা মানুন।”
পূর্ণতা দুহাতে মুখ ঢেকে চোখ বন্ধ করে আছে। তুষার পূর্ণতার খারাপ লাগাটা যেন ভেতর থেকে উপলব্ধি করতে পারছে।

তুষার জোর করেই পূর্ণতাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। ডক্টর দেখিয়ে ওরা বাইরে এসে দাঁড়াল। পূর্ণতার হাতে বেশি টাকা ছিল না শুধু গাড়ি ভাড়া নিয়ে বের হয়েছিল হসপিটালে গিয়ে ও বিল দিতে পারল না।
তুষার বিল প্রে করে বলল,,” পরে দিয়ে দিয়েন।”

পূর্ণতা নাক লাল করে হসপিটালে থেকে বেরিয়ে গাড়ির দাঁড় করিয়ে উঠে বসল। তুষার আবার ওর পিছু নিল।
পূর্ণতা বলল,,” আবার পিছু নিচ্ছেন কেন?”

” আমার টাকা নেব না?”
পূর্ণতা অবাক সুরে বলল,,” এখনি?”
” আমি তো আপনার নাম ঠিকানা কিছুই জানিনা আর জানতে চাইলেও আপনি বলবেন না‌‌। এভাবে কীভাবে চলে যাই?”
” মাত্র কিছু টাকার জন্য এতো ছেচড়ামো করছেন?”
তুষার বলল,,” বেকার মানুষের ১০ টাকাও অনেক। আপনি বুঝবেন না।”

টাকার জন্য আসাটা মোক্ষম উদ্দেশ্য নয় তুষারের ওর আসলে বাসা চেনার ধান্দা যেটা ধরতে পারল না পূর্ণতা। বাসার সামনে এসে নেমে তুষার বাসার দিকে তাকিয়ে বলল,,” এটা আপনার বাড়ি?”

পূর্ণতা ভাড়া মিটিয়ে বলল,,” দাঁড়ান আমি টাকা নিয়ে আসছি।”
তুষার বলল,,” বাসার সামনে থেকে তাড়িয়ে দেবেন? বাসার এক কাপ চা খাওয়ার জন্য ও ডাকবেন না?”

পূর্ণতা হাত উঁচু করে একটা ছোটোখাটো চায়ের দোকান দেখিয়ে বলল,,” আপনার অনেক চায়ের তৃষ্ণা পেয়ে থাকলে ওই যে চায়ের দোকান ওখান থেকে খেয়ে আসতে পারেন।”

তুষার মুখ গোমড়া করে বলল,,” আচ্ছা।”
পূর্ণতা বাসার ভেতরে চলে গেল। তুষার পূর্ণতার যাওয়ার দিকে চেয়ে বিড়বিড় করল,, পাষাণ হৃদয়ের নারী।
দাড়োয়ান তুষারের দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল কে?
তুষার হাসিমুখে বলল,,” ভেতরে যে গেল তার ফ্রেন্ড।”
দাড়োয়ান বলল,,” তাহলে বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন ভেতরে যাও।”

তুষার মুখ কালো করে ভাবছে,, আমি তো যেতেই চাইছিলাম কিন্তু আমাকে নিলো না তো।
তুষার আমতা আমতা করে বলল,,” আচ্ছা চাচা আপনি এই বাসায় কত দিন ধরে আছেন?”

” আছি তো অনেক বছর ধরে। পূর্ণ মাকে ছোটো থেকে বড় হতে দেখলাম।”‌ খুব গর্ব করে বলল। যেন পূর্ণতা কে বড় হতে দেখা তার জন্যে অনেক কিছু।

তুষার কপাল কুঁচকে বলল,,” পূর্ণ কে?”

দাড়োয়ান সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল,,” পূর্ণতা মাকে কে চিনো না? তুমি না বললে পূর্ণ মায়ের ফ্রেন্ড?”

তুষার চমকে উঠে থতমত খাওয়া কন্ঠে বলল,,” আসলে চাচা হয়েছে কি আমি তো ওকে অন্য নামে ডাকি এজন্য বাসায় কি নামে ডাকে জানতাম না।”

তুষার ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে দাড়োয়ানের দিকে।
দাড়োয়ান ওহ বলতেই তুষার হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যাইহোক নাম তো জানা গেল। তুষার দেখল পূর্ণতা এগিয়ে আসছে। দাড়োয়ান এখনো সন্দেহ ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আর তুষার এক দৃষ্টিতে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণতা এগিয়ে এসে গম্ভীর মুখে ওর দিকে টাকা বাড়িয়ে দিল। তুষার টাকা হাতে নিয়ে বলল,,” বাই পূর্ণতা খুব শীঘ্রই আবার দেখা হবে।”

পূর্ণতা চমকানো চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার পূর্ণতার হা করা মুখটার দিকে চেয়ে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। আর পূর্ণতা রাগী মুখ করে বাসার ভেতরে চলে আসলো।

#চলবে…..
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here