শান্তিসুধা|| জান্নাতুল নাঈমা ১.

0
196

#শান্তিসুধা

১.
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল শেখের নাতনি শান্তির বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্র তার ছোটোবেলার বন্ধু নাজির তালুকদারের বড়ো নাতি। এতদিন তারা প্রিয় বন্ধু এবং বিজনেস পার্টনার ছিল৷ এই বৃদ্ধ বয়সে এসে সুযোগ হলো আত্ম সম্পর্কীয় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার।
আগামীকাল ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে সম্পন্ন হবে। দুই পরিবার বনেদি হওয়া সত্ত্বেও ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে? উহু, তাদের ঘরোয়া আয়োজন মানেও এলাহি ব্যাপার। তবে ঘরোয়া শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে পারিবারিক সদস্যের বাইরে কেউ এই বিয়েতে উপস্থিত থাকবে না বলে। কেন থাকবে না? সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবারে মাত্র ষোল বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে! এর পেছনে যৌক্তিক অনেক কারণ আছে। যা শুধু তালাল শেখ, নাজির তালুকদার আর পাত্র ছাড়া কেউ জানে না৷ কাউকে জানায়নি তালাল শেখ। তার কাছে যা যৌক্তিক বাকি সবার কাছে তা অযৌক্তিক। তাই তাকে তার মতো করে যারা বুঝেছে তাদেরই খোলাসা করেছে অল্পবয়সী, আদুরে নাতনিকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার কারণ।

শান্তির মা নেই। ওর জন্মের দু’বছর পর মধ্যরাতে ড্রাঙ্ক অবস্থায় ড্রাইভ করতে গিয়ে মারা গেছে। তালাল শেখের একমাত্র মেয়ে ছিল শাম্মা জাহান। ক্ষমতাসীন, বড়োলোক বাবার মেয়ে আর তিন ভাইয়ের কলিজার টুকরো ছিল শাম্মা। চালচলনে আধুনিকতার ছোঁয়া এত বেশি উগ্র ছিল যে কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। নিজের পছন্দে, পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল এক মন্ত্রীর ছেলেকে। বিবাহিত জীবনে সুখী ছিল না শাম্মা। বরের সঙ্গে ঝগড়া, বিবাদ লেগেই থাকতো। শান্তি জন্মানোর পর শান্তির বাবা পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়ে। আর শাম্মা আসক্ত হয় নেশাদ্রব্যে। যে রাতে শাম্মা মারা যায় সেই রাতে শান্তির বাবা এক নারীর সঙ্গে হোটেলে ধরা পড়েছিল। সেই শোক, রাগ, জেদে বারে গিয়ে মদ খেয়ে টাল হয়ে ফেরার পথেই ভয়ানক এক্সিডেন্ট ঘটে। এরপর হসপিটালে নিতে নিতেই মারা যায় সে। একমাত্র আদুরে কন্যা হারিয়ে তালাল শেখ
প্রায় উন্মাদ হয়ে যায়। দুধের শিশু শান্তিই তখন তার পাঁজরের ব্যথা লাঘব করতে সক্ষম হয়। ওই বয়স থেকেই শান্তি তার নানুভাই, নানুমনি আর মামা, মামিদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছে। ক্লাস নাইন থেকে শান্তির মাঝে যেন শাম্মাকে দেখতে পায় তালাল শেখ। সেই একই রাগ, জেদ, উগ্র চালচলন! এই আধুনিক যুগে ঢাকা শহরের আধুনিকতায় অল্পবয়সী শান্তি যেন দিনকে দিন লাগাম ছাড়া হয়ে উঠছে। যে লাগাম এখনি টেনে না ধরলে ঘোর বিপদ। অতিরিক্ত আদর, ভালোবাসায় লালন পালন করা নাতনির যে শাসনবারণের বড্ড অভাব হাড়েহাড়ে টের পায় তালাল। বুকের গভীরে ভয় জন্মায়। হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে যায়। নাতনির স্বভাব, চালচলন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় মগ্ন তিনি। এমতাবস্থায় গতমাসে খবর পায় শান্তি কৃষিমন্ত্রী আক্তারুজ্জামানের বখাটে ছোটো ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে! মাঝে মাঝে তাদের রাস্তাঘাটে বাইকে ঘুরতে দেখা যায়। সেদিন রাত আটটায় রেষ্টুরেন্টের সিসি ক্যামেরায় গোটা দশেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে শান্তিকে দেখা গেছে। নিজস্ব রেষ্টুরেন্ট। বাসার কাছাকাছি হওয়াতে শান্তি রাতবিরেত যায় ওখানে। তাই বলে বন্ধু-বান্ধন নিয়ে উশৃংখল পরিবেশ তৈরি করবে? বাচ্চা, বাচ্চা ছেলেমেয়েদের এ কী অধঃপতন! ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো উগ্র হতে পারে। শান্তি চলে যেতে পারে নাগালের বাইরে। মা নেই, অসভ্য বাবা থেকেও নেই। তারও বয়স বেড়েছে। গিন্নির শরীরের অবস্থা করুণ। ছেলে, ছেলের বউরা তার অবর্তমানে শান্তিকে কতটুকু দেখভাল করবে? এ প্রশ্নের উত্তরে অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে নাতনিকে একজন বিশ্বস্ত, সুপাত্রের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তালাল শেখ। নাজির তালুকদারও প্রিয় বড়ো নাতির জন্য সুপাত্রীর খোঁজ করছিলেন। অতএব দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে যায়। শান্তির বয়স নিতান্তই কম। তবু তালাল আপত্তি করেনি। বরং সে শান্তির জন্য একজন শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, বুদ্ধিমান, পরিপক্ব মস্তিষ্কের দৃঢ় ব্যক্তিত্বধারী মানুষ খুঁজে পেয়ে নির্ভার হয়েছে। চোখের সামনে এমন নম্র, ভদ্র, সুশীল ছেলে থাকতে সে কিনা দুঃশ্চিন্তায় ব্লাড প্রেশার বাড়াচ্ছিল! এবার আরাম বোধ করছে। নাতনি শান্তিকে ঘিরে বুকে যে অশান্তিবোধ তৈরি হয়েছিল তা এখন ক্ষীণ হয়ে এসেছে।

