এক_ফালি_সুখ🌼 |১৪| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
225

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৪|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
রাতুল এবং তন্নির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো মৌরিন। তন্নি আবারো রাতুলের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
_”ঐতো,মৌরি দেখে নিতে পারবে। আপনি বাসায় যান রাতুল ভাই।”

রাতুল কিছু বলার আগেই তূর্য নিজের চেয়াএ থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে বললো,
_”হ্যা ভাইয়া চলে যান। বলা তো যায়না,এখানে থেকে আপনার শরীর খারাও করলে পরে প্রোডাকশন হাউজের নামে কেউ আবার মামলাও করে ফেলতে পারে।”

তূর্যের কথায় কথা সে নিজে এবং রুবেল দুজনেই হাসতে শুরু করলো। হাসার মাঝেই তূর্য তাকালো মৌরিন এর দিকে,মৌরিন একটুও হাসছে না। সে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।

রাতুল দু আঙুল কপালে স্লাইড করে বললো,
_”তন্নি, তুমি কিন্তু খামোখাই টেনশন করছো।”

_”বেশ,খামোখাই করছি। তবুও আপনি বাসায় যান, গিয়ে রেস্ট করুন।”

রাতুল খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো তন্নির উদাস মুখপানে। তন্নি অতিরিক্ত রিয়্যক্ট করছে,তবে এটা খারাপ লাগছেনা রাতুলের কাছে। রাতুল গলা ঝেড়ে মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে বললো,
_”স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে এসো এদিকে, আমি বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আর কোনো দরকার হলে ফোন করো, বাসায়ই আছি।”
মৌরি স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে রাতুল এর সামনে গেলো। রাতুল কয়েক মিনিট এ ওকে কিছু বুঝিয়ে দিয়ে আবারো রিক্সায় উঠে নিজের ফ্লাট এ চলে যায়।

তূর্য আরো একটা জিনিস খেয়াল করেছে, মৌরিন এর পরনে সেই সেলোয়ার কামিজ যেটা প্রোফাইল পিকচার এর ছবিতে ছিলো। কিছুক্ষন এর মধ্যেই শুটিং শুরু করা হলো, খুন বেশি সময় লাগলোনা। অল্প কিছুক্ষন এর মধ্যেই আজকের শুট শেষ হয়ে গেলো। আর বাকি একদিন, তাহলেই সম্পূর্ন নাটক এর শুটিং কমপ্লিট হবে।

রুবেল তূর্যর কাছে এসে বলে,
_”তিনদিন পর থেকে নেক্সট নাটক এর শুটিং শুরু হবে মনে রাখিস কিন্তু। আর আল্লাহর ওয়াস্তে এবার আবরাজ এর সাথে কোনো ঝামেলা করিস না।”

শেষের কথাটা পছন্দ হলোনা তূর্যের। কপাল্ব বিরক্তির ভাজ ফেলে বললো,
_”ঝামেলা হলে আমাকে নিয়েন না কাস্টিং এ। এতো ঠ্যাকা পরে নাই আমার ওর সাথে কাজ করার, আর ঝামেলা আমি শুরু করিনা ভাইয়া। প্রতিবার ঐ শা’লাই তো শুরু করে সবকিছু।”

_”আরে বাপ,আমি তো জাস্ট বলার কথা বললাম।”

_”তো এই কথা ওকে গিয়ে বলুন না। আমার অতো টাইম নেই শুধু শুধু ঝামেলা লাগানোর।”

_”আচ্ছা আচ্ছা আমি ওকেও বলে রাখবো। আশা করি এবার তোরা শুটিং সেট এ যুদ্ধ লাগিয়ে দিবিনা।”

থেমে যায় তূর্য। তন্নি এরই মধ্যে ঝটপট নিজের হাতব্যাগটা নিয়ে এসে বলে,
_”তূর্য,রুবেল ভাই আমি আসছি হ্যা।”

_”ঐ দাড়া,ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে তোর?” (কপাল কুঁচকে বলে তূর্য)

তন্নি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
_”এত কথা বলতে পারবো না,কাজ আছে আমার। গেলাম আমি।”

গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করে তূর্য। আশেপাশে জড়ো হওয়া মানুষ তন্নিকে না পেলেও তূর্যকে ছাড়ছে না। এছাড়া নতুন নাটক সম্পর্কে কথা বলার জন্য মিডিয়ার লোকেরাও এসেছে,তাই আজ আর তাড়াহুড়ো করতে পারলোনা তূর্য। ধীরেসুস্থে এগিয়ে গেলো সেদিকে। রুবেল কেও যেতে হবে। এরই মধ্যে মৌরিনও তার কাছে এসে বললো,
_”সবকিছু গুছিয়েই রেখেছি ভাইয়া, কাল ঠিক টাইমে চলে আসবো। আজ আসি তাহলে?”

রুবেল কিছুটা চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে চেয়ারে বসে বললো,
_”সে নাহয় যাবে। তবে তিনদিন পর কিন্তু নতুন এক নাটক এর শুটিং শুরু হবে,তৈরি থেকো। তোমাকেও আসতে হবে।”

_”আপনাকে চিন্তিত লাগছে রুবেল ভাই।”

_”আর বলোনা,প্রচুর চিন্তায় আছি। শুটিং সেটে এবার কি যে হয় আল্লাহ মালুম। নতুন নাটকে দুজন মেইন ক্যারেক্টার বুঝলে, একটা তূর্য আরেকটা আবরাজ। আর এই দুজনের বাস্তব জীবনে সম্পর্কটা হলো সাপে নেউলে। একজন আরেকজন এর থেকে কি করে উপরে উঠবে সেই চিন্তায় মগ্ন। ঝামেলাও লাগে তাই,আগে একবার দুজন কাজ করেছিল একসাথে। সে কি ঝামেলা! মিডিয়া তেও তো জানাজানি হয়েছিল বিষয়টা, দেখোনি তুমি?”

