#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২০)
কলেজে যাবার পথে ফাহাদ কে দেখে চুপসে গেছে লাবিবা। রিকসা করে উর্মিলার সাথে আসতেই রাস্তার পাশে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। লাবিবা দেখেও না দেখার ভাব ধরে চলে আসতে যায়। কিন্তু পারে না। ফাহাদ রিকশার পিছু ছুটে। রিকশা মামাকে দাঁড়াতে বলে। রিকশা মামা আগে থেকেই লাবিবার পরিচিত। লাবিবা বলে,
” মামা লোকটা আমাকে বিরক্ত করে। আপনি থামবেন না। ”
রিকশা মামাও বুঝে জোরে টান দেয়।
কলেজে ঢুকে আনমনে হয়ে ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছিলো লাবিবা। উর্মিলা পা চালিয়ে আগেই হেঁটে যাচ্ছে। ডিপার্টমেন্টে পা রাখতেই ভয়ে পিছিয়ে যায় লাবিবা। সবাই দৌড়ে লাবিবার দিকেই তেড়ে আসছে। লাবিবাও উল্টা ঘুরে দৌড় দেয়। বন্ধু বান্ধব রাও ছুটে লাবিবার পেছনে।
” আমি কি করেছি। এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন?”
” পাষান! অপরাধী! না বলে এক একা বিয়ে করছোস! কি ভাবছোস? আমরা খবর জানবোনা? এসব কথা বাতাসের আগে আগে ঘুরে খালা! ক্ষতিপূরণ দে নয়তো আজ তোকে ছাড়ছিনা। ”
” আরে দাঁড়া না। এরজন্য আমাকে প্যাক প্যাক ভাবলি? ইসস হাঁপিয়ে গেছি। পানি দে আগে। ”
মুমুর ব্যাগ থেকে নিজেই নিয়ে ডকডক করে পানি খেয়ে নেয়।
” দোস্ত ট্রিট দে। ফুকচা খাবো। বিরিয়ানি তো আর আমাদের কপালে জুটলোনা।”
” টাকা নাই। আমি ফকিন্নি। আমার সাথে প্যাচাল পাড়তে আসিস না। ”
” ট্রিট না দিলে এখন ছাড়ছিনা। ”
” অন্যদিন। আজ পারবো না। ”
” তাহলে টাকা তুলে নিয়ে আয়। আমরা জানি তোর বিকাশে সবসময় টাকা থাকে। একদম মিথ্যা বলবি না।”
” তাও তোরা ছাড়বিনা?”
” না। যা টাকা নিয়ে আয়।”
” আচ্ছা।”
” ঐ ব্যাগ জমা দিয়ে যায়। তোকে আমরা কেউ বিশ্বাস করিনা। ”
” আরে! ব্যাগ ছাড়া খালি খালি লাগে। প্লিজ ছাড়না!”
” পরে তুমি দৌড় লাগাও।কি মনে করো আমরা কিছু বুঝিনা?”
কেউই ব্যাগ সাথে দিতে চায় না। লাবিবা ফোনটা হাতে চলে আসে। তানভীরের কথা মনে পড়তেই উল্টো পথ ধরে । তানভীরের কেবিনের সামনে থাই গ্লাসের সামনে গিয়ে উকি দেয় তানভীর আছে কি না? তানভীর কে দেখে প্রসস্ত হাসে। এইতো হয়ে গেছে টাকার ব্যবস্থা।
” কি চাই তোমার?”
” এক হাজার টাকা। ”
তানভীর ওয়ালেট বের করে টেবিলে রাখে।
” যত লাগবে নিয়ে যাও। ”
“কেন নিচ্ছি জিজ্ঞেস করবেন না?”
” সিগারেট খাও?”
” আপনি খান? কেমন খেতে? স্যার একদিন টেস্ট করে দেখবো কেমন খেতে। ”
” গেট আউট। ”
লাবিবা কথা বলতে বলতে ঝুঁকে পড়েছিলো। তানভীরের চোখ রাঙানো কথায় সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ওয়ালেট থেকে একটা হাজারের নোট বের করে কি মনে করে আরেকটা নোট ও টান দেয়। ওয়ালেটটা তানভীরের দিয়ে এগিয়ে দিয়ে কাশে।
” এহেম, এহেম! একটু বেশিই নিলাম স্যার। বান্ধবীরা জেনে গেছে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। সেজন্য ফুচকা ট্রিট দিতে হবে। যদি একটু বেশিই লাগে! আপনার তো টাকার অভাব নেই।”
” যত লাগে নিয়ে বের হও। আর শোনো প্রয়োজন ছাড়া আমার অফিসের দিকে আসবেনা।”
” টাকা লাগতো এটা কি প্রয়োজন না? অপমানস!”