অল্পবয়সী সুন্দরী, একগুঁয়ে শান্তি এই বিয়েতে রাজি নয়। আজ সারা বাড়ি মাথায় করে রেখেছে এই মেয়ে। বিয়ে করবে না সে। কিছুতেই না। সকাল থেকে বড়ো মামি খাবারের প্লেট নিয়ে ঘুরছে তার পেছনে। মেয়েটা খাবার মুখে তুলেনি। শেষপর্যন্ত খাবারের প্লেট দু’হাতে ধরে ছুঁড়ে ফেলল ফ্লোরে। বড়ো মামির এত রাগ হলো! না পারে আজ গায়েই হাত তুলে দেয়। শান্তির কারণে পরিবারে এই অশান্তি আর নেওয়া যাচ্ছে না। এমন মুহুর্তে মেজো মামি এসে তাকে সাবধান করল,

‘ সাবধান ভাবি। ভাইজান ঘরেই আছে। মাথা গরম করবেন না। ‘

বড়ো মামি দমে গেল। তার স্বামী ভাগ্নি বলতে অজ্ঞান। খাবার ফেলেছে, প্লেট ভেঙেছে? এ নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই। ভাগ্নি সকাল থেকে কিছু মুখে তুলেনি কেন? এই দোষেই দোষী করে রাখবে তাকে। থমথমে মুখে তাকিয়ে রইল বড়ো মামি। শান্তি দুই মামিকেই মুখ ভেঙিয়ে, ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেল নানুমনির ঘরে। এরপর চিৎকার করে বলল,

‘ আমি বিয়ে করব না নানু। তোমার হাজব্যান্ডকে বলে দাও এই শান্তি আগুন ধরিয়ে দেবে তার রাজপ্রাসাদে।’

নানুমনি হাত বাড়াল কাছে আসতে। শান্তি ছিঁটকে দূরে সরে গেল। আঙুল তুলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পুনরায় বলল,

‘ এই বিয়ে বন্ধ করো। না হলে আজ রাতেই আমি পালাবো। ‘

আর দেরি করল না শান্তি। ঢ্যাঁটা পায় বেরিয়ে গেল। বাড়ির প্রত্যেকেই শুনল ওর হুংকার। তালাল শেখ বাড়িয়ে দিল বাড়ির সিকিউরিটি।

