এক_ফালি_সুখ🌼 |৭| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
167

#এক_ফালি_সুখ🌼 |৭|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
শুটিং এর দ্বিতীয় দিন, আজকের শুটিং টা হবে রাস্তার মাঝেই। শেষ দিনের শুটটাই আগে করে রাখা হচ্ছে, শুটিং স্পট এর চারিপাশে অনেক মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে। তবে কারোর শুটিং এর মাঝে আসার অনুমতি নেই। আজকের সিনটা শুধুই তন্নি আর তূর্যকে নিয়ে, তাই সহ অভিনেতা অভিনেত্রী তেমন একটা নেই।
তন্নির ড্রেস এর রঙ সম্পূর্ন সাদা,সঙ্গে তাকে হালকা মেকআপ করানো হয়েছে। আর তূর্যর পরনে সাদা রঙের শার্ট,যার হাতা কনুই অবদি গোটানো। চুলগুলো ইষৎ এলোমেলো, আর গালভর্তি দাড়ি। মূলত এই লুকটার কারণেই শেষের পার্টগুলো আগে শুট করা হচ্ছে।

মৌরিন ঠিক সময়ে এসেই নিজের কাজগুলো করে দিচ্ছে। তবে প্রয়োজন ব্যাতীত সে কারো সাথেই খুব একটা কথা বলছে না। তন্নির সঙ্গে দু একবার যা একটু হেসে কথা বলেছিল, বাকিদের সঙ্গে কাজ ব্যাতীত আর কিছুই বলেনি। রাতুলও শুটিং এর যাবতীয় কাজে ব্যাস্ত।

তূর্য এবং তন্নি দুজনকে নিজেদের মুখোমুখি করে দাড়া করানো হলো। চার বছর পর তাদের দেখা হচ্ছে এমন একটা সিন তৈরি করা হয়েছে। মৌরিন তাদের পাশেই মাইক্রোফোন সেট করে দাঁড়িয়ে আছে। রাতুল অন্যপাশে হাতে স্ক্রিপ্টটা নিয়ে দেখছে, আর কিছু নির্দেশাবলী দিচ্ছে।
সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর ডিরেক্টর অ্যাকশন বললো।

তন্নি নিচ থেকে চোখ উঠিয়ে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
_”যাকে চেয়েছিলে তার সঙ্গে ভালো আছো নিশ্চই।”

তূর্য বুকে হাত গুজে তন্নির চোখে চোখ রেখে বলে,
_”যদি বলি আমি ভালো নেই তাহলে? ফিরে আসবে আমার কাছে?”

“কাট কাট..” ডিরেক্টর এর কথায় থেমে যায় তারা। ক্যামেরাও নামিয়ে ফেলা হয়। রাতুলও কপালে ভাজ এনে থুঁতনি তে আঙুল ঘষে ডিরেক্টর এর উদ্দেশ্যে বলে,
_”ঠিকঠাক জমছে না, তাইনা ভাই?”

সম্মতি জানায় ডিরেক্টর রুবেল। শুটিং কিছুক্ষন এর জন্য অফ করে স্ক্রিপ্ট নিয়ে আরো কিছুটা ঘাটাঘাটি করতে থাকে রাতুল। কোন জায়গা থেকে চেঞ্জ আনা যায় সেটা ভাবতে থাকে। কয়েক সেকেন্ড বাদে মৌরিন মাইক্রফোন এর স্টিক টা পাশে চেয়ারে রেখে রাতুল এর সামনে গিয়ে বলে,
_”আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে ভাইয়া, বলবো?”

রাতুল কিছু বলার আগেই তূর্য একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে,
_”নিজেকে ডিরেক্টর মনে করছো নাকি? যে বিষয়ে জানো না সেই বিষয়ে শুধুশুধু নাক গলাতেও এসোনা।”

মৌরিন শান্ত দৃষ্টিতেই তাকায় তূর্যের দিকে। “যে বিষয়ে জানো না” কথাটা বলতেও যে সেদিন তাকে না চিনতে পারার কথাটাকে বুঝিয়েছে তূর্য,এটা ভালোই ধারণা করতে পারছে মৌরিন।

_”আহ তূর্য, এভাবে বলছো কেন? মৌরিন, তুমি বলতো কিভাবে করা যায় সিনটা?”