” সেটা তো ফোনেও বলা যেতো বুদ্ধু। আমি পাঠিয়ে দিতাম কাউকে দিয়ে। এখানে কেউ জানেনা যে তুমি আমার বউ। পিয়নটাও দেখছি আজকাল তুমি এলেই উশখুশ করে। যা দরকার হবে ফোনে বলবে। পেয়ে যাবে। ”
” ওকে স্যার! আমি যখন সময় পাবো তখন আমার ফ্রেন্ডসদের সঙ্গেই থাকবো। আপনার কাছে আসবো না। ফ্রেন্ডসদের আবার বেনিফিট বেশী কিনা! ”
তানভীর কটমট করে তাকায়। লাবিবা ভ্যবলার মতো হেসে দৌড় দেয়। দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তানভীর বলে,” আবার কি?”
” স্যার আমাদের বিয়েটা কি গোপন হয়েই থাকবে?”
” আপাতত কলেজটা ছাড়ো। তারপর বলবো।”
“এতো দিন তাহলে আমি ফ্রি? যা খুশি তাই করতে পারবো?”
” কি করতে চাও?”
লাবিবা ছোট্ট করে একটা চোখ টিপ মেরে দৌড়ে পালায়। তানভীর ডাকে,
” লাবিবা! দাঁড়াও। লাবিবা!”
কে শুনে কার কথা? এক দৌড়ে ক্লাসে। অপেক্ষাকৃত কয়েকজোড়া চোখ লাবিবার আশাতেই বসে ছিলো। লাবিবাকে পেয়েই হৈ হৈ করে উঠে।
” চল আজকে লাব্বুকে ঢালাবো। আনলিমিটেড ফুসকা।”
” এই লাব্বু দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দেনা। ”
” তোদের দুলা খুবই ব্যস্ত। বউয়ের সাথে কথা বলার ই সময় পায়না।”
” কি বলিস? ছেলে মানুষ যত ব্যস্তই থাক বউয়ের জন্য ঠিকই সময় বের করে নেয়। এই আগে প্রেম টেম ছিলো নাকি? এখনো ভুলতে পারেনি। তোকে ভালো টালো বাসে নাকি?”
” কি আর বলবো? হেতি ভালোবাসা কি বুঝেই না। পটানোর চেষ্টায় আছি। ভালোবাসে কথা বলতে গেলে ধরিয়ে দেয় টাকা। ”
” তাহলে তো অনেক সমস্যা। ”
সবাই আফসোস করে লাবিবার জন্য। সাহস দেয়।
” দোস্ত যে কোন হেল্প লাগলে বলবি। আমাদের সাথে অপেনলি শেয়ার কর। এমন এমন টিপস শেখাবো না? দুই দিনেই তোর কাছে দৌড়ে আসবে। ”
” চল আগে ট্রিট দে। তারপর সব প্রব্লেম সলভ করবো ধীরে সুস্থে।”
” চল। ”
তানভীর লাবিবা কি করে দেখার জন্য একবার বাইরে আসে। দুতলার পেছনের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এখান থেকে সরাসরি ফুচকার স্টল গুলো দেখা যায়। চেয়ার একটাও খালি নেই। লাবিবার এতোগুলো ফ্রেন্ডস আছে তানভীরের জানা ছিলো না। ফ্রেন্ডস নাকি ক্লাসমেট? অধিকাংশই ছেলে ফ্রেন্ড। এদের সাথে তো কখনো মিশতে দেখেনি। তানভীর সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। লাবিবার মতি গতি নড়ন চড়ন লাফালাফি পর্যবেক্ষণ করে। কী উচ্ছাস! এতো হাসি কোথায় পায় মেয়েটা? লাবিবা হাসতে হাসতে একবার এর উপর আরেকবার ওর উপর চেয়ার ছেড়ে ঢলে পড়ছে। পাগলী বউটার কর্মকাণ্ড দেখে তানভীর ও হাসে। কে যেনো বলেছিলো প্রিয় মানুষটার হাসি মুখটা দেখলেই মন খুশি হয়ে যায়। সত্যিই তাই। হাসি খুশি মুখটা হুট করেই নিভে যায়। ব্যপারটা সহ্য হয়না যেনো একফোঁটা। মজা করতে করতে একটা ছেলে লাবিবার উড়নায় হাত মুছে দেয়। শুধু লাবিবার না বন্ধুরা সবাই কারো না কারো উড়নায় হাত মুছে। এটা নিছকই সাধারণ ব্যপার। কিন্তু তানভীরের ভালো লাগে না।
ক্লাস শেষে যে যার মতো বাসায় চলে যায়। ইসমাইল আসার কথা। লাবিবাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু লাবিবা অনেক ক্ষন ওয়েট করার পরেও ইসমাইলের দেখা মেলে না। তানভীরের কাছেও যাবেনা। কিভাবে তাড়িয়ে দিলো। ছিহ! জামগাছের নিচটায় বাঁধানো জায়গায় বসে রইলো। একমনে ফেসবুকে ক্রল করতে লাগে। কিছুক্ষণ পরেই মনে হলো সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মুখ তুলতেই তানভীরকে দেখতে পায়। সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। তানভীর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
“আব্বু আসবে না। চলো। ”
” ওহ। আচ্ছা আপনি যান। আমি চলে যেতে পারবো।”
তানভীর এক ভ্রু উপরে তুলে মুখে হালকা স্পাউট করলো। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
“একা বাসায় ফিরেছিলে কোন দিন? ”
“সমস্যা নেই। আমি কাউকে ডেকে নিবো।”
” কাকে?”