নিজের ঘরে বসে আছে শান্তি। তার ছোট্ট মাথায় ধরছে না কেন বিয়ে করতে হবে তাকে? এ বাড়ির বড়ো মেয়ে তিতলি৷ বড়ো মামার মেয়ে। যে বর্তমানে ছোটো মামার সঙ্গে অ্যামেরিকায় থেকে পড়াশোনা করছে। নেক্সট ইয়ার দেশে আসবে৷ তার বিয়ে নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা সবার। কোথায় তিতলি আপুর বিয়ে নিয়ে হৈ-হুল্লোড়ের করবে। তা না৷ আগামীকাল নাকি তার বিয়ে! মাথা গরম কমল না আর৷ ক্রমশ বাড়তেই থাকল। সেলফোন হাতে নিয়ে কল করল বয়ফ্রেন্ডের নাম্বারে৷ ফোন বন্ধ! রাগে শরীর জ্বলে উঠল শান্তির। প্ল্যান করে ফেলল কীভাবে পালাবে? চোখ বুজতেই ইন্ডিয়ান এক মুভির দৃশ্য স্মরণ হলো। ইয়েস! মন মানে না ছবিতে কোয়েল মল্লিক যেভাবে পালিয়েছিল। সে ঠিক সেভাবেই পালাবে। পরোক্ষণেই ভাবল তার বয়ফ্রেন্ড তো এ শহরেরই ছেলে। সে পালিয়ে কোথায় আর যাবে? ঠিক বড়ো মামা গিয়ে ধরে আনবে। কান্না পেয়ে গেল খুব। অশান্তির আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাড়খাড় শান্তিইই উফফ।

‘ সিস ওপেন দ্য ডোর। ‘

শান্তি ছুটে গিয়ে দরজা খুলল। প্রান্তি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে জড়িয়ে ধরল শান্তিকে। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,

‘ তোমার বিয়ে সিস! মরে যাবো আমি। কী করে থাকব তোমাকে ছাড়া? ‘

মেজো মামার মেয়ে প্রান্তি। ক্লাস সেভেনে পড়ে মাত্র। বয়সে এরা বাচ্চা হলেও বুদ্ধিতে ইঁচড়েপাকা। এদের পাকামি নিয়ে কেউ টেনশন করে না। একমাত্র তালাল শেখ ছাড়া। সবচেয়ে বেশি টেনশন শান্তিকে নিয়েই। কারণ বাকি সব নাতি, নাতনির জন্য মাথার ওপর ছায়া হয়ে বাবা, মা থাকলেও শান্তির কেউ নেই। খোলা চোখে এখন যাদের দেখা যায় তালাল শেখ চোখ বুজলে তাদের ছায়া শান্তির ওপর থাকবে কিনা সন্দেহ। তাছাড়া শান্তির অসভ্য বাবা যদি একবার শান্তিকে নিজের কাছে নিয়ে যায়। মেয়েটার জীবন একেবারে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। শুধুমাত্র তালাল শেখের জন্যই শান্তির বাবা মেয়েকে নিজের কাছে নিতে পারছে না। তালাল চায় না শান্তি কোনোদিন ওই নরকের দেখা পাক। তাই বেঁচে থাকতেই শক্তপোক্ত একটি ব্যবস্থা করে যাবে সে। তিন ছেলের বিরোধিতাকেও পরোয়া করবে না।

ছোটোবোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল শান্তি। অনেক সময় পর প্রান্তি চোখ মুছে আপুর চোখও মুছে দিল। রয়েসয়ে বলল,

‘ বিয়েটা ভেঙে দেওয়া যায় না? ‘

শান্তি ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ কীভাবে ভাঙব? তোর মাথায় কোনো বুদ্ধি আছে?’

‘ হবু বরের নাম্বার নিয়ে এসে থ্রেট করি চলো। বলব বিয়ে করতে এলেই হাত, পা ভেঙে দিব। ‘

‘ ধুরর এসবে কাজ হবে না। আমি পালাব প্রান্তি। তুই আমাকে প্লিজ হেল্প কর। না পালালে নানুভাই ঠিক বিয়ে দিয়ে দেবে আমার। ‘

‘ তুমি তো ফেইল করোনি সিস। তবু কেন বিয়ে দেবে? রেজাল্ট খারাপ করেছো বলে? ‘

ওদের অবুঝ কথোপকথনের মাঝে টোকা পড়ল দরজায়। শান্তি দরজা খুলতেই প্রান্তির বড়ো ভাই পাপন ঢুকল ঘরে। শান্তি নিমেষে ওর কলার চেপে ধরে বলল,

‘ সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি দাদাভাই! জানো কী হচ্ছে আমার সাথে? কাল আমার বিয়ে। ‘

পাপন ওকে শান্ত করতে ডান হাতের তালু সামনে ধরে বলল,

‘ আরে গাধী আমি সব জানি। তাই তো বুদ্ধি বের করে তোর কাছে এলাম। এই নে নাফে ভাইয়ের নাম্বার। জাস্ট ফোন লাগা। বল তুই এই বিয়েতে রাজি না। ব্যস কাহিনি শেষ। ‘