_”ভাইয়া,শুধু শুধুই কিন্তু সময় নষ্ট করছেন।”

তূর্যের কথায় কর্ণপাত না করে মৌরিন এর কাছে আবারো একই জিনিস জানতে চাইলো রাতুল। মৌরিন এবার স্ক্রিপ্টটা হাতে নিয়ে তাকে কিছু লাইন বললো, যে সংলাপ টা এভাবে হলে হয়তো আরো ভালো হতে পারে। রাতুলের ও পছন্দ হয় তার বলা লাইনগুলো। তাই ডিরেক্টর এর সাথে কথা বলে নতুনভাবে এই পার্টটুকু শুট করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
এর মধ্যে তূর্য চরমভাবে বিরক্ত, আড়চোখে তাকাচ্ছে মৌরিন এর দিকে। তবে মৌরিন এর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এর আগে এই জায়গায় যত মেয়ে এসেছে তারা প্রথম দিনই তূর্যসহ বাকি অভিনেতা দের ফোন নম্বর নেওয়া, ফেইসবুকে অ্যাড হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যেত। সেখানে মৌরিন প্রয়োজন ব্যাতীত একটা শব্দও উচ্চারণ করছেনা। বিষয়টা যেন আত্মসম্মানে গিয়ে লাগছে তূর্যর। মনে হচ্ছে মৌরিন তাকে ইগনোর করছে, মেয়েদের বর্তমান ক্রাশদের মধ্যে একজন ইলহাম আবসার তূর্যকে কিনা এই শ্যামবর্ণের সাধারণ মেয়েটা ইগনোর করছে! আর কিছু বুঝুক আর না বুঝুক, তূর্য এইটুকু বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে, মৌরিন বাকিদের মতো নয়। সে ভিন্ন, সবার থেকে ভিন্ন।

ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বাধ্য হয়ে মৌরিন এর বলা সংলাপে আবারো শুটিং শুরু করা হলো।
তন্নি তূর্যের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,
_”তুমি যা চেয়েছিলে তাই তো হয়েছে,একা একা এখন ভালো আছো নিশ্চই?”

তূর্য মাথা সামান্য বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
“একা কোথায়? হাহ, তোমার অভাব,নিঃসঙ্গতা প্রতিমুহূর্তে আমার সঙ্গেই রয়েছে।”

_”ব্রিলিয়ান্ট”
কথাটা বলেই হাততালি দেয় রুবেল। এবারের শুটটা সকলেরই পছন্দ হয়েছে। রাতুল মৌরিন এর উদ্দেশ্যে হেসে বলে,
_”দারুণ ডায়লগ দিয়েছো কিন্তু।”

সৌজন্যমূলকভাবে সামান্য হাসে মৌরিন। বাকি শুট টুকুও শেষ করা হয় এরপর। তূর্য এবার আরো বিরক্ত হয়, ডায়লগ ডেলিভারি করলো সে। অথচ স্ক্রিপ্ট এর জন্য বাহবা দেওয়া হচ্ছে মৌরিনকে। তার উপর মৌরিন এর মুখে কোনো কথা নেই, মেয়েদের বরাবরেই বাচাল হতে দেখেছে তূর্য। সেখানে এত গম্ভীর ভাব তার পছন্দ হচ্ছে না।
শুটিং শেষে সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে, মৌরিন ও তাই করছে। তূর্য হঠাৎ তার সামনে এসে গম্ভীর মুখভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মৌরিন তখন একটা চেয়ারে বসে সামনের চেয়ারে থাকা স্ক্রিপ্টগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিল।
তূর্যর দিকে মাথা উঁচু করে বলে,
_”কিছু দরকার?”

_”ফোনটা কোথায় আমার?”

