ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৭৩)

0
286

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৭৩)
” দোস্ত আমি ঐ আকাশ বাতাস কে বিয়ে করবোনা।”

” কি প্রব্লেম?”

” আমার ভালোই লাগে না। এরকম একটা ছেচড়া ছেলেকে কে বিয়ে করবে?”

” তুই করবি। আগে বল কি ছেচড়ামি করেছে ?”

” বাসা থেকে বের করে সোজা মলে নিয়ে এসেছে। আজ থেকে নাকি তার বিয়ের শপিং শুরু হবে । এখন আমি দশ মিনিট থেকে ট্রায়াল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”

” কেন?”

” উনি একটা করে চেঞ্জ করছেন আর আমাকে বলতে হচ্ছে কোনটাতে ভালো লাগছে কোনটাতে লাগছে না।”

” এই পর্যন্ত কয়টা ড্রেস চেঞ্জ করেছে? ”

” চারটা।”

” এতো ভদ্র একটা ছেলে কে আমি আনমেরিড হলে এখনি বিয়ে করে নিতাম। আর তুই বলছিস ছেচড়া?”

” এখানে তুই ভদ্রতার পেলি?”

” তাহলে? অভদ্র হলে তো তোকে নিয়েই ট্রায়াল রুমে ঢুকতো। তোর চোখের সামনেই একটা একটা ড্রেস চেঞ্জ করতো আর বলতো, দেখো তো উর্মি পারফেক্ট লাগছে কিনা? ”

” লাব্বু এতো তেল লাগাস না। ”

” বাসা থেকে কি আকাশের পায়ে হেঁটে বের হয়েছিস? নাকি আকাশ তোর ব্রেইন কন্ট্রোল করে? এতো প্যাচাশ না। শোন আমি বলি। তুই আমার দূর সম্পর্কের দেবর কে বিয়ে করে দূর সম্পর্কের জা হয়ে যা। তোর বাপে তো শুধু খুঁজে বিদেশি পোলা। তোকে ছাড়া আমরা কিভাবে থাকবো বল? আদৌ কি সম্ভব এটা?”

লাবিবা ভীষণ ইমোশনাল হয়ে গেছে ভাব করলো। উর্মিলা তখনই ফোন কেটে দিলো। সে আর কথাই বলবেনা। আকাশ দরজা খুলে দাঁড়ালো। গায়ে সাদা কাতানের শেরওয়ানি। উর্মিকে বললো,
” দেখোতো উর্মি পারফেক্ট লাগছে কিনা? ”

উর্মিলা দেখলো সত্যিই পারফেক্ট দেখাচ্ছে। সাদা শেরওয়ানি আকাশের গায়ের সাথে সুন্দর মানিয়েছে। আকাশকে উর্মিলার যে খারাপ লাগে তেমন কিন্তু না। খারাপ লাগলে এইযে এতো বার মিট করে, আকাশ ডাকলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসে এসব কখনোই সম্ভব হতো না। তার উপর আকাশ তাকে নিয়ে বেশ সিরিয়াসনেস দেখাচ্ছে। তানভীরের পরিচিত। ঠকে যাওয়ার চান্সও কম। তানভীর তো আছেই।ছেলেটা উল্টোপাল্টা করার সাহস পাবে না। উর্মিলা গিয়ে আকাশের সামনে দাঁড়ালো। শেরওয়ানির কলার টেনে দিয়ে কাঁধে হাত রাখলো। চোখে চোখ রেখে আকাশকে প্রশ্ন করলো,
” আপনি যে এরকম পাগলামি করছেন আপনার প্যারেন্টস জানে?”

” তাদের অলরেডি তোমাকে পছন্দ হয়ে গেছে। ”

উর্মিলা অবাক হয়ে গেলো।
” কিভাবে পসিবল? আমাকে তারা দেখলো কিভাবে?”

” কলেজে।”

” কখন?”

” গত পরশু তানভীর ভাই বাবা আর কাকাকে ডেকে দেখা করার জন্য বললো। দেন তোমাকে দেখিয়ে আমার কথা বললো। এমনিতেও বাবা নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার আমার বিয়েটা দিয়ে দিবে কিন্তু আমিই জানতাম না। বাবা কাকা তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছে।”

” কিন্তু আমার বাবা আপনাকে পছন্দ করবেন না। বাবা গ্ৰীন কার্ড ওয়ালা ছেলে খুঁজছে। কয়েকটা সমন্ধ ও এসেছে। বাবা ওদের মধ্যে কাউকে চুজ করে নিবে।”

” এরকম হলে আমিও তোমাকে নিয়ে ভেগে যাব। ব্যাপারটা জোস হবে না?”