” ফ্রেন্ড কে। ”
” এতো ফ্রেন্ড কেন তোমার? উর্মিলা আর নাকিব ছাড়া কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ রাখবেনা। ফ্রেন্ড থাকতে হলে তারা দুজনেই যথেষ্ট। ”
” আচ্ছা তাহলে ফ্রেন্ডশিপ ভেঙে দিবো। যাকে ভালো লাগবে তার সাথে প্রেম করবো। ”
” থাপড়িয়ে গাল ফাটিয়ে দিবো। ইউ আর ম্যারিড। ভুলে যেও না।”
” কোথায় লেখা আছে যে ম্যারিড হলে প্রেম করা যাবে না? আপনিও করেন। আমি বাঁধা দিবো না। দুজনেই ইকুয়েল ইকুয়েল। নাইস না?”
” আ’ম য়্যুর হাজব্যান্ড লাবিবা।”
” তো কি হয়েছে? হাজবেন্ড কোনদিন প্রেমিক হয় নাকি? হাজব্যান্ড হলো পার্সোনাল ব্যাংক। ঝাড়া দিবেন টাকা ঝড়বে। প্রেম ঝড়বে না। ”
” প্রেম লাগবে তোমার?”
” লাগবেই তো। আমাকে কি আপনার যুবতি মনে হয়না? কোনদিক থেকে আমার খুঁত আছে বলেন তো? হায়! আর কতো রাত একা থাকবো ___
আর কতো রাত একা থাকবো __”
“লাবিবা স্টপ। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসেছো। রাস্তা এটা।”
” সরি স্যার মাইন্ড করবেন না। আপনি তো সিঙ্গেল। করবেন প্রেম আমার সাথে? আমার বুকের ভেতর কিন্তু অনেক জমে আছে। দীর্ঘ বাইশ বছরের প্রেম!”
তানভীর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে লাবিবার হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। ডোর খুলে দিয়েই বলে,
” উঠো। আর একটা বাজে কথা না। ”
লাবিবাকে ঠেলে গাড়িতে তুলে দেয়। লাবিবা মুখ বাকায়। পুরোটা রাস্তা নিরব থাকে। মুখ খুলতে গিয়েও খুলতে পারেনা। তানভীরের কড়া চাহনিতে চুপসে যায়। কপালে আঙুল ঠেকিয়ে ভাবে এতো রেগে গেলো কেনো? আজ মনে হয় একটু বেশি কথাই বলে ফেলেছে। থাক আর কিছু বলবেনা। পেটে যে কথাটা গুড়গুড় করছে সেটাও তো চেপে রাখতে পারেনা। পাশ ঘুরে বসে তানভীরের দিকে। তানভীর ড্রাইভ করার সময় কয়েকবার লাবিবার দিকে তাকায়। মেয়েটা এক মনে যে তাকিয়ে আছে আর চোখ নামায় না। কি যে ভাবে কে জানে? তানভীর বুঝতে পারেনা। এভাবে তাকিয়ে থাকলে ঠিকমত ড্রাইভ ও করা যায়না। তানভীর মাঝপথেই গাড়ি থাকায়। লাবিবার দিকে ঘুরে বসে ফুস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,
” আফসোস আমি তোমাকে এখনো এইভাবে দেখার সুযোগ পেলাম না।”
লাবিবাও তাড়াহুড়ো করে তানভীরের দিকে এগিয়ে বসে। মুখের উপর মুখ এনে বলে,
” স্যার আপনি যদি আমার বয়ফ্রেন্ড হোন আমি কিন্তু মোটেও মাইন্ড করবোনা। ”
” কি ভাবো নিজেকে?”
” ভাবতেই তো চাই। আপনার বউ নামক প্রেমিকা দ্যা ওয়ান এন্ড ওনলি লাবিবা!”
চলবে __