_”নাহ,ওভাবে দেখা হয়নি।”

_”পারবে পারবে, দুদিন বাদেই দেখতে পারবে। আরো তূর্য আছে একটা কনফিউজিং ক্যারেক্টার এ। এই নিয়ে আবরাজ এসে কি যে করবে!”

মাথায় হাত চলে যায় রুবেলের। এখন কেবল দোয়া করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। ইন্ডাস্ট্রি তে কখনো কেউ সামনাসামনি নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেনা, তবে তূর্য আর আবরাজ দুজনেই ভিন্ন। তারা সামনাসামনিই ঝগড়া শুরু করে দেয়।

_____
হাতের ব্যাথাটা আসলেই বাড়ছে,সঙ্গে জ্বরটাও বাড়ছে। তা বুঝতে পেরেই রাতুল নাপা খেয়ে শুয়ে ছিলো বিছানায়। এই ফ্লাটে সে একাই থাকে,আগে একজন রুমমেট থাকতো,এখন থাকে না। রাতুল নিজেই রান্না করে খায়, তবে আজ উঠতে ইচ্ছে করছে না। রান্নাও করা হয়নি তাই, রাতুল ভেবে রেখেছে একটু পরে উঠে খাবার অর্ডার করে নেবে। তবে তা আর করতে হলোনা। কলিং বেল এর আওয়াজ পেয়ে বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে ওঠে রাতুল। তবে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই তন্নিকে দেখে বিরক্তি কেটে যায় তার।

_”তুমি এখা..”

কথা শেষ করতে পারলোনা রাতুল। তার আগেই বাসায় প্রবেশ করে তন্নি, তার হাতে একটা বড় শপিং ব্যাগ। তন্নি সেটা টেবিল এর উপর রেখে নিজে এসেই দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর টেবিলের কাছে গিয়ে শপিং ব্যাগ থেকে টিফিন বক্সটা বের করে নেয়। রাতুল বিস্মিত হয়ে তার কাছে এসে বলে,
_”তুমি এই সময় এখানে কি করে এলে? শুটিং শেষ হয়ে গেছে? এতো তাড়াতাড়ি?”

তন্নি এবার রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
_”শুটিং শেষ হয়েছে দের ঘন্টা আগে। তখন ই তড়িঘড়ি করে বাড়িতে গিয়ে রান্না করে আনলাম আপনার জন্য। এই অসুস্থ অবস্থায় আপনাকে রান্না করতে হবেনা।”

_”আরে তুমি আবার এত ঝামেলা করতে গেলে কেন? আমি তো বাহিরে থেকেই অর্ডার করিয়ে নিতে পারতাম।”

_”করাননি তো? তাহলে আর করাতেও হবেনা।”

তন্নি এগিয়ে এসে রাতুলের কপালে হাত দিয়ে চেক করে বলে,
_”এখন তো জ্বর নেই,আপনি জলদি জলদি খেয়ে নিন তো। তারপর..”
নিজের ব্যাগ থেকে একটা ঔষধ এর পাতা বের করে বলে,
_”তারপর এই ঔষধ টা খেয়ে নেবেন,তাহলে হাতের ব্যাথাও সেরে যাবে তাড়াতাড়ি।”

_”এসবের কিন্তু কোনো দরকার ছিলো না।”
চেয়ারে বসে কথাটা বললো রাতুল। তন্নি তাতে পাত্তা না দিয়ে প্লেটে খাবার নিতে লাগলো,তারপর সেটা এগিয়ে দিলো রাতুল এর দিকে। রাতুল ও আর কথা না বারিয়ে হাত ধোয়ার জন্য চেয়ার থেকে উঠতে যাবে তখন ই তন্নি তাকে বাধা দিয়ে বলে,
_”না না আপনি বসুন।”

কথাটা বলে একটা বাটিতে পানি নিয়ে আসে তন্নি। রাতুল কেবল অবাক হয়ে তার কাজগুলো দেখছে। তন্নির ডাকে ধ্যান থেকে বেরিয়ে এসে হাতটা তুলতে নেবে তখন ই আবারো ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে নেয় সে। তবে রাতুল এর চেয়ে বেশি ব্যাথা যেন তন্নি ই পেলো। করুন সুরে বললো,
_”ইশ,আমিতো ভুলেই গেছিলাম আপনার ডান হাতে ব্যাথা। না না আপনাকে কষ্ট করে খেতে হবেনা। উম, আমি খাইয়ে দেই আপনাকে?”

_”না না তন্নি,তুমি এমনিতেই অনেক করেছো। আমি নিজেই খেতে পারবো সমস্যা নেই।”

_”চুপ করে থাকুন,একটাও কথা বলতে হবেনা।”

কিছুটা শাসিয়ে কথাটা বলে তন্নি। এরপর বেসিন থেকে নিজেই হাত ধুয়ে এসে রাতুলের সামনে আরেকটা চেয়ার নিয়ে বসে পরে। রাতুলের সামনে থেকে প্লেটটা নিজের কাছে নিয়ে আসে। রাতুল তাকে বাঁধা দেওয়ার সুযোগটুকুও পেলো না। তন্নি তার আগেই প্লেটে খাবার মাখিয়ে রাতুলের মুখের সামনে তুলে ধরলো।

#চলবে?

[ছোট করে দেওয়ায় দুঃখিত। তবে সেহেরির সময় আরেকটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো। রিচেক করা হয়নি, ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here