” কিহ? এরজন্য আপনি আজ আমাকে টেনেটুনে এনে এসব কেনা কাটা করছেন? ”

” কুল বেয়ানসাহেবা। এতো হাইপার হওয়া ভালো না। ”

” আমি এক্ষুনি চলে যাব। আপনার সাথে আর থাকবোনা।”

উর্মিলা কাঁধের ব্যাগ চেপে ধরে এক্সিটের দিকে যেতে লাগলো। আকাশ দাঁড়িয়ে থেকেই উঁচু গলায় ডাকলো,
” এইযে বেয়ান সাহেবা শুনছো? তোমার বাবা অলরেডি আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছেন। এইবার তোমাকে নিয়ে আমার ভীনদেশে পাড়ি দেবার পালা। তৈরী থেকো। ”

উর্মিলা জানতো তার বাবা রিজেক্টই করবেন। পাত্তা না দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়।

রোজীর ফুড চার্ট চেঞ্জ হয়েছে। বাড়ির সবাই যেখানে লাইট ফুড খাবে সেখানে রোজী খাবে হেভি ফুড। এই কাজটা তামিম করেছে। রোজীকে ওয়েট গেইন করতে হবে। সাথে আছে কিছু ড্রিংকস। হাড্ডিস্বার মানুষ তামিমের একদম পছন্দ না। হেলদি ফিটনেস থাকতে হবে। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ না থাকলে আভিজাত্যের পাশে মানাবে কিভাবে? রোজী আগ্ৰহ করে দুইদিনেই পুরো থেমে গেলো। তামিম থাকতে সেটা সম্ভব হলো না। রোজীর জন্য ড্রেস জুয়েলারি মেকআপ সব অর্ডার করে আনিয়েছে। রোজী নিজেই চুজ করেছে তামিমের পাশে বসে। রোজী হাটা চলা কথা বলা বেশ সুন্দর।‌ সেসবের দিকে নজর দিচ্ছে না। তামিম বাসায় আসতে আসতে রোজী ঘুমিয়ে গেলেও ভোরে তামিম রোজীর পড়া নেয়। সাইন্সের স্টুডেন্ট রোজী। তামিম নিজ দায়িত্বে সাইন্সের সাবজেক্ট গুলো দেখিয়ে দেয়। শুধু ইংলিশ আর বাংলাটা বলে লাবিবার কাছে বুঝিয়ে নিতে। পর্যাপ্ত সময় হয়ে উঠে না তামিমের। সেজন্য লাবিবা আর সে ডিসকাশন করে সাবজেক্ট ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এসব দেখে রোজী বলেছিলো,
” হোম টিউটর না হলে ক্লাসমেট দের সাথে কোচিং করি তাহলেই তো আপনাদের কষ্ট __ ”

তামিম এমন ভাবে তাকায় যা দেখে রোজীর মুখ তখনি বন্ধ হয়ে যায়। তামিম যে হোম টিউটরের পক্ষে না এটা বুঝে গেছে। কোচিং তো প্রশ্ন ই আসে না। লাবিবা চলে গেলে রোজী ভেবেছিলো তামিম তাকে বকবে। তাই গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু তামিম মোটেই বকা ঝকা করলো না। রোজীর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলো। রোজী মাথা উপরে তুলে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম মুচকি হেসে বললো,
” ভাগ্যের ফেরে তুমি আমার স্ত্রী। যেখানে আমার প্রথম সংসার স্বাভাবিক থাকলে তোমার হাইটের আমার একটা মেয়ে থাকার সম্ভাবনা ছিল সেখানে তোমাকে আমার ফাস্ট ইয়ারে পড়াতে হচ্ছে। ডিসটেন্স কতটা তুমি হয়তো একবার ভেবেও দেখো নি। কিন্তু আমি ভেবেছি। তোমাকে অনেক তাড়াতাড়ি গ্ৰো করতে হবে রোজ। বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শীতা, সফলতা, সক্ষমতা সবদিক থেকে ২ আসনের এমপি ফিরোজ খানের ছেলে ডক্টর তামিম খানের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। নিজেকে ইমপ্রুভ করো। জীবনের চল্লিশটা বছর পার করে এসেছি। আগামী চল্লিশ বছর তোমার সাথে কাটানোর সপ্ন দেখতে গিয়েও পিছিয়ে আসি। আমি তোমার সাথে নাইবা থাকতে পারি। কিন্তু তুমি এর বেশি সময় ধরেও খান বাড়িতে থাকতে পারো। তোমার জন্য আমি বরাবর এই দোয়া টাই করে যাবো। এখানে সবাই হেল্পফুল। যত তাড়াতাড়ি অতীত ভুলে বর্তমানকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইবে ততোই তোমার ঝুলিতে সুখ ধরা দিবে। আমি নিজে তোমার সুখের দায়িত্ব নিয়েছি। সবাই তোমাকে ভালোবাসে । ”

” আপনি বাসেন না? ”

তামিম ঝট করে উত্তর দিতে পারলো না। সময় নিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, ” ধরে নাও। ভালোবাসি। ”

রোজীর চোখ জুড়া জলে ভরে উঠলো। এই একটু সময় বাদেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। তামিম সেই চোখের জল দেখতে চাইলো না। রোজীর দিকে এগিয়ে কপালে চুমু দিয়ে তখনই প্রস্থান করলো।