খুশিতে চিৎকার করে উঠে প্রান্তি। শান্তি হতভম্ব হয়ে বলে,

‘ আমি ফোন করব? আমি বলব? প্লিইজ তুমি বলে দাও আমার হয়ে। আমি উল্টাপাল্টা বকে ফেললে নানুভাইয়েরই সম্মান যাবে।’

পাপন থতমত খায়। আর যাইহোক নাফেভাইকে সে ফোন দিতে পারবে না৷ কত গুণবান, নামধারী মানুষ। আর সে ইন্টার পড়ুয়া এক কিশোর ছেলে। কোনো প্রকার বেয়াদবি করতে পারবে না সে। তাই আমতা আমতা করে বলল,

‘ কিইরে শান্তি, তুই নাফে ভাইকে ভয় পাচ্ছিস! তুইও ভয় পাস? ভীতু মেয়ে কোথাকার। ‘

বলেই হাসতে শুরু করল পাপন। শান্তি চোখ কটমট করে তাকাল। ভয় আর সে? তাও আবার কাকে? কীসের নাফে না কাফে। এক মিনিট, কী নাম? নাফে! এ আবার কেমন নাম? নানুভাই কার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে তার?

‘ নাফে! কে নাফে? কীসের নাফে? ‘

‘ আরে নাফেভাই। তোর হবু বর। নাজি গ্রুপের ডিরেক্টরের বড়ো নাতি। নাফে ফ্যাশন লিমিটেডের ডিরেক্টর নুবাইদ তালুকদার নাফের। ‘

মেজাজের রফাদফা হয়ে যাচ্ছে শান্তির। জাস্ট নাম জিজ্ঞেস করেছে। সে কোথাকার রাজকুমার তা তো জানতে চায়নি। তাই বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ সে কোথাকার কোন বা’ল পাকনা আমার জানার দরকার নেই। ‘

বলেই পাপনের ডান হাত টেনে ফোন নাম্বার ডায়াল করল। পাপন হাসতে হাসতে কুটিকুটি। প্রান্তি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে শান্তির মুখপানে। ফোন রিং হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রিসিভও হলো,

‘ হ্যালো নুবাইদ তালুকদার স্পিকিং। ‘

ব্যস্তময়, গুরুগম্ভীর, সহজ স্পষ্ট বাক্যে কপালে ভাঁজ পড়ল শান্তির। পাপন আর প্রান্তির দিকে তাকাল চিন্তিত হয়ে। এমন বড়ো বড়ো গলা কেন? মামাদের কণ্ঠস্বরের মতো৷ পাপন বা তার বয়ফ্রেন্ড ইতুনের কণ্ঠ তো এমন নয়। তবে কি তার জন্য আধবুড়ো লোক ঠিক করা হয়েছে বিয়ের জন্য? তৎক্ষনাৎ পাপনকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,

‘ ভাই এই নাফে না টাফের বয়স কত বলতো? ‘

‘ কত আর হবে হেভি ইয়াং ম্যান ছাব্বিশ হবে হয়তো।’

মুখ হা হয়ে গেল শান্তির। ওদিকে ফোনের ওপাশে আরো দু’বার হ্যালো শুনতেই সে সংবিৎ ফিরে পেল যেন। তিরিক্ষি মেজাজে বলল,

‘ হ্যালো, শান্তিসুধা বলছি। আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। শুনুন ছাব্বিশ বছরের আধবুড়ো লোক। আমি এই বিয়ে করতে রাজি নই। ‘

ওপাশটা নীরব৷ শান্তি একদমে কথাটা বলে থামার পর অত্যন্ত ধীরভাবে, শান্ত কণ্ঠে প্রতুত্তর এলো,

‘ হাই শান্তিসুধা, একচুয়েলি আমার বয়স আটাশ, ছাব্বিশ নয়। ‘

মাথা ঘুরে গেল শান্তির। এই লোক বলে কী? ওহ গড বাঁচাও। কী হচ্ছে এসব। ঢোক গিলল সে। ওপাশ থেকে ফের শুনতে পেল,

‘ আমি অফিসে আছি। যদি কিছু মনে না করেন এখন ফোন রেখে রাতে কল করতে পারি? ‘

‘ আহারে ন্যাকা আবদার। এখন কল করেছি মানে এখনি কথা শুনবেন। এরপর আমিই ফোন রেখে দেবো। ‘