চেয়ার থেকে উঠে পাশেই থাকা টেবিল থেকে তূর্যর ফোনটা এনে তার দিকে এগিয়ে দেয় মৌরিন। তূর্য একনজর ফোনটার দিকে তাকিয়ে তা হাতে নেয়। মৌরিন আবারো পুনরায় চেয়ারে বসে নিজের কাজে মনোনিবেশ করে। আবারো সেই গাম্ভীর্যতা বিরক্ত করে তূর্যকে, তার সঙ্গে এসে যুক্ত হয় নতুন বিরক্তি।
ফোনটা ভাইব্রেশন এ ছিলো, তাই হাতে থাকা অবস্থায় ভাইব্রেট করতেই তূর্য ফোনটা সামনে এসে দেখে দিয়ার কল। জ্বালিয়ে মারছে মেয়েটা, ওর ঐ ন্যাকা কান্না এখন অসহ্য লাগছে তূর্যের কাছে। তবুও কলটা রিসিভ করতে হলো।

______
সব কাজ শেষে নিজের বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে হেলমেট পরছে রাতুল। এমন সময়ে তন্নি তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পরে। রাতুল তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
_”কিছু বলবে তন্নি?”

_”আমার গাড়িটা না হুট করেই খারাপ হয়ে গেলো। আপনি একটু বাড়িতে পৌঁছে দেবেন আমায়?”

_”তূর্যের সাথে যেতে পারোতো। ওর আর তোমার বাসা তো একদিকেই।”

তন্নি কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলে,
_”তূর্য তো এখন বাড়িতে যাবেনা। আর আমিও আমার বাড়িতে যাবোনা, মামার বাসায় যাবো। আর সেটা আপনার বাসার একটু আগেই।”

_”তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু তোমাকে আর আমাকে এখন একসাথে বাইকে যেতে দেখে নিলে মিডিয়ার মানুষ কি করবে বুঝতে পারছো?”

তন্নি নিচের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
_”সেটাই তো চাই।”

_”কিছু বললে?”

_”না তো। আর আপনি এত টেনশন করছেন কেন? হেলমেট পরলে আমাকে আর ওভাবে চেনা যাবেনা।”

আর আপত্তি জানালো না রাতুল। আরেকটা হেলমেট তন্নির হায়ে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
_”ঠিক আছে,উঠে বসো।”

_____
ফোনটা রিসিভ করে একটু সাইডে চলে এলো তূর্য। দিয়া বরাবরের মতোই কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
_”আমার সাথে এমন কেন করছো তূর্য? আই রিয়েলি লাভ ইউ।”

_”অন্য কিছু বলার থাকলে বলো।”

_”আমি ভাবছি অ্যাকটিং থেকে বেড়িয়ে আসবো।”

_”ভালো তো, আর তোমাকে মডেলিং এই ভালো মানায়। একটা আইডিয়া দেই, ভালো দেখতে ছেলে খুজে বিয়ে করে নাও।”

_”অন্যরা তো তোমার মতো হবেনা তূর্য।”

_”আই নো দ্যাট। বাট ইউ ডোন্ট ডিজার্ভ মি দিয়া।”

_”আমিই যদি তোমায় ডিজার্ভ না করি তাহলে কে তোমায় ডিজার্ভ করে?”

_”আমায় যে ডিজার্ভ করবে তাকে শুধু সুন্দর হলে চলবে না। সৌন্দর্যের সাথে তাকে সবদিক থেকেই বেস্ট হতে হবে, আর এটা আমি আগেও বলেছি।”

_”তাহলে আমি কোন দিক থেকে বেস্ট নই?”

_”তোমার পারসোনালিটি ই তো ঠিক নেই দিয়া। রিজেক্ট করার পরও একটা ছেলের পিছনে পরে আছো। সেল্ফ রিসপেক্ট এর বিন্দুমাত্র তো তোমার মাঝে নেই।”

_”তূর্য! এই কথাটা বলতে পারলে আমায়?”

_”না বলার কিছুই নেই অ্যান্ড আই থিংক তোমার আর কিছু বলার নেই।”

কলটা কেটে দেয় তূর্য। এত অপমান করছে তারপর ও দিয়া হ্যাংলার মতো পরে আছে ওর পিছনে। একটা মেয়ে এতটা নির্লজ্জ কি করে হতে পারে মাথায় আসেনা তূর্যের।

#চলবে?

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here