তামিম রোজীর দিকে বিশেষ খেয়াল রাখছে ইদানিং। রোজীর মেডিসিন গুলোও নিজে হাতে খাওয়াচ্ছে। দুই তিন চারদিন হয়ে গেলো রোজীর যেন তবুও পরিবর্তন নেই। তামিম এবার ঠিকই করলো রোজীকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চেকাপ করাবে। রোজীকে বলতেই রোজী না করে বসলো। তামিম রোজীকে বোঝানোর চেষ্টা করলো।
” দেখো রোজ টেস্ট করাতে কি সমস্যা তোমার? তোমার শরীরের ভেতরে যদি কোন বাসা বেঁধে থাকে তাহলে হাজার চেষ্টা করলেও তো হবে না। অনেক উইক পার্সন তোমার মেডিসিন গুলো খেয়ে দুইদিন থেকেই রিকভারি করে তাদের চেঞ্জ চোখে পড়ে অথচ তোমার কোনো চেঞ্জই দেখছি না। দুদিনের জায়গায় চারদিন ওয়েট করলাম। তোমাকে যখনি দেখি তখনই মনে হয় তুমাকে আরো মুমূর্ষু দেখাচ্ছে। আমি তোমার কথা শুনতে চাইছি না। ”

” আমি আপনাকে বলেছিই তো আমার সেসব কোনো রোগ নেই। যদি হতো আমি আগেই বুঝতে পারতাম আগেই মারা যেতাম। ”

” সব সময় এই উল্টাপাল্টা চিন্তাটাই কেন মাথায় আসে তোমার? আমি একবারো বলেছি তোমাকে এইচ আইভি টেস্ট করাতে নিয়ে যাব ? মানুষের শরীরে খাদ্যনালিতে,ফুসফুসে, হার্টে, কিডনিতে কত রকমের সমস্যা হয় তোমার জানা আছে? বাই এনি চান্স রোজ!”

অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকায় তামিম। রোজী এবার কি বলবে ভেবে উঠতে পারে না। জোর করলে জোর থামানো যায়। কিন্তু তামিমের চোখে এই অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সে বড্ড অসহায় ফিল করছে। সাহস করে সিউর হতে চায়, “আমি মোটেও সেরকম কিছু চিন্তা করে বলিনি। আপনি কি আমাকে অবিশ্বাস করেন?”

” তুমি আমার পরিচিত? অতীতে স্বাভাবিক লাইফ লিড করেছো? তোমার এক্স হাজব্যান্ড এক নারীতে আসক্ত ছিলো? তুমি আমার প্রতি সিরিয়াস? তোমার শরীর সুস্থ? তোমার ব্রেইনে এটা ছাড়া অন্য কিছুতে ফোকাস করেছে? এবার উত্তর তুমি নিজে মিলিয়ে নাও।”

” ডাক্তার সাহেব।”

” হাজব্যান্ড হিসেবে আমাকে সব জানতে হবে। ঘন্টা দুই পর গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। যদি আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে যাবে । আর যদি না থাকতে চাও তাহলে আশা করি নিজের রাস্তা মাপবে। ”

উপায়ান্তর খুঁজে পেলো না রোজী। শরীরটা যেনো বেশি খারাপ লাগছে। শীত লাগছে। মনে হচ্ছে গা কাঁপিয়ে জ্বর আসবে। নিজের দ্বিতীয় সংসার বাঁচাতে গিয়ে রোজী হাসপাতালে গেলো। তখন তার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। টাল মাটাল পা ফেলে ড্রাইভার কে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে আসলো। তামিম সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত। কনুইয়ে ভর করে দু আঙুলে চোখে ঢেকে রেখেছে। রোজীকে টেস্ট করানো হলো। টেস্টগুলোর রিপোর্ট আসলো দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর। তামিম এই সাত ঘণ্টাই হসপিটালে বসে রইলো। একবারের জন্যও রোজীর দিকে তাকায় নি। রোজীও তামিমের পেছনেই বসে ছিল। এরমধ্যে তামিমের বন্ধু ডাক্তারটির কথায় কফির সাথে একবার নাস্তা আনা হয়েছিল। তামিম খায়নি। রোজী একটু মুখে দিয়েই আর পারলো না খেতে। গলা দিয়ে কিছু নামবে না আর তার। তামিমের হাতে যখন রিপোর্ট পৌঁছালো রোজীর বুক ধড়ফড় করছে। চোখ দিয়ে অনরগল পানি পড়ছে। তামিম সূক্ষ চোখে রিপোর্ট পর্যবেক্ষন করলো। রোজীর দিকে পেছন ঘুরলো । অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো,
” রোজ! সত্যিই তুমি? ”

(গল্পটি সম্পূর্ণরুপে কপি পোস্ট করা নিষেধ। তবে শেয়ার দিতে পারেন। অনান্য আইডি বা পেইজে কপি, ওয়েবসাইটে পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা থিম কপি করার অনুমতি নেই। )
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here