ওপাশটা নীরব। যেন রাতের শুনশান নীরবতা ভর করেছে। অথচ দুপুর গড়িয়েছে মাত্র। নুবাইদ তালুকদার পূর্বের মতোই শান্ত কণ্ঠে বলল,

‘ জি, আচ্ছা, বলুন। ‘

শান্তিকে আর পায় কে? শুরু করল বলতে,

‘ আমার বয়স কত জানেন? মাত্র ষোল। এইটুকুনি একটা মেয়ে আমি৷ নাক টিপে ধরলে দুধ বেরুবে সেই আমাকে বিয়ে করতে আপনার লজ্জা করবে না? ‘

নীরবতায় আচ্ছন্ন ওপাশের মানুষটা হাসলো মৃদু। মার্জিত সুর টেনে বলল,

‘ নাক টিপে ধরলে দুধ বেরুনো মেয়ের যদি বয়ফ্রেন্ড থাকতে পারে। তাহলে সে বিয়ের জন্য যথেষ্ট পরিপক্ব, বউ করাই যায়। লজ্জা করবে না বরং গর্ববোধ হবে।এক অসহায় নানার নাতনিকে হারাম থেকে রক্ষা করতে পারব বলে। ‘

হা হয়ে গেল শান্তির মুখ। হরিণীর মতো চোখ দুটোতে ভর করল সীমাহীন বিস্ময়। আটাশ বছুরে এই বুড়োটা তো জানে তার বয়ফ্রেন্ড আছে। তবু বিয়ে করতে রাজি। তার মানে লোভ! অল্পবয়সী, সুন্দরী বউ পাবার লোভে পড়েছে এই বুড়ো? নিমেষে ফুঁসে উঠল সে। বলল ,

‘ আপনি আমাকে চেনেন না। আমাকে বিয়ে করলে আপনার জীবনটাকে নরক করে দিব আমি। ‘

‘ আপনিও আমাকে চেনেন না শান্তিসুধা। নরককে আমি স্বর্গে পরিণত করব। ‘

এত সুন্দর, সাবলীল ভাবে কেউ বুঝি তর্ক করতে পারে? বিস্ময়ে টালমাটাল অবস্থা শান্তির। কোনোক্রমে নিজেকে সামলে রেখে বলল,

‘ আমার বয়ফ্রেন্ডের বয়স কত জানেন? মাত্র সতেরো। ওইটুকু একটা কিশোর ছেলে! তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে আপনার লজ্জা করবে না বিবেকে বাঁধবে না? ‘

‘ বৃদ্ধ নানা স্কুলে পড়তে পাঠিয়েছে। আবেগে মানেনি গাঞ্জাখোর ছেলের সাথে হারাম সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আমার ঘাড়ে দায়িত্ব পড়েছে আপনাকে হারাম থেকে, নেশাখোর থেকে রক্ষা করার। এদিকে আমার আম্মার আবার ফুলের মতো টুকটুকে ছেলে বউ দরকার। তাই জায়গা বুঝে বিবেক খাটাচ্ছি। আর লজ্জা? সে আবার কী কথা। হালাল কর্মে লজ্জা রাখতে নেই। ‘

‘ খবরদার আমার বয়ফ্রেন্ডকে গাঞ্জাখোর, নেশাখোর বলবেন না। আপনি একটা নেশাখোর, বিবেকহীন,
মাতাল, বিটকেল কোথাকার। ‘

‘ একটু মিস্টেক হলো বর্তমানে আমি শুধু বিজনেসে আসক্ত। প্রফেশন অনুযায়ী বিজনেসম্যান, বিজনেস আসক্ত বলতে পারেন। ‘

রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না শান্তি। ফোন কেটে দিল টুট টুট টুট…। এরপর এক চিৎকার করে বলল,

‘ ওহ নো নানুভাইইই! এই অসভ্য, ইডিয়ট বুড়োকে আমি বিয়ে করব না। না মানে না, একদমই না। ‘

|চলবে|
® জান্নাতুল নাঈমা
শুরু করলাম নতুন গল্প। যারা আমার প্রকৃত পাঠক তারা পড়ুন৷ অনুভূতি জানান। পাশে থেকে সাপোর্ট দিন৷ আর যারা অ পাঠক তারা দূরে থাকুন। সহজ, সাবলীল একটা গল্প হবে শান্তিসুধা। বিপরীত মেরুর দু’জন নরনারী, এক দম্পতির প্রণয়োপাখ্যান। আশা করছি ভালো লাগবে সবার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here